নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন অতিসাধারণ

শরমি

শরমি › বিস্তারিত পোস্টঃ

অর্কেস্ট্রা আর দুটো খালি চেয়ার-১

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৯

বর্ষা অসম্ভব অলস, আর অলস হওয়ার কারণে খুজে বের করলো কোন্ কাজটায় শারীরিক পরিশ্রম কম, ঘন্টার পর ঘন্টা চেয়ারে বসে সামনের মনিটরের স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে থাকতে বিন্দুমাত্র ক্লান্তি আসেনা। বরং জোঁকের মত চেয়ারের সাথে সেঁটিয়ে বসে থাকতে ওর জুড়ি নেই। এ পর্যন্ত ৯টা সফট্ওয়্যারে কাজ করার মোটামুটি দক্ষতা অর্জন করা হয়ে গেছে ইউটিউবের কল্যাণে। নতুন জিনিস শিখতে শিখতে ভুলে যায় বর্ষা, সামনে মা এসে কখনও হয়তো ভাত খাওয়ার কথা বলছে অথবা ঘরটাকে গোয়াল ঘর বানানোর জন্য বকুনি দিচ্ছে, তখন মায়ের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে।

বর্ষা কাজটার প্রতি একধরণের ভালোবাসাও অনুভব করে তাই রিলেটেড জায়গায় কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। চাকরীসূত্রে আরো নতুন অনেক কিছু শেখা, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা একটা নেশায় পরিণত হয়। বর্ষার আরেকটা নেশা সুর, গানের চেয়ে ইন্সট্রুমেন্টাল কিছু কানে গুঁজে দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কাজ করা যায়। গানটা বরং মাঝেমাঝে বিরক্তই করে। গানের কথাগুলোতে মনোযোগ চলে যায়।
সাতটা সুর কিভাকে একে অপরের সাথে জোড়া লেগে একটা পূর্ণাঙ্গ রূপ নেয় এ বিষয়ে আগে থেকেই বর্ষার একটা কৌতুহল ছিল, আর সুরের জগতের এক মানুষের সাথে কাকতালীয় ভাবে যোগাযোগ তাকে কিছুটা সাহায্য করে আরো এক ধাপ আগানোর।

এক মধ্যরাতে মানুষটার ফোন পেয়ে বর্ষার ভেতরে একটা অদ্ভুত অনুভূতি তৈরি হলো, ফোন রিসিভ করতেই ভরাট কিন্তু অস্থির গলায় ওপাশেরজন বলে উঠলো- "তাড়াতাড়ি বলো ক্লারিনেট না পিয়ানো?" আশ্চর্য প্রশ্ন, বর্ষা ভেবে পাচ্ছেনা কি বলবে, প্রথম ফোনেই এরকম প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত থাকার কথাও নয়। ওপাশেরজন আরো অস্থিরভাবে আরেকবার তাগাদা দেয়। বর্ষা এরপর জবাব দেয় "পিয়ানো"।

পিয়ানোর সুর যেকোনো সময় অসাধারণ আবহাওয়া তৈরি করতে পারে। একমাত্র পিয়ানোতেই আছে সর্বোচ্চ অকটেভ সাথে মাইনর থার্ড। দুই হাতের পরস্পর বিরোধী আচরণের মধ্য দিয়ে অসাধারণ সব সুরের জন্ম হয়। বর্ষার একধরণের ভালো লাগতে থাকে, যখন ওপাশেরজন বলে ওঠে- "পারফেক্ট"।

বর্ষারও মনে হয় একটা ইন্সট্রুমেন্ট বাজানো শেখা গেলে মন্দ হয়না। কথাটা ওপাশেরজনকে বলতে যাওয়ার আগেই লাইনটা কেটে গেল। আরও একটা কথা বলা হলো না। বর্ষার অস্বস্তি লাগতে থাকে, অনেকদিন ধরেই মানুষটাকে একটা কথা বলবে বলে ঠিক করে রেখেছে বলা হচ্ছে না।

এবং ঠিক বারো মিনিট পরে আবার ফোন, রিসিভ করার পর ওপাশের মানুষটা বলে উঠলো "আচ্ছা, বর্ষা! তুমি কি ভায়োলিনটা শিখে ফেলবে নাকি? একসাথে বাজানো যায়।" আসলেই পারফেক্ট, এভাবে যে না বলতেই মনের কথাটা বুঝে ফেলে তাকে পারফেক্ট ছাড়া আর কি বলা যায়?
-"আমার দ্বারা মিউজিক সম্ভব না, আর এখন তো আরো না, বয়সও একটা ফ্যাক্ট" বর্ষা বলে।
আর তারপরেই মানুষটা একটা দারুন কথা বলে ওঠে- "বর্ষা, আর কেউ পাশে না থাকলেও ভায়োলিনটা তোমাকে সঙ্গ দিবে, তোমাকে অনেক অনেক সুন্দর মুহূর্ত দিবে।" একথা শোনার পর বর্ষার মনে হলো শুধু ভায়োলিন না, ওপাশের মানুষটাকেও তার দরকার। এরকম চিন্তাটা পাকাপোক্ত হতেই স্বপ্নটাও তৈরি হয়ে গেল। বিশাল অডিটোরিয়ামের ভেতরে বড় একটা অর্কেস্ট্রার দল, তাতে দুটো চেয়ার খালি, পিয়ানোর সাথের চেয়ার আর পাশের ভায়োলিন বাদকের চেয়ার। সামনে কন্ডাক্টর কিছুক্ষণের মধ্যেই ইশারা দিবে মোজার্টের সিম্ফোনি ২৫ বাজানোর জন্য। এই সুর একবার বাজানো শুরু হওয়া মাত্রই বর্ষা আর থামবেনা, একের পর এক সুর বাজাতেই থাকবে। মাঝেমধ্যে টিউন পড়ে গেলে পাশের জনের পিয়ানোর কর্ডে নিজেরটা ঠিক করে নেবে, এলোমেলো চিন্তায় বুঝতে পারলো ওপাশেরজন আগ্রহ নিয়ে আছে হ্যা অথবা না শোনার জন্য।
বর্ষা বললো- "হুমম, শিখবো"।

গল্প বিরাট আকারে রূপ নিচ্ছে তাই আপাতত এইখানে একটু জিরাই....

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.