![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মুক্তমনা স্বাধীনচেতা, আমি আঁকবো বিধি রক্তে গাথা।
একখানা হাত পাখা নিয়া গল্প লিখিবো বলিয়া বসিয়া ছিলাম অধির অপেক্ষায়। অতঃপর সেই ক্ষণ আসিয়া শিতাবীয় দপ্তরে উকি দিয়াছে।
আমি ক্লাসে অতিশয় বিনম্র থাকিবার বৃথা প্রয়াস সর্বদাই করিয়া থাকি। জানিনা কেনো যেইদিন আমি এই বলিয়া শপথ গ্রহণ করিয়া গৃহত্যাগ করি যে, "ক্লাসে শান্ত থাকিবো" সেইদিন ই আমি অশান্তর সীমা পার করিয়া ফেলি।
যাইহোক, তেমনি একদিনে ও ক্লাসে শিতাবীয় ধূলি ভিক্ষা দিতে গিয়াছিলাম। ক্লাস চলিতেছে রীতিমত। প্রচন্ড উষ্ণতায় অতিষ্ঠ হইয়া পাশের জনকে বলিলাম, তাহার হাত পাখা খানা আমার দিগকে নিক্ষেপ করিতে। আমার কথার মর্ম বুঝিয়া সে অনুরুপ করিলো। পাখা খানা নিজ হস্তে লইয়া দুই একখানা মিষ্টি কথা নিক্ষেপ করিতেই শ্রদ্ধেয় শিক্ষিকা মহাশয়া আসিয়া আমার হস্ত খালি করিয়া তাহা নিয়া চলিয়া গেলেন।
শিক্ষিকা মহাশয়া স্বীয় স্থানে বসিয়া যখন বলিলো ইহা আর পাইবানা, তখন কেনো জানিনা ব্যপারখানা আমার নিকটে দুধের শিশুর হস্ত থেইকা দুধের পেয়ালা কাড়িয়া নেওয়ার ন্যায় লাগিলো।
যাইহোক, নিজেকে দুধের শিশু মনে হইলেও একটু লড়িয়া চড়িয়া শক্ত কন্ঠে শিক্ষিকা মহাশয়াকে বলিলাম, দেখুন, এই হাত পাখা খানা আমার নহে। আমি ইহা ধারস্বরুপ নিয়াছি। দয়া করিয়া আমাকে ইহা ফেরত দিয়া ধন্য করুন।
শিক্ষিকা মহাশয়া একটু নরম কন্ঠে বলিলো এ পাখা খানা কার?
আমি আগে হইতেই জানিতাম যে এই পাখাখানা যে আমায় দিয়াছে সে ও ইহার মালি নহে। ইহার আসলেও কোনো মালিক নাই,৷ আছে মালকিন। সে মালকিন আবার সম্পর্কে আমার দিদি লাগে। বিঃদ্রঃ আপন দিদি নহে প্লাস্টিক দিদি। যার হস্ত হইতে আমি হাত পাখাখানা নিয়া ছিলাম সে দাড়াইয়া বলিলো ইহার মালকিন অমুক। শ্রদ্ধেয় শিক্ষিকা মহাদয়া আমার দিকে তাকাইয়া বলিলো ইহা তোমার নিকটে কেনো.?
আমি বলিলাম আমি তাহার থেইকা নিয়াছি। এরি মধ্যে আমার প্লাস্টিক দিদির বান্ধবীগণ বলিয়া উঠিলো যে, এই পাখা নাকি আমার দিদির খুব পছন্দের। আমিও তাহা জানিতাম। শ্রদ্ধেয় শিক্ষিকা মহাশয়ার নিকটে গিয়া বলিতে লাগিলাম পাখাখানা ফিরত দিতে। শিক্ষিকা মহাশয়া রসিকতা করিয়া বলিলেন তাহাকে আরেকখানা খরিদ করিয়া দিও। আমি বলিতে লাগিলাম ইহার দাম যে বড্ড বেশি। ইহা যে আমি খরিদ করিতে পারিবোনা। শিক্ষিকা মহাশয়া মুচকি হাসিয়া বলিলেন এতো কৃপণ হইলে কিভাবে চলিবে.?
শিক্ষিকা মহাশয়ার সহীত অনেকক্ষণ যাবৎ এই বাকযুদ্ধ চলিলো। বাকযুদ্ধ চলাকালীন মাঝি মধ্যে বদু মিয়ার বৌ (রসিক নাম) আর বদু মিয়ার বাবা রহিম মিয়া আমার বিরুদ্ধে দু একখানা নালিশ করিয়াছিলো। অবশেষে শিক্ষিকা মহাশয়া পাখাখানা আমার নিকটে দিলেন। তাহা হস্তে নিয়া যখন আনন্দে ভাসিতেছিলাম তিনি আসিয়া আবার আমার নিকট হইতে তাহা কাড়িয়া নিলেন। আমি পূনরায় আকুতি মিনতি করিয়া বলিলাম এই পাখা খরিদ করিবার সামর্থ্য যে আমার নাই। আর এই কথাখানা আমি বার বার বলিতেছিলাম। আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষিকা মহাশয়া বোধ হয় আমার কথাখানা বুঝিতে অক্ষম হইয়াছিলাম। ঐ পাখাখানার মূল্য ছিলো মাত্র ৮০ টাকা। যদিও আমার পকেটে ইদানিং মৃত ইঁদুরের মন্দা চলিতেছে, তবুও ঐ পাখাখানার ন্যায় শত পাখা খরিদ করিবার ক্ষমতা আমি Shitab Aziz এখন ও রাখি। কিন্তু ঐ পাখাখানার সাথে জড়িয়ে রহিয়াছে অসংখ্য স্মৃতি। তাহা ফিরাইয়া দিবার ক্ষমতা যে আমার নিকট নাই।
শ্রদ্ধেয় শিক্ষিকা মহাশয়া, আমি যতবার এই কথাখানা বলিয়াছিলাম ততবার ই ভিতর হইতে বলিয়াছিলাম। আমি গরমের দিনে দিদিকে দেখিতাম প্রতিদিনই এই পাখাখানা নিয়া আসিতো। এই পাখাখানা তাহার দৈনিন্দিন সাথী ছিলো। হয়তবা দিদি তাহার কষ্টের জমানো টাকা দিয়া ইহা খরিদ করিয়াছিলো। হয়তবা দিদি তাহার ছোট্ট ব্যাগে পাখাখানার জন্য স্বল্প জায়গা তৈরি করিয়াছিলো। কত ভালোবাসা ছিলো এই পাখাখানার জন্য। কত স্মৃতি জড়িয়ে ছিলো এই পাখার মাঝে। শ্রদ্ধেয় শিক্ষিকা মহাশয়া যখন চলিয়া যাইতেছিলেন, আমি পিছনে পিছনে যাইতেছিলাম। সিড়ির কাছে পৌছানোর পর আর অগ্রসর হইতে পারি নাই। চোখে পানি চলিয়া আসিয়াছিলো। দিদির মলিন চেহারা যেনো আমার চোখ সম্মুখে ভাসিতেছিলো। নিজেকে বড়ই অপরাধী হিসেবে অনুভব করিতেছিলেন। কাহারো ভালোবাসা, স্মৃতি, শ্রদ্ধা হাতিয়ে নিবার অধিকার যে আমার নাই।
শ্রদ্ধেয় শিক্ষিকা মহাশয়া,
আপনি শুধুই হাত পাখা নিয়া যান নাই,, আপনি নিয়া গিয়াছেন একভান্ড ভালোবাসা।
আপনি নিয়া গিয়াছেন কিছু জমানো স্মৃতি।
ইহার খরিদ করিবার সামর্থ্য যে আমার নাই।
সত্যিই আমার নাই।
Shitab Aziz
Editor of Shitabism
©somewhere in net ltd.