নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনটা অন্যরকম হবার কথা ছিল!

শেরজা তপন

অনেক সুখের গল্প হল-এবার কিছু কষ্টের কথা শুনি...

শেরজা তপন › বিস্তারিত পোস্টঃ

চামড়া ও চামড়াশিল্পের কেন আজ এই ভয়াবহ পরিস্থিতি?#২

০৮ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:২৯


আগের পর্বের জন্য: Click This Link
হাজারীবাগ
১৯৪০ এর দশকে এক ব্যবসায়ী আর.পি. শাহা কর্তৃক নারায়ণগঞ্জে বাংলাদেশের প্রথম ট্যানারি স্থাপন করা হয়েছিল। ট্যানারিটি পরে(১৯৪৫ সালে দিকে- মতান্তর আছে, কোথাও বলা হয়েছে দেশ বিভাগের আগে কোথাও পরে)ঢাকার হাজারীবাগ এলাকায় স্থানান্তরিত করা হয়। ১৯৬৫ সালে ঢাকায় ৩০ টি ট্যানারি ছিল। ১৯৭০ এর দশকে এই শিল্পটির উল্লেখযোগ্য বিকাশ হয়েছিল।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের অবাঙালি ট্যানারিরা তাদের মালিকানাধীন প্রায় ৩০ টি ট্যানারি ইউনিট ছেড়ে চলে যায়। যুদ্ধের পরে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশ সরকার ৩০ টি ট্যানারি অধিগ্রহণ করেছিল।বাংলাদেশের নতুন সরকার এই ইউনিটগুলির পরিচালনা একটি সদ্য গঠিত ট্যানারি কর্পোরেশনকে ন্যস্ত করেছিল, যা তাদের চূড়ান্ত উৎপাদন ইউনিটগুলিতে রূপান্তর করবে বলে আশা করা হয়েছিল। দুর্ভাগ্যক্রমে, কর্পোরেশন অভিজ্ঞতার অভাবে এবং দুর্নীতিমূলক আচরণগুলি সহ অন্যান্য কারণে এই উদ্দেশ্যটি সম্পাদন করে নি।

পরে সরকার ট্যানারি কর্পোরেশন ত্যাগ করে এবং এই ট্যানারিগুলির বেশিরভাগ ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্প কর্পোরেশনকে (বিসিআইসি) হস্তান্তর করে। এর মধ্যে তিনটি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে দেওয়া হয়েছিল। উভয় কর্তৃপক্ষই ট্যানারিগুলি পরিচালনা করতে চরম ভাবে ব্যর্থ হয়েছিল। ১৯৮২ সালে,সরকার এটির পুনঃর্নিয়োগের নীতি অনুসরণ করে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কাছে স্থানান্তরিত করে,যা কিছু উদ্যোগী বাঙালিকে এই শিল্পে কম বা অভিজ্ঞতা না থাকায় ব্লু ওয়েট চামড়া উৎপাদন শুরু করে।
(তবে এখানে সূচনা হয়েছিল, এলাকা ভিত্তিক দ্বন্দ্বের! যা পরবর্তীতে চামড়া শিল্পের অগ্রগতিকে অনেকটা ব্যাহত করে।বরাবরই চামড়া শিল্পের দক্ষ অদক্ষ মুল কারিগরেরা ছিল কুমিল্লা নোয়াখালী অঞ্চলের। যেহেতু সব অবাঙ্গালি মালিক ও চামড়া শিল্পের সাথে জড়িত কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন অভিজ্ঞ অবাঙ্গালীরাও এক সাথে চলে যায় সেহেতু এই শিল্পে বেশ বড় একটা শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল- সেটা পূরণ করা সেভাবে আর কখনোই সম্ভব হয়নি। সরকার যখন ১৯৮২ সালে চামড়া শিল্প চালাতে ব্যর্থ হয়ে বেসরকারী উদ্যোক্তা দের হাতে ছেড়ে দেবার সিদ্ধান্ত নেয়- তখন এর জোর দাবিদার ছিল কুমিল্লা নোয়াখালী অঞ্চলের সেই গ্রুপটি কিন্তু যেহেতু হাজারীবাগের অবস্থান পুরানা ঢাকার খুব কাছেই- সেহেতু পুরনো ঢাকার স্থানীয় অধিবাসীরা এসবের অধিকার নেবার জোর প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু কারিগরি-জ্ঞানের অভাবের জন্য তারা সফলকাম হয়নি। তারা শুধু কাঁচা চামড়ার বৃহৎ আড়ত ‘পোস্তা’র অধিকার নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে বাধ্য হয়। কিন্তু কুমিল্লা নোয়াখালীর এই গ্রুপকে কখনোই তারা সুনজরে দেখেনি। সে সাথে কুমিল্লা নোয়াখালীর গ্রুপ ও পুরনো ঢাকার লোকদের সাথে দুরুত্ব বজায় রেখেছে। আজও হাজারীবাগে গেলে শুনতে পাবেন সেই দ্বন্দ্বের কথা( শুধুমাত্র বে ট্যানারির মালিক ছিলেন শরিয়তপুরের লোক)।
ঢাকাইয়া রা এখনো বলে’ আব্বে হালায় নোয়াখালীর মানুছ বড় বড় বিতাল আর খবিছ। ওই হালাগো সাথে ব্যাবছা করন যাইব না।‘ তেমনি নোয়াখালীর লোকও ওদের কটু কথা করতে ছাড়ে না।
এই দ্বন্দ্বে এক সময়ে , নাসিরুদ্দিন পিন্টু সহ পুরনো ঢাকার কিছু সন্ত্রাসী চেষ্টা করেছিল কিছু ট্যানারি দখল করার। যদিও সফলকাম হয়নি তবে এদের অত্যাচারে অনেক ভাল ব্যবসায়ী ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। এটা একটা কারণ বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়া শিল্পের অধঃপতনের জন্য।)

এর পর থেকে হাজারীবাগ ট্যানারি ব্যবসায় গতি পেয়েছিল এবং মুক্তিযুদ্ধের আগে ট্যানারিগুলির সংখ্যা বেড়ে প্রায় ২০০ হয়েছে।
সময়ের সাথে সাথে হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্প অঞ্চলটি ছোট ও বড় ট্যানারি কারখানার ২৭০ টিরও বেশি বেড়েছে।যা শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন ট্যানারি দিয়ে ভরা জায়গায় পরিণত হয় বঙ্গভঙ্গের আগে (১৯৪৭।) পূর্ববঙ্গের প্রায় সমস্ত কাঁচা চামড়া পশ্চিমবঙ্গ,বিশেষত কলকাতায় রফতানি করা হত এবং সেখানে প্রক্রিয়াজাত করা হত।
এরপরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ট্যানারি শিল্পের বিকাশ মূলত ভারত থেকে বাস্তু-চ্যুত হয়ে পরবর্তীকালে পশ্চিম পাকিস্তানের কয়েকটি সংস্থার সহায়ক সংস্থা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে দেশ বিভাগের পরে শুরু হয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানের ট্যানিং শিল্প এবং চামড়া রফতানি মূলত অবাঙালি মানুষের হাতে ছিল। কয়েকটি ট্যানিং ইউনিট অবশ্য বাঙালি উদ্যোক্তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল তবে তা কুটির শিল্প ধরণের ছিল এবং তারা মূলত দেশীয় বাজারের জন্য চামড়া প্রক্রিয়াজাত করত। বেশিরভাগ অবাঙালি ট্যানারিগুলি ব্লু-ওয়েট প্রক্রিয়াজাত করে পশ্চিম পাকিস্তানে প্রেরণ করত এবং সেখানে এটি মুল প্রক্রিয়াকরণ( ফিনিশড লেদার) শেষে বিভিন্ন ভোক্তা পণ্য তৈরির জন্য সেটা ব্যবহৃত হত। ১৯৬০ সাল অবধি পূর্ব পাকিস্তানের ট্যানারিগুলি কাঁচা চামড়াগুলি লবণ প্রয়োগ করে এবং তারপর এটি রোদে শুকানোর প্রক্রিয়া করত এবং এইভাবে তৈরি হওয়া উপাদানটি ‘লেটু’ নামে পরিচিত ছিল।

চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ

২০১০ সালে বাংলাদেশে প্রায় ২০৬টি ট্যানারি ইউনিট ছিল( মতান্তরে ২২০)এবং তারা স্থানীয়ভাবে পাওয়া কাঁচা চামড়া ব্যবহার করে। এর মধ্যে ১১৪ টি বৃহত্তর এবং মাঝারি ইউনিট (স্থানীয় মান অনুসারে) এবং শিল্প অধিদপ্তরে নিবন্ধিত রয়েছে। অন্যরা বেশিরভাগ ছোট এবং কুটির শিল্প ধরণের এবং সরকারের নিবন্ধে নেই। ট্যানারি শিল্পের সম্ভাব্য দিক বিবেচনা করে, ৩৫ টি ট্যানারিগুলি আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করেছিল।এই ট্যানারিগুলি আমাদের কাঁচা চামড়ার ৬০% আন্তর্জাতিক মানের রূপান্তরে সক্ষম ছিল। প্রায় ১৯০ টি ট্যানারি ইউনিট ঢকার হাজারীবাগে ট্যানারি এস্টেট নামে পরিচিত মাত্র একর জমিতে অবস্থিত। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের রেকর্ড অনুসারে ট্যানিং শিল্পে প্রায় ৬০০০০ শ্রমিক নিযুক্ত রয়েছে(এর মধ্যে ৬০ শতাংশ অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করছেন এবং তাদের মালিকদের দেওয়া কোনও পরিচয়পত্রও নেই।)। এছাড়াও বিদেশি নাগরিকসহ প্রায় শতাধিক যোগ্য প্রযুক্তিবিদ রয়েছেন যারা বিভিন্ন ট্যানারিতে কাজ করছেন। ট্যানারি শিল্পে এখন পর্যন্ত মোট মূলধন বিনিয়োগ করা হয়েছে ২.৫ বিলিয়ন টাকা, যার মধ্যে সরকার / ব্যাংক ফিনান্স প্রায় ১.২ বিলিয়ন টাকা। কাঁচা চামড়া সংগ্রহ এবং ট্যানারি ইউনিটে তা পৌঁছে দেয়ার প্রক্রিয়াতে প্রায় ১৫০০ ব্যক্তি জড়িত। ট্যানারি শিল্পে ব্যবহারের জন্য প্রায় ১০০ টি প্রতিষ্ঠান কেমিক্যাল আমদানি করে।

বাংলাদেশ প্রায় ২০০-২২০ মিলিয়ন বর্গফুট কাঁচা চামড়া উৎপাদন করে, যার প্রায় ৮৫% ক্রাস্ট এবং ফিনিশড আকারে রফতানি করা হয়। বাকি চামড়া দেশীয় বাজারের জন্য চামড়া-জাত পণ্য উৎপাদন করতে ব্যবহৃত হয়। চামড়া বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রফতানি আইটেম। তবে এই খাত থেকে রফতানি আয় অতীতের কোনও পূর্বাভাসের সাথেই মিল রাখতে পারেনি। যেহেতু চামড়ার উৎপাদন ও সরবরাহ গবাদিপশুর প্রাপ্যতা এবং মাংসের চাহিদার উপর নির্ভরশীল,তাই অল্প সময়ে চামড়ার মোট সরবরাহ বাড়ানো যায় না,তাই এই খাত থেকে আয় বাড়ানোর একমাত্র উপায় উচ্চ উৎপাদন এবং রফতানি।কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজার চামড়ার জন্য মূল্য খুব বেশী ওঠানামা করে,তাই এর রফতানি আয়েরও তারতম্য হয়। ২০০১ অবধি এই খাত থেকে বার্ষিক রফতানি আয় এক বিলিয়ন টাকার নিচে ছিল।তবে ২০০৮-০৯ সালের মধ্যে চামড়া ও চামড়া-জাত পণ্য রফতানি থেকে বার্ষিক আয় বেড়ে .৩৮১মিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশের কয়েকটি নামী ট্যানারি হলেন ঢাকা লেদার, অ্যাপেক্স ট্যানারি, লেক্সকো, করিম লেদার, সমতা ট্যানারি, বে ট্যানারি,রিলায়েন্স, কালাম ব্রাদার্স, আল মদিনা, মিল্লাত, প্রগতি, আনোয়ার,আমিন,ক্রিসেন্ট লেদার ইত্যাদি.
ঢাকার বাইরে যশোর ও খুলনায় আছে আকিজ ট্যানারি ও সুপার এক্স।

চামড়া শিল্পের বিকাশের চরম সময়ে সরকার ভাল অথচ ভুল(!)* এটা পরে প্রমাণিত হয়েছে* সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৯০ সালে ব্লু ওয়েট চামড়া বন্ধ করে দেয়ার ফলে কাঁচা চামড়ার দাম কমতে শুরু করে।যদিও এই ধারাটা প্রথমে বোঝা যায়নি। কেননা ফিনিশড লেদার ও লেদার প্রোডাক্ট রপ্তানি দিন দিন বাড়ছিল। সেই সাথে দেশীয় বাজারেও চামড়া-জাত পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছিল।
ব্লু ওয়েট চামড়া শুধু দেশীয় উৎপাদিত চামড়া থেকেই তৈরি হত না। কাঁচা চামড়া আমদানি ক্রেও ব্লু ওয়েট করে রপ্তানি করা হত। ভয়ঙ্কর পরিবেশ দূষণের সূচনা তখন থেকেই। বিদেশি কিছু স্বার্থান্বেষী ক্রেতা( যেই কাজটা প্রথমে করেছে ভারত পরে পাকিস্তান সেই ধারাতেই) বাংলাদেশকে বানাতে চেয়েছিল দুষিত আবর্জনার ভাগার। সারা বিশ্ব থেকে কাঁচা চামড়া এনে এখানকার পরিবেশ দূষণ করে সেটা নিয়ে তারা ফিনিশড করে চড়া দামে বিক্রি করবে। এমনকি সেই চামড়াই কয়েকগুণ দামে আমাদের কিনে এনে প্রোডাক্ট তৈরি করে রপ্তানি করতে হত। বিদেশী ক্রেতা বাধ্য করত আমাদের সেই চামড়া কেনার জন্য।
সরকারি মহল এটা বুঝতে পেরে আগ-পিছু না ভেবে হুট করে ব্লু ওয়েট চামড়া রপ্তানি বন্ধ করে দিল।

ব্লু ওয়েট চামড়া প্রসেসিং ইউনিট

কিন্তু খেলা শুরু হোল অন্য খানে। ওদের পক্ষ হয়ে পরিবেশে রক্ষার ধোঁয়া তুলে মাঠে নামল হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। তারা একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশ শুরু করল- কি হচ্ছে বাংলাদেশে। কিভাবে ভয়ঙ্কর দূষণের স্বীকার হচ্ছে আমাদের নদ নদী আর পরিবেশ( বিষয়টা সত্যি আমি স্বীকার করছি কিন্তু উদ্দেশ্যটা ভিন্ন)। তারা ইউরোপ থেকে অন্যান্য দেশকে বোঝাল দূষণ কন্ট্রোলে না না আন পর্যন্ত বাংলাদেশের চামড়া দিয়ে পণ্য কেনা যাবেনা। তখন জাপান সহ কিছু দেশ বাদে অনেকেই তাদের সাথে তাল মেলাল।ইউরোপিয়ান বায়াররা ঘোষণা দিল বাংলাদেশী চামড়া দিয়ে তারা তৈরি কোন মাল নিবে না।তারা ফের বাধ্য করল তাদের সিলেক্টেড পার্টি থেকে চড়া দামে চামড়া নিয়ে অথবা বায়ারদের পাঠানো চামড়া দিয়ে প্রোডাক্ট তৈরি করার জন্য।পরবর্তীতে কিন্তু ভিয়েতনাম ও চায়না বাংলাদেশ থেকে ফিনিসড লেদার নিয়ে মাল বানিয়ে ইউরোপে পাঠায়- সেটা নিয়ে কেউ কথা বলছে না।
এই ভাবে শুরু হল চামড়া বাজারে ধ্বস!

কিন্তু স্থানীয় বাজারে এর চাহিদা বাড়তে থাকল। সেই সাথে জাপান ও অন্য কিছু দেশ অন্য সবাইকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে চামড়া-জাত পণ্য নিতে থাকল বাংলাদেশ থেকে।
হাজারীবাগে শুধু ট্যানারি নয় এর সাথে জড়িত ছিল হাজারো ছোট বড় কারখানা আর শ্রমিকরা। শ্রমিকদের একটা বড় অংশ ছিল ভাসমান- যারা চুক্তিভিত্তিক কাজ করত। এছাড়া ছিল প্রচুর কুলি, ভ্যান ও ঠেলাগাড়ি চালক,আর কিছু অভিজ্ঞ কারিগর। সেখানে ছিল শতাধিক কেমিক্যালের দোকান, আড়তদার, ফড়িয়া ও মধ্যস্বত্তভোগী ব্যবসায়ীদের অফিস। মাথানি, চামড়ার ছাট, হাড় গোর, শিং এর অনেক ফ্যাক্টরি। এছাড়া চামড়ার লাইনিং, ভেড়ি, কিপস( মহিষের চামড়া থেকে তৈরি পুরু, শক্ত কিছুটা হলদেটে গোলাপি রঙের ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে উৎপাদিত চামড়া, যা দিয়ে স্যান্ডেল বা জুতার সোল, ট্রে এসব কাজে ব্যবহৃত হয়। এই চামড়া পানিতে ভেজালে বেশ মোলায়েম হয়ে যায় ডাইসে প্রেশার দিয়ে শুকালে যেকোনো আকার ধারণ করে। কিছু জিপ্পো লাইটারের বক্স,হ্যান্ড-কাফের শক্ত থলে সহ অন্যান্য কিছু এই পদ্ধতিতে তৈরি হয়।কিপসে ইচ্ছা মত রঙ ও বার্নিশ করা যায়), মহিষের চামড়া প্রক্রিয়াজাতের বিভিন্ন অতি ক্ষুদ্র ফ্যাক্টরি ছিল।
মহিষের চামড়া দিয়ে বানানো হ্যান্ডকাফ পাউচ(মেড ইন বাংলাদেশ)

এই ফ্যাক্টরিগুলো মূলত বড় ফ্যাক্টরির খুব ধারে কাছে হত কেননা ব্লু ওয়েট, ক্রাস্ট, ফিনিশিং, ডায়িং, বার্নিশিং, প্লেটিং সহ বিভিন্ন কাজে এই সব ফ্যাক্টরির সহযোগিতার দরকার হত। কোন কোন ফ্যাক্টরি রোজ বা ঘণ্টার ভিত্তিতে মেশিন বা ফ্লোর ভাড়া দিত। এছাড়া ত্রুটির কারণে বাতিল কাঁচা চামড়া, লাইনিং, স্প্লিট , টুকরো চামড়া,স্টক লট, টি আর( টেকনিক্যাল রিজেক্টঃ A-D Grade 1, E-H Grade 2,এর পরের ধাপের চামড়াকে বলা হয় টি আর)ও পুরনো চামড়া প্রসেস করে অনেকেই স্থানীয় বাজারে বিক্রি করত।হাজারীবাগে এই সব কর্মকাণ্ড এখনো চলমান তবে সীমিত আকারে।
এছাড়া সব ফ্যাক্টরিতে সব ধরনের মেশিন ছিল না। কিংবা প্রক্রিজাতকরনের সময়ে কোন মেশিন সাময়িকভাবে নষ্ট হয়ে গেলে অন্য কোন ফ্যাক্টরির সহযোগিতা দরকার হত।
একটা বড় ট্যানারি বিশাল ব্যাপার- বিরাট তার কর্মযজ্ঞ। কেউ বে ,এপেক্স বা এধরনের বড় ট্যানারিতে না গেলে বুঝতে পারবেন না কি বড় মাপের কর্মকাণ্ড চলে ওখানে। যশোরের সুপার লেদার নামে একটা ট্যানারির জায়গার পরিমাণ ৩০ একর প্রায়!

• উপরে যে ছবিটা দিলাম; সাভারে অবস্থিত বেশ নামকরা একটা ট্যানারির ক্ষুদ্র অংশের চিত্র। ফটোগ্রাফি-শেরজা তপন।

এছাড়া ছিল পাশাপাশি গড়ে উঠেছিল প্রচুর ছোট ও মাঝারি চামড়া-জাত পণ্যের কারখানা। যারা মূলত বড় ফ্যাক্টরির টি আর,স্টক লট সহ স্থানীয় ফড়িয়া ও ছোট কারখানার মালিকদের কাছ থেকে চামড়া নিয়ে বিভিন্ন চামড়া-জাত সামগ্রী তৈরি করে বাজারজাত করত। এদের আবার কেউ কেউ রপ্তানির সাথেও জড়িত ছিল।পাশাপাশি বড় বড় ট্যানারির ও কিছু নিজস্ব ফ্যাক্টরি ছিল,যেগুলো মূলত রপ্তানি করত। পরে এদের কেউ কেউ লোকাল ব্রান্ড হিসেবে নিজেদের প্রকাশ করে। যেমন;বে ফুট ওয়্যার,এপেক্স(ওদের তখন তেজগাঁও তেও ফ্যাক্টরি ছিল-এখন ঢাকার বাইরে),ওরিয়ন, ক্রিসেন্ট লেদার।
হাজারীবাগের খুব কাছেই ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কাঁচা চামড়ার আড়ত ‘পোস্তা’। যেখান থেকে প্রতিদিন হাজার থেকে লক্ষ কাঁচা চামড়া আনা নেয়া হত।
তার অনতিদূরেই বংশালের সুরিটোলা- মালিটোলা। যেটা চামড়া ও অ-চামড়া-জাত পণ্যের সবচেয়ে বড় এক্সেসরিজ মার্কেট। সেই সাথে সেখানে সব ধরনের কেমিক্যাল,সুতা,চামড়ার উপযোগ,সোলের বিভিন্ন অংশ, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত চামড়া,লেসকো লাইনিং স্প্লিট,কিপস,ভেড়ি’র পাইকারি ও খুচরা বাজার। পুরোটাই একটা সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের সাথে যুক্ত ছিল।
কিন্তু সরকার শুধুমাত্র হাজারীবাগ থেকে সাভারে শুধুমাত্র ট্যানারিগুলো স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়ে এই পুরো চেইনটা ভেঙ্গে দিয়ে-দেশের চামড়ার বাজার অস্থিতিশীল করে দিল।
প্রথম থেকেই অনেকে প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু সেই প্রতিবাদের ভাষা তাদের কান পর্যন্ত পৌঁছায়নি কখনোই...

*মুক্ত আলোচনা সবার জন্যই উন্মুক্ত! যে কেউ পরামর্শ দিতে পারেন?
পরের পর্বের জন্যঃ Click This Link

মুল প্রবন্ধঃ শেরজা তপন
০৭ আগষ্ট,২০২০

মন্তব্য ২৩ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (২৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:৪৮

শেরজা তপন বলেছেন: প্রিয় ব্লগার, গতকাল এই পোষ্টটা দিয়ে আবার কিছুক্ষন পরেই ড্রাফট এ নিয়েছিলাম। লেখা ও ছবিতে কিছু গড়মিল থাকায় আমি বাধ্য হয়ে এ কাজটা করেছিলাম। কেউ হয় তো মন্তব্য করেছিলেন, কিন্তু ড্রাফট এ নেবার সময় কোন মন্তব্য নজরে আসেনি। আজ ফের পোষ্ট করার সময় দেখি- দুটো মন্তব্য ছিল!
আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত মন্তব্য সহ লেখা সরিয়ে ফেলার জন্য। যে বা যাহারা মন্তব্য করেছিলেন, দয়া করে যদি ফের মন্তব্য করতেন তাহলে আমি দারুন কৃতার্থ হব।- শেরজা তপন

২| ০৮ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:০০

চাঁদগাজী বলেছেন:


আপনি কি লেদার টেকনোলোজী বুঝেন?

০৮ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:২৮

শেরজা তপন বলেছেন: প্রশ্নটা করার হেতু?

৩| ০৮ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১:০১

আকন বিডি বলেছেন: কি বলবো বস, প্রত্যেকটি শিল্পের এই অবস্থা, যে গামের্ন্টস ধীরে ধীরে আমাদের লোকাল পোলাপান ডেভেল্প করলো তাদের যায়গা দখল করলো ভারতীয়রা। মিড থেকে টপ বেশির ভাগ স্থানে ভারতীয়দের প্রবেশ। দোষ কম বেশী আমাদের । দলবাজী হারামী গুলা কম না।

আপনি কি চামড়া শিল্পের সাথে জড়িত?

আমাদের স্লোগান "ওমুকের চামড়া চুলে নেব আমরা"
এখন আমাদের চামড়া আমরাই তুলে তৃপ্তির ঢেকুর তুলি।
দাদারা সেই চামড়া দিয়ে ব্যবসা করে, আমাদের পাছাও মারে।
আর আমরা ওর্গাজমের সুখে চক্ষু মুদি।

০৮ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:৩৩

শেরজা তপন বলেছেন: আমার অগ্রজন এই শিল্পের সাথে বেশ খানিকটা জড়িত ছিল। তার সুত্র ধরে আমারও এই শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ঠ অনেকের সাথে যোগাযোগ হয়েছে- অনেক কিছু জানা হয়েছে। শুধূ টেকনিক্যাল জ্ঞান আমার তেমন নেই- বহু আগে জার্মানি থেকে আসা একজন বিশেষজ্ঞ মি। বাউয়ার আমাকে কিছু শিখিয়ে ছিলেন।
আরো অনেক কথা আছে আমি ধীরে ধীরে বলব। এই সব ব্যক্তিগত বিষয়াদি নিয়ে আমি আলাপ করতে কুন্ঠাবোধ করি।
ঠি বলেছেন। সাথে থাকুন সব সময়

৪| ০৮ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১:৩৩

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: একেবারে গোড়া থেকে ধারাবাহিকতায় দারুন ভাবে তুলে ধরেছেন চামড়া শিল্পের বিকাশ থেকে ধ্বস
সিনোপসিসটা বেশ পরিষ্কার!

ট্যানারীর কারণে নদী দূষন নিয়ে লেখালেখিতে আমার মাঝে মাঝে হাসি পায়! সেদিন একজন এই বিষয়ের উপরই ঢাবিতে একটা থিসিস পেপার জমা দেবার আগে এক ঝলক দেখলাম। যা ভেবেছি তাই- সবই আছে, শুধূ মূল পয়েন্টটাই নাই!

ফারাক্কার জন্য পানি প্রবাহের মূলধারা যে বন্ধ হয়ে গিয়েই পরে অন্য উপসর্গগুলোর জন্ম বা বিকাশ, তা নিয়ে একটা লাইনও নেই। বলতেই জিভ কাটলেন বটে কিন্তু বদলালেন না। কারণ ঐ কথা বললে আবার দাদারা নাখোশ হয়ে যান!!!!

বর্ষা এলে দেখা যায়- বুড়িগঙ্গা আবার আগের রুপ ফেরত পায়! অবাধ জলের প্রবাহের তোড়ে দূষিত, দুর্গন্ধযুক্ত বুড়ি গঙ্গা আবার স্বাভাবিক নদীতে পরিণত হয়! তারমানে কি দাড়াল, নদী দূষন যতটা কৃত্রিম তারচে বেশি দায় প্রাকৃতিক প্রবাহে বাঁধা। অবশ্যই বাকী উপসর্গ গুলো নিয়ে আমাদের আরো বেশী সচেতন হতে হবে।কারখানা গুলোতে বর্জ নিষ্কাশনের আগে সর্বোচ্চ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হবে। কিন্তু মূল কথাটাও দৃপ্ত উচ্চারনে বলিষ্ট আওয়াজে বলতে হবে। নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা চাই।

যে নদী ও পরিবেশ দূষনের অজুহাতে ট্যানারী সাভার নেয়া হলো- সাভারের নদী-পরিবেশ কি সেই ঝুকিতেই পড়লো না? কে কারে বোঝাবে? আর লিংকেজ ইন্ডাষ্ট্রিজের ধ্বসের কথাতো বললেনই।

অবশ্য সরকার বাহবা নিতে পারে অন্য দৃষ্টিকোন থেকে- আগে চামড়ার জন্য মহল্লায় রীতিমতো ডগফাইট হতো।এক ঈদের ব্যবসা দিয়ে ৬ মাস বসে খেতে পারতো! তাই এলাকার নিয়ন্ত্রন নিতে বা ধরে রাখতে দুচারজন আহত নিহতে হবার ঘটনাও ঘটেছে। বর্তমান সরকার সেই হিসেবে- "আমরা" দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছি ;) চামড়ার দাম নাই,. চামড়া নিয়া লড়াইও নাই ;) বলে আত্মতুষ্টিতে ভুগলে দোষ দেবে ক্যাঠায় ;) ?


০৮ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:৩৬

শেরজা তপন বলেছেন: সময় করে আসছি ভাই। এত বড় মন্তব্যের তো আর দু'চার কথায় উত্তর হয় না- দেয়াটা বেয়াদবি
উত্তর ভাল করেই দেবার চেষ্টা করব- প্লিজ চোখ রাখবেন

০৮ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:৫৪

শেরজা তপন বলেছেন: 'যে নদী ও পরিবেশ দূষনের অজুহাতে ট্যানারী সাভার নেয়া হলো- সাভারের নদী-পরিবেশ কি সেই ঝুকিতেই পড়লো না? কে কারে বোঝাবে?'
একশত ভাগ একমত। আগে করতাম একটা নদী দুষন এখন করছি দুটো :( পানি প্রবাহের কথাতো বললেন-ই। কে বোঝাবে এই গ্নডুদের এইসব কথা। হাজারীবাগে কি কাজ থেমে আছে? চলছে- কিছুটা কম আর বেশী। আর সাভারে ট্যনারী নিয়ে গিয়ে লাভ কি হল- সেই পরিবেশ দুষনের দায় থেকে এখনো বাংলাদেশ মুক্ত নয়। বিদেশি ক্রেতারা আর ফিরে আসেনি- তারাতো আসবে না, তারা বাংলাদেশকে ভাগাড় আর গার্মেন্টসের মত দর্জি ঘর বানাতে চায়।
আমাদের শত্রু আমরাই- বাইরের শত্রু দরকার নাই। প্রয়োজন মত যে কারো গারে দোষ চাপিয়ে আমরা বুক ভরে নিঃশ্বাস নিই।
ডগফাইটের বিষয়টা হেব্বি বলেছেন ভাই :)
ধন্যবাদ - সবসময় অন্য সবার পাশে আপনার মন্তব্যের অপেক্ষায় থাকি...

৫| ০৮ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:২০

রাজীব নুর বলেছেন: আমি ছোট করে একটা কথা বলি-
সরকারের ব্যর্থতার জন্য আজ চামড়া শিল্পের এই অবস্থা।

০৮ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:৪৫

শেরজা তপন বলেছেন: অবশ্যই আমি একমত- কিন্তু যাদের হাতে সুযোগ ছিল সরকারকে বুঝিয়ে ভাল কিছু করানোর তারা নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য দেষের বৃহত্তর স্বার্থের জলাঞ্জলি দিয়েছেন।
ভাল থেকেব ভাই রাজীব নুর। সাথে থাকার জন্য আমি আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞ

৬| ০৮ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:৪৮

চাঁদগাজী বলেছেন:


লেখক বলেছেন: প্রশ্নটা করার হেতু?

-প্রথমে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে, তারপর প্রশ্ন করতে পারতেন! আপনার লেখা থেকেমনে হচ্ছিল যে, আপনি লেদার টেকনোলোজী জানতে পারেন।

০৮ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:০৯

শেরজা তপন বলেছেন: জনাব চাদ্গাজী ভাই, যে কেউ আমার লেখায় এসে মন্তব্য করলে আমি বেশ সন্তুষ্ট হই, হোক সেটা ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক! চেষ্আটা করি সবার প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর দেবার। তখন একটা ক্লায়েন্ট মিটিং নিয়ে একটু ব্যাস্ত ছিলাম-এক ফাঁকে আমি আপনার প্রশ্নটা করে গিয়েছিলাম। পরে ফের আপনার উত্তর দেখে প্রতিউত্তর করব বলে;
প্রথমত আপনি নিশ্চয়ই আমার গত পর্ব-টা পড়েছেন( যেহেতু আপনার মন্তব্য ছিল)? সেখানে এই বিষয়ে লেখা আছে( বোল্ড করে)
(পুরো বিষয়টা গবেষনা-ধর্মী বা তথ্যমূলক পর্যালোচনা নয়! এখানে অনেক ভুল-ভ্রান্তি থাকতে পারে। বিশেষ করে টেকনিক্যাল বিষয়গুলোতে। ব্লগে ‘লেদার টেকনোলজি’র কোন এক্সপার্ট থাকলে আমার ভুলগুলো ধরিয়ে দিলে খুশি হব।আর কেউ আরো বেশী তথ্য দিয়ে সাহায্য করলে কৃতজ্ঞ হব।পুরো বিষয়টা আমি খুব সহজ ভাষায় বলার চেষ্টা করব যাতে সবারই বুঝতে সুবিধা হয়। এখানে সবার-ই অংশগ্রহন জরুরি!)
না আমি লেদার টেকনোলোজির কেউনা। আমাদের সময়ে লেদার টেকনোলোজির পড়াশুনার মান ছিল ভয়াবহ খারাপ!
আমি আরো খানিকটা উত্তর দিয়েছি ব্লগার আকন বিডি'র প্রশ্নে;
আমার অগ্রজন এই শিল্পের সাথে বেশ খানিকটা জড়িত ছিল। তার সুত্র ধরে আমারও এই শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ঠ অনেকের সাথে যোগাযোগ হয়েছে- অনেক কিছু জানা হয়েছে। শুধূ টেকনিক্যাল জ্ঞান আমার তেমন নেই- বহু আগে জার্মানি থেকে আসা একজন বিশেষজ্ঞ মি। বাউয়ার আমাকে কিছু শিখিয়ে ছিলেন।
আরো অনেক কথা আছে আমি ধীরে ধীরে বলব। এই সব ব্যক্তিগত বিষয়াদি নিয়ে আমি আলাপ করতে কুন্ঠাবোধ করি।

আশা করি আমার উত্তরে আপনি সন্তুষ্ট হবেন। ভাল থাকবেন। যখন যেমন মনে চায় প্রশ্ন করবেন-আমি বাধ্য আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে।

৭| ০৮ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:৪৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


অবাংগালীরা চামড়া প্রসেসিং করতো; ওরা চলে যাবার পর, নতুন করে মানুষকে ট্রেনিং দেয়ার দরকার ছিলো, এটা বুঝার মতো মানউষ সরকারের ছিলো না।

০৮ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:১৮

শেরজা তপন বলেছেন: এর উত্তর আখনো আমি জানিনা। এই উত্তরটা জানার জন্য- হাজারীবাগের অতি পুরনো একজন ব্যাবসায়ী ও এক্সময়ের লেদার কলেজের শিক্ষক আমার মুরুব্বীজনকে ফোন দিয়েছি কয়েকবার= কিন্তু নম্বর বন্ধ পাচ্ছি। আমি এর উত্তর জানলে অবশ্যই আপনাকে জানাব।
তবে বরাবর যা হয়। একজনেই এদেশে সব কাজ করতে চায়, অল্প শিখে বিশেষজ্ঞ হয়ে যায়। বিদেশে ট্রেনিং নিতে গিয়ে আর ফিরে আসেনা বা সরকারি টাকায় ফাউ বিদেশ ভ্রমন করে গুচ্চের টাকা নষ্ট করে। দামী দামী মেশিন আমদামীর নামে লক্কর ঝক্কর মেশিন নিয়ে আসে অনেক বেশী দামে। পরে দেখা যায় হয় সে মেশিন চলে না নাহলে চালানোর কেউ নাই।
হাজারীবাগের সে ব্যবসায়ী একবার আমাকে লেদার টেকনোলোজির কিছু মেশিন দেখিয়ে বলেছিল(৯০ এর দশকে); দেখো এই মেশিনগুলো বহু বছর যাবত এভাবে খোলা পরে আছে। কত দামি মেশিন। শুধু এনে ফেলে রেখেছি- এগুলো কেউ চালাতে পারে না। চালানোর কোন চেষ্টাও নাই।

৮| ০৮ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:৪৮

সাফকাত আজিজ বলেছেন: আপনার লেখা বেশ সুন্দর ও তথ্য বহুল। আমিও এক সময় এই শিল্পের সাথে জড়িত ছিলাম কিন্তু এখন আর নেই তার একটা কারণ কারখানা গুলোর স্থান পরিবর্তন।

আমার জানতে ইচ্ছা করছে সব কোম্পানির ই একই অবস্থা, যেমন সুপারের কথা বললেন। আর অবারিত ঋণখেলাপী হয়ে দেউলিয়া দেখিয়ে সাথে, হাতিয়ে নেওয়াটা কি দায়ী নয় ?

দেশের সম্পদ যখন দেখি ক্রেনে করে ডাম্পিং করা হচ্ছে তখন খুব খারাপ লাগে যেখানে আমাদেরটাই দিয়ে ইতালি ব্যবসা করে।

আপনি মুরুব্বি মানুষ তাই জানতে ইচ্ছা করছে আমি অনেক ছোট একজন মানুষ। সামুতে সাধারণত জিজ্ঞেস করিনা, কারণ খুব বাজে ভাবে উত্তর পাই।

০৮ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:৪২

শেরজা তপন বলেছেন: জনাব সাফকাত আজিজ ভাই,
বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট একশটা প্রশ্ন করলে আমি একশটা প্রশ্নের উত্তর দিব।
এই লেখাটার যদি প্রথম পর্ব পড়েন তাহলে বুঝবেন, আমি কত বেশী করে চাচ্ছি সবার অংশগ্রহন- সবাই আমাকে প্রশ্ন করুক এবং ভুল গুলো ধরিয়ে দিক। আমি সবার মতামত এখানে শেয়ার করতে চাই।
সুপারএক্স এর বিষয়টা আমি ভাল করে বুঝতে পারিনি। আমার এই বিষয়টা জানা নেই। আমি জানি ক্রিসেন্টের বিষয়টা। সুপারেক্সতো ভালভাবেই চলছে। তাহলে আমি ব্যাপারটা খতিয়ে দেখব। ঋন খেলাপি প্রায় প্রত্যেকটা ট্যানারী'ই। আমি এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
তাতো অবশ্যই তবে সেটা অল্প অংশ। আমাদের দেশের কাঁচা চামরার বাজার উঠানামায় ওদের খুব বেশী কিছু করার নেই ভাই। আমাদের ধ্বংসের জন্য আমরা, আমাদের লোভ, আমাদের রাজনীতি, আদর্শ, ও নীতি নির্ধারকরা দায়ী।
আমি খুব বেশি মুরুব্বী নই- তবে আপনার বয়সে বড়। আর আমি অতি ক্ষুদ্র একজন মানুষ।
নিজেকে অযথা ছোট ভাববেন না- পরবর্তী সিরিজগুলোতে সাথে থাকুন আর- মনে যত প্রশ্ন আসে প্রশ্ন করুন? ভাল থাকুন সবসময়।

৯| ০৯ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ৯:৫৪

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: ট্যানারীগুলো সাভারে স্থানান্তরের ফলে লিংক শিল্পগুলো একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে বা যাচ্ছে; যার ফলশ্রুতিতে চামড়াশিল্প একেবারে শেষ হয়ে যাচ্ছে।





চমৎকার বিশ্লেষণধর্মী লেখার জন্য ধন্যবাদ।

০৯ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ১০:০০

শেরজা তপন বলেছেন: আপনাকেও সবিশেষ ধন্যবাদ লেখাটা পড়ে সু-চিন্তিত মতামতের জন্য!
সবাই শুধু ব্যাবসায়ীদের অতি লাভের মানসিকতা দোষ দেয়- আর বাকিটা সরকারের। কিন্তু চামড়ার বর্তমান এই ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য যে আরো অনেক কিছু দায়ী সেগুলোই আমি ধীরে ধীরে বলব।
দয়া করে সামনের পর্ব গুলোতেও সাথে থাকবে আর আপনার যেকোন মতামত থাকলে দিবেন-আমার লেখায় সেগুলো গুরুত্ব পাবে নিঃসন্দেহে!
ভাল থাকুন

১০| ০৯ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:৪৪

জাহিদুল ইসলাম ২৭ বলেছেন: বাংলাদেশে চামড়া শিল্পের ইতিহাস ও খুটিনাটি বিষয়গুলো লেখায় উঠে এসেছে।অনেককিছু জানতে পারলাম।

০৯ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:৩৭

শেরজা তপন বলেছেন: লেখাটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ। সামনের পর্বগুলোতেও আপনাকে পাশে পাব বলে আশা রাখছি। কোন ভুল ভ্রান্তি বা লেখার বিষয়বস্তুর ব্যাপারে আপনার কোন মতামত থাকলে জানাবেন প্লিজ

১১| ০৯ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:৪৪

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: বায়াররা ফ্যাক্টরিগুলির উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য শঙ্ঘবদ্ধ হয়ে কাজ করেছে যেন তারা কম টাকায় ভালো পণ্য কিনতে পারে। এই ব্যাপারে দেশের অসাধু রাজনীতিবিদ, আমলা, বুদ্ধিজীবীরা বায়ারদের সাহায্য করেছে। একই ধরনের জিনিস গার্মেন্টসের ক্ষেত্রে ঘটেছে। সরকার অনেক কিছু বুঝে বা না বুঝে এই ক্ষতিগুলি করেছে। এছাড়া প্রতিযোগী দেশের ব্যবসায়ীদের কারশাজি থাকতে পারে। এই সেক্টরটা অনেক শম্ভবনাময় ছিল কিন্তু সরকারের ভুল পদক্ষেপে দেশের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। পরিসংখ্যানই বলে যে চামড়ার রপ্তানি গত কয়েক বছর ধরে নিম্নমুখি।

১০ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৩

শেরজা তপন বলেছেন: দুঃখিত ব্যাস্ততার জন্য একটু দেরি হয়ে গেল উত্তর দিতে- একদম ঠিক (এই ব্যাপারে দেশের অসাধু রাজনীতিবিদ, আমলা, বুদ্ধিজীবীরা বায়ারদের সাহায্য করেছে।) সবকিছু মিলিয়ে এসবের জন্য দায়ী কিন্তু আমরাই- ব্যক্তিগত ক্ষুদ্র লাভের কথা ভেবে আমরা দেশের ভবিষ্যত কে বিকিয়ে দেই।প্রতিযোগী দেশের কথা বলতে হলে; তারাতো তাদের স্বার্থের কথা ভাববেই- কিন্তু পথ তো আমরাই করে দেই।

ধন্যবাদ ভাই আপনার মুল্যবান মতামতের জন্য। সামনের দিনগুলোতেও আপনাকে এভাবে সাথে পাব এই আশা রাখছি।

১২| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:৫৮

মা.হাসান বলেছেন: নোয়াখালি-কুমিল্লা-ঢাকার দ্বন্দের কথা জানা ছিলো না। এনারা বেহেসতে গেলেও এলাকার ইজম করবেন কি না আমার ভাবনা হয়।

চমৎকার বিশ্লেষন। একমত, ওয়েট ব্লু চামড়া রফতানি বন্ধ দেশের জন্য খুব ভালো ছিলো। এটাও সম্ভবত সত্য, বুঝে শুনে এই সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো মাথা বিএনপির কখনোই ছিলো না।

ছাগোল না, সেয়ানা আমলারা ট্যানারি সাভারে সরিয়েছে। হাম্বাদিকদের মধ্যে যেমন বিদেশি এজেন্ট আছে, আমলাদের মধ্যেও আছে। হাজারিবাগে দুষন হয়, সাভারে হবে না? ইটিপির ব্যাপারে কড়াকড়ি করা যেতো। এরশাদ সাহেবের সরকার (এবং পরে বি এন পি খানিকটা) যতটা ব্যবসা বান্ধব ছিলো , পরের সরকার ততটা বা আরো বেশি বিরূপ ছিলো।

আরেকটা বিষয় মনে হয় আছে। আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আশির দশকে বছরে যত গরু ছাগল জবাই হতো, এখন তার চেয়ে কয়েক গুন বেশি জবাই হয়। কিন্তু ট্যানারি গুলোর প্রসেসিং ক্ষমতা সেই ভাবে বাড়ে নি। ঢাকার বাইরে উত্তর বঙ্গে ইপিজেডের মতো চামড়া প্রসেসিং এলাকা করলে ভালো হতো। ঐ দিক দিয়ে প্রচুর চামড়া ভারতে চলে যায়। যশোর দিয়েও যায় ।
অত্যন্ত দুঃখিত নিজের ব্যস্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই গুরুত্বপূর্ণ লেখাটিতে নিয়মিত হতে পারি নি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.