নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সেলিনা জাহান প্রিয়া , জন্ম পুরান ঢাকা, নাজিরা বাজার , নানা বাড়িতে ।বাবার বাড়ি মুন্সী গঞ্জ , বড় হয়েছি ঢাকা ।স্বামীর বাড়ি কিশোরগঞ্জ ।ভাল লাগে ঘুরে বেড়াতে , কবিতা , গল্প , উপন্যাস পড়তে অজানাকে জানতে । ধর্ম বিশ্বাস করি কিন্তু ধর্ম অন্ধ না ।

সেলিনা জাহান প্রিয়া

পৃথিবির প্রতিটি গল্পের শুরু আছে শেষ নাই শুধু। আমার লিখা কবিতার সাথে গল্পের সাথে আমার জিবনের কোন মিল নেই , আমি লিখি লিখিকা হবার জন্য নয় । ভাল লাগে তাই । অনেকই মনে করে আমি ব্যক্তি জীবনে খুব কষ্টে আছি । আসলে সুখ দুঃখ নিয়েই জীবন ।, অন্য ১০ জন মানুষের মতেই আমার জীবন ।

সেলিনা জাহান প্রিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক নীরা খালা মনির গল্প ।।

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ২:৩৭


-----------------------------------

নীরা খালা। ইমু যখন বিশ্ব বিদ্যালয়ে পড়ে তখন পরিচয় হয় পুরান ঢাকার ছেলে সুমনের সাথে । সুমনের ফুফু হয় নীরা কিন্তু ইমু তাকে খালা মনি ডাকে । ইমু বলে খালা হল মায়ের বোন । নীরা খালা ইমুকে তাঁর বোনের ছেলে হিসাবেই দেখে যদি নীরার নিজের কোন বোন নেই । নীরার বাবা রেখে যাওয়া বাড়িতেই থাকে । নীরার স্বামী মারা যাওয়ার পর স্বামীর বাড়ি থেকে বাপের বাড়িতে চলে আসা । নীরারা একমাত্র ভাইয়ের দুই ছেলে এক মেয়ে তাদের সব দায়িত্ব নিজের করে নেয় । নীরা আর বিয়ে করে না । ভাইয়ের ছেলে মেয়ে কে আপন করে নেয় । সুমন রাজন আর দিলা, ভাই ভাবী কে নীরার সংসার । দেখতে দেখতে কেমন করে সুমন রাজন দিলা রা নীরার হাত ধরে বড় হয়ে গেল ।
সুমনের সাথে ইমু প্রায় চলে আসত সুমনের বাসায় । আসলেই নীরা খালা খুব আদর করত ইমু কে । কেমন জানি একটা মায়ার আঁচল পেয়ে গেল ইমু ।
ইমু যে কোন সমস্যা মানেই নীরা খালা মনি ।
বিশেষ করে ভাল কিছু রান্না হলে নীরা খালা মনি ইমুকে ডাকবে । সুমনের বিশ্ব বিদ্যালের প্রায় সকল বন্ধু তখন নীরা খালা মনির প্রশংসায় শেষ । সবাই ইমুর জন্য খালা মনি হয়ে যায় সুমনের ফুফু । নীরা কে আর কেউ অ্যান্টি বা ফুফু ডাকে না। সবার কাছে নীরা খালা মনি । সুমনের বোনের দিলার বিয়ে যায় আমেরিকার প্রবাসী ছেলের সাথে । এ দিকে ইমুর বিশ্ব বিদ্যালয় শেষ । সবাই যে যার কাজে এক সময় ব্যস্ত হয়ে যায় । সময় গড়িয়ে অনেক দূর । সুমন রাজন তাদের বোনের জন্য এখন আমেরিকায় ।
সুমনের বাবা মারা যাওয়ার পর সুমন তাঁর মা কেও নিয়ে যায় আমেরিকায় । সুমনের ঢাকার বাড়িটায় নীরা খালা মনি একাই থেকে যায় । যদি এই বাড়ির সাত খাটা বাড়ির তিন খাটার মালিক নীরা খালা ।
ইমু কোন কাজে ঢাকা আসলেই নীরা খালা কে এক নজর দেখে যাবে । মোবাইল হওয়াতে মাঝে মধ্য নীরা খালা সাথে প্রায় কথা হয় । নীরা খালা মনির ভাইয়ের ছেলেরা আমেরিকায় তেমন ভাল কিছু করতে পারে নাই । নাম মাত্র সুমনেরা ফুফুর খবর রাখে । একটা দু তলা বাড়ি তিনটা রুম ভাড়া যা পায় টা দিয়ে নীরা খালা মনি চলে । সত্যি কারের একজন ভাল মানুষ । জীবনে নিজের করে কিছু চায় নাই । সব ভাল বাসা তাঁর ভাইয়ের ছেলে মেয়েদের পিছনে ব্যয় করেছে । বাবার বাড়িটা দেখে শুনে রাখে । এর মধ্য এক দুই বার সুমন রাজন এর দিলা বাংলাদেসে এসে গেছে । সুমন বলে ফুফু তোমাকে তো নিতে চাই আমেরিকা কিন্তু সে খানে তোমার ভাল লাগবে না। তাছার এই বাড়ির এখন অনেক দাম
তুমি ছারা এই বাড়ি কে দেখে রাখবে । নীরা মনে মনে খুব খুশি হয় । যাই হোক বাবার বাড়িতে যেন শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে পারে ।
হতাৎ করে একদিন সুমন এর রাজন বাংলাদেশে আসে । বাড়ির মধ্য কিছু নতুন লোক জন আসতে থাকে । নীরা খালা মনি জানতে পারলো এই বাড়ি তারা বিক্রি করে দিবে । নীরা খালা মনি তখন মনে করে হয়ত সাথে করে তাকে আমেরিকা নিয়ে যাবে । কিন্তু কেউ চাইলেই কি কাউকে নিতে পারে । নীরা খালা কে সুমন রাতে বলে ফুফু তোমাকে নিতে সময় লাগবে । আমরা এখানে একটা এক রুমের বাসা ভাড়া করে দিব আর কাগজ পত্র হতে যত দিন লাগে । মাসে মাসে তোমার জন্য টাকা পাঠিয়ে দিব ।
আর যে দিন কাল পরেছে কে কখন বাড়ি দখল করে নেয় তাঁর ঠিক আছে কি?
নীরা খালা খব চিন্তায় পড়ে যায় । এবার বলে ভাইয়ের সন্তান তাঁর তো নিজের সন্তানের মতই । আমি এই বাড়ি দিয়ে কি আর করব ।
রাতে ইমু কে ফোন করে নীরা খালা - ইমু বলে খালা মনি তুমি আসলে বোকা । নিজের জন্য কি তুমি কিছু কোন দিন ভাববে না। দেখ সুমন তাঁর মাকে আমেরিকা নিয়ে গেল সাত বছর । এই সাত বছরে কি তোমার কাগজ হই নাই । আজ পর্যন্ত তোমার পাসপোর্ট করিয়েছে । করে নাই । নীরা খালা ভাবনায় পরে যায় । ইমু তো ঠিক ই বলেছে । কিন্তু আমার তো ভাইয়ের ছেলে মেয়ে ছারা আর আপন কেউ নাই । আমার আপন ভাইয়ের ছেলে মেয়ে । তাদের আমি আপন সন্তানের মত মানুষ করেছি । তারা কি আমকে বিপদে ফেলে যাবে । অনেক চিন্তা শেষ করলো রাতে ।
সকালে অনেক লোক জন এলো জমি মাপতে । সিঁড়িতে বসে দেখছে লোক জন কে । আসতে আসতে নিচে নেমে এলো নীরা খালা । সুমন কে বলল - এরা কি করে
-- ফুফু জমি মাপছে ।
-- কেন
-- তোমাকে না বললাম ?
--অহ । আমার অংশ বাদে মাপতে বল ।
-- ফুফু কি বল তুমি ? এরা একটা ডেভেলাপার কোম্পানি?
--- যাই হউক ।
-- আমার অংশ বিক্রি করব না ।এটাই আমার শেষ কথা । রাজন বলল - ফুফু তুমি বুঝতে পারছ না ।
-- থাক আমি এ ব্যাপারে কথা বলতে চাই না ।
-- কেন বলবে না । ভাল দাম দিবে । তাছারা তোমার ছেলে মেয়ে নাই । আমরা ছারা কি তোমার দেখার কেউ আছে ।
--- অনেক দেখেছ আর দেখতে হবে না।
অনেক কথা কাঁটা কাটি হয়ে গেল অল্প সময়ের মধ্য । ডেভেলাপার পুরা অংশ ছারা নিবে না। সুমন তাঁর মামা কে বিষয় টা বলল । বিকালে মামা এসে নীরা খালাকে বুঝিয়ে বলল - যে সুমন রাজনের আমেরিকায় অনেক টাকা লাগবে । না হয় ওদের সমস্যা হবে । তাছারা তারা একটু ভাল কিছু করে তো আপনাকে নিয়ে যাবে । নীরা খালা বলল - আমি আমার অংশ বিক্রি করব না । এটাই আমার শেষ কথা ।
রাতে সুমনের মা ফুন করে বলল - দেখ নীরা তারা তোমার ভাইয়ের ছেলে মেয়ে । সারা জীবন তোমার ভাই তোমাকে পেলেছে । তুমি তো বুঝতে চাও না । তাছারা আমরা কি তোমার খারাপ চাই । তুমি মারা গেলে তো এ সম্পদ তোমার ভাইয়ের ছেলে মেয়ে পাবে । তুমি বেঁচে থাকতেই দিয়ে দাও । তাতে তোমার সম্মান আমার ছেলেদের কাছে অনেক বেশি হবে ।
শেষ পর্যন্ত নীরা খালা মনি ভাইয়ের ছেলেদের বিশ্বাস করে বাড়ি বিক্রিয় করে দেয় । ইমু বন্ধুর কাছে
খুব ছোট হয়ে যায় । আর খালামনি ইমুর কথা রাখে না। এর পর অনেক দিন আর ইমু নীরা খালাকে ফোন করে না এ ঠিক বছর তিন পরে ইমু তাঁর একটা বিশেষ কাজে ঢাকা আসে । আর একবার চিন্তা করে নীরা খালা কে দেখে যাই । নীরা খালা দেখতে তাঁর নীরা খালার মহল্লায় যায় ।
নীরা খালাদের চিনে এমন একজনের সাথে দেখা হলে ভদ্রলোক খুব দুঃখ করে বলে - ইস নীরা এই ছিল কি তাঁর কপালে । কেউ তাঁর খোজ নেই নেই । তাঁর ভাইয়ের ছেলে রা মাস ছয়েক কিছু টাকা পাঠাত । হটাৎ তাদের টাকা দেয়া বন্ধ হয়ে যায় । বাসাভাড়া দিতে পারছিল না। কিছু দিন বাচ্চাদের আরবি পড়াত । তাঁর পর এক বাসায় একটা বাচ্চা দেখার কাজ নেয় । ঐ বাসায় বছর দুয়েক ছিল । কিন্তু যে মহিলার বাচ্চা দেখত তাঁর চাকুরি চলে গেলে । আমাদের বাসায় কয়েক মাস কাজ কাম করে ছিল । কিন্তু এর মধ্য তাঁর একটা অসুক দেখা দেয় । চিকিৎসা করার মত তেমন টাকা ছিল না। আমেরিকায় ফোন করে কাউ কে পাওয়া যায় নাই । ঢাকা মেডিক্যালে মাস খানেক ছিল । মহল্লার সবাই চাঁদা তুলে নীরা কে চিকিৎসা করা হয় । এখন নীরা কে ঢাকা মেডিক্যাল গেলে পাইলে পাইতে ও পারেন । ঐ রোগী দের কাম কাজ করে কিছু যদি পায় তাতেই চলে । মাঝে মধ্য আমগো মহল্লায় আসে । আর এখন তো বয়স হয়েছে তেমন কাজ কজ ও করতে পারে না ।
ইমু নীরা খালাদের বাসার সামনে দারিয়ে দেখ কি সুন্দর একটা ১০ তলা আধুনিক বাড়ি । ইমু অবাক চোখে বাড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখে । আর নীরা খালা মনির মায়া আদর আর ভালবাসার সেই ছবি চোখে ভেসে উঠে ।
ইমুর স্ত্রী কে ফোন করে ইমু - নীরা খালার দুঃখের কথা স্ত্রী কে শুনায় । ইমুর স্ত্রী বলে - শুন ইমু রিজিকের মালিক আল্লাহ্‌ । তা ছারা তুমি এক সময় নীরা খালার অনেক সাহায্য সহ যোগিতা পেয়েছ । উনার বাকি জীবন টা আমাদের সাথে থাকুক । ইমু ঢাকা মেডিক্যাল যায় খুঁজতে খুঁজতে
এক সময় নীরা খালাকে পেয়ে যায় । ইমু পিছিন থেকে ডাক দেয় নীরা খালা মনি ।মুখ ফিরিয়ে দেখে
ইমু । নীরা খালা আচল দিয়ে মুখ ডেকে কাঁদতে থাকে । ইমু কাছে যায় । নীরা খালা বুকে জরিয়ে বলে বাবা ইমু তুমিই সত্যি বলেছিলে কিন্তু আমি ভালবাসা আর মায়ার মমতায় তাদের বিশ্বাস করে আজ রাস্তার ভিখারি । ইমু বলে না খালা মনি আপনি অনেক মহত । আপনার বিশ্বাস ঠিক ছিল বরং তারাই বিশ্বাসের ঘর চুরি করেছে । তাই আল্লাহ্‌ আমাকে আপানার সেবা করতে পাঠিয়েছে ।
নীরা খালা মনি কে নিয়ে ইমু চলে আসে তাঁর নিজ বাড়িতে । পরম মমতায় ঠাই দেয় নীরা খালা কে । কিন্তু আমাদের সামাজে কত জন নীরা খালা মনি ইমু দের পায় বলুন । বেশির ভাগ নীরা খালা মনিরা হয়ত এর চেয়েও বেশি কষ্টে আছে কাউকে না কাউকে বিশ্বাস করে

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:৪১

রুদ্র জাহেদ বলেছেন: কিন্তু
আমাদের সামাজে কত জন নীরা খালা মনি ইমু দের
পায় বলুন । বেশির ভাগ নীরা খালা মনিরা হয়ত এর
চেয়েও বেশি কষ্টে আছে কাউকে না কাউকে
বিশ্বাস করে।
নির্মম বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তুলেছেন।বেশ ভালো লাগল

২| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:২৫

গেদা (Geda) বলেছেন: অত্যন্ত ট্রাজিডি ও করুন গল্প ! মানুষ কতো বড় অকৃতজ্ঞ । এ সমাজে কাকে বিশ্বাস করা যায় ! :((

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.