নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুক্ত পাখির ডাক

আমি মুক্ত পাখির মতো উড়ে বেড়াতে চাই আকাশে বাতাসে

সোহাগ.আশরাফ

আমি মুক্ত প্রাণী। কথা বলি গণমানুষের। অধিকার আদায়ের জন্যেই আমার জন্ম।

সোহাগ.আশরাফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নাস্তিকতা বনাম মৌলবাদ

০৩ রা মে, ২০১৩ রাত ১:৫৭









সোহাগ আশরাফ : একটি ভূ-খণ্ড। স্বাধীন ভূ-খণ্ড। মতভেদ বহুবিধ। এর মধ্যে উত্তাপ, সঙ্কট ও রক্তপাতের মধ্য দিয়ে প্রবাহমান রাজনীতি। দেশ এখন দুটি শক্ত খুটির উপর দাঁড়িয়ে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। এক দিকে প্রজন্মের উত্তেজনা (মৌলবাদীরা যাদের নাস্তিক বলে আখ্যা দিয়েছেন) অন্যদিকে মৌলবাদ। সরকার ও বিরোধীদল বিছিন্ন। রাজনীতির দুই মেরুতে তাদের অবস্থান।



ঠিক যে সময়ে দেশের রাজনীতি একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দিক নির্দেশনা দিবে তখন নাস্তিকতা ও মৌলবাদ নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। হতাশায় সাধারণ মানুষ। কোন পথে যাবে তারা!

বিগত দিনগুলোতে দেখা গেছে সরকারের কাছ থেকে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বিরোধী দলগুলো হরতালের ডাক দিতো। বর্তমানে ঘটছে তার উল্টো। সরকার বিরোধী দলের আন্দোলন প্রতিহত করতে ভিন্ন পন্থায় হরতালের ডাক দিচ্ছে। প্রজন্মের গণজাগরণ মঞ্চ সাধারণ মানুষের সৃষ্ট মঞ্চ হলেও তা এখন সরকারের দখলে। তাদেরকে হাতিয়ার করে এগিয়ে চলছে সরকার।



দেশে এখন ব্লগ বিপ্লব ঘটেছে। প্রচুর তরুন তাদের মতামত প্রকাশ করছে। তাদের লেখার মাঝে সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সূক্ষ্ম মূল্যবোধ লক্ষণীয়। যা আমাদের সামগ্রিক সমাজ ব্যবস্থার জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। যদিও এই ব্লগারদের মাঝেও বিভেদ রয়েছে। কিছু ব্লগ সাইটে দেখা যাবে ব্লগাররা নিজেদের সত্যের এবং ন্যায়ের পূজারি ঘোষণা করে কৌশলে ডানপন্থীদের সাফাই গাচ্ছে। ঠিক একই ভাবে বামপন্থী ব্লগারেরাও লিখে যাচ্ছে। যে যাই লিখুক না কেনো সমাজ পরিবর্তনে মুক্ত চিন্তার প্রকাশ করা কোন অপরাধ নয়। কিন্তু বর্তমান যে বিষয়টি নিয়ে দেশের আলেম সমাজ লংমার্চের ডাক দিয়েছে তা আসলে কোন পথে ধাবিত হচ্ছে এটাই ভাবনার বিষয়!



বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক দেশের তুলোনায় অসাম্প্রদায়িক। একই সময়ে রোজা, পুজা সহ আলাদা আলাদা ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করার নজির এ দেশেই রয়েছে। কিন্তু সেই অসাম্প্রদায়িক দেশে সাম্প্রদায়িক হিং¯্রতা দিনে দিনে আরো আত্মঘাতি হয়ে উঠছে। একটি স্বাধীন দেশে এ সংঘাত কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। দেশের অধিকাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী। তাই ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা এ দেশকে ইসলামী দেশ হিসেবে চিহ্নিত করবে এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে অন্য ধর্মের অনুসারীরা এ দেশে উপেক্ষিত হবে এটা মেনে নেওয়া ঠিক হবে না। রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরীকের স্বাধীন ভাবে বাঁচ, ধর্ম পালন ও মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে।



প্রত্যেক নাগরিকের একটি বিষয় অবশ্যই মেনে চলতে হবে- কেউ অন্য ধর্মের উপর আঘাত আনবে না এবং ধর্মের উপর আঘাত আনে এমন কোনো বক্তব্য প্রকাশ করবে না। এটা সত্য যে কিছু ব্লগ সাইটে অসাম্প্রদায়িকতার নামে যাবতীয় ধর্মের বিরুদ্ধে লেখা হচ্ছে। হোক। ধর্মীয় বিশ্বস ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে কিন্তু সব ধর্মই শান্তির কথা বলে!



নাস্তিকতা ও মৌলবাদ নিয়ে আলাদাভাবে বিস্তর আলোচনা সম্ভব। সে পথে না গিয়ে বর্তমান বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা যাক।



আমরা যারা অসাম্প্রদায়িক চিন্তার অধিকারি তাদের মধ্যে কিছু মানুষ ইদানিং আলোচনায় আসতে ধর্মের বিপক্ষে লিখে নিজেদের জাহির করার চেষ্টা করছি। তাদের ধারণা বাংলাদেশ মুসলমানদের ঘাটি। তাই ইসলামের বিপক্ষে লিখলেই রাতারাতি আলোচনায় আসা সম্ভব। কারণ ইসলামী মৌলবাদী শক্তি বরাবরই এর বিরুদ্ধে ফুসে উঠেছে। আমার কাছে নাস্তিক সেই ব্যাক্তি যে নিজেকে জাহির করার জন্য শুধু ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে নয়; যে কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলে এবং ধর্মীয় অনুভুতির উপর আঘাত হানে। মুক্ত চিন্তার অর্থ এমনটি হতে পারে না। এটি শান্তির বদলে দাঙ্গা সৃষ্টির পথ। নাস্তিকরা এক সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী নয়।



কিন্তু শাহবাগে যারা আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে তাদের নাস্তিক বলে আখ্যা দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। সম্পূর্ণভাবে একতরফা এই উক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ শাহবাগের আন্দোলন গণমানুষের ছিল। বর্তমান আন্দোলন নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। হেফাজতে ইসলাম শাহবাগ আন্দোলনকে যদি নাস্তিকদের সৃষ্টি ও নাস্তিকতা বলে আখ্যাদেন তবে তারা মৌলবাদের পরিচয়। মৌলবাদী চিন্তা এমনই একটি গোরামি যা একটি সমাজ কে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। নাস্তিকতা ও মৌলবাদ একই সুতায় গাঁথা। মৌলবাদ শব্দটি ইংরেজি ফান্ডামেন্টালিজম শব্দের অনুবাদ।



মৌলবাদ শব্দটির সাধারণ অর্থ হল মূলজাত। এখানে মূল শব্দটি দ্বারা ধর্ম বোঝানো হচ্ছে। অর্থাৎ আদি কাল থেকেই ধারনাটি ধর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে। আর সে ধর্ম হল খ্রিস্টধর্ম। খ্রিস্টান জগতে মৌলবাদ নিয়ে তর্ক শুরু হয়েছিলো ঊনবিংশ শতাব্দির শেষ দিকে এবং বিংশ শতাব্দির দ্বিতীয় দশক পর্যন্ত প্রবল প্রতাপে তা চালু ছিলো। তর্কের শিকড় একটি জায়গায়ঃ বাইবেলে যা লেখা আছে সে সব আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ করে মান্য করতে হবে, নাকি পরিবর্তিত পৃথিবীর বাস্তব প্রেক্ষাপট ও মানব ইতিহাসের অগ্রগতির নিরিখে এবং যুক্তিবাদ প্রয়োগ করে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের পর মান্য করতে হবে? মৌলবাদীরা আক্ষরিক অর্থের সব কিছু গ্রহণ করে থাকেন।



কিন্তু পৃথিবীর অন্যান্য দেশে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে মৌলবাদ নতুনভাবে তৈরি হয়েছে। সেসব দেশে মৌলবাদের রাজনৈতিক রূপের উদ্দেশ্য রাষ্ট্রনৈতিক ক্ষমতা দখল। আমাদের দেশে মৌলবাদ ধর্মীয় গোরামির একটি বড় রুপ। ধর্মীয় অন্ধত্ব তাদের বরাবরই সংর্ঘষের পথে নিয়ে গেছে।

অপরদিকে নাস্তিকতার মানে যদি হয় কোনো ধর্মকে আঘাত করা তবে তাও মৌলবাদ। অসাম্প্রদায়িকতার মানে ধর্মীয় আঘাত নয়। মুক্ত চিন্তার মানে ধর্মীয় কটুক্তি নয়। আসুন দেশকে রক্ষা করি। সাম্প্রদায়িক শক্তি ও মৌলবাদের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তুলি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.