নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঘুমাইতে গেলে যারা খালি এপাশ ওপাশ কাইত চিত হয় তারাই ব্যাচেলর।

ডাক্তার তো জানেনা যে তুমিই আমার হৃদরোগের কারন!

আমিই সোহেল

জীবনের মানেই খুঁজে পেলাম না।।

আমিই সোহেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর সবুর

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:০১

১৯৭১ সালের জুলাইয়ের কোন এক ভোর। প্রতিদিনের মত সূর্য পূর্ব দিকেও উঠলেও মৌলভীবাজার জেলার ফুলতলা চা বাগানের পথ ছিল জন মানবহীন। শুধু জুলাই মাসের এই দিনটি নয়, মার্চ মাস থেকেই রাস্তাঘাটে মানুষজনের আনাগোনা অনেকটা কম। যুদ্ধের শুরুতে পাকিস্তানী হায়েনাদের অত্যাচার কম হলেও দিন কে দিন তাদের বর্বরতা বেড়েই চলছে। জানোয়ারদের এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্যই ফুলতলা চা বাগানের পথ থেকে কিছুটা দূরে একটি ঘরের ভীতর কান পেতে অপেক্ষা করছে মুক্তিবাহিনীদের জন্য। মুক্তিবাহিনীদের ৩২ সদস্যর একটি দল তাদের পরবর্তী অপারেশনের জন্য নির্ধারিত ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য ভুল ক্রমে ফুলতলা চা বাগানের পথটি বেছে নেয়। মুক্তিবাহিনীর দলটিকে যে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তিনি নিজেই পথ ভুলে গেছেন। যোগাযোগ করার কোন উপায় ছিল না বলেই সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াই বরং ভালো। হয়ত কোন একটি উপায় বের হবেই।

সূর্যের প্রখরতা খানিক বাড়ছে। আনুমানিক ৯টা বাজে। ফুলতলা চা বাগানের পথ ধরে চোখ, কান খোলা রেখে চলতে হচ্ছে। মৃদু বাতাসে গাছের পাতার নড়াচড়া পর্যন্ত দেখত হচ্ছে। পথিমধ্যে চা বাগানে এক শ্রমিককে কাজ করতে দেখে সাহায্যের আবেদন বাড়িয়ে দিলে সেও সাহায্য করতে রাজি হয়। কিছুক্ষণ শ্রমিকের সাথে কথা বলে তাকে প্যাকেট ভর্তি সিগারেট দিয়ে মুক্তিবাহিনীর দলটি আবার রওনা হলেন। কয়েক গজ হাটার পরেই পিছন থেকে ব্রাশ ফায়ারের শব্দ শোনা গেল। মুহূর্তের মধ্যে যে যেভাবে পারে ছড়িয়ে পড়ল আশেপাশে। পাকিস্তানিদের সংখ্যা বেশী না হলেও মুহূর্তের মধ্যে ঘটে যাওয়া আক্রমণে মুক্তিবাহিনীদের দলে যারা পিছনে ছিলেন তাদের মধ্যে তিন জন মুক্তিযোদ্ধা তখনই শহীদ হন। এছাড়াও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। শত্রুদের সাথে কোনরকম মোকাবেলা করে প্রান বাচিয়ে সামনের দিকে ছুটতে থাকেন। চা বাগানে কর্মরত শ্রমিকটিই ছিলেন আসল নায়ক। যিনি কিনা বাংলাদেশের মাটিতে বাস করে পাকিস্তানীদের হয়েই কাজ করেছিলেন তখন। শুধু তিনি একাই নন, এমন হাজার হাজার জানোয়ার সিলেটেই বাস করতেন।

এই মুক্তিবাহিনীদের গল্পটি এখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু ফুলতলা চা বাগান থেকে জীবন নিয়ে পালিয়ে যাওয়া সেসব বীর সন্তানেরা তখনও বিপদমুক্ত হতে পারেন নি। চা বাগানের টিলা গুলোর মাঝখানে সারাবছর কোমর পর্যন্ত কাঁদা জমা থাকে। এখানে কখনও সূর্যের আলো আসেনা বলে এমন কাঁদা জমানোই থাকে। টিলা গুলোর মাঝের কর্দমাক্ত যায়গাটি ছিল চা বাগান থেকে বেড়িয়ে আসার এক মাত্র পথ। তাই জীবন বাঁচাতে কোমর পর্যন্ত কাঁদা মাটির রাস্তাটিই বেছে নিলেন। তবে এখানেও আছে বিরাট সমস্যা! পাকিস্তানী হায়েনারা এখন টিলার উপর থেকেই গুলি করছেন। মুক্তিবাহিনীর ট্রেনিং করার সময়ে ক্যাপ্টেন বলেছিলেন কখনও উপর থেকে গুলি করলে ভুলেও পিছন না গিয়ে সামনের দিকে এগুতে। এতে করে জীবন বাঁচলেও বাঁচতে পারে। তাই ক্যাপ্টেনের কথার অমান্য না করেই কাঁদার ভীতর দিয়ে সামনে এগুতে লাগলেন। গুলি দিয়ে কাজ হচ্ছে না দেখে এবার মর্টারশেল নিক্ষেপ করতে লাগল। কিছুক্ষণ পর মুক্তিবাহিনীদের আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই কি তাহলে শহীদ হয়েছেন? না। একে ছিল কর্দমাক্ত স্থান এর জন্যই পাকিস্তানীরা নিচে আসতে পারছিলেন না। দ্বিতীয়ত মর্টারশেল কাঁদা স্থানে পড়ছে বলে কোন কাজে আসছে না। সেই কর্দমাক্ত স্থানেই জীবন বাঁচাতে তারা দুই দিন লুকিয়ে ছিলেন! পরবর্তীতে ভারতীয় একটি বাহিনী তাদের উদ্ধার করে জীবন বাচায়।

এতক্ষণ যে গল্পটা পড়লেন এই গল্পের এক বীর মুক্তিযোদ্ধা হলেন আব্দুর সবুর। সেক্টর ৪ শরিফপুর ইউনিয়ন থেকে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। যিনি দুই দিন কর্দমাক্ত স্থানে লুকিয়ে ছিলেন। শুধু কি লুকিয়েই ছিলেন?? তার দীর্ঘ ৭ মাসের যুদ্ধে নিজের জীবনের কথা ভুলে গিয়ে দেশের জন্য পাকিস্তানীদের মোকাবেলা করেছেন অসংখ্যবার। এখানে আমি একদিনের একটি ঘটনা বললাম মাত্র! হয়তঅবাক হবেন জেনে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা সব কিছু দূরে রেখে দেশকে ভালবেসে জীবনকে বাজি রেখে যুদ্ধে গিয়েছেন। আজ তারই সংসারে দুই বেলা ভাত রান্না করতে কষ্ট হয়ে যায়। করুণার পাত্রের মত অন্যের ভিটামাটিতে মাথা গুজে আছেন। এক মাত্র মেয়ে কে বিয়ে দিয়ে তিনি আর তার বউ অবহেলায় দিন কাটাচ্ছেন। তাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়, 'কি পেলেন যুদ্ধ করে?' হাসিমাখা মুখে জবাব দিলেন, 'কোন কিছুর আশায় যুদ্ধে যাইনি। দেশের জন্য গিয়েছি, বুক ফুলিয়ে এসেছি।"

কিন্তু সবার আড়ালে ঢেকে রাখা ছলছল করা চোখ দুটি জানান দেয় দেশ তাদের কিছু দিতে পারেনি। তারাই দিয়ে গেলেন, ঋণী করলেন আমাদের। এই বীর মুক্তিযোদ্ধার সামনে দাড়িয়ে তাকে স্যালুট দিতে কার্পণ্য করিনি
বি দ্রঃ লাইটার পেইজ থেকে নেওয়া

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.