নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সেলিনা জাহান প্রিয়া , জন্ম পুরান ঢাকা, নাজিরা বাজার , নানা বাড়িতে ।বাবার বাড়ি মুন্সী গঞ্জ , বড় হয়েছি ঢাকা ।স্বামীর বাড়ি কিশোর গঞ্জ ।ভাল লাগে ঘুরে বেড়াতে , কবিতা , গল্প , উপন্যাস পড়তে অজানাকে জানতে । ধর্ম বিশ্বাস করি কিন্তু ধর্ম অন্ধ না ।

সেলিনা জাহান প্রিয়া

পৃথিবির প্রতিটি গল্পের শুরু আছে শেষ নাই শুধু। আমার লিখা কবিতার সাথে গল্পের সাথে আমার জিবনের কোন মিল নেই , আমি লিখি লিখিকা হবার জন্য নয় । ভাল লাগে তাই । অনেকই মনে করে আমি ব্যক্তি জীবনে খুব কষ্টে আছি । আসলে সুখ দুঃখ নিয়েই জীবন ।, অন্য ১০ জন মানুষের মতেই আমার জীবন ।

সেলিনা জাহান প্রিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

কৃষ্ণের সন্ধ্যা ।

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৭:০১




কী সুন্দর নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই সিলেট । যে দিকে তাকাই শুধুই -- চা বাগান, বাঁশ বেত মেহগনি, জারুল আকাশ মনি আর সেগুন কমলা বাগান গাছের সারি।আমি তখন নতুন বউ স্বামীর সাথে বেড়াতে এসেছি । শহর থেকে একটু দূরে আমার স্বামীর কোন কালের পরিচিত এক বোন । হোটেলে না উঠে আমাকে নিয়ে উঠেছে এক মনিপুরি বাড়িতে । আমি প্রথমে বুঝতে পারি নাই ঐ মহিলা মনিপুরি । গায়ের রঙ কালো । কেমন আজব পোশাক । আমার স্বামীকে পেয়ে একদম বুকে জড়িয়ে কপালে গালে চুমা দিয়ে দিল । আমি তো অবাক । নিজের চোখের সামনে একি দেখছি । বাঁশের ঘর । কাঁচা মাটি তখন প্রায় সন্ধ্যা । আমাদের থাকার জন্য যেই ঘরটা দেয়া হল বা খুবেই সুন্দর বিছনা । নক্সি কথা বিছিয়ে দিয়েছে । বেশ কয়টা মেয়ে এসে দেখি আমার স্বামীকে জড়িয়ে ধরে কি কি যেন বলছে । আমার জন্য ফুল আর নদীর জল কলসি করে নিয়ে এল । অনেক নাস্থা দেয়া হল । আমার স্বামী বলল তুমি দামী হোটেলে গেলে কি এত মজা পেতে বল । কত জন তোমাকে বাতাস করছে ।প্রথম দিনের কথা। তখন সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। কোথাও থেকে জন কোলাহলের শব্দ ভেসে আসছিল ।আমি জানতে চাইলাম এটি কিসের শব্দ শোনা যায়? দিদি বলল একটু দূরেই আমাদের আমাদের মন্দির । ওখানে আজ বিশেষ প্রার্থনা হচ্ছে। ছোট একটি মেলাও বসেছে। জন মুখরতার এই শব্দ আসছে ওখান থেকেই। '' আমি বলি --- আমাকে তুমি ওখানে নিয়ে চলো । দিদি বলল আগে তোমার পুজা করে নেই , আমাদের কাছে অথিতি হল ভগবানের দুত । আর তোমার স্বামী ইমরান তো আমার কাছে কৃষ্ণা ভগবান ' আমাকে একটা নতুন মুনিপুরি শাড়ী দেয়া হল । চার দিক থেকে উলুধধনি দিয়ে আমাকে নিয়ে উঠানে একটা জলচৌকি তে বসতে দিল । পায়ে নদীর জল ঢালা হল অনেক রকম ফুল দিল ছিটিয়ে আমার মাথার উপর । কাঁচা পান দিয়ে কুলে করে নিয়ে ঘরে বসিয়ে সবাই এক সাথে প্রনাম করে বলে উঠল প্রিয়া দেবী কল্যান হউক । আমার স্বামী আমার দিকে চেয়ে হাসছে আর আমার ভয় আর হাসির মাঝে খুব আনন্দ পাচ্ছে । আমাকে হলুদ দিয়ে কাঁসার গ্লাসে দুধ দিল খেতে ।
তক্ষণে আকাশে এক কোনে চাঁদ উঠেছে । মুনিপুরি দিদি তাঁর নাম বলতেই আমি চমকে উঠলাম । ইমরানের মুখে একদিন সুনেছি ঐ নাম । কিন্তু কি তখন কিছুই জানি না। আমার স্বামীর কিছু বিশ্বাসের জায়গা আছে তারা তাঁর রক্তের কেউ না । কিন্তু তাদের সম্পর্কটা রক্তের চেয়ে বেশী - ইমরান কাউকে বোন বলে , কাউকে খালা বলে কাউকে মা বলে । দেখলে বুঝার উপায় নেই যে তারা তাঁর রক্তের কেউ না। বোনদের মধ্য বিউটি , নাহার , কানুন , ঝুমা , আকলিমা , প্রমিলা আর এই সন্ধ্যা । আমি তখন কাউকে তেমন চিনি না । আজ জানলাম ও সন্ধ্যা । কালো মানুষের হৃদয় এত বড় হয় ভাবতেই অবাক হলাম । প্রথমে আমি কিছুটা মাইন্ড করে বসে ছিলাম । দূর থেকে শিয়ালের ডাক শুনে ইমরান কে বললাম এত শিয়াল চিল্লাচ্ছে কেন ? ইমরান বলল এই সিলেটে নতুন কোন মানুষ আসলে শিয়াল তাদের ভালবেসে গান শুনিয়ে যায় । আমি বললাম বল কি ? শিয়াল কি করে জানবে আমি এসেছি ? ইমরান বলল নতুন কেউ আসলে তারা কুকুর বিড়ালের মতো গন্ধ পায় । আমি বিশ্বাসের চোখে ইমরানের দিকে তাকালাম । অমনি সন্দ্যা দিদি বলল প্রিয়া এখন তো শিয়াল কে মুরগী কিনে দিতে হবে না হয় কাল কেউ তারা চীৎকার করবে । আমি বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের মধ্য ইমরান কে বললাম তুমি কয়টা মুরগী কিনে দিও । সবাই এক সাথে হেসে উঠল । তখন আমি যে বোকা হয়েছে সবাই বুঝতে পেরেছে । তাঁর কিছু ক্ষণ পড়ে তাদের সাথে চলে যাই ঐ - মন্দির প্রাঙ্গণে পাইন গাছের নিচে চল্লিশোর্ধ্ব একজন বসে আছে। পরনে কমলা রঙের ধূতি কাপড়। দেখতে অনেকটা সন্ন্যাসীদের মতো। সন্ন্যাসীর মতো কাউকে দেখলে, আমি কেমন যেন বিচলিত হয়ে যাই । কেন জানি মূহূর্তে দেখা এই লোকটিও আমার নজর কেড়ে নেয়। আমাকে কাছে ডেকে একটু দোয়া করে দিল । তাদের নাচ গান আমাকে মুগ্ধ করে । হাটতে হাটতে আমরা একটি পুকুর ঘাটে যেয়ে বসি। সেই সন্ধ্যা রাতে অনেক কথাই শুনেছিলাম সন্ধ্যার কাছ থেকে। আমার কাছে মনে হয়েছিল, কিছু কথা বলেছিল সে স্বাভাবিক ভাবে। কিছু বলেছিল বিশ্বাস র ভালবাসা মতো। আমরা সকালে চলে যাব জাফলং । কথার ফাকে সন্ধ্যা দিদি বলতে লাগলো । ইমরান আমার কাছে কৃষ্ণের মতো -
কোন এক বসন্তের আবেশ হিল্লোলে অরণ্যের বাতাস স্পন্দিত হচ্ছিল। পলাশ ও কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম উচ্ছ্বাসে আকুল হয়েছিল অন্তরীক্ষ। কুসুমার্দ্র সুবাসে সুরভিত হয়ে উঠেছিল বনভূমি। কোকিলের কূজনে কুহরিত হচ্ছিল দশদিক। যেন ভ্রমর এসে বসেছে প্রসূনের বক্ষে। প্রকৃতির নিয়মে বিমুগ্ধ হরিণ-হরিণীর মতো কী এক আবেগে আমি ভালবাসি এক বাঙালী ছেলে কে । সে একটা এন জি ও তে কাজ করতে এসে আমাকে তাঁর ভাললেগে যায় তাঁর ও আমাকে খুব ভাল লেগে যায় । ছেলেটা নাম ছিল দিপন পাল -
ছেলেটাকে আমি বিশ্বাস করে ছিলাম । দিপন বলল ভারতে তাঁর বাড়ি আছে । আমাকে এক পুরনিমার রাতে মাথায় সিঁদুর পড়িয়ে দেয় । এক দিন আমাকে নিয়ে সে কলকাতায় যাবে তাদের বাড়িতে । বলে পাসপোর্ট লাগবে না । আমি বাবা মা কে না বলে খুব ভোরে দীপকের হাত ধরে সিলেট করিম গঞ্জ দিয়ে ভারতে যাই । আসাম হয়ে রেল গাড়ি দিয়ে দুই দিন পড়ে ভারতে কলকাতায় যাই । একটা হোটেলে উঠি দিপন বলল সকালে আমাকে বাড়িতে নিয়ে যাবে । তাঁর পর সব কাগজ করবে । সন্ধ্যা দিদির তখন ডাগর চোখ দিয়ে জল ছল ছল করে পড়তে লাগলো । সন্দ্যা দিদি বলল ঘুম থেকে উঠে দেখি দিপন নেই । আমি তখন বিক্রি হয়ে গেছি পতিতা পল্লিতে । আর এই হোটেল টা তাদের । শুরু হয় আমার অন্ধকার জীবন । তিম মাস পড়ে আমি একদিন পালাই । কাছেই একটা রেল লাইন দেখে আমি হাঁটতে থাকি । কতক্ষণ হেঁটে ছিলাম ঠিক মনে নেই । একটা ষ্টেশন পৌঁছাই হেঁটেই । উঠে যাই রেল গাড়ীতে । কোথায় যাচ্ছি না। আমার পা গুলো ফুলে ছিল । রেলের বাথরুমের পাশে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম । যখন ঘুম থেকে জাগলাম আমার তখন অনেক ক্ষুদা লেগেছিল । রেল থেমে আছে সবাই নামছে । আমি ও নামলাম । তাদের ভাষা বুঝি না । পায়ে জুতা নেই ময়লা কাপড় । ভিক্ষা করা ছাড়া কোন উপায় নেই । প্ল্যাটফরম ইংলিশ লেখা দেখে বুঝলাম আমি ভোপাল । পুলিশ ধরলে জেল ।
ষ্টেশনে একদল ভিক্ষুকের সাথে কাটিয়ে দিলাম তিন দিন । আর মনে মনে ঈশ্বর কে ডাকতে লাগলাম।
ষ্টেশনে একটা লোক জুতা সেলাই করে আমি তাঁর পাশেই একটু বসে মানুষের চেহারা দেখছি ।
আমার খুব জ্বর বমি বমি লাগছিল - এমন সময় একটা সুন্দর ছেলে আসলো জুতা কালি কারাতে । সাথে তাঁর কিছু বন্ধু । আমি সেই ছেলের পায়ের মধ্যে বমি করে দেই । মুছি আমাকে তাঁর জুতার ব্রাশ দিয়ে বাড়ি দেয় আমি চীৎকার করে বলে উঠি ও মা । সুন্দর ছেলেটা বলে - আরে ভাই মেরি জুতা গান্ধা কিয়া , হাম কোচ নেহি বলে তুম কিউ ডাঁটতি লারকি কো । আমাকে বলে ও মেরে বাহিন মাপ কর ।
তুম কো কেয়া হুয়া । আমি বলাম যে হিন্দি জানি না - অল্প ইংলিশ আর বাংলা জানি । ওমা আমাকে বাংলায় বলল আরে তুমি বাঙালী মেয়ে , এই খানে কি ? আমি চীৎকার দিয়ে বলাম ভাই আমার খুব বিপদ । আমার হাত ধরে বলল এখন তোমার সব বিপদ আমার । সাথের বন্ধু দের বলল তোরা বসে থাক আমি আসছি । আমি কেন জানি এই সুন্দর ছেলেটার আচরণে অল্পে বিশ্বাস করলাম । আমার জ্বর আর ময়লা কাপড়ের অবস্তা দেখে বলল আমার সাথে আগে বাহিরে আসো । আমার ট্রেন তিন ঘণ্টা পর । স্টেশনের বাহিরে গিয়ে জ্বর আর বমির মেডিসিন কিনে দিল । এক জুরা স্যান্ডেল কিনে পড়তে দিল । আমার জন্য স্টেশনের পাশ থেকেই একটা জামা কিনল অল্প দামের । ষ্টেশনের বাথ রুমে নিয়ে গিয়ে বলল আগে গোসল কর । তাঁর ব্যাগ থেকে একটা গামছা দিল । আমি গোসল করে বের হলে আমাকে দেখে বলে আরে তোমার নাম কি । আমি তখন বলি সন্ধ্যা । আমি তখন জানি না এই সুন্দর মানুষ টা বাড়ি বংলাদশ । আমাকে এক মগ চা দিয়ে বলে আচ্ছা সন্ধ্যা তোমার ভাষা তো কলকাতার মতো বা আসামের মতো লাগে । আমি তখন চুপ ছিলাম । বলল ভয় কর না দিদি । ভাই কে ভয় করতে হয় না। আমি তোমার ছোট ভাইয়ের মতো বল তু । আমি এক ঘণ্টায় সব খুলে বললাম । সুন্দর ছেলেটা চোখ দিয়ে সাথে তাঁর তিন বন্ধুর জল পড়ছিল । সুন্দর ছেলেটা বলল একদম চুপ । তোমাকে দেশে আমি নিয়ে যাব আমার বাড়ি বাংলাদেশ । আমাকে নিয়ে ট্রেনে উঠে বসল । একসময় আমি তাঁর কাঁদে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেলাম । ঘুম থেকে জেগে উঠলাম খুব সকালে । ট্রেন তখন নিউ জলপাই গুড়ি । আমি কত ঘণ্টা ঘুমিয়ে ছিলাম ঠিক মনে নেই । আমাকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছে । ট্রেনে আমার পা গুলো টিপে দিয়েছে । এই সুন্দর ছেলেটা । আমি তখন বলাম তুমি মানুষ না ভগবান । আমার জ্বর তখন নাই । দুপুরের দিকে জলপাই গুড়ি থেকে বাসে করে বিকালে আমাকে নিয়ে নীলফামারী ডুমার সিমান্ত দিয়ে দালাল কে ৪০০ টাকা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে । আমি দেশের মাটিতে এসেই ভক্তি দিয়ে পড়ি । আমাকে নিয়ে তাঁর দুইদিন পর ঢাকা হয়ে সিলেট এসে পৌঁছাই । আমার বাড়ি পর্যন্ত আসতে ঐ সুন্দর ছেলে তাঁর হাত ঘড়িটা পর্যন্ত বিক্রি করে । প্রিয়া সেই সুন্দর ছেলেটা তোমার তোমার স্বামী ইমরান । আমি সারা জীবন তাকে কৃষ্ণ ভগবান বলেই জানি । এখন আমি ভাল আছি । একটা এন জি তে চাকুরি করি । আমাকে ইমরান হাসতে শিখিয়েছে , বাচতে শিখিয়েছে । কথায় কথায় কখন যে রাত একটা হয়ে গেছে জানি না। চার দিক জোনাকি পোকা । আমি বলাম সন্ধ্যা দিদি আজ রাতে তুমি আমাদের সাথে ঘুমাবে । আমাকে বলে তুমি তো দেখি কৃষ্ণের মতো বলতে লাগছ । ইমরান যদি কোন বছরে একবার আসে শীতের পাখির মতো বলবে দিদি তুমি আমার মাথা হাতিয়ে দিবে তবে আমি ঘুমাব ।
দিদি কে বলাম তুমি আর বিয়ে কর নাই । দিদি হেসে বলল আরে মেয়ে মানুষ বিয়ে না করি কি পারি । আমার মেয়ে স্কুলে যায় । তোমার দুলাভাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে । গিয়ে একসাথে খেতে বসব ।
রাতে তোমাকে বাঁশী শুনাবে - রাতে দুলাই ভাইয়ের বাঁশী শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যাই ।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৮:১৬

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: অসাধারণ আপু এক নিশ্বাসে পড়ে ফেললাম। অদ্ভুত সুন্দর কাহিনী।

২| ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৯:৪৬

মনিরুল ইসলাম বাবু বলেছেন: ঝরঝরে লেখা আর সুন্দর কাহিনী

৩| ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: পড়ে ভালো লাগলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.