![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
A competent and confident freelance Journalist, writer, author of 37 popular science (non-fiction)books and novel for kids working as a corporate digital documentary maker on educational affairs. Familiar with information approaches, tools, methods, logics for planning, executing and monitoring printing and information strategies. Working for the public and knowledge of social, political and development issues at home and abroad. Strong analytical skill with some research background. Has an Intimate knowledge of modern methods of publicity, public relation, copy writing, publication, and art criticism. Quick learner, well conversant and smart. Also possesses a poetic instinct to express thought in a lucid way.
শেখ আনোয়ার
চটুল কথাবার্তা দিয়ে ওয়াজ-নসিয়ত করা আমাদের দেশের মওলানা-মৌলবি সায়েবদের প্রিয় অভ্যেস। তারা ওয়াজে এমন সব অশ্লীল কথাবার্তা বলেন যা কোনোভাবে শিক্ষামূলক তো নয়ই, বরং সমাজে অশিক্ষা-কুশিক্ষা ছড়িয়ে দেয়। এক্ষেত্রে তাদের (মৌলবি সায়েবদের) এক একজন অন্য জনের চেয়ে বাকপটু কিনা তা নির্ধারিত হয় তার বাকচাতুর্য দিয়ে। অধিকাংশ সময় সেই সব ওয়াজের সামাজিক ঘটনাবলি যা দিয়ে ওয়াজকারী তুলনামূলক জ্ঞান দিতে চান তা অশ্লীল এবং বিশেষত নারীদেহের বিভিন্ন উপাঙ্গ কেন্দ্রিক। বলাবাহুল্য এই ধরনের ওয়াজ শুনে উপস্থিত পুরুষরা পুলকিত এবং উত্তেজিতও হন। এবং তারাও তাদের প্রাত্যহিক জীবনে ওই ওয়াজের পুনরালোচনা করেন। কিন্তু এটা যে অশ্লীল, কদর্য এবং নারীদের প্রতি অবমাননাকর তা নিয়ে উপস্থিত পুরুষদের কোনো প্রতিবাদ নেই। বরং উৎসাহী পুরুষ শ্রোতার উত্তেজনা ধরতে পেরে বক্তার উত্তেজনা এবং জোশ দ্বিগুণ মাত্রা পায়। এটা এই সমাজে নতুন কিছু নয়। এর আগে মওলানা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর ওয়াজেও নারী দেহ, নারীর গোপন অঙ্গ নিয়ে কুরুচিপূর্ণ ওয়াজ ক্যাসেটে সারা দেশময় ছড়িয়েছিল। মায়ের গর্ভধারণের মাহাত্ম্য বোঝাতে তিনি পুরুষ গর্ভধারণ করলে কী হতে পারে তার বর্ণনা দিয়েছিলেন।
চিরাচরিত নারীদেহকেন্দ্রিক অশ্লীল ওয়াজের ধারাবাহিকতায় এবার হেফাজতে ইসলামের নেতা মওলানা আহমাদ শফী তার ওয়াজে নারীদের প্রতি তীব্র কটাক্ষ করে অশ্লীল সব কথাবার্তা বলেছেন। সেই ওয়াজ ভিডিও আকারে অনলাইনে সারা দেশময় ঘুরছে। এ নিয়ে দেশের সুশীল সমাজ, নারী সমাজ প্রতিবাদী হয়েছেন। প্রতিবাদ হয়েছে অনলাইনে, পত্র-পত্রিকায়। একজন বর্ষীয়ান ধর্মীয় নেতা নারীদের নিয়ে যে এ ধরনের ঘৃণ্য কথা বলতে পারেন তা কেবলমাত্র অবিশ্বাস্যই নয়, অমার্জিত।
মওলানা শফী কী বলেছেন?
‘১। আপনি স্বামীর ঘরে থেকে আসবাবপত্র হেফাজত করবেন। বাইরে কেন যাবেন? ২। আপনার কাজ ঘরে থাকিয়া ছেলেসন্তানের দেখাশোনা করা। ৩। মার্কেটিং করতে যাবেন না। স্বামী আর ছেলেকে মার্কেটিং করতে পাঠান। ৪। আপনার মেয়েকে কেন দেন, গার্মেন্টসে চাকরি করতে? ৫। আপনার বিবি ইস্কুলে চাকরি করে, ডাক্তারি শিকছে, গার্মেন্টসে চাকরি করে। আগের দিনে পুরুষ চাকরি করতো, শরাফতের সঙ্গে পরিবার পরিজন নিয়ে খাইতো। আজকে সবাই মিলে রোজগার করে। বরকত নাই, বরকত নাই, বরকত নাই। বরকত কি করিয়া হবে? ফজরে সাতটা-আটটা বাজে গার্মেন্টসে যায় আপনার মেয়ে, রাতের আটটা দশটা বারোটায়ও ফিরে না। কোন পুরুষের লগে ঘুরাফিরা করতেসে তুমি ত জান না। কতো জনের মধ্যে মুত্তালা হচ্ছে আপনার মেয়ে, আপনি ত জানেন না। জেনা কইরা কইরা টাকা রোজগার করে কি বরকত হবে? ৬। আপনার বিবি ইস্কুল কলেজ ভার্সিটি পর্যন্ত লেখাপড়া করছে। আরে, কেলাস ফোর-ফাইভ পর্যন্ত লেখাপড়া করান। বিবাহ দিলে স্বামীর টাকা-পয়সার হিসাব নিকাশ কইরতে পারে মতো। অতোটুকু দরকার। ৭। মহিলা তেঁতুলের মতো তেঁতুলের মতো তেঁতুলের মতো। ছোট্ট একটা ছেলে তেঁতুল খাইতেসে আপনি দেখতেসেন। আপনার মুখ দিয়া লালা বাইর হবে। সত্য না মিথ্যা বলেন ত? মার্কেটে যেদিকে তেঁতুল বিক্রি করে, সেদিকে যদি আপনি যান, আপনার মুখ থেকে লালা বাইর হয়। সত্য না মিথ্যা বলেন ত? সত্য না মিথ্যা? মহিলা তার থিকাও বেশি খারাব। (বিরতি) মহিলার দিকে দেইখলে, (বিরতি, হাতের মুঠি বুকে ঠুকতে ঠুকতেৃ) বুকের মধ্যে লালা বাইর হয়। ৮। যতোই বুজুর্গ হোক না কেন, এই মহিলাকে দেখলে, মহিলার সঙ্গে হেনশেক করলে, আপনার দিলের মধ্যে, কু-খেয়াল আইসা যাবে, খারাপ খেয়াল। ৯। কেউ যদি বলে, বুড়া মানুষ, হুজুর, মহিলাকে দেখলে আমার বুকের ভিতর খারাব হয় না, কু-খেয়াল আসে না, তাহলে আমি বইলব ভাই, হে বুড়া, তোমার ধ্বজভঙ্গ বিমার আছে, তোমার ফুরুষত্ব নষ্ট হইয়া গেছে।ৃ ১০। ইস্কুলে কলেজত উলঙ্গ উলঙ্গ পড়ি পড়ি, এডল্যা প্রত্যকদিন মাইয়াফুয়া মরদফুয়া আঁরাত্তে আইয়েদ্দে (আমাদের এখানে আসছে), হুজুর ছেলে হয় না একটা তাবিজ দাওৃ ছেলে কেন হচ্ছে না? ছেলে হবার জিনিস বীর্য, কারণ তোরা মাইয়া-পোলা ইস্কুল কলেজে পড়ার সময় সব বীর্য নষ্ট করেছিসৃ’
এসব বক্তব্য কোনো মওলানা নয়-ই, কোনো বিকৃত মানুষের মুখ থেকেও সাধারণত উচ্চারিত হওয়ার কথা নয়। অথচ কী অবলীলায় একজন দেশবরেণ্য (!) মওলানা প্রকাশ্যে এইসব কুরুচিপূর্ণ অশ্লীল কদাকার এবং মায়ের জাত নারীর প্রতি চরম অপমানজনক বলে বসলেন। শুধু বললেন না, সেই বক্তব্য দেশময় প্রচারও করলেন! এটা যদি কোনো ধর্মীয় নেতার বক্তব্য হয় তাহলে সেই ধর্মের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ধার্মিকের মনোভাব কেমন হবে? সেই ধর্ম নিয়ে ভিন্ন ধর্মের লোকেরাই বা কী ভাববে? যদিও শফী সাহেবের মতো অর্ধশিক্ষিত মানুষের সেসব জানার কথা নয়। তিনি এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা নিজেদের গ-িকেই বিশ্ব মনে করেন। নিজেদের মাথার ওপরকার আকাশকেই একমাত্র আসমান মনে করেন। তাদের কাছ থেকে এর চেয়ে সুস্থ কিছু আশা করাও বোকামি। এভাবেই তারা দিনের পর দিন বছরের পর বছর যুগের পর যুগ ধর্মব্যবসা করে আসছেন।
সাধারণ মানুষ, সুশীল সমাজের প্রতিবাদের পর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শফীর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছেন। তথাকথিত ভোটের ভালো-মন্দ হিসেব-নিকেশ না করে প্রধানমন্ত্রী যে প্রতিবাদ করেছেন তা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যথাযথ এবং নারী সমাজের একজন হিসেবে অবশ্যই তিনি ধন্যবাদার্হ। যে দেশের সরকার প্রধান এবং বিরোধী দলের নেতা নারী সে দেশে নারীদের নিয়ে এই ধরনের অমার্জিত অপরাধ অবশ্যই শাস্তিযোগ্য।
©somewhere in net ltd.