নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাজী অনন্য শেখর

সপ্নচোরা

বিশ্বকে জানি এবং বিশ্বকে জানাই

সপ্নচোরা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কৃষকের ছেলে কৃষক হবে ডাক্তার হবে কেন???

১৭ ই আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৩:৪৬

বাস শালবনের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে । রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা পার হয়ে হোতপাড়া বাসষ্ট্যান্ড ধরে ধরে । বিকাল হয়ে আসছে। সবুজ সতেজ শাল পাতার ভিতর দিয়ে সুর্যের লাল আভা এসে মাঝে মাঝে সজিবের গায়ে পড়ছে। সজিবের মন বিষন্ন ।মন ঘুরে বেড়াচ্ছে অতীতে, শিশু কালে,স্বপ্ন দেখার বয়সে ---



তখন সজিবের বয়স তিন কি চার বৎসর।একটি বই এবং একটি স্লেট নিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যায়। স্লেটটি বাবা কিনে দিয়েছে। আর বইটি স্কুল থেকে দিয়েছে।ছোট ছোট করে কি লেখা তা সে কিছুই বুঝতোনা, বইটা তার ক্লাসের অন্যান্যদের বই এর মতো না। তার বন্ধুরা বলতো এইটা নাকি তার বইনা এটা উপরের ক্লাসের বই। স্কুলে প্রতি বৎসর একবার বই দিতো। সজিবও প্রবল আগ্রহ নিয়ে বই দেয়ার দিন স্কুলে গিয়েছিল। স্কুলের আপা এক এক জনের নাম ডাকছিল আর হেডস্যার তাদের হাতে বই তুলে দিচ্ছিল। সজিব আশা নিয়ে দাড়িয়ে ছিল তার নাম কখন ডাকবে। কিন্তু তার নাম ওই আপা ডাকলো না।সে কাঁদতে কাঁদতে বাবার কাছে গেল।বাবার কাছে যেয়ে সে কি কান্না সজিবের!! স্যারেরা তার নাম ডাকেনি এই কথাটা সেদিন সে বাবাকে বলতেই পারতেছিলনা কান্নার তোড়ে।বাবা জানত আজ স্কুলে বই দিবে। সজিব বই আনতে স্কুলে গেছে। তাই বাবার বুঝতে কষ্ট হয়না সজিব কি জন্য কাঁদছে। বাবা সাথে সাথে সজিব কে কাঁদের উপর উঠিয়ে স্কুলে চলে আসে। স্কুলের হেড মাস্টার সজিবের হাতে একটা বই তুলে দেয়। বই পেয়ে সজিবের কান্না ভেজা চোখে মুখে হাসি ফুটেছিল। সে তা নিয়েই প্রতিদিন স্কুলে যেত ।

স্কুলের আপা প্রতিদিন ক্লাসে এসে জোরে জোরে বলতো----

স্ব র অঅঅঅ.......

স্বরঅ আআআাআ...........

আপার সাথে সাথে সজিব ও ক্লাসের সবাইকে বলতে হতো। টিনের চালা আর টিনের বেড়া দেয়া স্কুল ঘরটির ভিতর তখন গুমগুম করে উঠতো । সজিবের খুব ভাল লাগত!! পড়া শেষ হলে আপা বোর্ডে বড় বড় করে লিখতেন.........অ, আ, ই,...........



তারাও আপার সাথে সাথে লিখতো। আপা যেভাবে যেভাবে হাত ঘুরাতো সজিবও ঠিক সেভাবে হাত ঘুরায়ে ঘুরায়ে লিখতো কিন্তু আপার মতো সুন্দর কখনই লিখতে পারতো না, তবুও আপাকে তা দেখাতে হতো । আপা খুশি হয়ে গুড বলতো আর সজিবের মাথায় হাত বুলিয়ে দিত। তার পর আপা বলতেন....

’আজ যা যা লেখালাম তা তোমরা আগামিকাল স্লেটে লিখে নিয়ে আসবে ।

ঠিক আছে’??

সবাই সমস্বরে বলতো...............জি আপাআআআ.......।



যাও, আজ তোমাদের ছুটি......।

আপার ছুটি বলার সাথে সাথে সবাই হৈ-হুল্লোড় করে ক্লাস থেকে বের হতো। সজিবও স্কুল থেকে বের হয়েই দৌড়াতে শুরু করতো, বাড়িতে এসেই বই স্লেট ছুড়ে ফেলে মাকে ঝাপটে ধরতো । আর আহলাদি করে বলতো-

-মা ভাত দাও ।ক্ষুদা লাগছে ।

মায়ের পা দুটো জড়িয়ে মায়ের শাড়ির আঁচলে মুখ লুকিয়ে এভাবেই ধরে থাকতো যতক্ষন না মা তাকে কুলে নিতেন।

মা বাধ্য হতেন সব কাজ ফেলে ছেলেকে কোলে নিতে, ছেলেকে খাবার দিয়ে ছেলের পাশে বসতেন। সজিব খেতো আর স্কুলে যা যা হলো সব এক এক করে বলতো। মা-ছেলের গল্প চলতো যতক্ষন না ছেলের খাওয়া শেষ হতো।



অতীত স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে সজিবের চোখ দিয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। আসে পাশে কেউ দেখে ফেলে সেই ভয়ে তড়ি ঘড়ি করে চোখ মুছলো। পড়ন্ত বিকালের সূর্যটা তার কাছে কিছুটা ঝাপসা ঠেকছে ।

সবুজ পাতা গুলো কিছুটা ঘোলাটে লাগছে।ছোটবেলায় একটি ঘটনা ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নটা তার মাথায় ঢুকিয়েছিল ।সেটি আজ মনে পড়ে গেল।



প্রতিদিনকার মতো সেদিনও সজিব স্কুল থেকে ফিরে মাকে জড়িয়ে ধরে । কিন্তু মাকে কেমন যেন মনে হয়।মা তাকে কোলে নেয়না। শুধু তার মাথায় হাত রাখলো ভিষন্ন ভাবে। মায়ের কাপড় ধরে টানা টানি করে, মায়ের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই । সজিব আচল ছেড়ে মায়ের মুখের দিকে তাকায়। মায়ের মুখ মলিন,ভারাক্রান্ত,চিন্তা গ্রস্ত । সে বুঝতে পারে না মায়ের কি হয়েছে । মায়ের রান্নাঘরের পিছন দিকে তাকানো কে অনুসরন করে সেও তাকায় ।দেখে বাবা বদনা হাতে হেলতে হেলতে এদিকে আসছে ।মা দৌড়ে গিয়ে বাবাকে ধরে । সজিব মাকে ছেড়ে দুরে সরে দাড়ায় । মা বাবাকে ধরে ধরে ঘরে নিয়ে চৌকিতে শুয়ে দেয় । সজিব মা-বাবার পিছন পিছন ঘরে ঢুকে। সে বুঝতে পারে বাবার কিছু একটা হয়েছে । বাবা তো এই সময় ঘরে থাকেনা। বাবা থাকে মাঠে। সারাদিন কাজ করে সন্ধায় ঘরে ফিরে। এসে গোসল করে বাজারে যায় । বাজার থেকে সজিব এর জন্য কিছু না কিছু নিয়ে আসে । বাবা বাজারে গেলে সজিব পথ চেয়ে থাকে বাবা কখন আসবে । তার জন্য আজ কি আনছে তা দেখার অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে থাকে । বার বার দরজা দিয়ে সামনের দিকে তাকায়, পায়ের শব্দ পেলেই কান খাড়া করে । মা তখন ধমক দেয়।



’-সজিব!! পড়া রেখে বার বার ও দিকে তাকায় না বাবা ।পড় পড়!! তোমার আপা যা লিখতে দিয়েছে তা লিখতে না পারলে আপা বকা দেবে।’



কিন্তু আজ বাবা ঘরে। বাবার মনে হয় অসুখ করেছে। বড় ধরনের অসুখ। বাবাও কেমন মনমরা হয়ে আছে।

বাবার শরীর আস্তে আস্তে আরও খারাপ হয়।বাবা বিছানা থেকে উঠতে পারেনা । মা একটু পর পর বাবার লুঙ্গি বদলায়, বিছানার কাপড় বদলায় । সজিব মায়ের চোখে জল দেখে । সজিবের চোখেও জল আসে। পাশের বাড়ীর রহিম চাচার ছেলে আলম ভাইয়া ঢাকায় থেকে পড়াশোনা করে।সে গতকাল এসেছে। সজিবের বাবার অবস্থা খুব খারাপ দেখে তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।সজিবও সেদিন সাথে গিয়েছিল। বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। বাবার শরীরে টানা অনেকগুলো স্যালাইন পুশ করা হলো।রাতদিন চব্বিশ ঘন্টা স্যালাইন চলে। মা পাশে বসে থাকে,সজিব মায়ের কুলে শুয়ে ঘুমায়। বাবা হাসপাতালে সাতদিন ছিল।প্রতিদিন একজন বয়স্ক লোক আসতো বাবাকে দেখতে। সাথে থাকতো আলম ভাইয়ার মতো অনেক গুলো ছেলে মেয়ে। সবার পড়নেই সাদা কাপড়। বয়স্ক লোকটা বাবাকে দেখতো আর কি কি যেন বলতো। অন্যরা সবাই মনযোগ দিয়ে তা শুনতো ও লিখতো। সজিব অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকতো আর ভাবতো 'আমি যদি এরকম হতে পারতাম!!'



সজিবের স্পষ্ট মনে আছে,বাবাকে যখন ওরা নেড়েচেড়ে দেখত, বিভিন্ন যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করত তখন সুযেগ পেলেই সে যন্ত্র গুলো হাত দিয়ে ধরত। একদিন এভাবে হাত দিতে গেলে বয়স্ক লোকটা চোখ বড় বড় করে তাকায়। এবং সাথে থাকা এক মহিলা ভীষন ধমক দিয়েছিল। ধমক খেয়ে সজিব কেঁদে ফেলে। সজিবের কান্না দেখে পাশে থাকা এক আপা যে নাকি বড় স্যারের সাথে এসেছিল সে সজিবকে জড়িয়ে ধরে। এবং জিঙ্গেস করে

-তুমি ওটা নিবে ??

সজিব মাথা ঝাকিয়ে বলেছিল হাঁ সে নিবে।

তখন ওই মেয়েটা বলেছিল,

-এটা পেতে হলে তোমাকে অনেক বড় হতে হবে। অনেক পড়াশোনা করতে হবে। আমাদের মতো হতে হবে।পারবে অনেক পড়তে? আমাদের মতো হতে??

সজীব মাথা ঝাকিয়ে বলে, পারবো ।

মেয়েটা তখন স্কুলের আপার মতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে ’গুড’ । আর বলে, এখন থেকে প্রতিদিন পড়াশোনা করবে তাহলে আমাদের মতো হতে পারবে।

সজীব আবার সম্মতিসূচক মাথা ঝাকায় ।



সে অনেক দিন আগের কথা এগুলো। অথচ একটা কথাও সে ভুলেনি। হয়তোবা এ ভাবেই মানুষ তার জীবনের লক্ষ্য ঠিক করে।ছোট ছোট কোন ঘটনা শিশু মনে দাগ কাটে আর সে দাগ কাটা থেকে লক্ষ্যটা স্থির হয়ে যায়। সজিবের মাথায় সেই যে ডাক্তার হওয়ার ,এবং ওই আপার কথাগুলো ঢুকেছিল তা তার অবচেতন মন গ্রহণ করে নেয়। তার মাথায় ঢুকিয়ে দেয় তাকে অনেক পড়তে হবে, পড়লে ওই যন্ত্র গুলো ধরা যাবে, ডাক্তার হওয়া যাবে, আব্বুকে ভাল করা যাবে, মানুষকে ভাল করা যাবে ।



ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে সজিব আমানসিক পরিশ্রম করেছে। তার গ্রামের স্কুলে ঠিক মতো ক্লাস হতোনা।প্রাইভেট পড়তে হতো। কিন্তু সজিবের বাবার প্রাইভেট পড়ানোর সামর্থ ছিলনা। যারা প্রাইভেট পড়তো সজিব তাদের কাছ থেকে নোট এনে নিজে নিজে পড়তো। কিন্তু তারা নোট দিতে চাইতো না । তাই সজিব বাজার থেকে নোট বই কিনে নিজে নিজে পড়তো। এভাবে পড়ে হয়তো জানা যায় কিন্তু খুব ভাল রেজাল্ট করা যায়না। গুছিযে লেখার জন্য কারও না কারও গাইড লাগে । কিন্তু সজিব সেটা কোনদিনও পাইনি । ইন্টারমিডিয়েটে পড়ার সময় সে নিজে এক'শ টাকা মাইনেতে কয়েকটা টিউশনি করাতো তা দিয়ে কলেজ এর স্যারদের কাছে পড়তো । এই পড়াটা যত না শেখার জন্য তার চেয়ে বেশী প্রাকটিক্যাল মার্কস এর জন্য । স্যারদের কাছে প্রাইভেট না পড়লে মার্কস দেয়না তাই বাধ্য হয়ে পড়া ।

সবচেয়ে বিপদ হয় ইন্টারমিডিয়েট রেজাল্ট এর পর । সজিবের এস.এস.সি তে জিপিএ ফাইভ আছে, গোল্ডেন নেই ইংলিশে সে ভাল করতে পারেনি।সে একা একা অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু কিছুতেই খুব একটা ভাল সে করে উঠতে পারেনি এই সাবজেক্টটিতে । এইচ.এস.সি পরীক্ষাও তার ভাল হয়েছে হয়তো জিপিএ-ফাইভ পাবে। কিন্তু সে এখন জানে যারা মেডিকেলে পড়াশুনা করে তারা অনেক ভাল স্টুডেন্ট । সবাই গোল্ডেন জিপিএ পাওয়া । তাদের সাথে পাল্লা দিতে হলে তাকে অনেক পড়তে হবে, অনেক কিছু জানতে হবে। যদিও সে এও জানে যে তার কনসেপ্ট অনেক ভাল,পুরো বই এর সবকটা লাইন সে ধরে ধরে পড়তো। তার বিশ্বাস সে এডমিশন টেষ্টে ভাল করবে কিন্তু সে কোন রিস্ক নিতে চাইনা । কোচিংগুলোতে নাকি অনেক কিছু শেখায় অনেক শর্টটেকনিক দেখিয়ে দেয় । তার এই গুলো জানা দরকার। সে ভয়ে ভয়ে বাবাকে বলে তার ইচ্ছার কথা । বাবা জানে সে ছেলেকে তেমন কিছুই দিতে পারেনি।অন্যান্য ছেলেরা যতটা আনন্দ ও আদরের মধ্য দিয়ে বড় হয় সজিব তার কিছুই পায়নি ।সজিব বাবার কষ্ট বুঝতো তাই তেমন কিছু কখনো দাবিও করতনা। কিন্তু আজ সজিব বড় হতে চায়, ডাক্তার হতে চায়, ডাক্তার হওয়ার জন্য ঢাকায় যেতে চায় । আর এর জন্য টাকা যদি সে জোগার করতে না পারে তার চেয়ে হতভাগা পিতা আর কেউ হবেনা, সে নিজেকে কোনদিন ক্ষমা করতে পারবেনা।তাই বাবা টাকা জোগার করতে অনেক জমি বিক্রি করে। জমি বিক্রির টাকা সজিবকে দেয়। সজিব সে টাকায় ফার্মগেট শাখার মেডিকেল কোচিং এ ভর্তি হয়। ক্লাসে তার পারফরমেন্স অনেক ভাল। কোচিং এর সব ভাইয়ারা তাকে অনেক আদর করে । সবাই বলে সে এডমিশন টেষ্ট এ ফাস্ট হবে ।তা শুনে সজীব এর মনটা আনন্দে ভরে উঠে, সে তো তাই চায়। সে চায় বাংলাদেশের সবচেয়ে ভাল মেডিকেলে ভর্তি হতে।যদিও জানে তার এস.এস.সি ইন্টার এর জিপিএ তাকে অনেক পিছনে ফেলে দেবে কিন্তু এতে তো তার কোন হাত নেই । তার যেখানে হাত আছে সেখানে সে তার যোগ্যতা প্রমাণ করতে চায়।



সজিব স্বপ্ন পুরণের দারপ্রান্তে চলে এসেছিল।আর কিছুদিন পর তার সেই কাঙ্খিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।তাই তাকে প্রচুর পড়তে হচ্ছে ।আজ সকালে তার বায়োলজি পরীক্ষা ছিল তাই গত রাতে অনেক রাত পর্যন্ত পড়েছে। প্রতিদিন এর মতো এক্সাম গুলোতে ফাস্ট হওয়ার টার্গেট নিয়ে ক্লাসে আসে। কিন্তু সকালে ভাইয়ারা পরীক্ষা নেয়নি সবাইকে বাড়ি চলে যেতে বলে। গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নাকি বলেছে জিপিএ এর ভিত্তিতে মেডিকেল এ ভর্তি করানো হবে।কোন এডমিশান টেষ্ট হবেনা!! কি সাংঘাতিক কথা!! সজিব প্রথমে কথাটার মানে বুঝতে পারেনি ।এও কি সম্ভব!!তার ডাক্তার হওয়ার অধিকার নেই ?? তার তিল তিল করে গড়ে তোলা স্বপ্ন আজ ধুলিসাৎ!! ফুপিয়ে কান্না ছাড়া সজিবের মুখ দিয়ে কোন কথা আসেনি। কোচিং এর ভাইয়ারা তাকে স্বান্তনা দিতে আসে, কিন্তু স্বান্তনা দিতে এসে তারাও কথা হারিয়ে ফেলে। কি বলবে তাকে ! কি স্বান্তনা দেবে?? যে ছেলেটা এত ভাল ছাত্র,যার স্বপ্ন পূরণ নিশ্চিত ছিল স্বাস্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সিদ্বান্ত যার জীবন ধংস করে দিল তাকে তারা কি স্বান্তনা দিবে?? মাথায় হাত বুলিয়ে চুপচাপ পাশে দাড়িয়ে থাকা ছাড়া তারা কোন কথা বলেনি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাকি বলেছেন শহর গ্রামের সবাই সমান এখন আর কোন ভেদাভেদ নাই । এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি তে যে ভাল রেজাল্ট করবে সেই মেডিকেল এ ভর্তি হবে!!!

কি হাস্যকর কথা!!! টাকার পাহাড়ে বসে থেকে দেশের সবচেয়ে ভাল ভাল শিক্ষকদের গাইড নিয়ে যারা পড়াশোনা করে তাদের আর গ্রামের ছেলেদের পড়াশোনা নাকি এক?? তাদের নাকি কোন ভেদাভেদ নাই!!



এটা নাকি দেশকে আন্তজাতিক মানের বানানোর সিদ্যান্ত!! উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলাতে নাকি সিদ্যান্ত নেয়া হয়েছে!! সজিব ভেবে পায়না যে দেশের গ্রাম আর শহরের জিবনমানের মধ্যে আকাশ পাতাল ব্যবধান যা কোন উন্নত দেশে নেই তার সাথে এ দেশের তুলনা হয় কি করে!!! এটা কি গ্রামের ছেলে-মেয়েদের মেধাকে ধংস করে দেয়া নয়!!



কিছুই করার নেই সজিবের। তার আকুতি , তার স্বপ্ন কখনই যারা সিদ্ধান্ত নেয় তাদেরকে স্পর্শ করবেনা।যারা সিদ্যান্ত নেয় তারা অনেক উপরের মানুষ, তাদের অবস্থান অনেক অনেক উপরে। তাদের কাছে তার স্বপ্নের কোন মূল্য নেই।



আর অল্পকিছুক্ষনের মধ্যেই সজিব বাসায় পৌছে যাবে। মা দৌড়ে এসে তার হাত ধরবেন। সেই শিশুকালের মতো জড়িয়ে বুকে নিবেন। ছোট ভাইটিও কাছে আসবে ভাইয়া এসেছে , ভাইয়া এসেছে বলে দৌড়ে আসবে। কিন্তু সজিব হয়তো বলতে পারবে না আজকের আসা অন্যদিনের মতো আসা নয় এ আসা তার স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিয়ে আসা।



বাস মাসকান্দা শ্টেশন পার হয়েছে। চালকের সামনের গ্লাসের ভিতর দিয়ে সজিবের চোখে পড়লো রোদ-বৃষ্টি-বাতাসে ভিজে উজ্জল্য হারানো 'ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল" লিখা সাইনবোর্ডটি।এবার আর কান্না থামাতে পারলো না সজিব ।লুকানোর চেষ্টাও সে করলোনা। হাউমাউ করে কেঁদে ফেললো। এই সেই হাসপাতাল যে হাসপাতালে তার বাবাকে ভর্তী করা হয়েছিল।এখানে বসেই সে স্বপ্ন দেখেছিল একদিন সে ডাক্তার হবে । আবার হয়তো সে এই হাসপাতালে আসবে বাবা-মা ভাই অথবা সে নিজেই অসুস্থ হয়ে । কিন্তু তার স্বপ্নটা আর আসবেনা !! চিরদিনের জন্য সেটার মৃত্যু হল প্রশাসনের একটা গাজাখুরি সিদ্যান্তে .........!!!.........!!!

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৩:৫৮

জুবায়েদ হোসেন বলেছেন: প্লাস

১৭ ই আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৪:০০

সপ্নচোরা বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ১৭ ই আগস্ট, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩৩

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: চমৎকার বর্ণনা । ছুঁয়ে যায় !

১৮ ই আগস্ট, ২০১২ সকাল ৮:২৯

সপ্নচোরা বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ, ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য।

৩| ১৮ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১:৩৬

অচেনামন বলেছেন: কঠিন বাস্তবতা।এভাবে মানুষের স্বপ্ন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা ভালো না।এটা আমাদের পলিটিশিয়ানরা যে কবে বুঝবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.