নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনটা অন্যরকম হবার কথা ছিল!

শেরজা তপন

অনেক সুখের গল্প হল-এবার কিছু কষ্টের কথা শুনি...

শেরজা তপন › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি ছাগল মরার গল্প ...

৩০ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ১২:৫০

আমার আব্বা তখন বার্ধক্যজনিত কারনে( কিংবা রোগে) তখন শয্যাশায়ী। বিছানায় শুয়ে ঘুমে জাগরনে সপ্নের মাঝে রাত-দিন কাটে তার, সপ্ন থেকে বাস্তবে ফিরে আসলে একটুখানি হাটাহাটির চেষ্টা করেন! গল্পবাজ লোক ছিলেন তিনি- তাই তখন কথা বলার লোক না পেলে চীৎকার করতেন-উচ্চস্বরে নিজের গল্প নিজেকেই বলতেন তিনি!!
২০১৪ সালের ১৩ই আগস্ট আমার ছোট ভাইটা আচমকা মারা গেল... স্বভাবতই শোকে সবাই মুহ্যমান!
আধো ঘুমে বা দিবা সপ্ন অথবা ঘোরের মাঝে থাকলে বাবা এই দুঃখ- শোকের কিছুই অনুভব করেন না। তিনি তখন অন্য জগতের মানুষ! কখনো শৈশবে ফিরে যান, কখনো কৈশোরে- নিজের মৃত বাবা মা চাচা মামা ভাই বোনদের নিয়ে থাকেন! বাস্তবে ফিরে আসলেও খানিক্ষন ঘোর লাগা চোখে বলেন; তাদের নিয়ে গল্প!
আমার মেঝো ভাইটা বিরল এক রোগে আক্রান্ত হয়ে জন্ম থেকেই চলৎশক্তিহীন! সে-ই বাবার আশে-পাশে থাকে। মিতবাক মানুষ! আব্বার কাছে পিঠে থাকলে অনেক প্রশ্নের দু-চারটে উত্তর দেয়। তবে দুর্দান্ত স্মরণশক্তি তার! আমি মাঝে মাঝে তার কাছে বসে আব্বার গল্প শুনি;
মেঝো ভাই বসে ছিল আব্বার কাছে- আব্বা তখন ঘুমে জাগরণে আবোলতাবোল বকছেন, আচমকাই তিনি হো হো করে হেসে উঠলেন! আমার মেঝো ভাই খানিকটা অবাক হয়ে জিগ্যেস করল ; আব্বা হাসছেন কেন?
আব্বা হাসতে হাসতেই বললেন, 'একটা ছাগল মরার গল্প মনে পড়ে গেল তাই হাসলাম!'
-কি গল্প বলবেন?
- হাঃ হাঃ' প্রথমে একচোট হেসে নিলেন খানিকটা। তারপরে শুরু করলেন; 'এক লোকের একটা ছাগল মরে গ্যাছে! সে ছাগলটাকে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কাঁদছে।'
আত্মীয় স্বজন পড়শিরা তাকে অনেক সান্তনা দিল, 'একটা ছাগল-ইতো এ আর এমন কি? এইজন্য এইরকম কান্না কাটি করতছ ক্যান?' কোনমতেই তার কান্নাতো থামেনা- বরংচ উত্তরোত্তর তার কান্না বেড়েই চলল!
তার এমন কান্না দেখে ঘনিষ্ট একজন বলেই ফেলল, 'যা তোকে আরেকটা ছাগল কিনে দিব -তবু তোর কান্না থামা।'
সে তখন কাঁদতে কাঁদতেই সেই লোকের দিকে চেয়ে বলল, 'আমি কি আর ছাগল মরার জন্য এই রকম করে কাঁদতেছি? আমি কাঁদতেছি, আজরাইল যে আমার বাড়ি চিনে ফ্যালাইল এই ভয়ে'!
-এই বয়সে এসে শোক তাপ দুঃখ কষ্ট ভালবাসা সব কমে যায়! মানুষ শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবে। মরে যাব, এই ভয় সারাক্ষন তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। আমি কাঁদি যতটুকু না তরুনের(আমার ছোট ভাই) শোকে তার থেকে বেশী কাঁদি নিজের মরার ভয়ে! আজকে তাই সেই ছাগলের গল্প মনে করে হাসলাম। সে-তো চলেই গেছে, কিন্তু আজরাইলকে যে বাড়ি চিনিয়ে দিয়ে গেল। এতদিন ফাঁকে ফাঁকে ছিলাম - এখন আজরাইল যে এই বাড়িতে এসে আমাকেই প্রথমে ধরবে!!!

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ১:২৭

আমি ব্লগার হইছি! বলেছেন: অনেক দিন পরে আপনার লেখা পেলাম। ভালো থাকবেন ভাই।

৩০ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ২:২৮

শেরজা তপন বলেছেন: হ্যা ভাই অনেকদিন পরেই এলাম! আমার ব্লগে আপনাকে পেয়ে বেশ ভাল লাগল-আপনিও ভাল থাকবেন। শুভ কামনা রইল

২| ৩০ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ২:০১

আখেনাটেন বলেছেন: চমৎকার।

হাসি পেলেও ভিতরের করুণরসটুকুও অন্তর নাড়া দিয়ে গেল। সাঁঝের বেলায় যেমন সব পাখি ঘরে ফিরে, তেমনি আমাদেরকেও ফিরে যেতে হবে...।

৩০ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ২:৩১

শেরজা তপন বলেছেন: ধন্যবাদ 'আখেনাটেন' লেখাটা পড়ে এত সুন্দর মন্তব্যের জন্য। সাঁঝ হলেই যেন সবাই ঘরে ফিরে- প্রভাতে বা মধ্যবেলায় নয়' এই কামনা!
ভাল থাকুন সুন্দর থাকুন।

৩| ৩০ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৯

রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল সুন্দর লেখা।

০১ লা জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:১৭

শেরজা তপন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই রাজীব নুর। ভাল থাকুন

৪| ৩০ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৩

মনিরা সুলতানা বলেছেন: অনেক অনেক দিন পর ফিরলেন,ফিরেই করুণরসে বিষণ্ণতা ছড়ালেন :(
সর্বশেষ সত্য এই যে একদিন আমাদের সবাই কে ফিরতে হবে।

লেখায় ভালোলাগা।

০১ লা জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:১৮

শেরজা তপন বলেছেন: হ্যা অনেকদিন পরেই ফিরলাম! আপনাকে ফের আমার ব্লগে দেখে ভাল লাগল। ভাল থাকুন সুন্দর থাকুন সর্বক্ষণ!

৫| ০২ রা জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:৫৪

টারজান০০০০৭ বলেছেন: মেদ ভুঁড়ি কমানোর জন্য কত ব্যায়াম, ডায়েট, ইয়োগা !! প্রতিদিন কিছু সময় মৃত্যু চিন্তা করিলেই চর্বি গলিয়া যাইবে বলিয়া বিশ্বাস ! আহঃ মৃত্যু !!

রবি ঠাকুর বলিয়াছিলেন , মরন রে তুহু মম শ্যাম সমান ! বাস্তবে মৃত্যু শ্যাম হইবে না রাবন হইবে, না মরিলে কেহ বলিতে পারে না !

অনেক অনেক দিন পরে আপনাকে ব্লগে দেখিলাম ! শুভেচ্ছা স্বাগতম !

০৩ রা জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:১৫

শেরজা তপন বলেছেন: একদম ঠিক বলেছেন! ওই টেনশনেই-তো মাঝে মাঝে চরম হতাশ হয়ে পড়ি, ধন্যবাদ ভাই। আপনাকে আমার ব্লগে পেয়ে ভাল লাগল। ভাল থাকুন

৬| ০২ রা জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২১

করুণাধারা বলেছেন: করুণ রসের গল্প মন ছুয়ে গেল। আজরাইল তো সব সময় ঘাড়ের পিছনে দাঁড়িয়েই আছে, কখন হাত বাড়ায় কে জানে!!

বহুদিন পর ফিরে এলেন। আশা করি এখন ব্লগে নিয়মিত হবেন।

০৩ রা জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:২১

শেরজা তপন বলেছেন: ব্লগ আমাকে সবসময় টানে! লেখালেখি হয় না-মন্তব্য ও করি না কিন্তু মাঝে মধ্যেই ঢুঁ মেরে যাই!
পুরনো মানুষদের দেখা পেয়ে মনটা আনন্দে নেচে উঠল!
চেষ্টা করছি -কিন্তু লেখা লেখিতে আর মন বসাতে পারি না, এলোমেলো হয়ে গ্যাছে সবকিছু।
আপনি ভাল থাকবেন- ধন্যবাদ।

৭| ০৫ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:০৪

কালোপরী বলেছেন: কেমোন আছেন ভাইয়া?

০৬ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:০৩

শেরজা তপন বলেছেন: খুব ভালো-আপনার হাসির ইমোটা মিস করি খুব :( আপনি ভাল আছেনতো?

৮| ১১ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৮

অশুভ বলেছেন: অনেকদিন আপনার ব্লগে ঢু মারা হয় না। ভাবলাম হারিয়েই গেছেন বোধহয়। আজ 'কাগদা তো-ভ রাশিয়া' রিভিসন দিতে এসে নতুন লেখা পেলাম। ভাল থাকুন নিরন্তর।

১৯ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:১১

শেরজা তপন বলেছেন: 'আগের মন্তব্যটা কেন যে মুছে গেল বুঝলাম না ?'
আপনাকে দেখে দারুন আনন্দিত হলাম। কাগদা তো-ভ রাশিয়ার কথা ভোলেননি দেখি!!
অনেক ধন্যবাদ আমার ব্লগে আসার জন্য। ভাল থাকুন আপনিও নিরন্তর

৯| ১১ ই জুন, ২০২০ সকাল ৮:৪৫

মেঘনা পাড়ের ছেলে বলেছেন: তপন ভাই , আপনি কই ? একটু বলে যান...........

১২ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৬

শেরজা তপন বলেছেন: আমি আছি ভাই এখনো বেঁচেবর্তে! ধন্যবাদ ভাই এখনো স্মরনে রাখার জন্য। কত চেষ্টা করছি তেমন কিছু একটা লেখার- তা আর হচ্ছে না। ফিরছি ফের খুব তাড়াতাড়ি। আপনি ভাল আছেন ভাই? এই দুঃসময়ে ভাল থাকুন- সুস্থ থাকুন- নিরাপদে থাকুন

১০| ২৬ শে মে, ২০২১ বিকাল ৫:৫২

আমি সাজিদ বলেছেন: আপনি বোধকরি পরিবারের বড় সন্তান। আপনার ছোট ভাইয়ের অকাল প্রয়ান নিয়ে ব্লগে আপনার লেখা পড়েছি।

২৬ শে মে, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪১

শেরজা তপন বলেছেন: না ভাই, আমি পরিবারের পঞ্চম সন্তান! আমার বড় দুই ভাই ও দুই বোন আছে।
জ্বী আমার ছোট ভাই টোকিওতে মারা গিয়েছি ২০১৩ সালে! চরম দুরন্ত ছিল। ওকে নিয়ে কিছু লেখার ইচ্ছে আছে ভবিষ্যতে।

ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.