নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনেক সুখের গল্প হল-এবার কিছু কষ্টের কথা শুনি...
বাস তখন একটানা ছুটে চলেছে । পথে বহুবার যাত্রী উঠেছে নেমেছে । এখনো কয়েকজন দাড়িয়ে আছে । আমার পাশে বড় ভাড়ি ব্যাগ থাকায় এদিকটায় ঘেষতে পারে নাই ।
একবার কিছু দেখা যায় কিনা এই ভেবে ডান দিকে ঘুরে তাকাতেই মেয়েটার সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলে মনে হয় সে কিঞ্চৎ লজ্জা পেল। পাশে বাসা মাহমুদ আমাকে খোচা দিয়ে বলল,-এইটা কি হল ভাই?
আমি মাথা ঘুরিয়ে তার দিকে কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম- কোনটা কি হল?
সে খ্যাক করে সামান্য একটু হেসে বলল -‘এই যে মেয়েটা আপনার পাশে বসল আমি কি সারা পথ আঙ্গুল চুষতে চুষতে যাব?
-ও এই কথা । এখন সে এসে আমার পাশে বসলে আমি কি করতে পারি বলেন? আপনি চাইলে এখানে বসতে পারেন। কিন্তু...
-না এখন না । ঘন্টা দুই তিন পর পর বাস থামবে - তখন আমরা সিট পাল্টাপাল্টি করব। ঠিক আছে ?
- ঠিক আছে , তাই হবে। ’ মেয়েটা আমার পাশের সিটে বসায় সে যে কিছুটা ঈর্ষান্বিত তা তার চেহারাই বলে দেয় ! পরে সে অবশ্য স্বীকার করেছিল।
কিছুক্ষন চোখ বুজে তন্দ্রার ঘোরে-কিছুক্ষন প্রকৃতি পরিবেশ আর চোখ ঘুরিয়ে চারিপাশটা দেখে সময় কেটে যাচ্ছিল।
সাকাল সাড়ে আটটার দিকে হাইওয়েতে প্রথমবার বাস থামল । এখানে মাঝারী মানের একটাই হোটেল -টিন বাশ ও কাঠ দিয়ে ছাওয়া । পাশেই বাথরুম- পয়সা দিয়ে যেত হয়।
সেলফ সার্ভিস হোটেল। টেবিলের উপর থরে থরে খাবার সাজানো। একজন দাড়িয়ে আছে পরিবেশনের জন্য। বিল দিতে হয় খাবার শেষে।
এপাশ থেকে প্লেট আর চামচ নিয়ে লাইনে দাড়ালাম । নাস্তার জন্য রয়েছে পুরি, আলুর দম, চানা (শুধু মাড়ে ডোবানো ছোলা সেদ্ধ) হালুয়া আর মাছ ভাজা তবে চেহারা দেখে মনে হয় মাছের শুটকি। আমি শুধু আলুর দম আর পুরি নিলাম - মানা করা সত্বেও মাহমুদ চানা হালুয়া দুটোই নিল।
পুরির সাথে আলুর দম খেতে ভালই তবে রান্নাটা জুতের না। হোটেলের যে চেহারা তাতে করে থেকে ভাল রান্না আশা করা অবশ্য বোকামী!
আমাদের অনতি দুরেই আমার পাশের সেই মেয়েটা সাথে তার ছোট বোন (সম্ভবত -ধারনা করছিলাম,তখনও জানিনা) বসে এদিক ওদিক চেয়ে চেয়ে কি যেন দেখছে। হয়তো ঠিক মনস্থির করতে পারছেনা কি খাবে! হঠাৎ আমাদের পাতের দিকে চেয়ে সামান্য হেসে বড় জন উঠে গিয়ে সেই খাবারটাই নিয়ে এল। আমরা দুজন সেটা দেখে চোখে চোখে হেসে নিলাম ।
বাস ছাড়তে মিনিট বিশেক দেরী হল -
এবার আমার জানালার পাশ বসার পালা। ভ্রমন পথে পাশে বসা কোন তরুনীর সাথে চোখের কোনে লুকোচুরি খেলা আচমকা ( ইচ্ছেকরে) চোখাচোখি আর টুকরো হাসি বিনিময় করতে করতে সময় কেটে যায় দ্রুত। কথা বলার প্রয়োজন হয়না, তবুও পরিচিত হয়ে গেলে ষোল আনা। গন্ত্যব্য এসে গেলে মনে হয় পথ কেন এত দ্রুত ফুরোল!
মাহমুদের সাথে চুক্তিতে গিয়ে আমি সেই সুখ থেকে কিছু সময়ের জন্য বঞ্চিত হয়ে চোখ বুজে ঘুমানোর ব্যার্থ চেস্টা করলাম। মাঝে মধ্যে চোখ মেলে আড়চোখে দেখছিলাম মাহমুদের লুকোচুরি খেলা! তার সেই প্রচেস্টা মনে হল হাস্যকর - হয়তো আমারটাও তেমনি তার কাছে?
বেচারার দুর্ভাগ্য - তার ধারনাকে ভুল প্রমানিত করে ঘন্টা দেড়েক পরেই বাস ফের থামল। বাস কর্মচারী যাত্রীদের অনুরোধ করল,এখান থেকেই লাঞ্চ সেরে নিতে - সামনে আর খাবার হোটেল নেই?- থাকলেও বাস থামবে না।
বলে কি? একটু আগেই না নাস্তা করলাম -সবে এগারটা বাজে,এখন কি করে লাঞ্চ সারি?
পাশাপাশি বড় বড় দুখানা হোটেল! যদিও একচালা টিনে ছাওয়া -বাশের বেড়া দিয়ে ঘেরা কিন্তু পরিসর অনেক বড়। বেশ ভীড়!
আমরা তেমন ভাবনা-চিন্তা না করেই কাছেরটাতেই ঢূকে পরলাম।
-ক্যাশে বসা মোটসোটা এক মহিলার হাক ডাক আর কতৃত্বের ভাবে মনে হল ইনিই দোকানের মালিক। তার উল্টোদিকে বুফে স্টাইলে থরে থরে খাবার সাজানো লুচি পরোটা সজ্বি ডাল মাংস সহ অনেক কিছুই আছে কিন্তু খাবারের চেহারা দেখে ভক্তি আসেনা। পাশেই দেখি গরম গরম ভাজা সিঙারা। দেখে লোভ হোল! খাবার সার্ভ করছে লম্বা ফর্সা একহারা গড়নের এ পরিবেশে ভীষন ভাবে বেমানান বানজারান বা জিপসি টাইপের এক মহিলা। কথাবার্তা ও চেহারায় কেমন যেন একটা বন্য ভাব। খদ্দেরের সাথে ব্যাবহারটা বড্ড বেশী রুঢ়।
সিঙারার হিন্দী বা নেপালীতে কি বলে আমাদের দুজনারই কারোই জানা নেই। হিন্দী ভাষীরা হয়তো বাটাকাবড়া বা এই জাতীয় কিছু একটা বলে- বলে আমার ধারনা ছিল। মহিলাকে গিয়ে হিন্দিতেই আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে জিজ্ঞেস করলাম, ওগুলোকে কি বলে?
‘সিঙারা!’ ঠিক আমাদের সিঙারার উচ্চারন ।
অ আ তাহলে এরাও একে সিঙারা বলে ।
- দুজনকে চারটে দিন ?
মহিলাটা ক্যাসিয়ার মহিলাকে ইশারায় দেখিয়ে বলল ওখানে টাকা দিয়ে আসতে।
-এখানে আবার খাবার আগে বিল চুকাতে হয় যাতে খদ্দের ভিড়ের ফাঁকে সুযোক বুঝে টাকা না দিয়ে পালাতে না পারে। সিঙারার সাথে দু’কাপ চায়ের বিলও দিলাম- সাথে পথের জন্য এক বোতল পানি আর চিপস ।
ন্যাতানো কাচামরিচ দিয়ে স্বাদহীন গরম সিঙারা খেতে খারাপ না!
চা খেয়ে বাইরে এসে সিগারেট ধরিয়ে কষে কখানা দম দিয়ে তাড়াহুড়ো করে বাসে উঠলাম। চুক্তি মাফিক আমাদের সিট পরিবর্তন হল ।
বাস তখনো ছাড়েনি সিটে বসে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে আচমকা চোখ আটকে গেল অন্য সবার মতই একটা বিশেষ দৃশ্যের দিকে;
জিপসি টাইপের সেই মহিলাটা তার বাচ্চাকে স্তন্যপান করাচ্ছে! বিশ্বের সবচেয়ে সাধারন বিরল মহান নির্দোষ দৃশ্য। তবুও বাসের প্রায় সবার দৃষ্টিই সে দিকেই নিবদ্ধ !
-কেননা মহিলাটা যেভাবে রাস্তার দিকে মুখ করে পুরো বুক উন্মুক্ত করে তার চকচকে ভীষন ফর্সা ভারী স্তন বাচ্চাটার মুখে চেপে ধরেছে সেটা দৃষ্টিকটু ঠেকে! বাচ্চার দুধ খাওয়ানোর থেকে আমার মনে হয় সবাইকে তার বুক দেখাতে আগ্রহী। সে হয়তো জানে? হয়তো কেন বলছি;নিশ্চই জানে নিজের চেহারার সাথে মানানসই দেহবল্লভীর সৌন্দর্যের সাথে সাথে অনেক পুরুষই আরো বেশী আকর্ষনীয় এই বুকজোড়া দেখলে ভিমরী খাবে! কিংবা এমনও হতে পারে হয়তো সে এই ক্ষুদ্রতার মধ্যে নিজের সৌন্দর্য বন্দী করে রাখতে চায়না ? তাই সবাইকে দেখিয়ে এক বন্য মানসিক আনন্দ -বা অন্য রকম তৃপ্তি মেলে। জিপসিদের সমাজে হয়তো এ রকম দৃশ্য স্বাভাবিক -কিন্তু সে এখন যে সমাজ বা পরিবেশে আছে সেখানে সেটা মোটেই স্বাভাবিক দৃশ্য নয়!
এমন একটা দৃশ্য যে কোন পুরুষের মনকে বিভ্রান্ত করবে। কোন পারভার্সন ছাড়াই কেন যেন নিজের কাছেই লজ্জা লাগছিল বলে সেখান থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলাম।
ফের শুরু হল সেই খেলা। এখন অবশ্য ডাইনে ফিরে তাকাতে সমস্যা নেই কেননা ওপাশের পর্দা সরানো হয়েছে। মনের আনন্দে দুপাশের প্রকৃতি আর...দেখতে দেখতে যাচ্ছি।
এবার মাহমুদ হয়তো মন খারাপ করে চোখ বন্ধ করে জোর করে ঘুমানোর চেস্টা করছে। আহ বেচারা!
৯ম পর্ব শেষ
আগের পর্বের জন্য ক্লিক করুনঃ Click This Link
পরের পর্বের জন্যঃ Click This Link
০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৫৫
শেরজা তপন বলেছেন: আপনাকে দেখে দারুন আপ্লুত হলাম!
সবিশেষ ধন্যবাদ আপনাকে আমার ব্লগে এসে বরাবরের মত এমন উচ্ছসিত মন্তব্যের জন্য।
সাথে থাকুন- ভাল থাকুন সরবক্ষন।
২| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৪৪
আমি ব্লগার হইছি! বলেছেন: সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ।
০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০৫
শেরজা তপন বলেছেন: আপনার ফিরে আসার জন্য ধন্যবাদ। ভাল লাগল আপনাকে দেখে- ভাল থাকুন সর্বক্ষণ
৩| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৫৭
মনিরা সুলতানা বলেছেন: আপনার লেখায় সব সময় আমাদের কে সঙ্গী করেন , এক্কেবারে ভ্রমনের আনন্দ পুরোটাই !!
লেখা আর একটু বড় করা যায় না ?
অনেক অনেক শুভ কামনা
০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:১৩
শেরজা তপন বলেছেন: ছোট লেখাই কেউ আর তেমন পড়ে না- বড় করে দিলে কে আর পড়বে?আমার মন্তব্যের রেশ টেনে বলছি না- বাংলা ব্লগের বড়ই দুর্দিন যাচ্ছে এখন!
একটা কথা; আমার এই লেখাটা কিন্তু নিছক ভ্রমন কাহিনী নয়, চটুল কথার ছলে একটা সমাজের গভীরে ধীরে ধীরে প্রবেশের চেষ্টা করেছি। কতটুকু সফল হয়েছি জানিনা- আশা করি শেষ পর্যন্ত সাথে থাকবেন- বরাবরের মত।
ভাল থাকুন।
৪| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০৯
হাসান মাহবুব বলেছেন: আরো বেশি বেশি ছবি চাই।
০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৩২
শেরজা তপন বলেছেন: মাহবুব ভাই, ধন্যবাদ আপনাকে আমার ব্লগে আসার জন্য।
বেগ স্যার, শহিদুল ইসলাম, চঞ্চল মাহমুদের কাছে ফটোগ্রাফির উপরে আমি বেশ কিছুদিন প্রশিক্ষন নিয়েছিলাম (এটা কোন গর্বের ববেরের জন্য কোন প্রতিভা লাগে না- যে কেউ চাইলে পারে)। আমার কয়েক দেরাজ ভর্তি নেগেটিভ এখন অযত্নে- অবহেলায় পড়ে আছে। ছবি দিতে চাইলে ছবি দেখতে দেখতেই আপনি ক্লান্ত হয়ে যাবেন- লেখা আর পড়বেন না
লেখার মাঝে ছবি দিলে-কেমন যেন ছোটদের গল্পের মত হয়ে যায়! আমার ছেলেকে যখন রুপকথার গল্প পড়ে শোনাই-তখন সে পড়ার মাঝখানেই ডাইনী বুড়ি কিংবা রাক্ষসের ছবিটা দেখতে চায়। গল্পটা পরিপূর্ণতা পায় তার কাছে ছবির মাধ্যমে।
আমি সেই ছবিগুলো লেখায় আঁকতে চেয়েছি। কিন্তু হায়- পারলাম আর কই?
কথাগুলো অন্যভাবে নিয়েন না
৫| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:০৭
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ভাল লাগছে পড়তে, কাঁকরভিটা থেকে কাঠমান্ডু জার্নিটা অনেক ঝক্কি আর কষ্টের মনে হচ্ছে। যাই, পরের পর্বে যাই।
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৪২
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বাহ!
দারুন আরেক সিরিজ!!!!!!
উপসসসস...........মুগ্ধকরা সিরিজ- অনেক গুলো মিস করেছি দেখছি......
মানখারাপের পাল্টাপাল্টিতে বেশ মজা পেলাম হা হা হা
+++++++++++++++