নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খাঁদের কিনার ধরে হাঁটতে ভাল লাগে।

শশী হিমু

অপর পৃষ্ঠায় দ্রষ্টব্য..

শশী হিমু › বিস্তারিত পোস্টঃ

।--''একটি রাত্রিকথন ও কয়েকজন সুখসন্ধানী''--।

১০ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:৪৩

১.

এই মাঝরাতে স্যান্ডেলের ফিতে ছিঁড়ে গেলো মাহেরের, বা পায়ের স্যান্ডেল টা পায়ের তালু থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে বারবার। তার উপরে রাস্তা বৃষ্টির কল্যাণে কাদ কাদা হয়ে আছে। তাই খোঁড়া না হয়েও খোঁড়া পথিকের মতই হাটছে মাহের। লাইটারটা খটাশ করে চেপে হস্ত গোলকের মাঝে অগ্নি কুন্ডুলি জিইয়ে রেখে মুখে ধরা সিগারটা এগিতে দেয় আগুনের দিকে। মনে রাজ্যের চিন্তা, হঠাৎ বৃষ্টি নেমে সিগারটা না আবার ভিজে যায়। শেষ রাতে এই একটা সিগারই আছে। বৃষ্টি নামার আগেই সিগারটা ধরিয়ে উদাস নয়নে তাকায় রাতের রাজনীল আকাশে। ফুসফুসে চাপ দিয়ে ধূসর ধোঁয়াশা ফুঁৎকারে ছড়িয়ে দেয় আকাশে, যেন মনের সকল ইচ্ছাকে বের করে দিলো এক নিমিষেই!



সারাদিন অফিস করে বাসায় ফেরেনি। বাসায় ফেরার তাড়াও নেই। হাঁটতে হাঁটতে নিজেকে কিছু প্রশ্ন করেছিলো সে-



প্রশ্ন ১- বাসায় কেন ফিরে যাচ্ছেনা?

প্রশ্ন ২- না ফিরে গেলে সম্ভাব্য কী কী হতে পারে?

প্রশ্ন ৩- মানুষ বাসায় কেন ফিরে যায়?



প্রথম প্রশ্নের উত্তর খুজতে গিয়ে প্রথমেই যেটা মনে করতে পারে সেটা হল, বাসায় এমন কেউ নেই যে তার জন্য অপেক্ষা করে থাকবে। অন্য ভাবে বলতে গেলে, পিছুটান কাজ করেছা না কারো জন্য। কেউ তো ভাত বেড়ে অপেক্ষায় নেই তার জন্য। ফিরে গেলে কেউ দরজা খুলে চোখের পানি আড়াল করে বলবেনা না, ‘’এসেছিস বাবা?’’



হুম, মা অথবা বউ কোনটাই নেই মাহেরের। মা মারা গিয়েছে কৈশোর বয়েসেই। মায়ের যে স্মৃতিগুলো মনে আছে মা বলতে সেগুলোই সম্বল। বাবা আছেন, তবে সে দেশে নেই, ছেলেকে অদ্ভুতভাবে বড় করেছে সে। জিবনের যুদ্ধে লড়াই করতে শিখিয়ে দিয়ে নিজের পায়ে দাড় করিয়ে চলে গেছেন বাইরে।



মাহেরের বিয়ে করা হয়নি। কোন নরীর সাথে মানসিক ও দৈহিক শান্তি চুক্তি করার মত কোন মেয়েকে বলা হয়নি। নাগরিক জাতাকলে ঘানি ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে নিজেই জানেনা কবে যেন রোবট হয়ে গেছে সে।



প্রতিদিন নিজ বাসায় ফিরে যায় কিন্তু আজ যাচ্ছেনা তার পেছনে আরেকটা কারন, ক্ষোভ। আসলেই এখনকার কর্পোরেট অফিসগুলো এক একটা রোবটের ভাগাড়। উপর থেকে একজন রোবটের নব ঘুরিয়ে রোবটকে যেভাবে ঘুরতে বলবে সেভাবে রোবট ঘুরবে, কাজ করবে।

আরেকটা কারণে বাসায় ফেরা জরুরী হয়ে পড়ে। এবং এটাই আসল কারন- ক্ষুধা। ক্ষুধার কারনেই পৃথিবী ঘুরছে। ক্ষুধার জন্যই পিছুটান।



ক্ষুধার কারণে মাহের বাসায় ফিরে যেতে পারে। কিন্তু যাচ্ছেনা। বাইরেও কিছু খেয়ে নিতে পারে কিন্তু তাও খাচ্ছেনা। একাকী জীবনের এই এক সুবিধা ক্ষুধার পিছুটান অন্যান্যদের ধেকেও কিছুটা কম কাজ করে।



মাহেরের টাকা পয়সার অভাব নেই, রোবটের কাজ করে মোটা অংকের বেতন সে পায় চিকন ক্রেডিট কার্ডে। শহরের জায়গায় জায়গায় ব্যাঙের ছাতার মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এ.টি.এম বুথে কার্ড পাঞ্চ করলেই টাকা হাতে চলে আসে।



মাঝে মাঝে মাহেরের মনেহয় এইসব টাকা তোলার এ.টি.এম বুথের মতো সুখ তোলার এ.টি.এম বুথ থাকলে ভালো হতো। কার্ড পাঞ্চ করলে বুথ থেকে সুখ বের হয়ে আসবে। কিন্তু অফিসের ক্যাশিয়ার ক্রেডিট কার্ডে টাকা, দেয় সুখ দেয়না।



তবে এই কথা অনস্বীকার্য যে, সুখের প্রাথমিক ব্যাবস্থাপনার জন্য টাকার প্রয়োজন। কিন্তু টাকা খরচ করে ব্যাবস্থাপনা তৈরি করে মনের সুখটা হয়ত কখনো কখনো পাওয়া যায়না। যদি না সঠিক ব্যাবস্থাপক থাকে।



এই একঘেয়ে জীবনে একজন সুখ ব্যাবস্থাপকের খুব প্রয়োজন মনে করে মাহের। অর্থাৎ কেউ একজন যার জন্য বাড়ি ফেরার পিছুটানটা আরো প্রবল হবে। হবে যুক্তিযুক্ত।





এসব ভাবতে ভাবতে ছেঁড়া স্যান্ডেলের প্রতি আর আকর্ষণ অনুভব করতে না পেরে সেটাকে পা ছুড়ে ফেলেই দিলো পাশের ড্রেনে। বৃষ্টি কমে গেছে। রাতে বৃষ্টি হলে আকাশটা কেমন যেন হলদেটে হয়ে যায়। হঠাৎ খেয়াল হলো হাতে ধরা সিগারটাও শেষ। বিরস বদনে সে পথের মাঝে দাঁড়িয়ে যায়। অনেক হাঁটাহাঁটি হয়েছে, তাও আবার ছেঁড়া স্যান্ডেলে। ফলে ক্লান্তি চলে চলে এসেছে। দাঁড়িয়ে থাকতেও কষ্ট হচ্ছে মাহেরের। তাই কাদা পানির কথা সাত পাঁচ না ভেবেই রাস্তায় পা দিয়ে ফুটপাথের উপরে বসে পড়ে মাহের।





২.

-‘’স্যার, দশটা ট্যাকা দিবেন?’’

মাহেরের কানে কথাটা পৌঁছুলেও প্রথম বার তাতে কর্নপাত করেনি মাহের। পরে আবারো একই কথা কানে যায় মাহেরের। এবার আরো জোরে এবং স্পষ্ট হয়ে কথাটা কানে যায় মাহেরের-

-‘’স্যার, দশটা ট্যাকা দিবেন?’’



মাহের তার বাম দিকে তাকিয়ে দেখে, একটা দশ এগারো বছরের ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে একটা ছেঁড়া প্যাকেট। শার্ট এর বোতাম নেই একটাও। আর একটা হাফ প্যান্ট পরা। মাহের জিজ্ঞেস করলো, ‘’দোষ টাকা দিয়ে কি হবে?’’



-‘’স্যার, আমার বইনে না খাইয়া আছে। ওর লিগা একটা রুটি আর কলা কিনমু’’

-‘’তোমার খাওয়া হয়েছে?’’

-‘’হ স্যার, আমি খাইছি’’



এই বলে হাতের ছেঁড়া প্যাকেটটা পেছনে লুকায় ছেলেটা। মাহের লক্ষ্য করে ব্যাপারটা। এটা দেখে মাহের বলে, ‘’প্যাকেটটা লুকাচ্ছো কেনো? কি খেয়েছো?’’

-‘’একটা রুটি খাইছি, চুরি কইরা। দোকানদার ধরতে পারেনাই। ধরবো ক্যামনে, ব্যাডা তো বুঝেই নাই কখন রুটি সরাইছি’’

-‘’বাসায় কেউ নাই তোমার? চুরি করে খাচ্ছো কেন? আর তোমার বোন কই?’’

-‘’বইনে বাইত্তেই আছে, বাইত্তে মায় আর বাপেও আছে। বাপে মার লগে কাইজ্জা করে।‘’

-‘’কি নিয়ে ঝগড়া? তোমার নাম কি?’’

-‘’কি লইয়া আর করবো, ট্যাকা পয়সা লইয়া করে। মায়ে কয় বাপে নাকি ট্যাকা কামাই কইরা সংসারে কামে লাগায় না, নিশা পানি করে। এই লইয়া হারাডা দিন কাইজ্জা করে। আমার নাম হইলো, মনির। পুরা নাম মনির মিয়া।

-‘’আচ্ছা, এতো রাতে বাইরে এর হইছো হারায় গেলে? এই নাও টাকা, রুটি কিনে বাসায় চলে যাও’’



মাহের পকেট থেকে একটা বিশ টাকার চকচকে নোট বের করে মনিরের হাতে দেয়। মনির টাকাটার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ ভাবে।

-‘’স্যার, এই ট্যাকা আমি নিমু না।‘’

-‘’কেন এই টাকায় কি সমস্যা?’’

-‘’এই ট্যাকা নতুন, নতুন ট্যাকা ভাঙতে মন চায়না, আমারে একটা পুরান ট্যাকা দেন’’



মাহের আবার পকেট থেকে আরো দুটি দশ টাকার নোট বের করে দেয় মনিরের হাতে। সাথে নতুন নোটটিও মনিরকে রেখে দিতে বলে।



-‘’স্যার, বাড়িত যাইতে মন চায়না। বাড়িতে শান্তি নাই। বাইরে থাকলে ঘুইরা ফিয়া সময় চইল্যা যায়। বাইত্তে গেলেই আবার হেই ঝগড়া। জানালা দিয়া বইনেরে রুটি দিয়া আমু। আপনে বাড়িত জাইবেন না? এইহানে থাকবেন? তাইলে আমি আবার এইহানে আমু‘’



কিছু বলতে পারেনা মাহের। সে জানেনা সে আজ রাতে কোথায় থাকবে। সেও বাসায় যাবেনা ঠিক করেছে। তাই সুধু ‘’যাও’’ বলে মনিরকে চলে যেতে বলে।



মনির চলে যেতে থাকে। মাহের পেছন দিক থেকে মনিরের চলে যাওয়া দেখতে থাকে। মনিরের পেছনে লুকানো প্যাকেটটা এবার মাহের দেখতে পাচ্ছে। এক হাতে টাকা আরেক হাতে প্যাকেটটা পেছনে ধরে চলে যাচ্ছে সে।



মাহের ভাবছে মনির কি আবার ফিরে আসবে? তবে দুজনের মাঝে একটা মিল রয়েছে। দুজনের কেউ বাড়ির প্রতি টান অনুভব করে না। তবে দুজনের কারন ভিন্ন। মাহেরের পরিবার নেই, কিন্তু টাকা আছে বাড়ি আছে। সুখ নেই। আবার মনিরের বাড়ি আছে, বাবা মা বোন আছে তবে বাড়িতে সুখ নেই, কারন টাকা থেকেও নেই। অথবা আরেকটি কারন হতে পারে ভালবাসা নেই। বাবার ভালয়াসা পায়না হয়ত মনির। মায়ের আদর যতটা পায় তার চাইতেও বেশি কষ্ট পায় ঝগড়া ঝাটির ঝামেলার জন্য।





ভাবতে ভাবতে আরেকটি চরিত্রকে মাহের মনে করতে থাকে। রাতের বেলা চোর বা ডকাতও বাড়ির বাইরে থাকে। লক্ষ্য সেই এক- অর্থ, খাদ্য বা রুটি রুজির ব্যাবস্থা। চোরের ও হয়ত বাসা আছে। পরিবার আছে। কিন্তু পরিবার নিয়ে সুখে থাকার জন্য সে চুরি করে।



ফুটপাথের উপরে বসে মনিরের জন্য অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয় মাহের। মনের মনের অজান্তে পকেটে হাত দেয় সিগার বের করার জন্য। পকেটে হাত দিতেই মনে পড়ে শেষ সিগারটা শেষ হয়ে গেছে বহু আগেই। আশা পাশে তাকিয়ে ছোট টং দোকান খুজতে থাকে মাহের। এই শহরে কিছু দোকান আছে যা কেবল রাতের বেলাতেই খোলা হয়। এমন একটা দোকান আশে পাশে পেয়ে গেলে একটা সিগার ধরানো যাবে।



দোকানের খোঁজে সামনের দিকে হাঁটতে শুরু করে সামনের দিকে। কিছুদূর হেঁটে যেতেই একটা টং দোকানের মত দোকান পেয়ে গেলো। এক প্যাকেট সিগার কিনে আবার পেছনের দিকে হাঁটে মাহের। পায়ে স্যান্ডেলের অভাব বোধ করছে। খালিপায়ে রাস্তায় হাঁটার পুর্ব কোন অভিজ্ঞতা নেই তার। তাই কষ্টই হচ্ছে। হাঁটাহাঁটি করা যাবেনা বেশি তাই আবার আগের যায়গায় ফিরে আসলো মাহের। আগের মতই রাস্তায় পা দিয়ে ফুটপাথে বসে গেলো সে। মনে অনেক চিন্তা খেলা করছে। জীবনের এক চরম বাস্তবতার সামনাসামনি সে। পিছুটান, ক্ষুধা, সুখ এসবের মাঝে সমীকরণ স্থাপনের চেষ্টা চলছে মনের ভেতর। সব কিছুই ঠিক আছে কিন্তু মনে হচ্ছে কোথাও একটা গণ্ডগোল। সমীকরণের চলক সমূহ হয়ত ঠিক আছে, কিন্তু আরেকটি ধ্রুবক লাগবে। ধ্রুবকের অভাবে সমীকরণটা ঠিকমতো মিলছে না যেন।





৩.

মনির যে পথে চলে গেলো সেই পথে তাকিয়ে দেখতে পেলো রাস্তার ওপারে এক যুবতী দাঁড়িয়ে। বয়স অনুমান করলে বিশ বাইশের কাছাকাছি। মেয়েটির দিকে আরো ভাল করে তাকায় মাহের। মেয়েটির চাল চলনে একটা বিশেষত্ব লক্ষ্য করা যায়। মেয়েটি সর্বাত্মক চেষ্টা করে নিজেকে আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপন করতে। অন্যভাবে বলতে গেলে, মেয়েটিকে দেখতে কিছুটা লাস্যময়ী যুবতী বলা যায়।



যুবতীর দিকে ভাল করে তাকানোর পরই মাহের বুঝতে পারে, যুবতিটি কোন খদ্দেরের জন্য অপেক্ষায় থাকা নিশীথিনী। এরা দেহ বিক্রি করে। টাকার জন্য মানুষ কত কিছুই না করে।



যুবতীটি মাহেরের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। মাহেরের পোশাক পরিচ্ছদ ভালো। এসব দেহ বিক্রয়ী নিশীথিনীরা ভালো পোশাক পরিচ্ছদের খদ্দের খোঁজে। এতে তাদের আয় ভালো হয়। আর আশ্চর্য হলেও সত্য যে রাতের সহরে এমন গাড়ি বাড়ি ওয়ালা অনেক খদ্দের দেখা যায়। যারা কিনা দিনের আলোতে ভদ্রলোক আর রাতের আলোতে দেহ খদ্দের।



দিনের বেলায় হলুদ ফিতা, লাল ঠোঁটপলিশ তাদের কাছে খ্যাত লাগে। রাত হলেই ভদ্রলোকের ভদ্রতা উবে যায়। সস্তা পাউডারেই যেন খুঁজে কাম প্রসাধন! রঙ্গলীলা শেষে আবার খোলসে ঢুকে পড়ে ভোরের আলো ফুটবার আগেই। যুবতীর কোন খোলস নেই, দিনে রাতে সব সময় একই রকম। সেই লাস্যময়ী আর ভদ্রলোক খদ্দেরের মধ্যে মিল আছে। যেই ভদ্রলোকের কাছে দিনের আলোতে লাস্যময়ী খ্যাত উপাধি পায়, সেই লাস্যময়ীর কাছে ভদ্রলোকটি খ্যাত উপাধি পায় রাতের আঁধারে। একজন খোলসে আবৃত থাকেন আরেকজন খোলস ছাড়া। যুবতীর কাছে পরাজিত হয় তথাকথিত কাপুরুষ ভদ্রলোক! পরাজয়টা যুবতীর কুমারীত্বের কাছে ভদ্রলোকের মনুষ্যত্বের!



মাহেরের পাশে এসে মাহেরের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে যুবতিটি। যুবতীর নাম শিউলি। শিউলি মাহেরের সামনে দাঁড়িয়ে আশে পাশে তাকাতে থাকে। মাহের ইতস্তত বোধ করতে থাকে। এবং বলে ওঠে-



-‘’আপনি যা ভাবছেন সেটা হবেনা। আমি এখানে অন্য কারো জন্য অপেক্ষা করছি।‘’

-‘’ কার জন্য? অন্য কাউরে ঠিক কইরা রাকছেন?’’

-‘’না, আমি মনিরের জন্য অপেক্ষা করছি। একটা বাচ্চা ছেলে’’

-‘’ও! ছেলেটারে আমি দেখি মাঝে মইদ্ধে, আইজ মনেহয় আইবো না।‘’

-‘’বলে গেলো আসবে’’

-‘’আপনি কি ওরে ট্যাকা পয়সা কিছু দিছেন?’’

-‘’হু দিয়েছিলাম, ওর বোনের জন্য খাবার কিনে দিয়ে আবার ফিরে আসার কথা’’

-‘’তাইলে নিশ্চিত থাকেন আইজ আর ও আইবো না, খাওন খাইয়া পেটের শান্তি মিটাইছে। আর পেটের শান্তি হইছে পরেই ঘুমাইয়া পড়ছে। ছোট মানুষ’’

-‘’হুম’’

-‘’কি আর করুম ভাই। আমরা গরিব মানুষ। টাকা পয়সার অভাব। টাকার পিছে নাচতেই থাকি। একটু টাকা পয়সা হইলেই সুখ থাকতো জীবনে’’



জীবন নামক রঙ্গমন্ঞ্চে আমরা সকলেই এক একটা পাকস্থলীওয়ালা পুতুল। টাকার বিনিময়ে কেবল নেচেই যাওয়া, টাকা নাই তো পাকস্থলীর দেয়ালে গুতো দেয় শিং মাছের কাঁটা। নাচতে জানোনা? তবে তুমি অকেজো পুতুল! নাচতে হলে পাকস্থলীর দেয়াল রাখতে হবে সুরক্ষিত, তার জন্য চাই অর্থ। আবার সেই অর্থ আসবে কেবল নৃত্য প্রদর্শন করতে পারলেই। কি আজব এক অর্থনৈতিক বাস্তুসংস্থান।





হঠাৎ মাহের শিউলিকে প্রশ্ন করে- ‘’আপনি বাসায় ফিরবেন না?’’

-‘’হ, ফিরমু। কিন্তু খদ্দের না পাইলে তো টাকা নাই, টাকা ছাড়া বাসায় যামুনা’’

-‘’বাসায় কেউ নাই?’’

- ‘’আছে, এক পোলা আছে। জামাই আছে, তয় সুখ নাই। জামাই কয় তারে নাকি আর আগের মত সুখ দিবার পারিনা। পর নারীর লগে থাকে মাঝে মইদ্ধ্যে। জামাইও আর আমার দিকে চাইয়া দেখেনা। উঠতে বইতে মাগী কইয়া গাইল দেয়।‘’

-‘’সংসার, ছেলে সব রেখে রাস্তায় কেন?’’

-‘’পেট চালাইতে হইবো তাই’’





আর কিছু বলতে পারেনা মাহের। নিজের অবস্থানে নিজেকে অসুখি মনে হলেও তার চাইতেও অনেক অসুখী মানুষ আছে। এই চিন্তা করলে মাহের নিজেকে সুখি হিসেবে বিবেচনা করতে পারে, কিন্তু সবাই নিজ নিজ অবস্থানে অসুখী।



মাহেরের নিজের কোন পরিবার নেই, একাকী জীবন যাপন করে সে। তাই তার কাছে সুখ নামক বস্তু ধরা দিয়েও দেয় না। ওদিকে মনিরের মত বাচ্চাও সুখের সুন্ধান করে। পরিবার আছে। টাকার অভাবে পারিবারিক কলহের কারণে সেও সুখ পায়না বাসায়। আর শিউলিদের গল্পে কামের অভাব। আপাত দৃষ্টিতে কামকে অহরহ ব্যাবহার করে বেচে থাকা শিউলিরা নিজ নিজ গৃহে অবহেলিত।



সুখ সমীকরণের আরেকটি দ্রুবক অবশেষে খুঁজে পেয়েছে মাহের। কাম বা জৈবিক চাহিদা। সুখের সমীকরণে যেসব ধ্রুবক রয়েছে সেগুলো হচ্ছে- ক্ষুধার নিবারণ, অর্থ বা টাকাকড়ি, পরিবার, এবং জৈবিক চাহিদা বা কাম। এগুলোর সামষ্টিক অর্থই হচ্ছে সুখ।



মাহের বাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে থাকে। আগামিতে রাতের বেলা মাহেরের জন্য বাড়িতে অপেক্ষা করবে কেউ। সুন্দর পরিবার থাকবে। আর টাকা পয়সার দিক থেকে যেহেতু সে মুটোমুটি সচ্ছল তাই সুখের অভাব হবে না তার।



আবারো পিছুটান অনুভব করে মাহের, তাহলে শেষ মেষ পিছুটানের কারন দাঁড়ালো- সুখ চাহিদা, কামনা ও ক্ষুধা এবং বেঁচে থাকা।



© Shoshi Himu

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:৫০

শশী হিমু বলেছেন: এই গল্প আগেও দিয়েছিলাম। কিন্তু অজানা কারণে তখন নাকি প্রথম পাতায় যায়নি। তাই আবার দিলাম।

২| ১১ ই অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১:৩৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: লেখাটা মনে হয় এবারও প্রথম পাতায় আসে নাই। কেউ পড়ল না কেন!

বেশ ভালো লাগলো। কিছু কিছু লাইন খুব স্ট্রাইকিং। সমীকরণের চলক, ধ্রুবক খুঁজে ফিরে মিলিয়ে দেবার ব্যাপারটা বিশেষভাবে ভালো লাগলো।

৩| ১২ ই অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৫:৩৫

মাহমুদা সোনিয়া বলেছেন: নাটকীয়তা ছিল। গ্রাফ টা ভালো লাগলো। ভালো থাকো প্রিয় শশী :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.