নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইটের পরে ইট মাঝে মানুষ কিট.....

শহীদ শোভন

জীবন যাপন এর সবচেয়ে সহজ উপায় এটা নিয়ে না ভাবা। অন্যকিছু নিয়ে পরে থাকা যা বাস্তবতায় নেই।

শহীদ শোভন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘরের "বউ"-কে ভয় পায় না এমন "পুরুষ" জাতি এখন বিলুপ্তপ্রায় !!!

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:২৯

ঘরের "বউ"-কে ভয় পায় না এমন "পুরুষ" জাতি এখন বিলুপ্তপ্রায় ।

ইতিহাসের পাতায় খুঁজে দেখলে কদাচিৎ দু-একজন পাওয়া যেতে পারে । এই রকম একজন "কদাচিৎ" মানুষ ছিলেন আমার বাবা । প্রচন্ড টানাটানির সংসার আমাদের । বাবা সরকারী চাকুরিজীবি,প্রচন্ড "সততাওয়ালা" মানুষ, দুই নাম্বারির ধারে কাছে দিয়েও যান না । আমরা ৬ ভাই বোন কেউ হাইস্কুল, কেউ কলেজ, কেউ বিশ্ববিদ্যালয়গমী । বাবার সাথে সর্ম্পকের একটাই সুত্র " আব্বা কিছু টাকা লাগবে" । সপ্তাহে বৃহশ্পতিবার তিনি বাড়ি আসতেন, শনিবার চলে যেতেন । আমরা ভাইবোন দের জন্য এটা ছিল খুবই "আজাব-দায়ক টাইম" । অন্য দিন দেখতাম আমার কলেজ গামী বড়ভাইরা রাত নয়টার আগে বাড়ি ফিরতেন না, বৃহশ্পতিবার তাদের পড়ার টেবিল থেকে ক্রেন দিয়েও টেনে তোলা যেতোনা । সবাই যার পর নাই এটেন্টিভ । আমি ছিলাম বাড়ির সবার ছোট । আমার টেকনিক বুঝতে কিছুটা সময় লাগলো । ততোদিনে বাবার হুংকার শুনে দুএকবার প্যন্ট নষ্ট হয়েছিল, অবস্থা বেগতিক দেখে মা আমার সাহায্যে এগিয়ে এলেন,টেকনিক শিখিয়ে দিলেন । আমি বেচে গেলাম ।



যাহোক, বাবাকে আমি সারাজীবন একটা সোয়েটার আর একটা শাল চাদর ব্যবহার করতে দেখেছি (শীতের দিনে ) । শালটা কাশমিরী শাল বলে একটা গোপন অহংকারও বোধ হয় তার মধ্যে কাজ করতো । উত্তর বঙ্গের প্রচন্ড টান্ডা উপেক্ষা করে খক-খক করে কাষতে কাষতে তিনি শনিবারের ভোরে রওনা দিতেন কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে । বাবা বাড়ি থেকে বের হবার পরপরই আমাদের আনন্দ-উল্লাস শুরু হয়ে যেতো । শুক্রবারে বিটিভির মিস হয়ে যাওয়া নাটক, ইত্যাদি, এক্স-ফাইলসের জন্য আফসোস আর বরিবারের কি কি টিভি সিডিউল আছে তাই পেরার ঘেটে বের করার চেষ্টা চলতো । বরিবারের কলকাতা দুরদর্শনে কি সিনেমা আছে সে নিয়ে আলাপ,আর বাশের মাথায় লাগানো টিভি এন্টিনা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে টিভি টিউনে আনার দায়িত্ব ছিল আমার । ঘাম ছুটে যেতো । মজার ব্যপার হল আমাদের বাবাকে আমরা সব সময় ভয় পেতাম । বাবা মানেই হাত মুখ ধুুয়ে পড়তে বসা । বাবাকে ঠান্ডা রাখার একমাত্র হাতিয়ার ছিল বই মুখের সামনে ধরে বসে থাকা । আমরা বাবাকে ছোটবেলা থেকে শুধুু ভয়ই পেতে শিখেছি, ভালবাসতে শিখিনি ।



"মা"-র অতিমা্ত্রায় সরলতা,"বাবা"-র প্রচন্ড মেজাজ ; দুজনেই দুজনার উপর চরম বিরক্ত ছিলেন । তারা সাধারন কথাও বলতেন ঝগড়ার সুরে । মাঝে মাঝে আমার মনে হতো এদের বিয়েই দেয়া হয়েছে ঝগড়া করার জন্য । মা হুংকার দেবার চেষ্টা করতেন কিন্তু বাবার দিতেন ডাবল হুংকার । আমরা মাঝখানে বিড়ালের মতো মিউ মিউ করে পড়াশুনা করতাম । তাদের চিৎকার চেচামেচি যতো বাড়তো আমাদের পড়ার বেগও ততো বাড়তো । সে এক মারাত্তক অবস্থা ! মা বোধ হয় ট্রিপুল হুংকার ছাড়তেন না আমাদের কারনে,চুপ করে যেতেন । মা যখন চুপ করে যেতেন, বাবা ঠোটের কোনে বিজয়ে হাসি ঝুলিয়ে খেতে বসতেন । সে এক অদ্ভুত পরিবেশ । আমার ধারনা ছিল মা-বাবার মধ্যে কোন ভালবাসা নেই, শুধুু ছেলেমেয়ে সংসার নিয়ে টিকে থাকা আছে । আমার ধারনা ভুল প্রমানিত হল সেদিন, যে দিন আমার মা মারা গেলেন । কোন পুরুষ মানুষ যে এভাবে কাদতে পারে, সে দিন আমি প্রথম দেখলাম । শক্ত-সামর্থ্য মানুষটা কিভাবে যেন ধুপ করে নিভে গেল । এর পর থেকে বাবা বারান্দায় ঝিম মেরে বসে থাকতেন । যেন কিছুর জন্য অপেক্ষা করছেন । বাবাকে এরপর থেকে কোন দিনই কারো সাথে উচ্চ স্বরে কথা বলতে দেখিনি । কি যেন ভাবেন, কি যেন নেই । তারপর কোন একদিন, কোন এক বসন্তের ভোরে বাবাও মারা গেলেন । আমার পৃথিবীকে উপলদ্ধি শুরু হল ।



আমার নিজের ধারনা ছিল বাবার কোন প্রভাব আমার উপরে নেই । কিন্তু ভুল । চারদিকের পরিবর্তন ও পরিবর্ধন খুব দ্রুত ঘটতে থাকলো,তিনি আমার উপলব্ধিতে জোরালো হলেন । পারিবারিক টানা-পোড়েন শুরু হয়ে গেল পুরোদমে । পৃথিবী পাল্টে গেল । আজ আমার নিজের পরিবার হয়েছে । বাবা নেই তার গোপন অহংকারের অংশ "কাশমিরী শাল" আর "সোয়েটারটা" তিনি রেখে গেছেন । আমি এই প্রচন্ড গরমেও আমি মাঝে মাঝে তার শাল আর সোয়েটার পরে বসে থাকি । আমার বউ এই ঘটনায় খুবই আশ্চার্য্য হয়, ভ্রু কুচকে চোখ গোল গোল তাকিয়ে থাকে,ঘটনা বোঝার চেষ্টা করে ।



আমরা ভালো আছি বাবা । শোভন ।











মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:৪৯

তিক্তভাষী বলেছেন: বাবা-মা হারানোর পরই কেবল জাগতিক বাস্তবতার সঠিক উপলব্ধি আসে!

আমিও একই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গিয়েছি। তবে আমার আগে বাবা গেছেন, তারপর মা।

২| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:৫৬

ডার্ক ম্যান বলেছেন: পনজনকে হারিয়ে বুঝি তারা কতটুকু আপন ছিলেন

৩| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:৫১

হেডস্যার বলেছেন:
আপনার লেখা পড়ে আমার চোখে পানি এসে গেল। :(

৪| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৭

আমার জীবন বলেছেন: আমার বাবা-মা দুজনেই আছেন :| তাদের ছাড়া কোনদিন থাকতে হবে সেটা কল্পনাও করতে পারিনা!

৫| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:০৮

বন্ধুহারা০০ বলেছেন: আমিও আমার বাবাকে হারানোর কষ্ট আজ ও ভুলতে পারিনা।

৬| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:৫১

রোহান খান বলেছেন: লেখাটা বার বার পড়লাম, নিজেকে খুজে পেতে চেস্টা করে গেলাম।

৭| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০১

rakibmbstu বলেছেন: +++++

৮| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:৫৫

আমিনুর রহমান বলেছেন:




কি লিখবো ঠিক বুঝে উঠে পারছি না !

৯| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:৩৮

পল্লীবালক বলেছেন: ঠিক আমার বাবার মতো। প্রচন্ড রাগি কিন্তু কি গভির মমতা লালন করেন আমাদের জন্য।
লেখা পড়ে খুব ভালো লাগলো।

১০| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:৪০

বাবা তুষার বলেছেন: আমিও আমার বাবাকে হারানোর কষ্ট আজ ও ভুলতে পারিনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.