![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শিব্বির আহমদ ওসমানী: আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। প্রতিটি শিশুদের মধ্যেই আছে আগামী দিনের দায়িত্বশীলতা। তারাই হবে দেশ ও জাতির অগ্রনায়ক। তাইতো কবি গোলাম মোস্তফা বলেছেন-
‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে।’
শিশুদের মধ্যেই সুপ্ত থকে ভবিষ্যতের কত কবি, শিল্পী, বৈজ্ঞানিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক ইত্যাদি ভিবিন্ন প্রতিভা। কিন্তু বর্তমান বিশ্বের সচেতন মানুষ লক্ষ করেছে যে, অনেক ছিন্নমূল শিশুরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অনাদরে অবহেলায় মানুষ হচ্ছে। অন্ন, বস্থ, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত এ দেশের দরিদ্র ও অসহায় শিশুরা। আমরা জানি শিক্ষা ছ্ড়া কোনো জাতি কখনো উন্নতির চরম শিখরে আরোহন করতে পারেনা। তাই এসব অধিকার বঞ্চিত শিশুকে আত্মশক্তিতে বলীয়ান করে তুলতে চাই উপযুক্ত শিক্ষা ও পরিবেশ। আমাদের অযত্ন, অবহেলা, উপযোক্ত পরিবেশ ও শিক্ষা সুযোগের অভঅবে তারা যেন কখনোই ঝরে না যায় সে দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
শিশু বলতে কাদের বুঝায়ঃ আন্তর্জাতিকভাবে জাতীসংঘ শিশু সনদে বর্ণিত ঘোষণা অনুযায়ী ১৮ বয়সের কম বয়সী সকলেই শিশু। সে অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৪৫ ভাগই শিশু। বাংলাদেশের জাতীয় শিশুনীতিতে শুধু ১৪ বছরের কম বয়সীদের শিশুধরা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে শিশুদের ১১ বচর পর্যন্ত বয়সসমিা নির্ধরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের অনেক শিশু আবার ১৬ বছরের আওতায় অন্তভর্’ক্ত হয়। আমাদের দেশে প্রচলিত কিছু আইনে ১৫ বছরের কম বয়স্কদের শিশু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে প্যানেল কোড এর ধারা অনুযায়ী। শিশু নির্ধারণে বয়স সীমায় মত পার্থক্য থাকতে পারে। তবে তা কখনোই ১৮ বছরের উর্ধ্বে নয়।
পথ শিশু কারাঃ আমাদের দেশের বেশীর ভাগ লোকই দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। এরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়ে শিশুদেরকে গড়ে তুলতে পারে না। তাদের সংসারে অভাব অনটন লেগেই থকে। তারা ছেলে-মেয়েদেরকে ঠিকমত খাবার ও অন্যান্ন মৌলিক অধিকার/ সুযোগ-সুবিদা প্রদানে ব্যার্থ হয়। এসব শিশুরাই তখন জীবন সংগ্রামে নেমে ভিবিন্ন কাজ-কর্মে জড়িয়ে পড়ে। এসব কাজের মধ্যে রয়েছে- কুলি, হকার, রিক্সা শ্রমিক, ফুল বিক্রেতা, আবর্জনা সংগ্রাহক, হোটেল শ্রমিক, বুনন কর্মী, মাদক বাহক,বিড়ি শ্রমিক, ঝালাই কারখানার শ্রমিক ইত্যাদি। তাছাড়া ভিবিন্ন ঝুকিপূর্ণ কাজে তাদেরকে নিয়োজিত করা হয়।
পথ শিশুদের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তাঃ নিরক্ষরতা একটি সামাজিক অভিশাপ। এই অভিশাপ থেকে পথ শিশুদের মুক্ত করতে হলে তাদেরকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা দিতে হবে। শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি উন্নত হতে পারে না। মেরুদন্ডহীন মানুষ জড় প্রদার্থের ন্যায় অচল। শিক্ষা মানুষকে সত্যিকার মানুষ রুপে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। আর শিক্ষা হীনতা তাদেরকে অমানুষ করে তোলে। পথ শিশুদের শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে বিভিন্ন কারণে। শিক্ষার প্রভাবেই তারা কুসংস্কার, অন্যায়, জড়তা ও হীনতা থেকে মুক্ত হয়ে সত্যিকারের মানুষ হতে পারে। শিক্ষার আলোয় পথ শিশুরা আলোকিত হরে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে তারা অংশ গ্রহন করতে পারে। অনেক কঠিন ও ঝুকিপূর্ণ কাজে কারখানার মালিকেরা শিশুদের অল্প টাকার বিনিময়ে কাজ করায়। এতে অকালেই অনেক শিশুরা ঝরে পড়ে। এসব শিশুরা যদি শিক্ষার সুযোগ পায় তাহলে তারা ভাল-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় সম্পর্কে অবগত থাকে। তারা যে কোন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে নিজেদেরকে দূরে সরিয়ে রাখতে সক্ষম হবে।
পথ শিশুদের শিক্ষায় আমাদের করণীয়ঃ শিক্ষা সবার জন্মগত মৌলিক অধিকার। পথ শিশুদের শিক্ষায় আমাদের অণেক করণীয় বিষয় রয়েছে। পথ শিশুরা প্রধানত দরিদ্র পরিবার থেকে আসে। এরা শ্রমদান কজে নিয়োজিত হতে গিয়ে শিক্ষা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে তাদের অনেক চাহিদা অপূর্ন্য থেকে যায়। এর নানা সামাজিক সমস্যায় জর্জরিত। দেশের এসব সমস্যার প্রেক্ষিতে শিক্ষা তথা কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার বিকল্প নেই। এ শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের মাধ্যমে শিশুদেরকে আগ্রহী করে তোলা যাবে। যে বয়সে শিশুদেরকে স্কুলে যাওয়ার কথা সেই বয়সে তারা কঠিন কাজে নিয়োজিত থাকে। তাদের হাতে ইট পাথরের পরিবর্তে বই খাতা তুলে দিতে হবে। এ সব শিশুদেরকে শিক্ষার সুযোগ করে দিতে হবে। বিভন্ন সরকারী সুযোগ সুবিধা তাদেরকে করে দিতে হবে। বিনা বেতনে ও শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি গ্রহন করতে হবে।
পথ শিশুদের প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও কর্ত্যব্যঃ আমাদের দেশে কত ছিন্নমূল শিশু রয়েছে যারা দবেলা পেট ভরে ভাত খেতে পারে না। সমাজের উচু তলার মানুষ থেকে ভিন্ন কিছু মানুষ রয়েছে। যাদের দিন কাটে অনেক কষ্টে। ঠিকমতো খাবার যোগাতে পারে না।তারা কিভাবে শিক্ষাগ্রহন করবে? এজন্য এই সব শিশুদেরকে শিক্ষা দানের জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। এ সব শিশুর অভিভাবকদের দারিদ্র দুরিকরনে আয় বৃদ্ধিমুলক প্রকল্প গ্রহন করতে হবে। উন্নত দেশে দেখা যায় যে, শিশুর সমস্ত দায়িত্ব রাষ্ট্র বহন করে। তেমনি আমাদের দেশের অবহেলিত শিশুদের সমস্ত দায়িত্ব রাষ্ট্র নিলে সমাজে আর কোন অরাজকতার সৃস্টি হবে না।
পথচারী শিশুদের প্রতি নৈতিক মূল্যবোধ বৃদ্ধিঃ পথচারী শিশুদের প্রতি নৈতিক মুল্যবোধ বৃদ্ধি করতে হবে। নৈতিকতা ও মূল্যবোধ না থাকলে মানুষের জীবন বির্পযে পরিচালিত হয় এবং ধ্বংস হয়ে যায়। এসব শিশুদের জীবনকে সৎ,সুন্দর সহৎ ও আনন্দময় করে তুলতে নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যাবোধ একান্ত প্রয়োজন। যে সব শিশুদের মধ্যে নৈতিকতা ও মূল্যাবোধের অভাব রয়েছে সেই অন্যায় পথে চলে। তাই অন্যায় পথ রোধ করার জন্য শিশুদেরকে নৈতিকতার শিক্ষা দিতে হবে।
পথ শিশুদের জন্য বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যবস্থাঃ পথ শিশুদের জন্য বৃত্তিমুলক শিক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের দেশের বৃত্তি মূলক শিক্ষার হাজারো ক্ষেত্র রয়েছে।কৃষি শিল্প, কারিগরি,চিকিৎসা,প্রকৌশল, ছাপাখানার কাজ,দর্জির কাজ কাঠমিস্তির কাজ,যন্ত্রপাতির কাজ ইত্যাদি নানা রকম কর্মমূখী শিক্ষা গ্রহন করা যেতে পারে। পূর্বেই বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশ বিশ্বের একটি দরিদ্রতম ও জনবহুল দেশ। আমাদের দেশের উন্নয়নের জন্য দেশের জনসংখ্যাকে কর্মমুখী শিক্ষা দিয়ে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত হবে।কর্মমূখী শিক্ষা বাস্তবায়নের জন্য সাধারনভাবেই পর্যাপ্ত সংখ্যক কারিগরী ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার উপযোগী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। স্বল্পমেয়াদী কোর্সে উপযুক্ত ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করে আমাদের তরুন বেকারদের সুদক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।এ সব কর্মমূখী শিক্ষার উপকারিতা দেখে পথ শিশুরা আগ্রহী হয়। এবং পথশিশুদের পিতামাতা তাদের সন্তনকে কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য উৎসাহিত হন।
পথ শিশুদের শিক্ষা বাস্তবায়নের পথে বাধাঃ পথ শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম সুষ্টুভাবে বাস্তবায়নের পথে নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান কয়েকটি সমস্যা তুলে ধরা হলো:
(১) চরম দারিদ্রোর কারনে নিজেদের শিশুসন্তানকে স্কুলে পাঠানোর সামর্থ্য অনেক অভিভাবকের নেই।ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর চেয়ে ক্ষেতে-খামারে ও অন্যান্য যায়গায় কাজ করানো নাভজনক বলে তারা মনে করেন।
(২) শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে নিরক্ষর অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব রয়েছে।
(৩) প্রচলিত প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ্যক্রম ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জীবন ও প্রয়োজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়।
(৪) আমাদের দেশের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা এখনো শিশুদেরকে আকর্ষন করে না।আনন্দহীন শিক্ষার সাথে শিশুমন একাতœ হয় না। ফলে অনেক শিশু প্রাথমিক শিক্ষার শুরুতে ঝরে পড়ে।
(৫) গ্রামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দূরে থাকায় অভিভাবকগন তাদের সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এবং এই সব শিশুদের দিয়ে উর্পাজনমূলক বিভিন্ন কাজে লাগিয়ে দেয়।
পথ শিশুদের শিক্ষাকার্যক্রম সফল করার উপায়ঃ পথ শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম সফলভাবে সাস্তবায়নের জন
নিম্নলিখিত উপায় সমূহ অবলম্বন করা যেতে পারে:
(১) গনমাধ্যম গুলোতে ব্যাপক প্রচারনার মাধ্যমে জনগনকে শিক্ষার গুরুত্ব সর্ম্পকে বোঝাতে হবে।
(২) দরিদ্র জনগনকে বোঝাতে হবে যে সন্তানদেরকে স্কুলে পাঠানো তাদের অপরিহার্য কর্তব্য এজন্য তাদের কোন অর্থ ব্যয় হবে না।
(৩) দরিগ্রপীড়িত পরিবারের সন্তানদের শিক্ষার ব্যবস্তা করার জন্য শিক্ষার বিনিময়ে উপবৃত্তি কর্মসূচির আরো ব্যাপক প্রসার ঘটাতে হবে।
এসব সাহায্য যাতে নিশ্চিতভাবে শিশুদের হাতে পৌছে তারা ব্যবস্থ করতে হবে।
(৪) দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিনামূল্যে পোশাক পরিচ্ছদ বইপত্র ও শিক্ষার অন্যান্য উপকরন বিতরন নিশ্চিত করতে হবে।
পথ শিশুদের শিক্ষায় আমাদের সচেতনতাঃ যে জাতী শিশুর প্রতি মনোযোগী নয় যে জাতি কোন দিন বড় হতে পারে না। শিশুর পরিপূর্ন বিকাশে জাতীয় সমৃদ্ধি নির্ভরশীল। পথশিশুদের শিক্ষার ব্যাপারে শুধু সরকারী কার্যক্রম নয় আমাদেরকে সচেতনতা অকলম্বন করতে হবে। পথ শিশুদের অধিকার দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সজাগ করে তুলতে হবে।উপযুক্ত শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে তার যেন আতœনির্ভরশীল মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে সে ব্যাপারে আমাদের সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। পৃথিবীর আধুনিক গতিশীলতার সাথে পরিচয় করিয়ে তাদের বিবেক ও বুদ্ধির বিকাশ সাধন কতের হবে। শিক্ষার যথার্থ অনুশীলন করার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। সমাজে ধনী গরীবের মধ্যে সুর্স্পক তৈরি করতে হবে। সমাজের বিত্তবান মানুষেরা সব সময়ই পথ শিশুদের ঘৃনার চোখে খেখে। এ ব্যাপারে আমাদেরকে সচেতন হতে হবে।যাতে ধনীরা পথ শিশুদের উপর নির্যাতন করতে না পারে। সমাজে সাম্যের বানী প্রচার করতে হবে। কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় আমারা বলতে পারি যে,
“গাহি সাম্যের গান
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান”
মানবতার বিকাশ এবং জাতির বৃহত্তম স্বার্থে পথ শিশুদের শিক্ষা আবশ্যক। বিশ্ব শিশু দিবসে শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠায় পথ শিশুদের শিক্ষার গুরুত্বের কথা জানানো হয়েছে। বিশ্বের সচেতন মানুষেরা পথ শিশুদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তবু ও স্বার্থপর কিছু মানুষের জন্য এবং দারিদ্রতার জন্য পথ শিশুদের শিক্ষার ব্যাপারে মহৎ উদ্যোগ বারবার ব্যাহত হচ্ছে। সচেতন থাকতে হবে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে এরা যেন অল্প বয়সেই হারিয়ে না যায়। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানহীন শিশুরা যেন পরবর্তীকালে জাতির কাধেঁ বোঝা না হয়ে বসে সে দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা সকলেরই উচিত। পথ শিশুদের বিকালের যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করে তাদেরকে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার সুব্যবস্থা করা সকলের নেতিক দায়িত্ব।
লেখক: শিক্ষক, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কমী।
E-mail: [email protected]
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১:২৪
শিব্বির আহমদ ওসমানী বলেছেন: আমদের সকলকে শিশুদের কল্যাণে এগিয়ে আসতে হবে।