নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কওমের অবিশ্বাসী নেতারা জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য নূহ (আঃ)-এর বিরুদ্ধে পাঁচটি আপত্তি উত্থাপন করেছিল। যথাঃ
(১) আপনি তো আমাদের মতই একজন মানুষ। নবী হ’লে তো ফেরেশতা হতেন।
(২) আপনার অনুসারী হ’ল আমাদের মধ্যকার হীন ও কম বুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরা।
(৩) কওমের উপরে আপনাদের কোন প্রাধান্য পরিদৃষ্ট হয় না (হূদ ১১/২৭)।
(৪) আপনার দাওয়াত আমাদের বাপ-দাদাদের রীতি বিরোধী।
(৫) আপনি আসলে নেতৃত্বের অভিলাষী (মুমিনূন ২৩/২৪-২৫)। অতএব আপনাকে আমরা মিথ্যাবাদী মনে করি (হূদ ১১/২৭)।
জনগণকে ক্ষেপিয়ে তোলার জন্য নূহ-এর দাওয়াতকে ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক আন্দোলন বলে আখ্যায়িত করে কাফের নেতারা বলল,
فَقَالَ الْمَلَأُ الَّذِينَ كَفَرُوْا مِنْ قَوْمِهِ مَا هَذَا إِلاَّ بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُرِيدُ أَن يَّتَفَضَّلَ عَلَيْكُمْ وَلَوْ شَآءَ الله ُلَأَنزَلَ مَلَآئِكَةً مَّا سَمِعْنَا بِهَذَا فِيْ آبَائِنَا الْأَوَّلِيْنَ- (المؤمنون ২৪-২৫)-
‘এ লোক তো তোমাদের মতই একজন মানুষ। আসলে সে তোমাদের উপরে নেতৃত্ব করতে চায়। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তো একজন ফেরেশতা পাঠাতে পারতেন। তাছাড়া এ লোক যেসব কথা বলছে, তাতো আমরা আমাদের বাপ-দাদাদের কাছে কখনো শুনিনি’।
প্ব ‘আসলে লোকটার মধ্যে পাগলামী রয়েছে কিংবা তার সাথে কোন জিন রয়েছে। অতএব তোমরা এ ব্যক্তির দিকে ভ্রুক্ষেপ কর না। বরং কিছুদিন অপেক্ষা কর’ (মুমিনূন ২৩/২৪-২৫)। (এভাবে) ‘তারা তাঁকে সরাসরি পাগল বলে এবং (প্রাণে মারার) হুমকি দেয়’ (ক্বামার ৫৪/৯)।
আপত্তি সমূহের জওয়াব :
এখানে আলোচনা সঙ্কিপ্ত করনে শুধু পঞ্চম আপত্তি ও তার জবাব নিয়ে আলোচনা করছি।
অতঃপর নেতৃত্ব লাভের আশায় নূহ (আঃ) লোকদের নিকটে দাওয়াত দিচ্ছেন মর্মে তাদের পঞ্চম আপত্তির জবাবে তিনি স্পষ্টভাষায় বলে দেন যে,
وَيَا قَوْمِ لاَ أَسْئَلُكُمْ عَلَيْهِ مَالاً إِنْ أَجْرِيَ إِلاَّ عَلَى رَبِّ الْعَالَمِيْنَ- (الشعراء ১০৯)-
‘এই দাওয়াতের বিনিময়ে আমি তোমাদের কাছে কোন মাল-দৌলত বা কোন বিনিময় কামনা করি না। আমার পুরষ্কার তো কেবল বিশ্বপালকের (আল্লাহর) নিকটেই রয়েছে’ (শো‘আরা ২৬/১০৯; ইউনুস ১০/৭২; হূদ ১১/২৯)।
বস্ত্ততঃপক্ষে সকল নবীই একথা বলেছেন। শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর কাছে এসে তাঁর কওমের নেতারা যখন নেতৃত্ব গ্রহণের অথবা মাল-দৌলতের বিনিময়ে তাওহীদের দাওয়াত পরিত্যাগের প্রস্তাব দিয়েছিল, তখন তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, ‘যদি তোমরা আমার ডানহাতে সূর্য ও বামহাতে চন্দ্র এনে দাও, তথাপি আমি যে সত্য নিয়ে আগমন করেছি, তা পরিত্যাগ করব না’ (আর-রাহীক্ব পৃঃ ৯৭)।
বস্ত্ততঃ শিরকের মাধ্যমে দুনিয়া অর্জন সহজলভ্য হয় বিধায় যুগ যুগ ধরে দুনিয়াপূজারী এক শ্রেণীর বকধার্মিক লোক মূর্তি, কবর ও মাযার নিয়ে পড়ে আছে। লোকেরা তাদেরকে আল্লাহর অলী ভাবে। অথচ ওরা মূলতঃ শয়তানের অলী। ইবরাহীম (আঃ) এদের উদ্দেশ্যেই বলেছিলেন,
رَبِّ إِنَّهُنَّ أَضْلَلْنَ كَثِيرًا مِّنَ النَّاسِ فَمَنْ تَبِعَنِيْ فَإِنَّهُ مِنِّيْ وَمَنْ عَصَانِيْ فَإِنَّكَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ- (إبراهيم ৩৬)-
‘হে প্রভু! এ মূর্তিগুলি বহু লোককে পথভ্রষ্ট করেছে। এক্ষণে যারা আমার অনুগামী হয়েছে, কেবল তারাই আমার দলভুক্ত। আর যারা আমার অবাধ্যতা করেছে (তাদের ব্যাপারে আপনিই সবকিছু), নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (ইবরাহীম ১৪/৩৬)। নিঃসন্দেহে যারা শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর সত্যিকারের অনুসারী হবে, কেবল তারাই আখেরাতে মুক্তি পাবে। যেহেতু ‘শিরকপন্থীদের জন্য আল্লাহ জান্নাতকে হারাম করেছেন’ (মায়েদাহ ৫/৭২), সেহেতু শিরকের মাধ্যমে দুনিয়া অর্জনকারী লোকেরা এবং মুশরিক ব্যক্তিরা মুখে আল্লাহকে স্বীকার করলেও ওরা চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামের অধিবাসী হবে। অতএব হে মানুষ! শিরক হ’তে সাবধান হও!!
নূহ (আঃ)-এর জীবনী থেকে শিক্ষণীয় বিষয় সমূহ :
১. প্রথম রাসূল নূহ (আঃ)-এর সত্যতার বিরুদ্ধে যে পাঁচটি আপত্তি তোলা হয়েছিল, সর্বশেষ ও শ্রেষ্ঠ রাসূল মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর সত্যতার বিরুদ্ধেও ঐ অভিযোগগুলি তোলা হয়েছিল। শেষনবীর প্রকৃত দ্বীনী উত্তরাধিকারী হিসাবে সমাজ সংস্কারক মুত্তাক্বী আলেমগণের উপরে নবুঅতের বিষয়টি বাদে বাকী চারটি অভিযোগ যুগে যুগে উত্থাপিত হওয়াটাই স্বাভাবিক।
২. নূহ (আঃ) যেমন দীর্ঘকাল যাবত নিজ জাতির পক্ষ হ’তে অবর্ণনীয় নির্যাতন ভোগ করা সত্ত্বেও তাদের হেদায়াতের ব্যাপারে নিরাশ হ’তেন না, প্রকৃত সমাজ হিতৈষী আলেম ও নেতাগণেরও তেমনি নিরাশ হওয়া উচিত নয়।
তথ্যসূত্রঃনবীদের কাহিনী
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব।
২৮ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:২৭
গরু গুরু বলেছেন: অঢেল ধৈর্য থাকা চাই।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৩১
অপলক দৃষ্টি বলেছেন: সেটাই হওয়া চাই।