নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গেজারিয়া ক্লাবের ছায়াঘেরা, শীতল পরিবেশ থেকে বাইরে বের হয়ে কয়েক পা এগোতে সূর্যালোক চোখ ধাঁধিয়ে দিল আম্বার বেনব্রুকের। পাথরের ড্রাইভওয়ের দিকে যাওয়া সিঁড়িতে টলমল করে উঠল তার পা। অভ্যাসের বশেই আঁকড়ে ধরল বাগদত্তা মেজর পেনরড ব্যালেন্টাইনের হাত। প্রেমিকাকে হাত ধরে স্থির হতে সাহায্য করল পেনরড। ভালোবাসা নিয়ে তাকাল আম্বারের দুচোখে। স্মিতহাস্যে জবাব দিল প্রেমিকা।
‘মনে তো হচ্ছে না এই বুটগুলোর সাথে মানিয়ে নিতে পেরেছি, পেনি। দোকানের মেয়েটা বলেছিল, এগুলো একেবারেই নতুন আর অনেক দামী। কিন্তু মনে হচ্ছে না এগুলো হাঁটাচলা করার জন্য বানানো হয়েছে।’ বিরক্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে ডোরাকাটা স্কার্টের লম্বা ভাঁজ থেকে পা’টা একফুট বের করল আম্বার। পায়ের গোড়ালিটা একটু ঘুরিয়ে দেখতে চাইল বুট আর পায়ের অবস্থাটা। পাতলা নিচু হিলের এই জুতাটাকে আকর্ষণীয় করতে বাঁধা রয়েছে হুক, চোখের মতো দেখতে বোতাম ও কিছু ফিতা। “হারেমে থাকতে তো বেশিরভাগ সময়ই খালি পায়ে চলতাম আমি।’
আম্বারের কথা শুনে চোয়াল শক্ত হয়ে গেল পেনরডের। মহামান্যার কোল্ডস্ট্রিম গার্ড দলের ক্যাপ্টেন বার্নেট ও লেফটেন্যান্ট বুচার দাঁড়িয়ে ছিল তাদের পিছনেই। ছাউনির ছায়ার ভিতর। তারা নিশ্চয় শুনে ফেলেছে আম্বারের এই ছোট্ট কথাটুকুও। হারেমের ব্যাপারে তার মন্তব্য ডিনারের আগেই ছড়িয়ে পড়বে ক্লাবে।
আম্বারকে ভালোবাসে পেনরড। কিন্তু তাকেই মেয়েটার কাছে এটা বুঝিয়ে বলতে হবে যে একজন সিনিয়ার অফিসারের বাগদত্তা হয়ে জনসম্মুখে এধরনের কথা বলা তার উচিত না। বিশেষ করে ওসমান আটালানের হারেমে বাস করার সময়। কেননা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মহাশত্রু বলে যাদের গণ্য করা হয়, তাদের মধ্যে একজন এই ওসমান।
তাদের এনগেজমেন্ট হওয়ার পর পেরিয়ে গিয়েছে দুসপ্তাহ। পেনরড বুঝেছে যে এরকম একজন বিখ্যাত নারীর সাথে যুক্ত থাকার অসুবিধার সাথে সাথে এক ধরনের সন্তুষ্টিও আছে। আসলেই একটা রত্ন এই আম্বার। দেখতে সুন্দর সে। একেবারেই চোখ ধাঁধানো। সুদানে থাকাকালীন তার সাবেক নার্স তাকে ডাকত ‘আল জাহরা’ নামে। এর মানে হলো ‘ফুল’ আর নামটা সত্যিই মানিয়ে যায় তাকে। ষোলো বছর বয়সেই তরুণীদের মতো চৌকস শারীরিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়েছিল সে। আফ্রিকায় বেড়ে উঠলেও তার গায়ের রঙ ছিল ক্রীমের মতো। এর পাশাপাশি ছিল সোনালী চুল আর বড়দিনের পোস্টকার্ডে দেখতে পাওয়া দেবদূতের মতো নীল চোখ। নিষ্পাপ একটা মোহনীয়তা আছে ওর চেহারায়। কিন্তু বুদ্ধিমতীও সে। কারও সাথে মিশতে গিয়ে একেবারেই অন্তরঙ্গ হয় না, আবার গম্ভীরও থাকে না। তাই বলা যায়, পেনরডের মতো মানুষের জন্য সে একেবারে আদর্শ পছন্দ। সাহসিকতায় পূর্ণ একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী অফিসার পেনরড। তবে, মাঝে মাঝে ঊর্ধ্বতনদের সাথে ক্যাঁচালের অভ্যাস রয়েছে তার। আর মেজাজকে সবসময় করতে পারে না নিয়ন্ত্রণ। তাই এরকম আকর্ষণীয় ও সুন্দরী বধূ হওয়া উচিত ছিল তার জন্য একেবারে নিখুঁত এক রাজনৈতিক সম্পদ। উচ্চ পদে আরোহনের জন্য দারুণ সহায়ক।
কিন্তু আম্বারের সৌন্দর্যই কেবল বিখ্যাত বানায়নি তাকে। মেয়েটার ইতিহাসও তাকে বানিয়েছে কল্পনার এক উপকরণ। হার্তুমের অবরোধে পড়ে বেঁচে যাওয়া একজন মানুষ এই আম্বার। ব্রিটিশ গর্বে বড়সড় একটা কলঙ্ক ছিল সেই অবরোধ। দশ মাস ধরে চীনে চলা ব্রিটিশ ক্যাম্পেইনের নায়ক জেনারেল গর্ডন শহরকে রক্ষা করেছিল সুদানের বিদ্রোহী যোদ্ধা ও তাদের আধ্যাত্মিক নেতার হাত থেকে। সেই নেতাকে নবীর পুনর্জন্ম হিসেবে দেখত তার অনুসারীরা। তবে, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টারদের কাছে সে পরিচিত ছিল ‘পাগলা মাহদি’ নামে। ওয়েস্টমিনস্টার সংসদের সদস্য এবং লন্ডন প্রেসের লেখক নেতারা চেয়েছিল রক্ষা করা হোক গর্ডনকে। কিন্তু এতে দ্বিধাগ্রস্ত ছিল স্বরাস্ট্রমন্ত্রী। তাই শহরটিকে পতিত হতে হয়েছিল অনাহারে থাকার অবস্থার ভিতর। একমাত্র ইন্টেলিজেন্স অফিসার ছিল এই পেনরড, যে শত্রুর নজর এড়িয়ে সরকারের বার্তা ও আদেশটা পৌঁছে দিতে পারে গর্ডন ও শহরের ব্রিটিশ রাজপ্রতিনিধি ডেভিড বেনব্রুকের কাছে। পেনরডের সেখা হয়েছিল বেনব্রুকদের বড় মেয়ে রেবেকার সাথে। বাবার রেখে যাওয়া অবশিষ্ট সম্পদের ক্ষেত্রে জিম্মি হিসেবে কাজ করছিল মেয়েটা। আর তার ছোট দুই যমজ বোন, আম্বার ও স্যাফ্রন তাদের দিনের বেশিরভাগ সময়ই কাটিয়ে দিত লোকদের খাদ্যদ্রব্য হিসেবে জলজ গাছগাছড়াগুলোকে পেষাইয়ের কাজ করে।
মাহাদির যোদ্ধাদের ধারাবাহিক আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য শহরের দেয়ালের উপর লড়াইয়ে মত্ত ছিল পেনরড। অবরোধকে উঠিয়ে নিতে সরকারী বাহিনীকে ছলনাময় মরুভূমির ভিতর দিয়ে নিয়ে এসেছিল এরপর। কিন্তু মুক্তি আসলো অনেক দেরিতে। খার্তুমে ব্রিটিশ বাহিনী পৌঁছবার আগেই, নদীপথে শেষ একবারের মতো আক্রমণ চালিয়েছিল দরবেশরা। ক্ষুধা ও জ্বরাক্রান্ত সেই সময়ের মধ্যেই, গর্ডনকে হত্যা করতে এবং প্রকাশ্য রাজপথে নিজের পিতাকে কতল হতে দেখল আম্বার বেনব্রুক। যদিও নিজের পরিবারকে নিরাপদেই দূরে সরিয়ে রাখতে চেয়েছিল আম্বারের পিতা।
আম্বারের যমজ স্যাফ্রন পালিয়ে যেতে পেরেছিল এক বণিকের সহায়তায়। রাইডার কোর্টনি নামের সেই লোকটিও আটকা পড়েছিল অবরোধে। পরে সেই লোকের সাথে বিয়েও বসেছিল স্যাফ্রন। কিন্তু আম্বার ও তার বড় বোন রেবেকাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল গণিমতের মাল হিসেবে উপস্থিত করা হয়েছিল প্রথমে মাহদি এবং পরে তাদের সবচেয়ে শক্তিমান যুদ্ধনেতা ওসমান আটালানের সামনে। বেনব্রুক বোনদেরকে পরিত্যাক্ত করে আসতে চায়নি পেনরড। কিন্তু ওসমান শিবিরে অনুপ্রবেশের পর বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়ে ধরা পড়ে সে। তাকে পরিণত করা হয় ক্রীতদাসে এবং বেশ কয়েক মাস ধরে তার উপর চলে নির্যাতন।
নিজেদের বাঁচাতে ওসমানের প্রিয় রক্ষিতায় নিজেকে পরিণত করতে হয়েছিল রেবেকার। ওসমানকে বলেছিল, তার শারীরি ক্ষুধা মেটানোর জন্য আম্বারের বয়স একেবারেই কম। এর বদলে নিজের গিয়েছিল ওসমানের বিছানায়। মনে হচ্ছিল এসবই স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে ওদের কাছে। কিন্তু স্যাফ্রন, কোর্টনি ও পেনরডের আরব বন্ধুরা ওদের উদ্ধারে এক দুঃসাহসী মিশন চালিয়েছিল নদীপথে। এটা খুবই জরুরী ছিল। কেননা, আম্বারের বাড়বাড়ন্ত যৌবনের দিকে নজর চলে যাচ্ছিল ওসমানের। কিন্তু রেবেকা তাদের সাথে চলে যেতে অস্বীকৃতি জানাল। তার গর্ভে ইতোমধ্যে চলে এসেছিল ওসমানের সন্তান। ছেলে সন্তানের মা হতে যাচ্ছিল সে। সঙ্কর সন্তান হিসেবে নিজ জাতির লোকদের কাছে তিরস্কৃত হওয়ার বদলে ছেলেটাকে সে বেড়ে উঠতে দিতে চাসিল তার ইসলামিক পিতার সুরক্ষাবলয়ের ভিতরেই।
১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:২৭
শেহজাদ আমান বলেছেন: প্রেক্ষাপটটা উনিশ হতকের প্রথম দিকে। আফ্রিকার মুসলিম অধ্যূষত এলাকায় ব্রিটিশদের সংগ্রাম নিয়ে কাহিনী!
২| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৪২
শেহজাদ আমান বলেছেন: প্রেক্ষাপটটা উনিশ হতকের প্রথম দিকে। আফ্রিকার মুসলিম অধ্যূষত এলাকায় ব্রিটিশদের সংগ্রাম নিয়ে কাহিনী!
৩| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:৩৪
রাজীব নুর বলেছেন: আর একটু গুছিয়ে লিখলে ভালো হতো।
১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:২৫
শেহজাদ আমান বলেছেন: পরামর্শ গ্রহণ করা হইল!
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:১৫
ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: প্লটটা ঠিক ধরতে পারলাম না। সাহায্য করবেন আশা করি।