নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আল্লাহ ছাড়া আর কোন সৃষ্টিকর্তা নেই । হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল ।

েশখসাদী

আল্লাহ ছাড়া আর কোন সৃষ্টিকর্তা নেই । হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল ।

েশখসাদী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইরানে ১০ বছর - ডঃ সাদেক আহমেদ । MBBS, DCH.

২৩ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৪:০২

১৯৮৩ সালের অক্টোবর মাসে আমার ক্লাসমেট ও বন্ধু ডাঃ মোমিন সহ ইরানে যাই । এয়ারপোর্ট থেকে হোটেল আমীর কবির যাবার জন্য টেক্সীর জন্য অপেক্ষা করি । একজন ইরানীকে হোটেলে যাবার জন্য ইংলিশে বলি । ওই ভদ্রলোক ইংরেজী জানেনা । তাই আমার ব্যাগ ধরে একদিকে টানতে আরম্ভ করায় ভয়ে আমার বন্ধুকে বলি , 'মোমিন আমার ব্যাগ নিয়ে যাচ্ছে' , তখন মোমিন বলল-তুই সাথে সাথে যা । আমি তোকে অনুসরণ করছি । দরকার হলে হেল্প হেল্প বলে চিৎকার করব ।

তাই করলাম । ওই ইরনী এক টেক্সী ড্রাইভারকে কি যেন বলল । তখন ওই ড্রাইভার আমাদেরকে হোটেল আমীর কবির এর সামনে নামিয়ে দেয় । তখন আমি একশ ইরানী রিয়াল দেই । ড্রাইভার এক হাজার ইরানী রিয়াল চায় । তখন ইংরেজীতে কথা কাটাকাটি করি । ড্রাইভার আমাকে গরিব ভেবে পয়সা না নিয়ে চলে যায় । তখন সরকারীভাবে এক ইউ এস ড্লার = ৭০০ রিয়াল ছিলো ।

পরদিন তেহরাণ শহর দেখতে দুই বন্ধু বের হই । দশ রিয়ালে বাসে শেষ ষ্টপিজ পর্যন্ত যাওয়া যেত । আমরা এভাবে অল্প পয়সায় তেহরাণ শহর দেখছি, হঠাৎ দেখি N.I.O.C (National Iranian Oil Company ) এর অফিস । শুনেছি এই অফিসে ডাক্তার নেয় চাকুরীর জন্য । তাই ওখানেই নেমে পড়লাম । দারোয়নকে ইংরেজীতে জিজ্ঞেস করলাম - এই অফিসের ডাক্তার রিক্রোট এর অফিস কোথায় ? ওই লোক আমাদেরকে ধরে লিফটে চার তালায় একজন ইংরেজী জানা লোকের কাছে নিয়ে যায় । সেই ভদ্রলোক - মীর সে পার্সী , ডাক্তার রিক্রোটমেন্ট অফিসার । আমরা ওর কাছে চাকুরী করার ইচ্ছা পোষণ করলে বলল- এক সপ্তাহের মধ্যে জয়েন করতে পারব কিনা ? বললাম- পারব । তাই ওয়ার্ক ভিসার জন্য অন্য দেশে যেতে হবে । তাই টার্কি , ইস্তান্বুল যেতে ইচ্ছা প্রকাশ করায় , ইস্তাম্বুলের টিকেট দিয়ে দেয় ।

আমরা ইস্তাম্বুল পৈাছে ইরানী এম্বেসী থেকে ওয়ার্ক ভিসা নিয়ে নেই এবং তোপ কাপি মিউজিয়াম দেখি । ওসমাণী শেষ খলিফার প্রাসাদ ভিজিট করি । সেখানে নবীজীর পায়ের ছাপ, পাগড়ী, তরবারী এবং ওহুদ যুদ্ধের দন্ত মোবারক শহীদ হওয়ার রক্ষিত কেীটা দেখি । চার খলিফার তরবারী , দাউদ (আঃ) এর তরবারী এবং পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম হীরার খন্ড দেখি । তাছাড়া ব্লু মসজিদ, বসফরাস প্রণীল, সেন্ট সোফিয়া মসজিদ ভিজিট করি । অতঃপর তেহরাণে পৈাছি । পৈাছে তেহরাণ মিউজিয়ামে ময়ুর সিংহাসণ দেখি ।

তারপর N.I.O.C বাসে করে আমার কর্মস্হল মসজিদ সুলায়মান শহরে নিয়ে যায় । গিয়ে দেখি - শহর প্রায় খালি । সব ডাক্তার হাসপাতাল ছেড়ে অন্য শহরে পালিয়ে গিয়েছে । কারণ- গত সপ্তাহে ওই শহরে ইরাক মিসাইল মেরে অনেক লোক হত্যা করেছিলো । তখন ইরান -- ইরাক যুদ্ধ চলছিলো । ভাবলাম যখন এসেই পড়েছি - কাজ করব । তখন ব্যাচেলর ছিলাম । দুই দিন পর - ডেপুটেশনে হেলিকাপ্টারে করে ৫০ কিলোমিটার দূরে এক পাহাড়ী গ্রামে পাঠায় । রাত্রে পাহাড়ের ভিতর এক ঘরে থাকি । পাশের রুমে গরু, গাধা এবং ভেড়া ছিলো । শীতের কারণে মানুষ ও পশু পাশাপাশি থাকে পাহড়ের মধ্যে খোদাই করা বাড়ীতে । পরদিন সকালে গাধায় চড়ে রোগী দেখতে রওনা হই । ৩ কিঃমিঃ পরে দেখি রাস্তার দুই পাশে দুই দল বন্দুকধারী লোক । দোভাষী বলল- ওরা যুদ্ধ করবে । যেই দল জিতবে সেই গ্রামে প্রথম রোগী দেখতে হবে । তখন আমি বুদ্ধি করে ইংরেজীতে বললাম- কোন গ্রামেই রোগী দেখব না । আমি ফিরে যাব । তখন দুই দল দোভাষীকে বলল- ডাক্তার যা বলে আমরা তাই মানব । তখন আমি গাধার পিঠে উঠে ইংরেজীতে বক্তৃতা দিয়ে বললাম - আমার ডানে যেই গ্রাম , সেই গ্রামে প্রথম রোগী দেখব । কারণ - আমার নানী আমাকে উপদেশ দিয়ে ছিলো - যে কোন বিপদে ডান দিক কে অগ্রধিকার দিবে । দোভাষী তা বলে দিলে দুই দলই আমার কথায় রাজী হল- আর যুদ্ধ করবেনা ।

তখন ডানের গ্রামে রোগী দেখা আরম্ভ করি । তবে আমার এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয় । এক রোগী তার বাচ্চকে বোরকার নিচে করে এনে বলল- ওর বাচ্চার পাতলা পায়খানা হচ্ছে । রোগী দেখতে চাইলে বোরকার নিচ থেকে বের করল ভেড়ার বাচ্চা । বললাম - আমি তো পশুর ডাক্তার নই, তোমার বাচ্চার চিকিৎসা কিভাবে করব ? ওই মহিলা বলল- তুমি মানুষের ডাক্তার , পশুর চিকিৎসা তোমার জন্য কিছুই না । ভীষন বিপদে পড়লাম । মহিলা তো ঠিকই বলেছে । তবে আমার এক স্যারকে মেডিকেল কলেজে বলতে শুনেছিলাম - পশুদের মানুষের থেকে ওষুধ ডাবল ডোজ লাগে । তাই মানুষের বাচ্চার ওষুধ হিসাব করে - ডাবল ডোজ ওষুধ দেই । দুই দিন পর ওই মহিলা অনেক পাহাড়ী ফল ও বেদানা আমার জন্য নিয়ে আসে এবং আনন্দ প্রকাশ করে বলে- বাচ্চা ভালো হয়ে গিয়েছে । এমনিভাবে ইরানে দশটি বছর কেটে ছিলো ।তারপর - ১৯৯৪ সালে নিউজিল্যােন্ডে রেসিডেন্ট হয়ে চলে যাই এবং ১৯৯৮ সালে অষ্ট্রেলিয়ার রেসিডেন্ট হয়ে চলে আসি । ২০০২ সালে অষ্ট্রেলিয়ান এ এম সি পরীক্ষা পাস করি এবং ডাক্তারী আরম্ভ করি । ইনশাল্লাহ পরবর্তীতে সুযোগ হলে আরো লিখব ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.