![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মুক্ত প্রাণী। কথা বলি গণমানুষের। অধিকার আদায়ের জন্যেই আমার জন্ম।
সোহাগ আশরাফ
বিকট একটি শব্দ শুনলাম। এরপর কিছুই জানিনা। চোখ মেলে যখন তাকালাম, তখন আমার দুটি পা আটকে আছে ভেঙ্গে পড়া ভবনের চাপে। মাথা উপরে তোলা যাচ্ছে না। মনে হয় মাথার উপর ছাদ ছিল। আমার ঠিক পাশে দুটি মানুষ রক্তাক্ত অবস্থায় ইটের মধ্যে গেথে আছে। আমরা একই ফ্লোরে কাজ করি। কিন্তু ওরা কারা তা আমি বুঝতে পারিনি। তবে এটা বুঝতে পারলাম ওরা মৃত। আস্তে আস্তে ডেকেছি - ‘ওই তোরা কেমন আছিস?’ কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল। কোনো সাড়া পেলাম না। তখনই বুঝলাম ওরা নেই। লাশ দুটি হাত বাড়িয়ে রেখেছে আমার দিকে। চারিদিকে অন্ধকার। দম নিতে কষ্ট হচ্ছে। ধুলোর মধ্যে হালকা তেমন কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। রাত-কি দিন বোঝার উপায় নেই। নিজেকেও মৃত মনে হলো। পানি খেতে খুব ইচ্ছে করছিল। মনে হচ্ছিল পানির অভাবে আমিও কিছু সময়ের মধ্যে মারা যাব। ধীরে ধীরে আমি নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছি। শুধু আল্লাহকে ডেকেছি। যতো সময় যাচ্ছে গরম ততো বাড়ছে। কি যে এক অনুভুতি বোঝাতে পারবো না। অনেকটা সময় মাথা নিচু করে পড়ে আছি। ব্যাথায় চিৎকারও করতে পারছি না। কবরের মধ্যে মানুষ কিভাবে থাকে তা দেখে এলাম।
একদিকে পানি নেই। তার উপর শুরু হয়েছে ভটকা গন্ধ। ব্যাথায় নিজের শরীর আছে কিনা অনুভুতি নেই। মাথার মধ্যে কোনো চিন্তাও আনতে পারিনি। পাশে দুটি লাশ দেখে একবারও মনে হয়নি আমি লাশের সাথে আছি। এটা বুঝতে আমার কষ্ট হয়নি যে আমি কিছু সময়ের মধ্যে মারা যাব। নিশ্চিত মৃত্যুর সাথে গলা জড়িয়ে লাশের সাথে কাটিয়েছি। এরপর আর কিছু মনে নাই। যখন চোখ মেলে তাকাই তখন দেখি আমি হাসপাতালে। আমাকে তিন দিন পর উদ্ধার করা হয়েছে।
সাভার ট্রাজেডির তৃতীয় দিন উদ্ধার হওয়া এক যুবকের অনুভুতি নিয়ে তৈরি করা হয়েছে এ প্রতিবেদন। এ যেনো একজন জীবিত মানুষ কবরের মধ্য থেকে ফিরে এসে বর্ণনা করছেন। সত্যিই তাই! বাইরে হাজারো মানুষ। অথচ একটু পানির অভাবে ছটফট করছে তারা। বাইরে কতো আলো কিন্তু একটু আলোর অভাবে মৃত্যুকুপের ভয়াবহতা দেখছে তারা। নিথর দেহ তবুও জীবিত। কিন্তু বাঁচার নিশ্চয়তা নাই। যে মানুষগুলো এই মৃত্যুকুপ থেকে ফিরে এসেছে তারা জীবিত অবস্থায়ই কবরের ভয়াবহতা দেখে এসেছে। এবং এখনও অনেক মানুষ এই কঠিন পরিস্থির সাথে মোকাবেলা করছেন।
আজ সাভার ট্রেজেডির ৪র্থ দিন। কিন্তু আজও ধ্বংসস্তুপের নিচ থেকে বের করা হচ্ছে জীবিত মানুষ। উদ্ধারকারীরা তাদের জীবন বাজি রেখে উদ্ধার করছেন এসব অসহায় শ্রমিকদের। অনেকেই উদ্ধার করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। পচা লাশের গন্ধে বমি করে দিচ্ছেন অনেকেই। তবুও হাল ছাড়েনি উদ্ধারকারীরা। উদ্ধারকারী প্রতিটি মানুষ এক একজন দেবতা হয়ে ভবনে চাপা পড়া মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। মানবতার কাজে নিজেকে উৎস্বর্গ করার দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করলো বাংলাদেশ। এ জাতি যে বিপদে বন্ধুত্বের পরিচয় দেয় তারই প্রমাণ দিল আরো একবার।
এতো কিছু দেখেও রাষ্ট্রের কর্তা ব্যাক্তিরা নির্বোধের পরিচয় দিচ্ছেন যা সত্যি লজ্জার। অপমানের। তারা যদি একবার এই মৃত্যুকুপ দেখে আসতে পারতেন তবে হয়তো বোধের উদয় হতো। ভালো থাকুক শ্রমজীবী মানুষ।
©somewhere in net ltd.