নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনটা অন্যরকম হবার কথা ছিল!

শেরজা তপন

অনেক সুখের গল্প হল-এবার কিছু কষ্টের কথা শুনি...

শেরজা তপন › বিস্তারিত পোস্টঃ

মধুর আমার মায়ের হাসি

০৭ ই মে, ২০২৩ সকাল ১০:২০


(এবারের ঘটনাটা বেশ মর্মস্পর্শী-যে কারনে অন্য আলোচনা এড়িয়ে গেলাম।) কাহিনীকালঃ ২০০০ সাল
লিফ্যান্ট রোড থেকে হোটেল সোনারগাঁয়ে যাব । সেখানে ব্যাবসায়িক আলোচনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কেউ একজন অপেক্ষা করছিল । হাতে সময় খুব কম ছিল। ভীষণ ট্রাফিক! কোন রিক্সা চালকই যেতে রাজি হচ্ছিল না। ১৫/২০ জনকে অনুরোধ করার পর অবশেষে একজন যেতে রাজী হল। ভাড়া কত? জিজ্ঞেস করলে সে বলল,- যা’ইচ্ছে দিয়েন।
আমি উঠে ভালভাবে বসার আগেই সে রিক্সা টান দিল,তড়িৎ হুড আঁকড়ে ধরে কোন রকমে নিজের পতন রোধ করলাম। মেজাজ খিঁচড়ে গেল । মুখে কিছু না বললেও মনে মনে রিক্সা চালককে গালি দিলাম।
জ্যাম ঠেলে সে বিভিন্ন কসরত করে দ্রুত সামনে এগুতে চাইছিল যার ফলশ্রুতিতে সে আরো পিছিয়ে পড়ছিল । একবার রাস্তা একটু ফাকা পেয়ে সে এমন বেপরোয়া ভাবে রিক্সা চালাল যে দু’দুবার অন্য গাড়ির সাথে সংঘর্ষ হতে হতে বেঁচে গেলাম!
আমি তাকে জোরে ধমক দিলাম। বললাম, ধীরে দেখেশুনে চালাতে।
সে আমার কথায় কর্ণপাত করল কিনা জানিনা তবে আরো বেশী বেপরোয়া চালাতে শুরু করল। আমার রাগ সামলানো কঠিন হল মনে মনে ভাবলাম রিক্সা থেকে নেমে তাকে আচ্ছা করে একটা চড় কষাবো।
রিক্সা সোনারগাঁয়ের উল্টো দিকে এসে থামতেই আমি তাড়াহুড়ো করে নেমে তার সামনে গিয়ে আচ্ছা মত বকতে শুরু করলাম-তবে গায়ে হাত তুললাম না।
সে বুঝতে পেরেছিল যে সে অপরাধী ,আমার দিকে না তাকিয়ে মাথা নিচু করে আমার বকুনি হজম করছিল।
হঠাৎ লক্ষ্য করলাম তার চোখ দিয়ে ফোটা ফোটা জল পড়ছে ।
আমার মন একটু দ্রবীভূত হল আমি বকুনি থামিয়ে ত কে জিজ্ঞেস করলাম ,কত ভাড়া দিব?’
আমার দিকে না তাকিয়েই সে কন্না ভেজা কণ্ঠে বলল,’যা খুশী দ্যান ।’
আমি দশ টাকার একটা নোট বাড়িয়ে ধরে তাকে জিজ্ঞেস করলাম ’কি ব্যাপার কাঁদছ কেন?’
সে এক হাতে চোখ মুছে হাত বাড়িয়ে টাকাটা নিয়ে আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সরাসরি তাকিয়ে বলল ,’ছার কিছু মনে কইরেন না । মাফ কইরা দিয়েন ।’
কথা বলার সময় তার চোখের পানি বাধ মানছিল না। এই প্রথম আমি তাকে ভাল করে লক্ষ্য করলাম আজো আমার স্মৃতিতে গেঁথে আছে বছর পঁচিশেক বয়সের সেই ছেলেটার কান্না ভেজা অতি সরল মায়াবী মুখখানি।
আমি তার কাঁধে হাত রেখে কোমল স্বরে জিজ্ঞেস করলাম,’ তোমার কি হয়েছে?’
সে নিজেকে আর সামলাতে পারল না দু’হাতে মুখ ঢেকে হু হু করে কেঁদে উঠল।
***
মিনিট খানেক পরে একটু ধাতস্থ হয়ে বলতে শুরু করল যার সারমর্ম হচ্ছে;
গতকাল রাতে তার মা রান্না করছিল । রোদ বৃষ্টিতে যাতে তার কষ্ট না হয় সেজন্য সে রান্নার জায়গাটায় দুটো পাতলা টিন দিয়ে একটা চালার মত করে দিয়েছিল । কিন্তু গতরাতে হঠাৎ একটা দমকা বাতাসে সেই চালার আলগা বাধন ছিঁড়ে যায় টিনের ধারালো অংশে তার মা আঘাতপ্রাপ্ত হন । তখন সে বাইরে ছিল বাড়িতে গিয়ে শোনে তার মা অসুস্থ ,বস্তিবাসীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। সে প্রথমে উপলব্ধি করতে পারেনি আঘাতটা কতটুকু গুরুতর কিন্তু হাসপাতালে গিয়ে শোনে উনার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। এখনও ডাক্তাররা তার জ্ঞান ফেরাতে পারেনি । তার সেই শোক বিহ্বল অবস্থায় ডাক্তার তাকে একটা প্রেসক্রিপশন হাতে ধরিয়ে দিয়ে ’ একটা ইনজেকশন নিয়ে আসতে বলেছে। এই ইনজেকশনটা না হলে নাকি তাকে বাঁচানো নাও যেতে পারে ।
ডিসপেনসারিতে গিয়ে জেনেছে ওটার মূল্য হাজারের বেশী ।
সেই থেকে সে সারা রাত উদ্‌ভ্রান্তের মত দৌড়িয়েছে। বস্তিবাসীদের কাছ থেকে সর্বসাকুল্যে সাত'শ টাকার মত জোগাড় করেছে।
ভোর না হতেই রিক্সা নিয়ে বের হয়েছে । সকাল থেকে এপর্যন্ত সে সত্তুর টাকার মত রোজগার করেছে । ডাক্তার বলেছে দুপুরের আগেই যে করে হোক ঔষধ যোগাড় করতে হবে ।আরো ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে সে আড়াইশো টাকা কিভাবে জোগাড় করবে সেই চিন্তায় তার মাথা খারাপের উপক্রম। সেজন্যই সে যত দ্রুত চেষ্টা করছে রিক্সা চালিয়ে বাকী টাকা রোজগারের । কিন্তু সে জানে এত অল্প সময়ে রিক্সা চালিয়ে এতগুলো টাকা কামাই করা অসম্ভব । প্রতিমুহূর্তে হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা তার মূমুর্ষ মায়ের চেহারা চোখে ভাসছে যতবারই তার মায়ের চেহারা মনে পড়ছে ততবারই চোখ জলে ভিজে উঠছে । মনের মাঝে দুঃশ্চিন্তা উকি দিচ্ছে হয়তোবা তার মা এতক্ষণ মরেই গেছে ।কথাগুলো বলতে গিয়ে তার কণ্ঠ বারবার বাষ্পরুদ্ধ হয়ে আসছিল ।
আমি নিজের মানিব্যাগ হাতরে যে কটা টাকা পেলাম তার হাতে গুজে দিয়ে বললাম ,
’সময় নষ্ট করার দরকার নেই। তাড়াতাড়ি হাসপাতালে চলে যাও । আমার কাছে এর থেকে বেশী নেই ,তবে এখানে যা আছে সেটা দিয়ে তোমার মায়ের ঔষধ কেনার টাকা হয়ে যাবে ।’
তার মুখের ভাষা হারিয়ে গেল । সে কিছুটা হতবাকের দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে চেয়ে রইল।
আমি তাকে চোখের ভাষায় সান্ত্বনা ও অভয় দিতে চাইলাম । মনে মনে বললাম’ মাকে যে ছেলে এত ভাল বাসে মা তাকে এভাবে ফেলে কখনও যেতে পারেনা।’জানিনা আমার সেই অন্তরের উপলব্ধি সত্যি হয়েছিল কিনা?
আমি যখন চলে আসছি তক্ষুনি হঠাৎ সে যেন সম্বিৎ ফিরে পেল। আমার হাতটা খপ্ করে ধরে বলল,’ভাই আপনার নামটা কি?’
তার এহেন ব্যাবহারে আমি প্রথমে চমকে উঠেছিলাম,পরক্ষণেই মুচকি হেসে বললাম,
’নাম দিয়ে কি হবে? তোমার মা সুস্থ হলে আমার জন্য দোয়া করতে বোল।’
তাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমি চলে এসেছিলাম।

বাকী সারাটা দিন কেন যেন দারুণ এক আনন্দের অনুভূতি আমার সারা দেহ মনে ছড়িয়ে ছিল।
***
মি বাস্তবিকভাবে এমন মহানুভব মানুষ নই। গতরাতে আড্ডা দিতে যাবার সময়ে সপ্ন সুপার সপের ঠিক দরজার সামনে তিনজন মহিলা পথ আটকালো;
লম্বা একহারা গড়নের একজনের বোরখার সাথে হিজাব দিয়ে মুখ ঢাকা, আরেকজন তরুনী বোরকা পড়া কিন্তু মুখ খোলা, বেশ উজ্জল গায়ের রঙ, হাতে ধরা একটা চার পাঁচ বছরের ফুটফুটে ছেলে। আরেকজন অলবয়সী তরুণী বাসন্তি রঙের সালোয়ার কামিজ পড়া।
হিজাব পড়া মহিলাটা শুদ্ধ ভাষায় তীক্ষ্ণ কন্ঠে আকুতি করে বলল, স্যার একটু শুনেন, একটু শুনেন... আমি তাঁকে পাত্তা না দিয়ে পাশ ঘেঁষে বেরিয়ে যাচ্ছি দেখে সে প্রায় কেঁদে ফেলল, একটু শুনেন, একটু শুনেন-ই না। তবুও আমি শুনিনি।
ওরা ভাবে; এ শহর আর শহরের মানুষগুলো বড় নিষ্ঠুর। কারো দুঃখ কষ্ট কাউকে স্পর্শ করে না!- আসলেই কি তা?

মন্তব্য ৩৬ টি রেটিং +১৭/-০

মন্তব্য (৩৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই মে, ২০২৩ সকাল ১০:৫০

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: এমন রিক্সাওয়ালা অনেক পেয়েছি। রিক্সা থেকে নেমে তাদের সমস্যার কথা বলে মাঝে মাঝে। আমি আমার সাধ্যমত তাদের দিয়ে আসি। আল্লাহর রহমতে কখনো খালি হাতে ফিরাই নি। যে রিক্সাওয়ালা সঠিক ভাড়া চায় তাদের বরং আমি আরও দশ টাকা বেশী দেই। জানি রিক্সা চালাতে কত কষ্ট। আমি একা থাকলে রিক্সাওয়ালার সাথে গল্প করতে করতে যাই। এমন রিক্সাওয়ালাও পেয়েছি। যার ছেলে ঢাকা মেডিকেলে ডাক্তারী করে আর মেয়ে বুয়েটে পড়ে। রিক্সা চালিয়ে তাদের পড়াশুনা করিয়েছে। সে বলেছে আর ছয় মাস রিক্সা চালাবো তারপর ছেলে বলেছে আর চালাতে হবে না, যখন ছেলে ফুললি ডাক্তারি শুরু করবে।

আল্লাহ অসহায়দের ভালো রাখুন।

০৭ ই মে, ২০২৩ দুপুর ১২:২৫

শেরজা তপন বলেছেন: অনেক মানবিক মানুষ আপনি। অবশ্য আপনার উদার অন্তরের পরিচয় লেখা আর কবিতায় মেলে।
মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার দেখা এমন রিকশাচালকদের জীবনালেখ্য লইখার অনুরোধ রইল। ভাল থাকুন আপনিও

২| ০৭ ই মে, ২০২৩ সকাল ১১:০৩

আহমেদ জী এস বলেছেন: শেরজা তপন,




খুব টাচি একটি কাহিনী লিখলেন। ওদের জীবন চাকাতেই বাঁধা।
আর শেষের ঘটনাটি প্রায়ই ঘটতে দেখা যায়। ওদের ডাকে সাড়া না দিলে যে কেউ নিষ্ঠুর হবে এমনটা কিন্তু নয়। ওদের বেশীর ভাগই ছলনাময়ী আর মানুষের সহানুভূতির সাথে প্রতারণা করে বলেই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষ মুখ ফিরিয়ে চলে যায়। এটা নিষ্ঠুরতা নয়। এটা ঠেকে শেখা প্রতিক্রিয়া।

০৭ ই মে, ২০২৩ দুপুর ১২:২৮

শেরজা তপন বলেছেন: আপনাকে আজ সকাল সকাল পেয়ে ভাল লাগছে :)
আপনার মন্তব্য বরাবরই আরো ভাল কিছু লেখার অনুপ্রেরণা যোগায়।
হ্যাঁ সুদীর্ঘ সময় ঢাকায় থেকে এত বেশী প্রতারিত হয়েছি ও এত বেশী ফাঁদ ও প্রতারণার গল্প শুনেছি যে, মন কাঁদলেও ওদের এড়িয়ে চলি।
ভাল থাকুন -শুভ কামনা রইল।

৩| ০৭ ই মে, ২০২৩ সকাল ১১:০৩

মিরোরডডল বলেছেন:
সবসময় সবাইকে হয়তো করা যায় না, কিন্তু মাঝে মাঝেও যে কিছুটা করতে পারা এটাও অনেকে করেনা।
man, you got a good soul.

০৭ ই মে, ২০২৩ দুপুর ১২:৩০

শেরজা তপন বলেছেন: সেটা ঠিক - এখন আর তেমন রিক্সায় চড়া হয়না আর ওদের জীবনের গল্পও শোনা হয় না। :(
একটু বেশী বলে ফেলেছেন। তবে স্বভাবতই লেখকেরা একটু বেশী স্পর্শকাতর হয়। আপনিও কিন্তু কম নন। জানি কিংবা শুনি তো কিছু বটে :)

৪| ০৭ ই মে, ২০২৩ সকাল ১১:১৯

গেঁয়ো ভূত বলেছেন: হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া ঘটনা! অনেকে আবার প্যাসেঞ্জারের সহানুভূতি পেতে মিথ্যা অভিনয় করে টাকা নিয়ে নেশা করে। অনেকে চার-পাঁচ জন পুরুষ মহিলা মিলে দল বেঁধে বলে ঢাকায় এসে সর্বস্য হারিয়ে ফেলেছে গ্রামে ফিরে যাবার টাকা নাই।

যাই হোক মানুষ মানুষের জন্য, বিপন্ন কে সাহায্য তো করতে হবেই, একটু খেয়াল করলেই আর কোন সমস্যা থাকে না।

০৭ ই মে, ২০২৩ দুপুর ১২:৩৩

শেরজা তপন বলেছেন: আমি যে সময়ের গল্প বলছি- তখন এমনটা খুব একটা ছিল না। তবে সে ছেলের চলন বলনে পরিপূর্ণ ধারনা হয়েছিল সেটা ছলনা নয়। কারণ সে আমার কাছ থেকে আগ বাড়িয়ে বেশী কিছু চায় নি। আর শুরু থেকে এত নিখুঁত অভিনয় করা প্রায় অসম্ভব। আর যদি করেও থাকে তবে এমন সুন্দর অভিনয়ের জন্য সম্মানী পাওনা ছিল তা।
মন্তব্যের জন্য সবিশেষ ধন্যবাদ সুপ্রিয় ব্লগার।

৫| ০৭ ই মে, ২০২৩ সকাল ১১:৪২

রানার ব্লগ বলেছেন: আমরা আসলে ঠকতে ঠকতে এমন হয়ে গেছি যে আসল সত্য সামনে আসলেও দশবার ভাবি উহা সত্য কি না । আপনি যা করেছেন রিক্সাওয়ালা ছেলেটির সাথে চমৎকার একটা কাজ করেছেন । দ্বিতীয় ঘটনাও আপনি বাস্তবিকভাবে সঠিক করেছেন ।

০৭ ই মে, ২০২৩ দুপুর ১:০৮

শেরজা তপন বলেছেন: ঠিক তাই- সারাদেশের ঠগবাজরা ঢাকায় এসে হাজির হয় লোক ঠকাতে!! অদ্ভুত এক ব্যাপার। গ্রাম বা মফস্বরের অতি সিধে সাদা মানুষটায় কোন কালো যাদুর ছোঁয়ায় শহরে এসে হয়ে পড়ে প্রতারক।
পরেরটা জানিনা ঠিক করেছি কি-না, আসলে আমি তাঁর ঘটনাটাই জানিনা। তাই বলা মুশকিল।
আন্তরিক ধন্যবাদ প্রিয় রানার ব্লগ চমৎকার মন্তব্যের জন্য।

৬| ০৭ ই মে, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৩

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: এইসব মানবিক গল্পের সাথে আমাদের যে মধ্যবিত্ত বসবাস তার একটা সহজীয়া প্রকাশ দেখতে পেতাম সেই একটা সময়ে। সময়টা ৯০ থেকে আর্লি ২০০০। আমি সেই সময়টাকে মিস করি খুব। তখন পাড়ায় আমাদের বেশ কয়েকজন তপন থাকতেন। আমাদের সবার জীবনে এমন গল্পের একটা বান্ডিল থাকতো। সেই সময়টা এই দেড় দশকে এমনভাবে পাল্টে গেল যেটা মেনে নেয়া এবং মনে নেয়া খুব কঠিন। এটা প্রজন্মের ফারাক নয়, বরং সমাজ কীভাবে ভীষণ ভায়োলেন্ট আর অমানবিক হয়ে উঠেছে সেটাকেই যেন সামনে হাজির করে বারবার। আপনার স্মৃতি কথা যেমন মানবিক একটা সুখ দেয় তেমনি একটা গোপন হাহাকারকেও যেন হাজির করে। শুভেচ্ছা।

০৭ ই মে, ২০২৩ দুপুর ১:১২

শেরজা তপন বলেছেন: সামুর অন্যতম ঋদ্ধ ব্লগার আর আমাদের একসময়ের প্রিয় মডারেটর আপনাকে আমার ব্লগ বাড়িতে ফের দেখতে পেয়ে দারুন প্রীত হলাম।
আরো কয়েকজনের লেখায় আপনার অনুপ্রেরণামুলক মন্তব্য দেখে আনন্দিত হয়েছিলাম।
জী হাঁ- রিক্সা নিয়ে আমার সব গল্পগুলো আসলে আমার সেই সময় কালের। এইতো সেদিনের কথা অথচ সেকাল আর একালের কতই না পার্থক্য।
মানুষগুলো কত দ্রুত পালটে গেল!!
দারুন মন্তব্যে ভীষনভাবে অনুপ্রাণিত হলাম।
ভাল থাকুন প্রিয় ব্লগার।

৭| ০৭ ই মে, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৫

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
আপনার মানবিকতায় সেদিন সে ভাইটি তার মাকে বাঁচাতে পেরেছে নিশ্চয়। আহা টাকার কাছে মানুষ কত অসহায়। খুবই মর্মান্তিক।

০৭ ই মে, ২০২৩ দুপুর ১:৩৬

শেরজা তপন বলেছেন: যদি তাঁর কথা সত্য হয়ে থাকে তবে এমন মাভক্ত সন্তানের ক্রন্দন অবশ্যই বিধাতার শুনবেন।

ঠিক বলেছেন- এজন্যইতো টাকাকে দ্বীতিয় ঈস্বর হিসেবে ভাবা হয়। যারা ভাবেনা তাঁর হয় ভীষণ সুখী কিংবা অভাগা।
ধন্যবাদ ভাই- সবগুলো পর্বে আপনার আবেগমথিত মন্তব্যের জন্য।

৮| ০৭ ই মে, ২০২৩ দুপুর ১২:৫১

সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: চারিদিকে অভিনয় দেখতে দেখতে আমরা এমন হয়েছি যে, কে সত্য বলছে আর কে মিথ্যা অভিনয় করছে তা ঠাহর করা খুবই মুশকিল।

০৭ ই মে, ২০২৩ দুপুর ১:৩৭

শেরজা তপন বলেছেন: সেই ভয়েইতো কাল সেই নারীদের আর্তনাদে সারা দেই নি।
মানুষের এই কপটতা মানুষকে নিষ্ঠুরহতে বাধ্য করছে।
আপনাকে অনেকদিন বাদে পেলাম সুপ্রিয় ব্লগার। ব্লগে আরেকটু নিয়মিত হবার আহবান জানাব। ভাল থাকবেন।

৯| ০৭ ই মে, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: দারুন আবেগময়। এবং হৃদয়বিদারক।

০৭ ই মে, ২০২৩ দুপুর ১:৩৯

শেরজা তপন বলেছেন: বিষয়টা অন্তর দিয়ে অনুভব করার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ভ্রাতা।

১০| ০৭ ই মে, ২০২৩ দুপুর ২:০৭

আমি সাজিদ বলেছেন: আপনার মনের স্বচ্ছতা আপনার লেখাতেই ফুটে উঠে। টাচি।

০৭ ই মে, ২০২৩ বিকাল ৩:৩৪

শেরজা তপন বলেছেন: আপনি ইদানিং ব্লগে অনিয়মিত মনে হচ্ছে।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাই। ভাল থাকুন- নিয়মিত ব্লগিং করুন।

১১| ০৭ ই মে, ২০২৩ বিকাল ৪:২৬

আহলান বলেছেন: মানুষ মানুষের জন্যে ... !

০৭ ই মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:০২

শেরজা তপন বলেছেন: সম্ভবত অনেক দিন বাদে আপনাকে পেলাম।
অনেক ধন্যবাদ। ব্লগের আরেকটু নিয়মিত হবার অনুরোধ রইল।

১২| ০৭ ই মে, ২০২৩ বিকাল ৪:৩৬

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: খুবই হৃদয়বিদারক। আপনি সুন্দর করে মনের অবস্থা তুলে ধরেছেন। শুভেচ্ছা প্রিয় ভাইকে।

০৭ ই মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:০৪

শেরজা তপন বলেছেন: আমার পদাতিক ভাই কোথায় হারালেন!!! ইদানিং আপনি ভীষণ অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন।
সেই যে একটা সিরিজ শুরু করেছিলেন শেষ আর হোল কি?
আপনার মত ব্লগারদের খানিকটা ঝিমিয়ে পড়া ব্লগকে চাঙ্গা করার জন্য অনেক বেশী প্রয়োজন।
মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

১৩| ০৭ ই মে, ২০২৩ রাত ৮:৪৮

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: রিকশাচালকের মায়ের ঘটনা দুঃখজনক। কিন্তু এরকম ঘটনা প্রায়শই চোখে পড়ে। আমার সাথে শেষবার ঘটেছে গত ২০২১ এর ডিসেম্বরে কক্সবাজার থেকে একটা ভ্রমণ ইভেন্ট (ভ্রমণ বাংলাদেশের সৈকত ধরে টেকনাফ থেকে কক্সবাজার হাঁটা) থেকে ফিরে ফকিরাপুর থেকে সাত সকালে বাসায় ফিরছিলাম রিকশায় করে। রিকশাচালকে কথা প্রসঙ্গে জানালেন সেদিন বেলা এগারোটার মধ্যে তাকে এক হাজার টাকা জোগাড় করে তার মাদ্রাসা পড়ুয়া ছেলেকে দিতে হবে, সে তার দু'তিন দিন পর কোরানে হাফেজ হবার সার্টিফিকেট অনুষ্ঠানে যাবে। লোকটার আবেগী কথা আর ছলছল চোখ দেখে আপনার মতনই আবেগাপ্লুত হয়েছিলাম।

আর বোরকা পরিহিত মহিলাদের ঘটনার মত একটা ঘটনা আমার সাথে ঘটে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর। আমি টিউশনি হতে বাসায় ফিরছিলাম রাতের বেলা, বাসার গেটের সামনে একটা লোক, সাথে মহিলা এবং একটা বাচ্চা; খুব কাঁদো কাঁদো স্বরে আমার কাছে হাত পাতলো; তারা উত্তরবঙ্গের মানুষ, বাড়ি ফেরার টাকা নাই। সদ্য টিনএজ পার হতে থাকা আমি আমার পকেটে যে কয়টাকা ছিলো সব তাদের দিয়ে দিলাম (খুব বেশী ছিলো না, মাসের শেষ, ত্রিশ বা পঞ্চাশ এরকম কিছু হবে)। কিন্তু আমার আবেগ এমন ছিলো, সাথে টিউশনির বেতন থাকলে পুরোটাই দিয়ে দিতাম। এই ঘটনার দিন কয়েক পর সন্ধ্যের পরপর টিউশনিতে যাচ্ছি, লালবাগ কেল্লার সামনে ঐ একই পরিবার আমার কাছে একই কথা বলে সাহায্য চাইলো। আমি এতো কষ্ট পেয়েছিলাম, আজও রাস্তায় কেউ সাহায্যের জন্য সেরকমভাবে ডাকলে আমি ফিরেও তাকাই না। :(

০৭ ই মে, ২০২৩ রাত ১০:১০

শেরজা তপন বলেছেন: প্রথম ঘটনা আমার সাথে বেশ মিলে যায়।
দ্বীতিয়টা এখন অহরহ ঘটছে। কয়েক বছর আগে বোরকা পড়ে দলে দলে মানুষকে প্রতারিত করত। একটু নির্জন স্থানে এদের সমাগম ছিল বেশী।
প্রত্যেকের হাতে ধরা থাওত এক বা এখাধিক শিশূ কিশোর।
আপনার অভিজ্ঞতালব্ধ চমৎকার মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

১৪| ০৭ ই মে, ২০২৩ রাত ৯:৫৬

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:


গত ২২ বছরে মানুষের অভিনয় দক্ষতা বেড়েছে,রাস্তাঘাটে দেখেছি অনেক।

০৭ ই মে, ২০২৩ রাত ১০:০৭

শেরজা তপন বলেছেন: তা ঠিক বটে! যা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি।
কিছু মানুষ যখন ঠকে শিখেছে- অন্য কিছু মানুষ আরো বেশী ঠগবাজ হয়েছে।

১৫| ০৭ ই মে, ২০২৩ রাত ১০:২২

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: মর্মস্পর্শী ঘটনা। আপনি তো ভিন্ন মাত্রার মানুষ দেখা যাচ্ছে।

এভাবে অনেক ধরণের প্রতারনা এবং বাটপারি হয়। তবে আমার দুই একটা অভিজ্ঞতা আছে যেগুলি আমার কাছে সত্যি মনে হয়েছে। প্রায় ১৫ বছর আগের কথা। একবার একটা ১৮-২০ বছরের গ্রামের ছেলে আমার কাছে সাহায্য চাইল। বলল বরিশাল থেকে এসেছে টাকা পয়সা নাই। বিপদে পড়েছে। আমি তাকে বাড়ি ফেরত যাওয়ার মত কিছু টাকা দিলাম। প্রায় মাস খানেক পরে সে এক বস্তা আমড়া আর কিছু দেশী ফল নিয়ে আমার বাসায় হাজির। বলল ওর মা পাঠিয়েছে আমার উপকারের কাহিনী শুনে।

আরেকবার একটা প্রায় ৫০-৫৫ বছরের লোক সাথে আরেকজন লোক রাতের বেলা আমার কাছে সাহায্য চাইলো। বলল কুষ্টিয়া থেকে এসেছে এখন টাকা পয়সা নাই। কিছু টাকা দিলাম। এই লোকটা তার পরের অন্তত ৩/৪ বছর প্রায়ই আমাকে মোবাইলে ফোন দিত। আমি ভালো আছি কি না জিজ্ঞেস করতো। এক সময় আমার মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন হয়। তারপর হয়তো সে আমাকে আর খুঁজে পায়নি।

আরেকবার একটা শীর্ণ শরীরের লোক আমাদের বাসার রাস্তার উপর পড়ে গেল। আগেই পড়ে গিয়েছিলো আমাদের চোখে পড়েছিল একটু পরে। সে রাস্তা অর্ধ জ্ঞানহীন অবস্থায় পড়ে আছে আমাদের বাসার সামনে। তাকে ধরে বাসায় নিয়ে এসে পানি খাওয়ালাম আমি আর আমার স্ত্রী। তারপরে ভাত খেতে দিলাম। সে পরে একটু সুস্থ হওয়ার পরে জানালো সে রংপুর এলাকার একটা চরে থাকে। তার বাড়িতে প্রচণ্ড অভাব। পরিবার রেখে ঢাকায় এসেছে কোন কাজের উদ্দেশ্যে। আমাদের বাসায় ১/২ দিন ছিল। তারপরে কিছু টাকা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেই।

মক্কা আর মদিনায় দুই বাটপারের পাল্লায় পড়েছিলাম। কিন্তু আগে থেকেই বুঝতে পারার কারণে ধরা খায়নি। মক্কায় মসজিদূল হারামের ভিতরে হাঁটছিলাম। একটা পাকিস্তানি বা ভারতীয় চেহারার লোক আমার পাশে আসলো। ইংরেজিতে বলল যে সে বহু বছর লন্ডনে থাকে। কিন্তু এখানে আসার পরে সে তার টাকা পয়সা হারিয়ে ফেলেছে। তাকে কিছু টাকা ধার দিলে সে লন্ডন গিয়েই আমার ব্যাঙ্কে টাকা দিয়ে দেবে। আমি কয়েক সেকেন্ডের ভিতরে লোকটার মতলব বুঝে ফেলি। তাই কথা না বাড়িয়ে এড়িয়ে যাই।

মদিনায় রাস্তায় হাঁটছি ফুতপাথ দিয়ে। একটা গাড়ি আমার পাশে থামলো। গাড়ি চালাচ্ছে একটা যুবক। পাশে তার স্ত্রী। স্ত্রীর কোলে একটা খুব ছোট বাচ্চা। লোকটা আমাকে বলল যে তার গাড়ির তেল শেষ হয়ে গেছে। স্ত্রী আর বাচ্চাকে নিয়ে বিপদে পড়েছে। টাকা চাইল। আমি কৌশলে এড়িয়ে গেলাম। মক্কা আর মদিনায় এই ধরণের প্রতারনা প্রায়ই হয়।

০৯ ই মে, ২০২৩ সকাল ৮:৫৭

শেরজা তপন বলেছেন: হায় হায় আপনার কাছে কত ঘটনা জমা আছে আর আমি হুদাই লাফাচ্ছি!!!
লিখে ফেলুননা এসব ঝটপট। জ্বীন ভুতের কাহিণির পাশাপাশি নিজের যাপিত জীবনের গল্পগুলো লিখুন দয়া করে।

১৬| ০৮ ই মে, ২০২৩ ভোর ৬:৪০

কামাল১৮ বলেছেন: রিকশাওয়ালার গল্পটি সত্য হতে পারে আবার মিথ্যাও হতে পারে।এমন গল্প আমি বহু জনের কাছে শুনেছি।এই সাহায্য চাওয়ার বিষয়ে মিথ্যা এতো বেশি যে সত্যকেও মিথ্যা মনে হয়।

০৯ ই মে, ২০২৩ সকাল ৮:৫৮

শেরজা তপন বলেছেন: দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় এখনো আমি দৃঢ় বিশ্বাসী যে, ও অভিনয় করেনি। ঘটনাটা সত্য ছিল।

১৭| ০৮ ই মে, ২০২৩ সকাল ৮:৩৬

জটিল ভাই বলেছেন:
প্রিয় ভাই, ইদানিং বড্ড ইমোসনাল ইস্যুতে লিখছেন। সত্যিই এসব লিখা পড়লে জীবন নিয়ে নতুন করে আবার ভাবতে হয় :(
জটিলবাদ।

০৯ ই মে, ২০২৩ সকাল ৯:০০

শেরজা তপন বলেছেন: বয়স বাড়লে মানুষ বড্ড ইমোশনাল হয়- আমার লেখায় সে ছাপ স্পষ্ট :)

ভাল থাকুন প্রিয় জটিল ভাই।
কেননা- আসল নামতো জানা হয় নাই।

১৮| ২৮ শে মে, ২০২৩ সকাল ১০:০৬

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: লেখাটি পড়ে ভাল লাগল।
ব্লগে অনেক লেখায় পড়া হয় কিন্তু সময়ের অভাবে মন খুলে মন্তব্য করা হয়না।

২৮ শে মে, ২০২৩ দুপুর ১২:০৭

শেরজা তপন বলেছেন: মন্তব্যে এসে যে সেটা জানান দিয়ে গেলেন সেজন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। জানা রইল
ভাল থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.