নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্য, সুন্দর ও শান্তির জন্য,,,,,,,,

সেতুর বন্ধন

সম্পাদক, মাসিক ব্রাহ্মনবাড়িয়া ফিচার, সাংগঠনিক সম্পাদক কসবা প্রেসক্লাব, গীতিকার, কসবার গান

সেতুর বন্ধন › বিস্তারিত পোস্টঃ

হাজার দুয়ারি প্রাসাদ-যেখানে সংরক্ষিত আছে সিরাজকে হত্যার ছোরা।

১৭ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ৯:১৯

হাজার দুয়ারি প্রাসাদ
যেখানে সংরক্ষিত আছে সিরাজকে হত্যার ছোরা।

লোকমান হোসেন পলা


প্রাসাদ ভারতবর্ষে ইউরোপীয় স্থাপত্যকলার এক জীবন্ত নিদর্শন। বলা যায়, ভারতবর্ষে ব্রিটিশ আধিপত্য কায়েমের এক উল্লেখযোগ্য নজির এই হাজার দুয়ারি প্রাসাদ।
প্রাসাদের নামকরণ সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না, তবে সাধারণভাবে প্রচলিত যে, এই প্রাসাদে এক হাজার দরজা রয়েছে। প্রাসাদে ৯শটি আসল দরজা ও ১শটি নকল দরজা রয়েছে।
বাংলা বিহার উড়িষ্যায় মোট তিনটি রাজবংশ নবাবি করেছে। এর মধ্যে প্রথম দু’টি রাজবংশ ছিলো স্বাধীন। নাসিরি রাজবংশ যার শুরু মুর্শিদকুলি খাঁ ও শেষ সরফরাজ খাঁর মাধ্যমে। এ রাজবংশ মাত্র ২৪ বছর রাজত্ব করেছে (১৭১৭-১৭৪০)। দ্বিতীয়টি হলো আফসার রাজবংশ যার শুরু আলীবর্দী খাঁ ও শেষ হয় সিরাজ-উদ-দৌলার মাধ্যমে। এই রাজবংশ রাজত্ব করেছে মাত্র ১৭ বছর (১৭৪০-১৭৫৭।
তৃতীয় রাজবংশের নাম নাজাফি রাজবংশ যার শুরু হয় বিশ্বাসঘাতক মীরজাফর থেকে আর শেষ হয় ওয়ারিস আলী মীর্যার মাধ্যেমে। তারা ব্রিটিশদের গোলামি করে রাজপদ বহাল রাখতে পেরেছেন মোট ১শ ৪৪ বছর (১৭৫৭-১৯০১)।
মাঝে ১৮৮২ সাল থেকে বাংলার নবাব পদটি বিলুপ্ত করে ব্রিটিশরা শুধু মুর্শিদাবাদের নবাব পদ রাখে।

ইতিহাসের ‘বৃহদাকার হস্তি লোপ পাইয়া তেলাপোকা টিকিয়া থাকার রহস্য এখানেই’। ব্রিটিশ আধিপত্য স্বীকার করে দেড়শো বছর গদিতে ছিলো মীরজাফরের বংশধর আর তা না করায় বিশ্বাসঘাতকতার অনলে নিশ্চিহ্ন হয়েছে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য।
১৮২৯ সালের ২৯ আগস্ট গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম ক্যাভেন্ডেস ও বহু স্বনামধন্য ব্যক্তির উপস্থিতিতে নবাব নাজিম হুমায়ুন ঝাঁ এই প্রাসাদের ভিত্তি স্থাপন করেন। এর নির্মাণ কাজে ব্যয় হয় ১৮ লাখ টাকা। এর গাঁথুনির কাজে নাকি অসংখ্য ডিমের কুসুম ব্যবহৃত হয়েছিল বলে শোনা যায়।
এই প্রাসাদটি তিনতলা। প্রাসাদটি বর্তমানে মিউজিয়াম। এর একতলায় বর্তমানে অস্ত্রাগার, অফিস-কাছারি ও রেকর্ডরুম রয়েছে। অস্ত্রাগারে মোট ২৬শটি অস্ত্র আছে। পলাশির যুদ্ধে ব্যবহৃত অনেক অস্ত্রও এখানে আছে। পলাশির প্রান্তরে ব্যবহৃত মীর মর্দনের কামানটিও রয়েছে এখানে। এছাড়া উল্লেখযোগ্য যে অস্ত্র রয়েছে এর মধ্যে –আলীবর্দীর ব্যবহৃত তলোয়ার ও বহুনল বিশিষ্ট বন্দুক, নাদিরশাহের শিরস্ত্রান, মীরকাসিমের ছোরা, বিভিন্ন ধরন ও আকারের কামান, ছোরা ইত্যাদি।
যে ছোরার সাহায্যে মোহাম্মদী বেগ সিরাজকে হত্যা করেন সেটিও এখানে রক্ষিত আছে।
দুই ও তিন তলায় আর্ট গ্যালারি ও লাইব্রেরি। গ্যালারিতে বহু বিখ্যাত চিত্র শিল্লীর চিত্রকলা স্থান লাভ করেছে- যেমন The Burial of Sir John More, Adom & Eve, Black Bent।
এছাড়া এখানে রয়েছে প্রিন্স হাসান আলী মীর্জা ও হুসেন আলী মীর্জার শৈশবের পেইন্টিং। এর বিশেষত্ব হলো, ছবিগুলো যেদিক থেকেই দেখা হোক না কেন; মনে হবে যেনো শিশু দু’টি দর্শকের দিকেই ঘুরে আছে। এমনকি তাদের জুতো, কোল-বালিশ ও জুতার ফিতা পর্যন্ত সব দর্শকের দিকে।
লাইব্রেরিতে রয়েছে বহু ধর্মপুস্তক, চুক্তিপত্র, নাটক, নভেল, তাম্রলিপি, ইতিহাস, প্রয়োজনীয় দলিল-দস্তাবেজ ও বিদেশি ভাষার গ্রন্থ ইত্যাদি।
আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরির পাণ্ডুলিপিও রয়েছে এখানে। এখানে রয়েছে একটি অ্যালবাম আছে যা তিন হাত দীর্ঘ ও প্রস্থে দুই হাত, ওজন ২০ কেজি। এছাড়া রয়েছে বাগদাদের বিখ্যাত লেখক হারুন অর রশিদের হস্তলিখিত কোরান।
বর্তমান কম্পাউন্ডের আয়তন ৪১ একর। এই প্যালেসের সামনে রয়েছে মনোরম বাগান। একতলা প্যালেসের সামনের বিশাল সিঁড়ি দরবার কক্ষ পর্যন্ত উঠে গেছে। সামনে লম্বা গোলাকার স্তম্ভে সুন্দর নকশার কাজ রয়েছে ও সিঁড়ির দু’পাশে দু’টি সিংহ মূর্তি ও দু’টি ছোট সেলামি কামান এর সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই সেলামি কামানের মাধ্যমে নবাবরা ব্রিটিশরা আসলে তাদের সেলাম দিতেন। এভাবে সেলাম দিয়ে পরবর্তী দেড়শো বছর রাজত্ব করেছে এই হাজার দুয়ারি প্রাসাদের রাজবংশ।
হাজারদুয়ারি প্রাসাদে সংগৃহীত সামগ্রীর বর্ণনা দিয়ে শেষ করা যাবে না। নবাবি আমলের অনেক জৌলুসই এখানে দেখা যাবে। নিমিষেই হারিয়ে যাওয়া যায় ইতিহাসের পাতায়।
প্রাসাদ ভবনে প্রবেশদ্বারের ঠিক উপরেই রয়েছে একটি প্রতীকী খোদাই চিত্র যাতে রয়েছে একটি সিংহ ও একটি ঘোড়া। ঘোড়াটি শেকল দিয়ে বন্দি কিন্তু সিংহটি মুক্ত। এই সিংহ ব্রিটিশরাজত্বের প্রতীক আর বন্দি ঘোড়া পরাধীন নবাবি ও পরাধীন বাংলার প্রতীক। এভাবেই কেটে গেছে পরাধীনতার ১শ ৯০ বছর।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ৯:৫৭

জুন বলেছেন: ভারী সুন্দর বর্ননায় তুলে ধরেছেন হাজার দুয়ারীর ইতিহাস । এইসব মীরজাফরদের ইতিহাস যুগ যুগ ধরে মানুষের মনে ঘৃনার সঞ্চারই করবে । যেমনটি আমি দেখেছিলাম মহীশুরে টিপু সুলতানকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য তারই পারিষদ মীর সাদিক স্রীরঙ্গপত্তমের দেয়াল ভেঙ্গে ঢুকতে বৃটিশদের সহযোগিতা করেছিল ।
আপনার লেখায় প্লাস
+

১৭ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ১০:১৮

সেতুর বন্ধন বলেছেন: আপনার মন্তব্যটি আমাকে অনুপ্রাণীত করেছে। আপনি গুনি ব্লগার আপনর উপস্থিতি আমার ব্লগ উঠুন আরো সমৃদ্ধ হয়েছে। আপনার পোস্ট বরাবরই ইতিহাসিক ও তথ্য সম্বলিত হয়ে থাকে।

২| ১৭ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ১১:১৯

বলেছেন: শিক্ষণীয়+++

১৮ ই জুলাই, ২০১৯ দুপুর ২:১৭

সেতুর বন্ধন বলেছেন: আমার পোস্টে অতিথী হয়ে এসে প্লাস দিয়ে অনুপ্রানিত করার জন্য আপনাকে হৃদয় নিংড়ানো শুভেচ্ছা।

৩| ১৮ ই জুলাই, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৫০

ভুয়া মফিজ বলেছেন: পড়লাম। ইতিহাস বর্ণনা করেছেন চমৎকারভাবে।

এই প্রাসাদটি কোথায়, কিভাবে যাওয়া যায় ইত্যাদিও যদি ছোট্ট করে দিতেন, পোষ্টটি পূর্ণতা পেতো।

যাইহোক, আপনার জন্য শুভকামনা।

১৯ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ৯:৫৫

সেতুর বন্ধন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই পোস্ট পড়ে এতো সুন্দর মন্তব্য রেখে যাওয়ার জন্য। পরে ভ্রমন পোষ্টে বিস্তারীত লিখব।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.