নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সেলিনা জাহান প্রিয়া , জন্ম পুরান ঢাকা, নাজিরা বাজার , নানা বাড়িতে ।বাবার বাড়ি মুন্সী গঞ্জ , বড় হয়েছি ঢাকা ।স্বামীর বাড়ি কিশোরগঞ্জ ।ভাল লাগে ঘুরে বেড়াতে , কবিতা , গল্প , উপন্যাস পড়তে অজানাকে জানতে । ধর্ম বিশ্বাস করি কিন্তু ধর্ম অন্ধ না ।

সেলিনা জাহান প্রিয়া

পৃথিবির প্রতিটি গল্পের শুরু আছে শেষ নাই শুধু। আমার লিখা কবিতার সাথে গল্পের সাথে আমার জিবনের কোন মিল নেই , আমি লিখি লিখিকা হবার জন্য নয় । ভাল লাগে তাই । অনেকই মনে করে আমি ব্যক্তি জীবনে খুব কষ্টে আছি । আসলে সুখ দুঃখ নিয়েই জীবন ।, অন্য ১০ জন মানুষের মতেই আমার জীবন ।

সেলিনা জাহান প্রিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

অ-মানব’- (২৭ তম পর্ব)

২৪ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৩:২৮

সোফায় বসে আছে আমজাদ সাহেব বয়স ৬০ বছর হবে । খুবেই চিন্তাশীল মননের মানুষ । এই পরিবারে সবাই জ্ঞানী । দুই মেয়ে বড় আর ছেলে ছোট ।
দুই মেয়ে কে বিয়ে দিয়েছে দুজনেই বাবার সাথে থাকে । বড় মেয়ে লায়লা তার স্বামী মিঃ মোহন আর দ্বিতীয় মেয়ে পারু তার স্বামী দুলাল । এক মাত্র ছেলে রাজ । আমজাদ সাহেবের স্ত্রী রেবেকা । বাসায় কাজের মেয়ে আছে একজন মিতা আর দারোয়ান মালি মিলে দুজন । বাগানের মালির বাড়ি ময়মনসিংহ নান্দাইল । মালির নাম ভিমরুল খাঁ ।
আমজাদ সাব দারোয়ান জাফর কে খুব পছন্দ করে কারন সে যে কোন কাজ বললে না করে না। বাগানের মালি কে খুব পছন্দ করে কারন সে গাছের খুব যত্ন নেয় । নিয়মিত পানি দেয় । রেবাকা বেগম দু জন কে একে বারে পছন্দ করে না । জাফর যেমন বলে সব পারি কিন্তু কাজের কাজ কিছুই পারে না। সব কাজ শেষ পর্যন্ত অন্য কে দিয়ে করাতে হয় । মালি গাছ ছাড়া অন্য কিছুই বুঝে না । অন্য কাজের কথা বললে , বলে আমি তো মালি মানুষ অন্য কাজ আমাকে শুভা পায় না।

কাজের মেয়ে মিতা কি কাজ করে সারা দিন ঘর মুছামুছি করতেই সময় চলে যায় । রেবেকা স্বামীর জন্য একটু চা বানাতে ই হাপিয়ে উঠে । দুই মেয়ে সারা দিন বিউটি পার্লার আর স্বামীদের সাথে ঝগড়া লেগেই থাকে । তাদের মেয়েদের সব আবদার আমজাদ সাহেব আদরের সহিত পালন করে । ছেলে রাজ সারা দিন ছবিতুলা নিয়ে ব্যস্ত ।
আমজাত সাহেবর হাতে চা তুলে দিয়ে রেবেকা বেগম বলল
—- তোমার দারোয়ান জাফর আজ সাত দিন হল উধাও । তোমার
ড্রাইভার আলি কত দিন দারোয়ানি করবে । সে নাকিএই কাজ
করতে লজ্জা পায় । তার নাকি সম্মান নষ্ট হচ্ছে ।
—- আমজাত সাহেব বলল , ওতো আগে দারোয়ান ছিল । পরে তো আমি ওকে
টাকা দিয়ে ড্রাইভারী শিখালাম । তখন তো বলল দারোয়ানি ড্রাইভারী
সব করবে । এখন আবার নতুন সুর । মানুষ আসলেই অতীত ভুলে যায়।
—– তা তুমি জাফর কে মালি থেকে দারোয়ান বানালে কেন ?
—– আরে ও তো গাছের গ বুঝে না ।
—- চাকুরি নেয়ার সময় তো বলেছে সে গাছের সব কাজ পারে ।
—- ও ঠিক বলেছে । সব কাজ বলতে ও কৃষি কাজ বলেছে কিন্তু বাগান না ।
—- তা এখন তোমার জাফর যে বাবুর্চি আনতে গেল ৭ দিন । এই সাত দিন
কি আমরা হাওয়া খেয়ে থাকব ।
—- কেন হোটেল থেকে তো তিন বেলা আলি খাবার কিনে আনছে ।
—- তোমার সাথে খাবার নিয়ে কথা না বলে একটা হোটেল দিয়ে দাও বাসার
সামনে । ব্যবসা ও হবে খাবার ও হবে । হোটেলের নাম দিবে আমজাত
হোটেল ।
—- আমজাত সাহেব বলল তোমার চিন্তা ভাল । জানো হোটেল দিলে
এই এলাকার সব হোটেলের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে । কারন আমি জনগণ
কে বিশুদ্ধ খাবার খেতে দিব ।
— রেবেকা একটু রাগ হয়ে বলল তাই কর । বই পড়া ছাড়া তো আর কোন
কাজ নাই ।
কাজের মেয়ে মিতা দারিয়ে শুনছিল আমজাদ সাহেব আর রেবেকা বেগমের কথা । হোটেলের কথা শুনে সে সোজা চলে গেল লায়লার আপুর ঘরে । লায়লা
কে বলল – আপু একটা মজার খবর ।
—- কি খবর মিতা । পারুর জামাই আজ কিছু বলেছে ।
—- আরে না। চাচাজান বাসার সামনে একটা খাবার হোটেল দিবে ।
—– বলিস কি ? মানুষ কি বলবে । আমার স্বামী কি অফিসে চেহারা দেখাতে
পারবে । ইস আমার স্বামীর সম্মান কি হবে ।
লায়লা তাড়াতাড়ি পারু ঘরে গিয়ে বলল , পারু খুব খারাপ খবর আব্বু নাকি বাসার সামনে একটা খাবার হোটেল দিবে । দেখ মানুষ আমাদের কি বলবে । তোর দুলা ভাই কত বড় চাকুরি করে । অফিসের মানুষ শুনলে কি বলবে । পারু বলে কি আর বলবে । আমার জন্য ভাল হবে আমি একটু পর পর আমার স্বামী কে এটা সেটা খেতে দিতে পারব । নিজেদের হোটেল মানে । সারা দিন শুধু এটা সেটা খেতে দিতে পারব । নিজেদের হোটেল মানে । সারা দিন শুধু খাব আর খাব । লায়লা বলল আমি যাচ্ছি আব্বুর পাগলামি বন্ধ করতে । পারু বলল না তুমি বন্ধ করার কে । আমি চাই হোটেল হউক ।
দুই বোন মিলে এক সাথে আমজাত সাহেবের সামনে । মিছনে মিতা রেবেকা আমজাত সাহেবের হাতের নক নেইল ক্যাটার দিয়ে ঠিক করে দিচ্ছিল । লায়লা এসে বলল – আব্বু তুমি নাকি হোটেল দিচ্ছ । পারু আব্বু খুব ভাল হবে । আমজাত কাজের মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলল কি রে মিতা তোকে না বলেছি । তোর মুখে তালা দিতে ।
মিতা বলল – চাচা জান আপনি যত বার তালা দেন এই দুই আপা ধমক দিয়ে তালা খুলে দেয় । যদি কোন কোন কিছু না বলি তাহলে বলে লায়লা আপু আমাকে বাড়িতে যাওয়ার ছুটি দিবে না। আমাকে কান দড়িয়ে দারিয়ে রাখে ।
পারু আপু বলে একটা কাচের গ্লাস নিয়ে হাতের তালুতে রেখে দারিয়ে থাকতে । আমি এই বিপদ থেকে বাচার জন্য এই তথ্য পাচার করেছি ।
এমন সময় জাফর এসে হাসি দিয়ে লম্বা একটা সালাম দিল । রেবেকা বেগম জাফরের দিকে চেয়ে বলল – লংকা জয় করে ৭ দিন পর এসেছ ।
—- জি আম্মা জান । এটা লঙ্কা জয় না বলেন আফগান জয় । আমি সেই
রকম একজন বাবুর্চি এনেছি । কথা কম বলে । রান্না খুব ভাল করে ।
—- তুমি তার রান্না খেয়েছ ।
—- না আম্মা জান এখনো খাই নাই । তবে তার কথা শুনেই আমার খাওয়া
হয়ে গেছে । একবার তার কথা শুনলে ৭ দিন না খেয়ে থাকা যায় ।
— রেবেকা বলল এই মাত্র বললি কথা কম বলে আবার বলছিল একবার কথা
শুনলে সাত দিন না খেয়ে থাকা যাবে ।
—– জি আম্মা জান আমার অনেক চেনা । অনেক বছর এক সাথে । আগে নাকি চাইনিজ হোটেল ইটালি হোটেল কুরিয়া হোটেল । আর ইন্ডিয়া হোটেল এ
কাজ করত । অনেক আশা ভরসা দিয়ে নিয়ে এসেছি । বলেছি আম্মা জান যদি
খাবার খেয়ে পছন্দ করে তবে চাকুরি কোন দিন যাবে না।
—- আমজাত সাহেব বলল । কই তোমার সেই সেফ মানে বাবুর্চি ।
—- লায়না বলল তাহলে কি হোটেল বানাবে বাবা
—- আমজাত সাহেব বলল দেখি তোমাদের খাবার দাবার খুব কষ্ট ।
—- পারু বলল যাই হক আব্বু ঠিক সময় ঠিক কাজ করছে ।
আমজাত সাহেব আর রেবেকা এক সাথে মেয়েদের ঝগড়া শুনে হাসে ।
জাফর বাবুর্চি নিয়ে আমজাত সাহেব আর সামনে আসলো । রেবেকা বেগম
বাবুর্চির দিকে তাকিয়ে দেখে গরমের মধ্যে একটা সোয়েটার গলায় একটা কাপড় ঝুলানো । মুখে দাড়ি মাথায় এলো মেলো লম্বা চুল । কিন্তু চেহারাটা খুবেই শান্ত ও মায়াবি । আমজাত সাহেব বলল –
—— কি নাম তোমার ।
—— জাফর বলতে চাইলে । রেবেকা একটা ধমক দিয়ে বলল কম কথা বল
যাকে জিজ্ঞাসা করছি সে বলুক ।
—– রেবেকা বলল – এই ছেলে কি নাম ।
—– আমার নাম অ-মানব ।
—- আমজাত সাহেব একটু হেসে বলল কি নাম /
—– জি আমার নাম অ-মানব ।
—– এটা কোন নাম হল ।
—– স্যার এই বিষয় নিয়ে কোন দিন চিন্তা করি নাই ।
—— কেন চিন্তা কর নাই ।
—— মানুষের জন্ম স্যার অন্যের ইচ্ছায় । যার ইচ্ছায় জনম নিয়েছি নামটা স্যার সেই রেখেছে । তাই নামের বিষয় টা একান্ত জন্ম দাতার । তাই তার সম্মানে এটা আর বদলাতে চাই না।
—– বাহ ! জন্ম দাতাকে যে ভাল বাসে তাকে আমি অনেক সম্মান করি ।
তুমি তাকে সম্মান কর জেনে ভাল লাগলো ।
—– স্যার আমি কোন জন্ম দাতাকে সম্মান করি না। দুনিয়ায় যে কেউ যে
কাউকে জন্ম দিতে পারে । কিন্তু যে লালন পালন করে একজন মানুষ
কে মানুষ বানায় তাকে সম্মান করি । স্যার দুনিয়াতে অনেক খারাপ
জন্ম দাতা আছে । কিন্তু দুনিয়ায় একটাও খারাপ পিতা নাই । আমি
সকল পিতা কে সম্মান করি । আমার নামটা আমার জান্ম দাতা পিতা
রেখেছে ।
—- আমজাত সাহেব বলল চমৎকার কথা । আমি এভাবে কোন দিন চিন্তা করি
নাই । তোমার কথা যথেষ্ট যুক্তি আছে ।। থ্যাংকস ।
—- রেবেকা বেগম বলল – তা বাবা অ-মানব । কি কি রান্না করতে পার । আর
কি কি কাজ পার । আর গরমের মধ্যে এটা কি পরে আছ ।
—– পাগল বলল আমি আপনাকে কি বলে ডাকব এটা আগে জানা দরকার ।
আর আপনার পরিচয় । তাহলে আমি ঠিক ভাবে আপনার সামনে নিজেকে
তুলে ধরতে পারব ।
—– রেবেকা বেগম একটু হেসে বলল – বাবা অ-মানব । আমি এই বাড়ির
মালিকের এক মাত্র বউ । আমি যেহেতু তোমাকে বাবা বলেছি তাই তুমি
আমাকে কি ডাকবে চিন্তা করে নাও ।
——– পাগল এবার রেবেকা বেগম কে পা ছুঁয়ে সালাম করে বলল-
আম্মাজান । আমি যে কোন কিছু রান্না করতে পারি । বিশেষ করে
৪২ রকমের ভর্তা । দেশের সকল অঞ্চলের রান্না । আর দুনিয়ার সকল
দেশের রান্না । যা আপনি খেতে চাইবেন । তবে একদিন আগে সব
খাবারের কথা বলতে হবে । রান্না একটা শিল্প । আর যে শিল্প মনা তার
রান্না হবে সুন্দর । রান্নার বিষয় তা হল । লবণ আর মসলার বিষয় আর
কতটা তাপমাত্রায় রান্না করতে হবে তা নিজের মধ্যে ধারন করা ।
আর তা ছাড়া আমি কাপড় পরিষ্কার জুতা পালিশ , কাপড় আইরন করা ,
ঘর মুছা । ড্রাইভারি । গাছ ও মাছ পালন , রঙ করা , বিদ্যুৎ মেরামত ও
বাজার করতে পারি ।
লায়লা বলল বাহ বহু গুন তোমার । এত গুনের লোক আমি আজ জিবনে
প্রথম দেখলাম । তা তুমি ফ্রাস দেশের খাবার রান্না করতে পার ।
—- অ- মানব বলল । জি আমি পারি । কিন্তু
—- কিন্তু কি?
—- ইন্টার নেট লাইন আর একটা কম্পিউটার লাগবে ।
—– কেন ?
—– কারন আপনি ফ্রান্স দেশের কোন খাবার খাবেন তার রেসিপি টা দেখাতে
হবে না ।
—– রেবেকা বেগম বলল । অ-মানব এই গরমে তুমি সোয়েটার পরে
আছ কেন?
—– অ-মানব বলল আমর কাপড় রাখার ব্যাগ নাই । গত শীতে মিলি খালা
কিনে দিয়েছিল । যদি হাড়িয়ে যায় । এই ভয়ে পরে রেখেছি ।
রেবেকা বেগম বুঝল যে এটা খুব বোকা একটা মানুষ । হয়ত গ্রামে ছোট থেকে
কষ্ট করে বড় হয়েছে । পারু বলল এই অ-মানব তুমি কি লেখা পড়া জান ।
—- অ-মানব বলল এই পর্যন্ত আপু স্কুল খুজে পাই নাই ভর্তি হবার জন্য ।
একটা স্কুল খুজতেছে যে স্কুল এ মানুষ বানায় । আমাদের দেশের সব
স্কুল গুলো মানুষ কে গোলাম বানায় । পাশ করেই চাকুরি চায় ।
—– আমজাত সাহেব শুধু অ-মানবের দিকে চেয়ে আছে , এই ছেলেটা কি বলছে ।।

চলমান——–

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.