নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঘুম থেকে জাগার সঙ্গে সঙ্গেই অদ্ভুত স্বপ্নটির কথা মনে পড়লো রাজ কুমারের। চেঙ্গিশ খান এবং তার নাতি হালাকু খান তার বাড়ীতে এসেছেন তৈমুর লংকে নিয়ে। ৩ জনই রাজকীয় কায়দায় কূর্নিশ করে রাজকুমারের সামনে দাঁড়িয়ে রইলো। এও কি সম্ভব? ভাবতে ভাবতে রাজ কুমার নিজের আঙ্গুলে কামড় দিলেন। ৩ বিশ্বজয়ী বীর সমস্বরে বলে উঠলো- হে মহান রাজকুমার! আমরা আপনার নিকট বলতে এসেছি আমাদের সফলতার গোপন রহস্য। আমরা ৩ জনই যুদ্ধক্ষেত্রে অপরাজিত সম্রাট। নৃশংস হত্যাকান্ড এবং নির্মম প্রতিশোধ গ্রহণের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর আরস পর্যন্ত কাঁপিয়ে দিয়েছিলাম। আমাদের সেই ভয়াবহ প্রতিশোধের কাহিনী ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে যুদ্ধক্ষেত্রে আমাদের বলতে গেলে খুবই কম পরিশ্রম করতে হতো। পালিয়ে যেতো বেশীর ভাগ লোক-এরপরই ঘুম ভেঙ্গে যায় রাজ কুমারের।
রাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়ে বহু দূরে বহু দিন যাবৎ নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন রাজ কুমার। গত রাতের ইঙ্গিতপূর্ণ রাজকীয় স্বপ্ন দেখার পর থেকেই মনটা বেশ ফুরফুরে। সকাল থেকেই মনে হচ্ছে বৃহস্পতি তুঙ্গে। রাজ্যের সব লোকজন, পাইক পেয়াদা এবং উজির নাজির যোগাযোগ শুরু করেছে। কাকে কোন দপ্তর দিলে রাজকুমারের উপকার হবে তা ইনিয়ে বিনিয়ে ব্যাখ্যা করছে সবাই। এসব কথা শুনে দীর্ঘদিনের মেরুদন্ডের ব্যাথা যেনো ভালো হয়ে গেছে। নির্বাসনের পর স্ত্রী কেমন যেনো দৃষ্টিতে দেখছিলো তাকে। আজ সকালে রাজকুমারের প্রিয় দুটি রং সবুজ ও কমলার সমাবেশ ঘটিয়ে স্ত্রী নিজ হাতে খাইয়ে দেয়ার জন্য নাস্তা নিয়ে সামনে এলো। সবুজ রংয়ের শাড়ী আর কমলা রংয়ের টিপ পড়া স্ত্রীকে কেমন জানি টিয়া পাখি টিয়াপাখি মনে হচ্ছিলো।
বিকেল বেলা রাজ কুমার বের হলো একটি বৃহৎ বাগানবাড়ি দেখার জন্য। পাকিস্তানের এক রাজা প্রায় একহাজার একরের একটি বাগান বাড়ি কিনেছেন। সেখানে ঘোড়দৌড়, রাগবী খেলার আয়োজনসহ দুনিয়ার তাবৎ ব্যবস্থা রয়েছে। আজ রাজকুমারের কেনো জানি বিশ্বাস হচ্ছে তিনিও একদিন দুনিয়ার সবচেয়ে বড় জৌলুসপূর্ণ বাগান বাড়ীর মালিক হতে পারবেন। তার এই নির্বাসন জীবনের জন্য আজ আর কোনো আফসোস নেই। কারণ তার চক্ষু খুলে গিয়েছে, দিল বড় হয়ে গিয়েছে এবং বিম্বাস বেড়েছে। এখন তিনি অনেক অনেক বড় কিছু হবার, পাবার এবং কাউকে দেবার স্বপ্ন দেখতে শিখেছেন।
দেশ থেকে খবর এলো যে তার ভবনগুলো আবার নতুনরুপে সাজানো হচ্ছে। ভবনের কুশীলবরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে অত্যন্ত যত্নের সাথে এসব করছে। রাজধানীর অদূরে একটি বিশেষ ভবনের কথা তার প্রায়ই মনে হয়। নির্জীব শরীরে এখনো রক্ত চনমন করে ওঠে সেই ভবনের গরম গরম সব স্মৃতি মনে পড়লে। রাজা বাদশাহ না হলে ঐসব ভোগ করা যায় না। রাজকুমার আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করলেন। জোস্না প্লাবিত নির্মল আকাশ, একটু দূরে হরিণের মাংসের খাবারের আয়োজন, ঝিরঝিরে বাতাস, কৃত্রিম কোন আলো নেই। পাশে বসে আছে সে... উফ্ আর ভাবাই যাচ্ছে না।
রাজ্য ফিরে পাবার স্বপ্নের সঙ্গে সঙ্গে চেঙ্গিস, হালাকু আর তৈমুর লঙ্গের উপদেশের কথা মনে পড়লো রাজ কুমারের। এমনিতেই তিনি প্রতিশোধ পরায়ন। ঠিক যেনো পিতার মতো। কিন্তু এবারের প্রতিশোধ হতে হবে ভয়ানক। আর গনিমতের মাল! কিছু মাল তার লোকজন টার্গেট করে রেখেছে। আর কিছু মাল তিনি নিজে...। বড়ই সুন্দর, ঠিক যেনো হুর পরীর মতো।
©somewhere in net ltd.