![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মুক্ত প্রাণী। কথা বলি গণমানুষের। অধিকার আদায়ের জন্যেই আমার জন্ম।
সোহাগ আশরাফ :
মৌলিক চাহিদা হিসেবে দেশের মানুষের বস্ত্রের অভাব না থাকলেও সরকারের ধারাবাহিক ব্যর্থর অন্যতম একটি খাত হচ্ছে বস্ত্র শিল্প। তবে এই খাতে সরকারের ব্যর্থতা কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকের। মানুষ তাদের পরিধেয় বস্ত্রের যোগান দিতে পারলেও জাতীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে এ খাতটি। সরকারি ব্যর্থতা চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে।
সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও ঠাঁই পেয়েছে। বিভিন্ন মিডিয়ায় এই অচলাবস্থা এবং এর ফলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বিশেষত রপ্তানি খাতের কী ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে তারও বিশ্লেষণ চলছে। এই নিয়ে দেশের ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ বাড়ছে।
সংশ্লিষ্টরা আশংকা প্রকাশ করেছেন, একের পর এক হরতালসহ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মাঝে দেশের গার্মেন্টস খাত যখন দিশেহারা তখনি কফিনে শেষ পেরেক ঠুকেছে সাভার ট্র্যাজেডি। সাভারের রানা প্লাজা ধসে হাজারের অধিক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের এ শিল্পের ইমেজের চরম সংকট সৃষ্টি করেছে।
চলমান অচলাবস্থায় দেশের রপ্তানি খাত বড় ধাক্কা খেতে পারে বলে আশংকার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রভাবশালী গণমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। সম্প্রতি সাময়িকীটিতে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতের বড় ক্রেতারা বিকল্প খুঁজতে শুরু করেছে। তাদের মধ্যে ভিএফ ও টেসকোর মত বড় বেশ কয়েকটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান (বায়ার) ইতিমধ্যে প্রতিবেশী ভারতসহ কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ায় অর্ডার নিয়ে গেছে।
চীন, দক্ষিণ আমেরিকার একাধিক দেশ, দক্ষিণ কোরিয়ার একাধিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে চলমান সহিংসতায় তাদের সফর বাতিল করেছে। তৈরি পোশাক উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন মার্চ এপ্রিল মাসে বায়াররা বড় পরিমাণে অর্ডার দেয়। কিন্তু চলমান সহিংস ঘটনায় তারা না এসে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।
দেশের বস্ত্রখাতে বিপর্যয় নেমে আসার এক অশুভ সংকেত এ সব চিত্রই ফুটে উঠেছে। রপ্তানি আয় ক্রমাগতভাবে কমতে চলেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসেই (জুন-অক্টোবর) রপ্তানি আয় কমেছে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১২ শতাংশ এবং গত বছরের এই সময়ের তুলনায় পৌনে ৭ শতাংশ। এদিকে অর্ডার না থাকাসহ অন্যান্য কারণে এর মধ্যেই ১৪৮টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। একই সময়ে নিটওয়্যার পোশাক রপ্তানিও লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ এবং ওভেন পোশাক রপ্তানি আয় ২১ শতাংশের মতো কম হয়েছে।
জানা যায়, তৈরি পোশাক রপ্তানিকারী কিছু দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদের এ কাজে সহযোগিতা করছে এ দেশেরই কিছু স্বার্থান্বেষী মহল। বিশৃঙ্খলার পর সেসব দেশ ও সংস্থা এসব খবর ক্রেতাদের কাছে উপস্থাপন করে, যাতে তারা বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানিতে আগ্রহী না হয়। এমনটি যদি হয়েই থাকে তবে সরকারকে এ বিষয়ে কঠোর হতে হবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এ খাতে কর্মরত শ্রমিকদের প্রাণহনি সরকারকে চাপের মুখে ফেলে দিয়েছে।
কার্যত এর জন্য সরকারই দায়ি। কারণ রাজনৈতিক অস্থিরতায় তারা দেশের সামগ্রীক চিন্তা থেকে দুরে অবস্থান করছেন। তাদের মেয়াদ কালে অর্থনীতির বিপর্যয় এর বড় প্রমাণ। এসময়ের মধ্যে বিপর্যয় এতোই ঘনিভূত হয়েছে যে এর প্রভাব অন্যান্য খাতের উপর পরেছে।
সবার আগে একটি দেশের সরকারকে জাতীয় আয়ের খাতগুলোর দিকে নজর দেওয়া উচিৎ। সেই খাতের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সার্বক্ষণিক তদারকি করা উচিৎ। কোনো প্রকার বিপর্যয় ঘটার আগেই তা মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতও থাকা উচিৎ। অথচ বিরোধীদলের সরকার বিরোধী সাংঘর্ষিক নীতি ও তাদের দমনে সরকারের পদক্ষেপ নিয়েই কেটে গেছে বর্তমান সরকারের মেয়াদ। দেশের উন্নয়নে সরকার উল্লেখ করার মতো কোনো কাজই উপহার দিতে পারেনি তার মেয়াদ কালে। বরং বস্ত্র খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট গার্মেন্স শিল্পটি এখন ধ্বংসের পথে। শুধু শিল্পটি হুমকির মুখে তা বলে শেষ করা যাবে না। এর সাথে যে শ্রমিকগুলো জড়িত তাদের জীবনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ সরকার। বাংলাদেশের ইতিহাসে পোশাক শিল্পের এই ভয়াবহতা এ সরকারের আমলেই হয়েছে। দেশ স্বাধীনের পর থেকে কোনো সরকারের আমলেই এতো বেশি শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি।
- চলবে...
©somewhere in net ltd.