নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অমরত্বের লোভ কখনো আমাকে পায়না। মানব জীবনের নশ্বরতা নিয়েই আমার সুখ। লিখি নিজের জানার আনন্দে, তাতে কেউ যদি পড়ে সেটা অনেক বড় পাওয়া। কৃতজ্ঞতা জানানো ছাড়া আর কিছুই নেই।

শের শায়রী

হৃদয়ের কাছে বুদ্ধির বাস ভাল কথা। কিন্তু মাঝে মঝে হৃদয়ের ওপর থেকে বুদ্ধির শাসন তুলে দিতে হয়, হৃদয়কে স্বাধীন করে দিতে হয়, মুক্ত করে দিতে হয়। স্বাধীন মুক্ত হৃদয়ের ধর্মকে সব সময় বুদ্ধি দিয়ে বিচার করতে নেই।।

শের শায়রী › বিস্তারিত পোস্টঃ

চাঁদ চুরি গেছে

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৩৫



শিবঠাকুর ভোলেভালে বাবা।কোন কিছুতে খেয়াল থাকেনা হঠাৎ খেয়াল পড়ল তার মাথায় আর চাদ নেই। ব্যাস আর দেখতে হল না কৈলাসে মহা শোরগোল শুরু হয়ে গেল। পাড়া মাথায় করে শিব ঠাকুর চিৎকার শুরু করল ‘আমার চাদ কোথায়? আমার চাদ কে নিল’?



মা দূর্গা তখন রান্নায় ব্যাস্ত ছিলেন শিবের চিৎকারে খুন্তী হাতে করেই দৌড়ে এলেন। ‘বলি কি হল এই সাত সকালেই যে পাড়া মাথায় করছ’? দিলেন এক ধমক।



শীব ঠাকুর তখন ও চিৎকার করছিলেন আর জটায় হাত দিয়ে বলছেন ‘কোথায় গেল? কে নিল? কার এত সাহস’?



মা দূজ্ঞা কিন্ত কিছুই বুজতে পারছিলেন না, এই সময় শিবের চেলা চামুন্ডা ভূত প্রেতের দল মা দূজ্ঞা কে বুজাতে যায় ব্যাপারটা কিন্তু ভুত দের হাউকাউ তে কিছুই বুজছিলেন না। মা দূজ্ঞা ভূতদের হাউকাউতে দু কানে আঙ্গুল দিয়ে দিলেন বেজায় এক ধমক বলি তোরা চিৎকার বন্ধ করবি না মর্ত্যে পাঠিয়ে দেব’?



ব্যাস এক ধমকেই কাজ হয়ে গেল। মর্ত্যে এখন যে সব কারবার চলছে তাতে মর্ত্যে যাওয়া মানেই জীবন আর জীবন মানেই অনন্ত নরকবাস। ভয়ে অনেক গুলো ভুত বেহুশ হয়ে গেল। মা দূর্গা এইবার ঠাকুরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন ‘বলো কি হয়েছে’?



শিব ঠাকুর কান্না কান্না গলায় বললেন, ‘আমার চাদটা ……আমার চাদটা খুজে পাচ্ছিনা কোথায় গেল’? আর পারলেন না শিব ঠাকুর হাউমাউ করে কেদে ফেললেন।



‘কেন সে তো তোমার মাথায়’ মা দূর্গা রাগের সাথে বললেন।



‘নেই’ শিব ঠাকুরের কান্না জড়ানো উত্তর দেবার আগেই দেবী দূর্গা দেখলেন সত্যি শিবের মাথায় চাদ নেই।



‘তাইতো বলি চারিদিকে এত অন্ধকার কেন’? দেবী চারিদিকে চোখ ফেলতে ফেলতে বললেন।



‘হ্যা মা অন্ধকার বলেই তো খুজে পাচ্ছি না’ সাহস করে এক ভূত বলে ফেলল।



‘থাম সব ভূতের দল আলো থাকলেই যেন সব খুজে বের করে ফেলত,’ মা দূর্গা আবারো কড়া ধমক লাগালেন। ‘থাকত আমার গনু, এতক্ষনে ঠিক বের করে ফেলত’। গনু মানে গনেশ।



গনেশের কথা বলতেই এক ভুত মাথা চুলকে বলল ‘মা একটা কথা বলি’?



‘বল’



‘আমি না চাদটা দেখেছি’? মাথা চুল কে মাথা নীচু করে ভূতটা বলল



‘তা এতক্ষন বলিস নি কেন হতচ্ছাড়া মুখপোড়া, আমি না চাদটা দেখছি’ মা ভেংচে দিলেন ভুতটাকে।



‘এবার আমাকে বল কোথায় দেখছিস? বলে আমাকে একটু উদ্ধার কর?’



‘না মানে গনু দাদার কথা বলতেই মনে পড়ে গেল ও পাড়ায় মুনি ঋষিদের ছেলেদের সঙ্গে দাদা চাদটা নিয়ে খেলা করছে’।



এত ক্ষনে চুপচাপ ছিল মা দূর্গার দুই সখী জয়া আর বিজয়া আর পারল না খেকিয়ে উঠল ‘ হতচ্ছাড়া হাড় হাভাতে ভূতের দল আবার আমাদের সোনার ছেলে গনেশের ওপর মিথ্যা বদনাম দিচ্ছিস। দুধের ছেলে নিয়ে মতলববাজি। বিজয়া ধর বদমাশগুলোকে’। কোমড়ে আচল পেচাতে পেচাতে জয়া বিজয়া ভুতের দিকে তেড়ে গেল।



জয়ার এই রকম রনমূর্তি দেখে ভূত গুলো সুড়ুৎ করে শিব ঠাকুরের পেছনে লুকিয়ে পড়ল



জয়া বিজ়য়া বিশ্বাস না করলেও মা দূর্গা কিন্তু ঠিকই বুজতে পারলেন ঘটনা সত্যি কারন সেই জন্মের পর থেকেই গনেশের চাদের ওপর লোভ ছিল। গনেশ যখন হাটতে পারত না তখন ও শিবঠাকুরের কোল থেকে হাচড়ে পাচড়ে কাধে চড়ে অনেক বার ই চাদকে ধরার চেষ্টা করত। এই কথা মনে পড়ে মা দূর্গা ফিক করে হেসে ফেললেন।



ওদিকে মহাদেবের তো তৃতীয় নয়ন থেকে আগুন জড়ছে, শেষ কালে কিনা তার চন্দ্রশেখর নামটা বরবাদ হয়ে যায়।



‘ওরে কে কোথায় আছিস গনেশের কাছ থেকে আমার চাদ নিয়ে আয় এখুনি’ রাগে কাপতে কাপতে হুকুম করলেন মহাদেব।



শিবের হুকুমে সমস্ত গন দেবতারা ও পাড়ায় যেয়ে দেখে গনেশ মহা আনন্দে তার বন্ধুদের নিয়ে চাদকে লোফালুফি খেলছে।



‘গনেশ তারাতারি চাদ দাও, বাবা চাচ্ছে’ গনদেবতারা চাদ চাইল।



‘ইশ বললেই হল, আমি তো সবে খেলা শুরু করছি, দেব না’ ফোস করে ওঠে গনেশ।



‘না দিলে আমরা ধরে নিয়ে যাব’ গনদেবতারা হুমকি দেয়।



‘কি এত বড় কথা আমি কার ছেলে যান? এই ত্রিভূবন যে দেবী তৈরী করেছেন তার ছেলে আর আমকে ধরে নিয়ে যাবে? আস পারলে? দেখাচ্ছি মজা’।



গনেশ আস্তে করে একটা ফু দিল আর সেই ফুতে সমস্ত গনদেবতার একবারে ঝরা পাতার মত কৈলাশের গোড়ায় যেয়ে পড়ল। অনেকেই হাতে পায়ে ব্যাথা পেল কাদতে কাদতে যেয়ে শিব ঠাকুরের কাছে ইনিয়ে বিনিয়ে গনেশের নামে নালিশ করল।



রাগে শিবের তৃতীয় নয়ন আগুন হয়ে গেল, কি এত বড় কথা ডাকলেন প্রমথদের। ‘কোন কথানা, গনেশকে চ্যাংদোলা করে আমার কাছে নিয়ে আস’। ঠাকুর প্রমথদের হুকুম দিলেন।



ঠাকুরের হুকুম পেয়ে প্রমথরা বুক ফুলিয়ে লম্বা ঠ্যাং ফেলে ছোট্ট গনেশ কে ধরতে যায়। গনেশ প্রমথদের দেখেই বুজল বাবা ভালই রাগ করছে কিন্তু এখনো তার খেলা শেষ হয়নি তাই প্রমথদের দেখেই অদৃশ্য হয়ে যায় আবার আর এক জায়গায় উদিত হয়, যেই প্রমথরা ধরার জন্য হাত বাড়ায় অমনি অদৃশ্য আবার দৃশ্যমান হলে মোহিত করে চেতনাহীন করে ফেলে। কাহিল হয়ে যায় প্রমথরা। মায়া হয় গনেশের প্রমথদের অবস্থা দেখে নিজেই ধরা দেয় ওদের হাতে।



প্রমথদের মনে তখন বিরাট ভাব চলে আসে হু হু বাবা আমাদের সাথে চালাকি ওরা বোজে নি যে গনেশ নিজেই ধরা দিয়েছে। প্রমথদের মনের ভাব বুজতে গনেশের এক মুহুর্ত ও দেরী হয় না, মনে মনে ভাবে দাঁড়াও তোমাদের একটু শিক্ষা দিতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ টুপ করে বসে পরে গনেশ শত চেষ্টা করেও ও কে আর নাড়ানো গেল না।



এবার ধুকতে ধুকতে প্রমথরা এসে কেদে কেটে এক বিরাট গল্প ফাদল আর বলল গনেশ কে আনতে পারেনি।



‘কি’ বিকট হুঙ্কার ছাড়লেন মহাদেব। সে চিৎকারে নন্দী ছুটে এল।



‘কি হল প্রভু’ নন্দী জিজ্ঞেস করল।



এতক্ষন কোথায় ছিলি হতভাগা গনেশ আমার চাদ চুরি করে নিয়ে গেছে, ধরে নিয়ে আয় এখনি’। রাগে কাপতে কাপতে বললেন শিব।



‘কি এখনি যাচ্ছি, নিয়ে আসছি’ নন্দী বীরদর্পে বলল।



‘পার বি তো’ শিব ঠাকুর একটু সন্দেহ পোষন করেন।



কিযে বলেন প্রভূ। আপনি বললে চন্দ্র, সূর্য, শীষনাগ কে পর্যন্ত ধরে আনতে পারি আর এতো এক পুচকে ছোড়া।



‘পুচকে ছোড়া বলে অবজ্ঞা করিস নে যেন ও ছেলে আমাদের ই একজন সাবধান’ ঠাকুর সাবধান করে দেন।



কথা না বাড়িয়ে নন্দী প্রভূকে প্রনাম করে হনহন করে রওনা দেন।



নন্দী সে পাড়ায় যেয়ে দেখেন গনেশ তার বন্ধুদের সাথে খেলছে চাদটাকে নিয়ে। দেখেই তার চোখ দুটো রাগে জেলে ওঠে। ‘এ্যাই গনেশ, তুমি প্রভূর চাদ নিয়ে আসছ কেন? আবার ডাকলেও যাচ্ছ না, কি ভেবেছ কি অ্যা’?



গনেশ শান্তভাবে উত্তর দেয় ‘এ চাদ আমার, এ জগতের যা কিছু তা সব আমার আর তাছাড়া বাবার জিনিসে তো ছেলেরই অধিকার’।



নন্দী আর থাকতে পারলনা ‘মুখ সামলে কথা বল গনেশ আমি কিন্তু গন দেবতা না প্রমথ ও না আমার সাথে চালাকি চলবে না ভাল চাও তো এবেলা আমার সাথে চল’



গনেশ যেন এমন অবাক করা কথা আর কখন ও শোনে নি জোরে একটা শ্বাস নেয় আর তাতেই যে ঝড় ওঠে তাতে নন্দী রক্ত বমি করে অজ্ঞান হয়ে যায় কিছু ক্ষনের জন্য। জ্ঞান ফেরার পর দেখল সেখানে গনেশ নেই আর গনেশ এর ব ন্ধুরা তার দিকে তাকিয়ে মিচকি মিচকি হাসছে। লজ্জায় নন্দীর মরে যেতে ইচ্ছে হল। সেকিনা দেবাদিবের প্রধান সহচর আর গনেশের মত পুচকে…………



ভাবতে ভাবতে লজ্জায় ম্রিয়মান নন্দী কৈলাসে যেয়ে দেখে গনেশ বাবার কোলে খেলা করছে আর শিব ঠাকুরের মাথায় চাদ শোভা পাচ্ছে।



নন্দী হাফ ছেড়ে বেচে প্রভূকে বলে ‘প্রভু চাদ তো আপনার মাথায় শোভা পাচ্ছে’



এ কাথায় যেন মহাদেব একটু রাগ করেই বলে ‘চাদ আমার মাথায় থাকবে না কি তোর মাথায় থাকবে’। ভোলাভালা মহাদেব কিন্তু ততক্ষনে সব ব্যাপার ভূলে গেছে।



নন্দী ও তার প্রভূকে বিলক্ষন চেনে, হাসতে হাসতে বলল প্রভূ আজ থেকে কিন্তু গনেশ ও আমাদের প্রভূ।



শিব ঠাকুর বললেন সেতো খুব ভাল কথা গনেশ ও তোমাদের প্রভূ।



আবার কৈলাশে কোলাহল। জয় ধ্বনিতে মুখরিত সবকন্ঠ, জয় গনেশের জয়। জয় গননাথের জয়।জয় গণপতির জয়। জয় ময়ূরবাহন ময়ূরেশের জয়।



(গনেশপুরানে এ কাহিনী আছে)

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৪৪

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:

এত ক্ষনে চুপচাপ ছিল মা দূর্গার দুই সখী জয়া আর বিজয়া আর পারল না খেকিয়ে উঠল ‘ হতচ্ছাড়া হাড় হাভাতে ভূতের দল আবার আমাদের সোনার ছেলে গনেশের ওপর মিথ্যা বদনাম দিচ্ছিস। দুধের ছেলে নিয়ে মতলববাজি। বিজয়া ধর বদমাশগুলোকে’। কোমড়ে আচল পেচাতে পেচাতে জয়া বিজয়া ভুতের দিকে তেড়ে গেল।



দারুন লাগল +++

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৪৮

শের শায়রী বলেছেন: ভাই এই ঘটনা গনেশপুরানে আছে আমি শূধু ভাষা দিছি।

ভাল থাকুন

২| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৫০

তারছেড়া লিমন বলেছেন: ভাল লাগল+++++++++++++++

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৫২

শের শায়রী বলেছেন: ধন্যবাদ ব্রো

৩| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:২৪

এহসান সাবির বলেছেন: বেশ লাগলো।

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:০৭

শের শায়রী বলেছেন: ধন্যবাদ ব্রো

৪| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৪:১০

মামুন (১০৮) বলেছেন: +++

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:১০

শের শায়রী বলেছেন: ধন্যবাদ ব্রো

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.