নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোহাম্মদ সোহাগ (A sinner slave of Allah) 2. সভ্যতার অসংগতি তুলে ধরার চেষ্ঠা করি ।\n

স্বপ্নবাজ তরী

প্রতিনিয়ত সৎ থাকার চেষ্টার যুদ্ধে লিপ্ত একসৈনিক

স্বপ্নবাজ তরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ কাটা আঙুল

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:১৬

মনির আর সুফিয়া । কখন যে বিয়ের একবছর হয়ে গেলে টেরই পেল না। টুকটুকে বৌ কখন যে পোঁয়াতি হলো মনির বুঝতেই পারে নি। খুব কম বয়সেই বিয়ে হয়েছে তাদের। সুফিয়ার বয়স ১৪ কি ১৫ বছর। আর মনিরের বয়স হবে ২০। দুই জনই সংসার কি জিনিস জানার আগেই যেন নতুন ঘরে আলো হয়ে আসে তাদের প্রথম সন্তান। মনিরের কি সেই আনন্দ। ছেলের জন্য পুতুল, খেলনা, ঝুনঝুনি,আর কত কি নিয়ে আসে ? দাদা আব্দুল জব্বার তো সারাক্ষণ কোলে নিয়ে রাখে। আর সুফিয়া সে তো অবাক। প্রথম মা হওয়ার অনুভুতি সে কাকে বুঝাবে। মা কি জিনিসস সে যেন তাই ভুলে গেছে। যখন অন্য কোন কাজ করতে যায় তার একটা কান থাকে হরিনের মতো খাড়া, কখন সন্তান কান্না করে তা শুনার জন্য, যাতে সাথে সাথে ছুটে যেতে পারে। সুফিয়ার এখনও ঠিকভাবে দুধদাঁত সবগুলো পড়েনি, অথচ কি আশ্চার্যের ব্যপার সে এরই মধ্যে আরেকটা বাচ্চাকে, না অন্য কারো বাচ্চা না তার নিজের পেটের বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে। যখন বাচ্চাটা তার দুধ চুসতে থাকে ঐ অনুভুতির কথা সে কাকে বুঝাবে? সে যেন একটা ঘোরে মধ্যে পড়ে যায়। হঠাৎ নিজের শরীর, মন, অনুভুতির এমন অদ্ভুব পরিবতর্নে সে কিছুটা ভয়, কিছুটা সংকায় আর কিছুটা অানন্দের অদ্ভুদ মায়ার বেড়াজালে সে যেন আটকা পড়ে গেছে। নতুন সন্তানের সাথে সময় কাটাতে কাটাতে কখন যে ছয়টি মাস চলে গেছে অনুভবই করতে পারেনি সুফিয়া। একদিন দুপুর বেলায় মনির বাসায় আসে। তারপর খাবার খেয়ে বাবার রুমে প্রবেশ করে কোলে ছয় মাসের বাচ্চা। জব্বার সাহেব তখন ভাত খেয়ে ঘুমাতে গেছে সবেমাত্র
-- আব্বা।
--- কিরে কিছু বলবি?
--- আব্বা, দেশের অবস্থা তো ভালো না। পাকিস্তানি আর্মি নাকি এখন গ্রামের দিকেও আসতেছে।
---হুম, শুনছি।
--- আব্বা, আমি আজ চৌদ্দগ্রাম মুক্তিবাহির ক্যাম্পে গেছি। আমি ঠিক করছি আমিও যুদ্ধে যাবো।
জব্বার সাহেব হচকচিয়ে উঠে বসে। তারপর ছেলের চোখের দিকে একবার তাকান আরেকবার নাতির চোখের দিকে তাকান। তারপর নিজেকে কিছুটা সংযত করে জানতে চাইলেন
--- কবে যাবি?
--- কাল ভোরে।
মনির বাবার রুম থেকে বের হয়ে, আবার বাসা থেকে বেড়িয়ে পড়েন। ফিরে আসে সন্ধ্যার পর। এরই মধ্যে সুফিয়াও জেনে গেছে স্বামীর ইচ্ছের কথা। সে বুঝে উঠতে পারে না, এই মুহূর্তে তার কি করা দরকার, স্বামীকে মানা করবে নাকি যেতে দিবে। রাতে যখন ঘুমাতে যায় তখন সুফিয়া জিজ্ঞেস করে
--- আপনে নাকি মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিবেন?
--- হা। ঠিক করেছি। কিন্তু আমাকে মনে হয় নিবে না।
---ক্যান?
--- আমার তো পায়ের একটা আঙুল নাই। আর মিলিটারিতে খুঁত মানুষ নেয় না। তুমি চিন্তা করবে না। আমি দেখ ঠিকই ফিরে আসবো।
সুফিয়া বুঝতে পারে কাটা আঙুল স্বামীর ছলনা। তার মনে তখনই অজানা এক ভয় কাজ করে। তার কেন যেন মনে হচ্ছে আজই তাদের শেষ দেখা। আর কখনও তাদের দেখা হবে না।
তার অজানা সেই ভয়ই সত্যি হলো। মনিরের সাথে আর তার দেখা হয়নি। কথা হয়নি। শুধু তিন মাস পর একবার এক লোকের মাধ্যমে বার্তা পাঠায়েছে, সে এখন চৌদ্দগ্রামের কাছাকাছি একটা ক্যাম্পে আছে তার জন্য যেন একটা লুঙ্গি আর একটা গামছা পাঠায়। জব্বার সাহেব দ্রুতই ঐলোকের মাধ্যমে জিনিস দুইটা পাঠায়। এরপর স্বামীর আর কোন খোঁজ পায়নি সুফিয়া। যুদ্ধে মনির শহীদ হয়। যুদ্ধ শেষে তার সহযোদ্ধাদের মাধ্যমে পরে জানতে পারে তাকে ত্রিপুরার একটা জায়গায় কবর দেয়া হয়। সুফিয়া একবার গিয়েছিল ত্রিপুরায়। কি অদ্ভুদ যে দেশের জন্য, যে পরিবার, স্ত্রী,সন্তানের জন্য সে আত্নহুতি দিলো, স্বাধীনতার পর আজও সে অন্য দেশে?
( সত্য ঘটনা, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক এর জীবন অবলম্বনে )

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৪

প্রতিবাদী অবলা বলেছেন: মাইন্ড টাচিং স্টোরি

২| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৮

ঠ্যঠা মফিজ বলেছেন: এসব আমাদের জন্য সত্যয়ই বহু দুঃখজনক মরমহিত ঘটনা ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.