নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শুটিং স্টার লষ্ট

নাই।

শুটিং স্টার লষ্ট › বিস্তারিত পোস্টঃ

শফিক কি চায় !

২১ শে আগস্ট, ২০০৯ বিকাল ৫:৪২

দুলাভাইয়ের পাশে বসে আছি। আশা করে বসে আছি যদি একটা গল্প শোনায় ! আমার দুলাভাই জাহাজের ক্যাপ্টেন। বাংলাদেশী একটা বিরাট কার্গো শিপের। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মাল আনা নেওয়া করেন।



দুলাভাইয়ের শরীরটা বেশী ভাল না। লাষ্ট ট্রিপে ফিরেই শরীরটা বেশী খারাপ হয়েছে। দুলাভাই পান খাচ্ছিলেন, হঠাৎ আমার দিকে ফিরে বললেন- কাজ না থাকলে বস, তোকে একটা ঘটনা বলি। আমি তো মহা খুশি, ভালোমতো জাঁকিয়ে বসলাম। দুলাভাই আরেকটা পান মুখে নিয়ে শুরু করলেন-



এটা চার পাঁচ মাস আগের কথা। গিয়েছিলাম সিঙ্গাপুর। তো মাল থালাস করে ফিরছি। এক বিকেল বেলা সমুদ্রের মোহনায় চলে এলাম। তুই তো জানিস মোহনায় পানি খুব উত্তাল থাকে। তো মোহনা দিয়ে নদীতে ঢুকছি, এমন সময় কোথা থেকে বড় বড় ঢেউ আসতে লাগলো। আমার এত বড় জাহাজ এপাশ ওপাশ করতে লাগলো। তখন ডেকে বসে বসে ভাত খাচ্ছিল আমার এক নাবিক- শফিক।



একবার জাহাজ এমনভাবে কাত হলো যে বেচারা ছিটকে জাহাজ থেকে পড়ে গেলো। ঠিক পড়ে যাওয়ার আরেক নাবিক দেখে ফেলায় দ্রুত খবর আমার কাছে চলে এলো। তখন জাহাজ থামিয়ে উল্টো দিকে ফিরে যাওয়া খুবই সমস্যার ব্যাপার। আমি করলাম কি, দ্রুত দুটো স্পিড বোট নামিয়ে হুইল সেকেন্ড মেট কে দিয়ে বোটে চড়ে বসলাম। দ্রুত ছুটে গেলাম নির্দেশিত স্থানে। কিন্তু বহু খোঁজাখোজা করেও ওর চিহ্নমাত্র পেলাম না। অথচ ও খুব পাঁকা সাতারু। প্রায় পোনে এক ঘন্টা খুঁজেও যখন কোন খোঁজ পেলাম না তখন বোট ঘুরাতে বললাম। ঠিক তখনই এক ক্রু দেখতে পেলো ওকে। ঘুরে আমিও দেখলাম। প্রায় তিনশ গজ দূরে একবার ডুবছে আবার ভাসছে। দ্রুত ছুটে গেলাম কাছে। কিন্তু ভীষণ তাজ্জব ব্যাপার। আমার প্রায় অর্ধেক জীবন কেটেছে সমুদ্রে, কিন্তু এমন জিনিস আর দেখিনি। কাছে গিয়ে দেখি নেই। ওই জায়গাটা থেকে আবার খোঁজা শুরু হলো। প্রায় আরও দুঘন্টা খুঁজে শেষে না পেয়ে ফিরে গেলাম জাহাজে। কিছুটা ভাটিতে গিয়ে খুঁজে এলাম- কোনও খোঁজ নেই।



জাহাজ বন্দরে থামিয়ে আরো চারটা স্পিড বোট নিয়ে আর বি. এন. এর একটা ছোট জাহাজ নিয়ে আবার শুরু করলাম খোঁজ। মরে গেলেও অন্তত লাশটা তো পাওয়া যাবে ! সারাদিন খুঁজেও কোন হদিস মিললো না। ফিরে এলাম। এতটুকু বলে একগ্লাস পানি খেলেন দুলাভাই।



বাকী কাজটা চাপিয়ে দিলাম বি. এন. এর উপর। আর কোন খোঁজ পাওয়া গেলো না। তার একমাস পরে আরেক ট্রিপে যাচ্ছিলাম ফিলিপাইনে। কার্গো ভর্তি সিমেন্টে। সেই মোহনার কাছে এসে ডেকে দাড়ালাম। এবং আবার দেখলাম শফিক কে। ঠিক একই রকম ডুবছে ভাসছে। আমার চিৎকারে প্রায় সব ক্রু ছুটে এলো। সবাই দেখলো দৃশ্যটা। জাহাজ থেকে আবার বোট নামালাম। এবার আমার সাথে কেউ যাবার সাহস করলো না। তবুও তিনজনকে জোর করে নিয়ে গেলাম। ভালো মতো খেয়াল রাখলাম ওর দিকে। বোট ঠিক চল্লিশ ফুটের মধ্যে যাওয়ার সাথে সাথে আবার অদৃশ্য হয়ে গেলো। ভয়ে সব চুল দাড়ি পাকবার উপক্রম। ফুল স্পিডে বোট নিয়ে শিপে ফিলে এলাম।



ফিলিপাইন থেকে ফেরবার পথে সেই দৃশ্যটা দেখলাম আবার। এবার আর বোট নামালাম না। চটপট পার হয়ে গেলাম জায়গাটা।



পরে যতোবার জাহাজ নিয়ে ওদিক দিয়ে গিয়েছি প্রত্যেকবার দেখেছি ওকে। খালি আমি না, বি. এন. এর এক কমোডোর পর্যন্ত দেখেছে।



দুঃখের সাথে মাথা নাড়িয়ে একটা সিগারেট ধরালেন দুলাভাই। জানি না শফিক কি চায় ! আমি তো ওকে ভালো মতো উদ্ধারের চেষ্টা করেছি। জানিস ছেলেটা ভাত পুরোটা খেয়ে যেতে পারেনি। আজব ব্যপার, ছেলেটা পড়ে গেলো আর প্লেটটা রয়ে গেলো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দুলাভাই উঠে পড়লেন। তখন আমিও বসে বসে ভাবতে লাগলাম- আসলে শফিক কি চায় ?

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে আগস্ট, ২০০৯ বিকাল ৫:৫৭

বড় বিলাই বলেছেন: অদ্ভূত।

২| ২১ শে আগস্ট, ২০০৯ বিকাল ৫:৫৮

জানপরী বলেছেন: সাদিদ ভাই, অদ্ভূত তো !

৩| ২১ শে আগস্ট, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:২৩

পুরাতন বলেছেন: ভয় লাগতাছে

৪| ২১ শে আগস্ট, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:২৬

শুটিং স্টার লষ্ট বলেছেন: এইটাতে ভয় খায়েন না বস। আরেকটা দিমু পরে, সেইটা পড়তে আমারও ভয় লাগে। হিঃ হিঃ ওইটা পইড়া বইলেন!

৫| ২১ শে আগস্ট, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:০৪

আকাশ_পাগলা বলেছেন: এই কাহিনী কতটুকু সত্য কিনা আমি জানি না। তবে, এমন এক বাস্তব কাহিনী রেকর্ড করা হয়েছিল ক্যামেরাতেও।

এর একটা হাইপোথিসিস আছে। প্রকৃতি একটা ম্যাগনেটিক ফিল্ড হিসেবে কাজ করে। ভিডিও ক্যামেরার মত মাঝে মাঝে এটাও ভিডিও টাইপ কিছু একটা রেকর্ড করে ফেলে। পরে শুধু মাত্র কোন বিশেষ এরিয়া থেকে দাঁড়ালে ওটার রিপ্লাই দেখা যায়।

পুরা ব্যাপারটা খেয়াল নাই। আবছা আবছা এটুকুই মনে আছে।

৬| ২১ শে আগস্ট, ২০০৯ রাত ৮:৫৬

তাজকিরা বলেছেন: ঘটনাটা সত্যি হলে, খুবই আতংকের ব্যপার। সেই সাথে খুব মন খারাপও হলো শফিকের জন্য। আমার ছোট ভাই মেরিনার, এসব কথা শুনলে বুকটা আতংকে কেপে উঠে। যদিও জানি, বিপদাপদ জীবনের সর্বত্রই আছে।

সত্য-মিথ্যা যাই হোক, অ-নে-ক ভালো লিখেছেন।

৭| ২২ শে আগস্ট, ২০০৯ বিকাল ৩:২০

সেতূ বলেছেন: পড়েই তো ভয়ে সব চুল দাড়ি পাকবার উপক্রম।
আপনার দুলাভাই এর সাহস আছে ...
খুব মন খারাপও হলো শফিকের জন্য।
+++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.