নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অমরত্বের লোভ কখনো আমাকে পায়না। মানব জীবনের নশ্বরতা নিয়েই আমার সুখ। লিখি নিজের জানার আনন্দে, তাতে কেউ যদি পড়ে সেটা অনেক বড় পাওয়া। কৃতজ্ঞতা জানানো ছাড়া আর কিছুই নেই।

শের শায়রী

হৃদয়ের কাছে বুদ্ধির বাস ভাল কথা। কিন্তু মাঝে মঝে হৃদয়ের ওপর থেকে বুদ্ধির শাসন তুলে দিতে হয়, হৃদয়কে স্বাধীন করে দিতে হয়, মুক্ত করে দিতে হয়। স্বাধীন মুক্ত হৃদয়ের ধর্মকে সব সময় বুদ্ধি দিয়ে বিচার করতে নেই।।

শের শায়রী › বিস্তারিত পোস্টঃ

সংগঠিত হচ্ছে খ্রিষ্টান ধর্ম, বিশপ এবং পোপতন্ত্র

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:১৪


ডিওক্লেশিয়ান সাম্রাজ্য

আগের পর্ব পড়লে এই লেখার ধারাবাহিকতা পাবেন রোম যখন পুড়ছিলো নিরো তখন বেহালা বাজাচ্ছিল

রোমান শাসক ডেসিয়াস এবং ভ্যালেরিয়াসের সময় নির্বিচারে খ্রিষ্টান নিধন হয়েছিল, তা সত্ত্বেও প্রজন্মের পর প্রজন্ম খ্রিষ্টানদের শক্তি অনেক বেড়ে গিয়েছিল। রোমান সম্রাট ডিওক্লেশিয়ানের আমলে রোমের মোট জন সংখ্যার দশ ভাগের এক ভাগ খ্রিষ্টান ধর্মাবলাম্বী এসে দাড়িয়েছিল। এখানে সম্রাট ডিওক্লেশিয়ান সন্মন্ধ্যে সামান্য ধারনা দেবার চেষ্টা করি। তিনি এসেছিলেন এক হত দরিদ্র পরিবার থেকে। ২৪৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জন্ম গ্রহন করেন। তিনি আরেলিয়ান এবং প্রবাসের অধীনে একজন সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। আরেলিয়ান, প্রবাস ছিলেন রোমান ইলেরিয়ান বংশের সম্রাট। তাদের পর সম্রাট হন ক্যারাস। এই ক্যারাসের শাসনামলে ডিওক্লেশিয়ান রাজকীয় সেনাবাহিনীর দেহ রক্ষীদের প্রধান হাবার সুযোগ পান। ক্যারসের মৃত্যুর পরই তার ছেলে কার্নিয়াস কে মার্গুসের যুদ্ধে পরাজিত করে ডিওক্লেশিয়ান নিজেকে সম্রাট ঘোষনা করেন সেনাবাহিনীর সহায়তায়।


রাজধানী নিকোমেডিয়া

সম্রাট হবার পরই ডিওক্লেশিয়ান নিজের রাজকীয় নাম গেইয়াস অরেলিয়াস ভ্যালেরিয়াস ডিওক্লেশিয়ান হিসাবে ঘোষনা করেন (যদিও ইংরেজ ইতিহাসবেত্তাদের কাছে ডিওক্লেশিয়ান নামেই পরিচিত ছিলেন) ২৮৪ খ্রিষ্টাব্দে। তিনি উত্তর পশ্চিম এশিয়ার নিকোমেডিয়া কে তার রাজত্ব ঘোষনা করে সেখান থেকে শাসন শুরু করেন, এখানে লক্ষ্যনীয় যে রোমান সম্রাজ্যের কেন্দ্র হিসাবে ইতালি তার গুরুত্ব ততদিনে হারিয়ে বসেছে।


গেইয়াস অরেলিয়াস ভ্যালেরিয়াস ডিওক্লেশিয়ান

এ ব্যাপারে ডিওক্লেশিয়ানের মতামত ছিল সম্রাটের দায়িত্ব হওয়া উচিত বহিঃশত্রুর হাত থেকে নিজ রাজ্য কে রক্ষা করা, তাকে এমন অবস্থানে থাকতে হবে যেন আক্রমনের সাথে সাথে সে দ্রুততার সহিত সেখানে উপস্থিত হতে পারেন, নিকোমেডিয়ায় অবস্থান করে সে দক্ষিন পূর্বে পারস্য সীমানা এবং উত্তর পশ্চিমে গোথিক সীমানার কাছাকাছি অবস্থান নিয়েছিল, যদিও এদের সাথে তার তেমন কোন যুদ্ধে জড়াতে হয়নি।

ডিওক্লেয়াশিন সম্রাট হয়েই নিজেকে “ডমিনাস” (প্রভু) হিসাবে ঘোষনা করেন, তিনি কিছু আইন প্রনয়ন করেন যেমন সাধারন মানুষ তাকে দেখা মাত্র মাথা নীচু করে হাটু গেড়ে বসে থাকতে হবে, এছাড়া এই টাইপের আরো কিছু যা তাকে অতিমানবীয় এক ভুমিকায় নিয়ে যায়, অবশ্য এর পেছনে নিজের নিরাপত্তার কিছু ব্যাপার ছিল, আগের সম্রাটরা সাধারনের সাথে মিশতে গিয়ে কয়েকজনই আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছিল, সেটা যেন না ঘটে এই কারনে ডিওক্লেশিয়ান নিজেকে সাধারনের থেকে পৃথক করে ফেলছিলেন। হতে পারে এটাই ডিওক্লেশিয়ানের ২১ বছর শাসন করার অন্যতম কারন। এই সময় ডিওক্লেশিয়ান বিভিন্ন আইন কানুন প্রনয়ন করেন সে আলোচনায় না গিয়ে মুল বিষয়ে ফিরে আসি, মানে কিভাবে এই সময় খ্রিষ্ট ধর্ম একটি সাংগঠনিক রূপ পায়।



খ্রিষ্টানদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার নানাবিধ কারন ছিল। যেমন রোমান সাম্রাজ্যের ক্রমশ অবনতি সবার কাছে এই বিশ্বাস দৃঢ় হচ্ছিল পৃথিবীর সুদিন শেষ হয়ে গিয়েছে (আপনাকে বুজতে হবে সে সময়ের সাধারন মানুষদের কাছে পৃথবী বলতে আশেপাশের দু চারটি নগর বা গ্রামই বোজাত, এর বাইরে তাদের যাবার বা খবর নেবার কোন সুযোগই থাকত না)। মৃত্যুর পর যীশুর পুনরাগমনের দিন ঘনিয়ে এসেছে। এছাড়া মৃত্যুর পর পরকালের এত চমৎকার বর্ননা দেয়া হত যা তখন বিদ্যমান অন্য কোন ধর্মে দেয়া হয়নি। আর ছন্নছাড়া পড়ন্ত রোমান সাম্রাজ্যে তখন যে অবস্থা চলছিলো সে তুলনায় চার্চ ছিল অনেক সাংগঠনিক। সমস্যা সংকুল রোমান সম্রাজ্যে চার্চ যেন এক শান্তির বানী নিয়ে এল।

একদিকে যেমন চার্চের সংখ্যা যেমন বেড়ে যাচ্ছিল, অন্যদিকে কিছু সমস্যারও তৈরী হয়েছিল। এদিকে খ্রিষ্টান ধর্মে কিছু বিবর্তন আসছিলো যা সাধারন মানুষ কে আরো বেশী আকর্ষন করছিলো। শুধুমাত্র অদৃশ্য একশ্বরবাদের মাঝে কোন নাটকীয়তা নাই, ধীরে ধীরে কুমারী যীশুর মা মেরীর ওপর আলোকপাত করে তাকে ঐশ্বরিক একটা আবহ, যীশুকে ঈশ্বরের পুত্র, যীশুর বিভিন্ন অলৌকিক কাহিনী এবং এর সাথে পূর্ববর্তী বিভিন্ন শহীদদের আত্মত্যাগ, বিভিন্ন যোগী পুরুষের আগমন ধর্মটিকে ভিন্ন মাত্রা দিতে শুরু করল, ওদিকে প্যাগান ধর্মের অনেক কিছু ভিন্ন রূপে খ্রিষ্টান ধর্মের সাথে একাত্মীভুত হয়ে গেছে দুই শতাব্দীর ব্যাবধানে যাতে প্যাগান উপাসকদের জন্য খ্রিষ্টান ধর্মে যোগদান একটা স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাড়াল।



বিভিন্ন এলাকায় খ্রিষ্টানদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চার্চের সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছিল, কিন্তু তাতে সমস্যা দেখা দিচ্ছিল, সময়ের সাথে সাথে খ্রিষ্টান ধর্মে ধর্মীয় রীতিনীতিগুলোও জটিল হয়ে পড়ছিলো, একেক এলাকায় একেক ধরনের নিয়ম পালন হচ্ছিল। এমনকি একই চার্চের আওতাভুক্ত দু দলের রীতিনীতিতেও পার্থক্য দেখা দিল। মোদ্দা কথা এক খ্রিষ্টান ধর্ম তখন নানা রূপে নানা এলাকায় নানা গ্রুপ বা গোত্রে পালিত হত।

অনেকে এই সব ভিন্নতা খুব একটা পাত্তা দিত না, তবে এদের মাঝেও একদল ছিল যারা ধর্মের সামান্য বিচ্যূতি দেখলেই তারা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠত। কারন এই খ্রিষ্টান ধর্মেই কেবল জীবদ্দশায় না অনন্ত পরকাল এবং শেষ বিচারের ব্যাপারটাও ছিল, এই ধরনের ভিন্ন মত ভিন্ন নিয়ম চার্চকে বিভক্ত করে লড়াইয়ের দিকেও ঠেলে দিতে পারত কিন্তু সেটা হয় নি কারন চার্চে সবারই একটা নির্দিষ্ট পদাধিকার ছিল এবং তারা কঠোরভাবে সেটা মেনে নিত এবং অন্যর অবস্থানের প্রতি উদারতা এবং সন্মান দেখাত। এভাবে এক এক এলাকার দায়িত্ব এক এক এলাকার বিশপের ওপর দেয়া হত, যিনি যে কোন বিভক্তি বা ধর্মীয় ব্যাপারে যে কোন ডিসিশান দিলে সে তা সবাই মেনে নিতে বাধ্য হত।



এরপরো বিশপদের মাঝেও বিভিন্ন সময় নানা বিষয়ে মত বিরোধ দেখা দিত, এর সমাধান কল্পে তৃতীয় শতাব্দীর শেষ দিকে এসে এই বিষয় গুলো সমাধানের জন্য “সিনডস” (গ্রীক শব্দ সিনড এর অর্থ “সভা”)ডাকা হত। সেই সভায় বিশপেরা বিভিন্ন বিষয় যুক্তি, তর্ক, বিতর্কের সৃষ্টি করতেন। এখানে বিশপরা এক সাথে বসতেন এবং যে সব বিষয়ে বিতর্ক হত তার একটা সর্বজন স্বীকৃত সমাধান দিতেন। এখানে একটা বিষয় উল্লেখ্য, সে সময়ের বিশপদের মাঝে যতই মতনৈক্য থাকুক না কেন সিনডসের ডিসিশান তারা মেনে নিত। একভাবেই অগোছাল খ্রিষ্টান সমাজ একটা অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির আওতায় আসা শুরু করে। এই “সার্বজনীন” বা “ইউনিভার্সাল” ধারনাটি এসেছিল গ্রীক ধ্যান ধারনা থেকে, যে ধারনা কে তারা পরে “ক্যাথলিক চার্চে” রূপান্তরিত করে।



এই সব বিশপদের সম্মিলিত মতবাদ তখন “অর্থোডক্স চার্চের” মুল ভিত্তি হিসাবে দাড়ায়, যদিও নীতিগতভাবে সব বিশপদের ক্ষমতা ছিল সমান কিন্তু বাস্তবতা ছিল কিছুটা ভিন্ন, যে এলাকার চার্চের অধীনে বেশী মানুষ বা সম্পদ থাকত তাদের প্রভাব বেশী ছিল। এটা অবশ্য অতি সাধারন একটা ব্যাপার। যেমন অ্যান্টিওক বা আলেকজান্দ্রিয়ার চার্চের বিশপকে মনে করা হত সব চেয়ে সন্মানিত সেটা যেমন ছিল ধর্মের ক্ষেত্রে তেমনি শিক্ষা, সাহিত্যে বা সামাজিক জীবনে। রোমান সম্রাজ্যের পুব দিকে বড় শহর থাকায় সেদিকে খ্রিষ্টান বেশী থাকায় তাদের বিশপদের প্রতিপত্তি বেশী ছিল, ডিওক্লেশিয়ান শাষনের আগ পর্যন্ত পশ্চিমে এক মাত্র বড় বিশপ ছিল রোমে।



গ্রামের ছোট চার্চগুলো পরিচালিত হতো শহরের বড় চার্চের অধীনে। গ্রাম্য চার্চের পাদ্রীগণ কাজ করতেন শহরের বড় চার্চের পাদ্রীর অধীনে। বিশপের উপাধিধারী একজন পাদ্রী এই চার্চ পরিচালনা করতেন। বিশপের আওতাধীন এলাকাকে বলা হতো ডায়োসিস (diocese)। বিশপ তাঁর ডায়োসিসের সবগুলো চার্চের সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ করতেন এবং ধর্মগুরুর দায়িত্ব পালন করতেন। কয়েকটি ডায়োসিসের সমন্বয়ে তৈরি হতো প্রদেশ। প্রদেশের সবচেয়ে বড় শহরের বিশপ হতেন প্রদেশের অধিকর্তা। তাঁর উপাধি হতো আর্চবিশপ। প্রদেশগুলোর সমন্বয়ে একটি বিশাল প্রশাসনিক অঞ্চল গঠন করা হতো। এর নাম ছিলো প্যাট্রিয়ার্কেট (patriarchate).

একেকটি বিশাল শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠত একেকটি প্যাট্রির্য়াকেট। এসব বিশাল শহরের বিশপরা হতেন সবচেয়ে বেশি মর্যাদাবান এবং প্যাট্রিয়ার্কেটের প্রধান। তাদের বলা হতো ছিলো প্যাট্রিয়ার্ক (patriarch)। চার্চ সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের যাজকদের পদের নামকরণের সাথে রোমান প্রশাসনিক শব্দের মিল দেখা যায়। এর কারণ রোমান সাম্রাজ্যের পতনের যুগে রোমান প্রশাসনের দায়িত্ব চলে গিয়েছিল যাজকশ্রেণি ও খ্রিস্টধর্মের হাতে। প্যাট্রিয়ার্কেট, বিশপ প্রভৃতি শব্দ ছিলো রোমান প্রশাসনিক শব্দ। রোমের পৌরসভার একটি গুরুত্বপূর্ণ অফিসের নাম ছিলো বিশপ।



সেকালে রোমের পশ্চিম সাম্রাজ্যে শিক্ষার হার কম থাকায় তাদের মধ্যে ঐতিহ্য বা শিক্ষার বিষয়ে কম দলাদলি হত। প্রাচীন সেই সময়ের কোন পোপই সেভাবে খ্রিষ্টান সমাজে প্রভাব বিস্তার করতে পারে নি। তারা ছিল শান্ত স্বভাবের, কঠোর ধার্মিক স্বভাবের মানুষ। তারা দল বা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখত পূর্ব দিকের বিশপদের তুলনায়, তাই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রোমের বিশপরা অর্থোডক্স খ্রিষ্টান নামে পরিচিত।পরবর্তী কয়েক শতাব্দী এই অবস্থা অনেকটা বিদ্যমান ছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয় রোমের অর্থোডক্স বিশপ লাইম লাইটে চলে আসেন ওদিকে পূর্ব দিকের শহরগুলোতেও খ্রিষ্টান প্রভাব কমতে থাকে।

প্রকৃতপক্ষে ডিওক্লেশিয়ানের সময় রোম ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু না হলেও কয়েক শতাব্দী রোম ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু থাকায় মানুষ তখনো রোমকেই বুজত ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। আর ধর্মপ্রান খ্রিষ্টানদের এক বিশাল অংশের কাছে রোমের বিশপ ছিলেন রোমের শাসকের মত ক্ষমতাবান। এই বিশ্বাসই মানুষের মনে ধীরে ধীরে এমন পোক্ত হয়ে যায় যে রোমের বিশপ পিটারই হলেন যীশুর সব থেকে বড় ভক্ত।



এই সময় ডিওক্লেশিয়ান তার সাম্রাজ্যের দিকে তাকিয়ে দেখেন, তার সাম্রাজ্যের মাঝে চার্চ নামক আর একটি বড় সাম্রাজ্য তৈরী হচ্ছে যা তাকে হুমকির মুখে ফেলছে বা কোন কোন ক্ষেত্রে বিব্রত করছে, এই অবস্থায় ৩০৩ খ্রিষ্টাব্দে ডিওক্লেশিয়ান তার সহকর্মী গ্যালেরিয়াসকে নিয়ে চার্চের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামেন। চার্চ গুলো গুড়িয়ে দেন, ক্রুশ গুলো ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেন, ধর্মীয় বইগুলো পুড়িয়ে দেন।



এ অবস্থায় প্যাগান ধর্মের অবশিষ্টরা ইচ্ছা মত খ্রিষ্টানদের হত্যা করতে শুরু করে, খ্রিষ্টানদের সমস্ত চাকুরী, সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত করা হয়। সমাজের সব জায়গায় খ্রিষ্টানদের হত্যা, লাঞ্চনা, বঞ্চনার এটাই শেষ এবং ভয়ংকর ঘটনা। তবে এটি পুরা সাম্রাজ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে নি, কারন চারজন রোমান শাষকের মধ্যে কনষ্ট্যান্টিয়াস ছিলেন সব থেকে ধৈর্য্যশীল যদিও তিনি একজন সুর্য উপাসনাকারী মিথেরিজম ধর্মের অনুসারী পাগান ছিলেন। এই কনষ্ট্যান্টিয়াস অনেক পরে মৃত্যুশয্যায় খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহন করে, যার কারনে তাকে প্রথম খ্রিষ্টান রাজা হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। এখান থেকেই খ্রিষ্টানরা খোলামেলা ধর্ম পালন করতে শুরু করে। এবং একটি আইনসিদ্ধ ধর্ম হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে সময়টা ৩১৩ খ্রিষ্টাব্দ।



রোমের প্যাট্রিয়ার্কের উপাধী হয় পোপ (pope); রোমান চার্চের নাম হয় ক্যাথলিক চার্চ। পোপ শব্দটি গ্রিক papa (পিতা) শব্দ থেকে এসেছিলো। পোপের অধীনে পুরো খ্রিস্টধর্মজগৎকে পরিচালনা করার সাংগঠনিক কাঠামো হলো পোপতন্ত্র। অন্যান্য প্যাট্রিয়ার্কেটগুলোকে ছাপিয়ে রোমের শ্রেষ্ঠত্ব লাভের একটি ধর্মীয় কারণ ছিলো স্বয়ং যিসাসের কাছ থেকে চলে আসা কথিত ধর্মীয় নেতৃত্বের উত্তরাধিকারের ধারা। যিসাসের শিষ্য সেইন্ট সাইমন পিটারকে ধরা হয় প্রথম পোপ। তাঁর মেয়াদকাল ধরা হয় ৩৩ সাল থেকে ৬৭ সাল পর্যন্ত। অর্থাৎ যিসাসের ক্রশবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার পরেই তিনি খ্রিস্টধর্মের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের উত্তরাধিকার লাভ করেন এবং মৃত্যু পর্যন্ত এ পদে বহাল থাকেন। সেইন্ট পিটার ছিলেন রোমের বিশপ। তাই পিটারিয়ান মতবাদ (Petrine doctrine) অনুসারে রোমের বিশপই উত্তরাধিকারসূত্রে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতৃত্বে অধিকারী।

ক্যাথলিকরা দাবি করেন, যিসাস সেইন্ট পিটারকে খ্রিস্টধর্ম জগতের অধ্যাত্মিক নেতৃত্বের উত্তরাধিকার প্রদান করে যান, যার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে চার্চ সংগঠন। যিসাস কর্তৃক প্রদত্ত ধর্মীয় নেতৃত্বের উত্তরাধিকারী হিসেবে একের পর এক পোপ এসে খ্রিস্টধর্ম জগতের অধিপতির আসনে বসবেন। এ মতবাদকে বলা হয় পিটারিয়ান মতবাদ। অনেক খ্রিস্টানই এ মতবাদ মানতে চাননি। তাদের মতে, খ্রিস্টধর্ম জগতের ওপর একক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা যিসাস প্রদত্ত নয়; এটা পরবর্তী সময়কালীন রোমান চার্চের অধিপতিদের আবিষ্কার। এ বক্তব্যের পক্ষে শক্তিশালী যুক্তি হলো, বাইবেলের কোথাও পোপ বা পোপতন্ত্রের কোনো উল্লেখ নেই এবং সেইন্ট পিটারকেও শীর্ষ ধর্মীয় প্রতিনিধিত্ব প্রদানের কোনো কথাও বাইবেলে নেই। পোপ বা রোমান চার্চকে খ্রিস্টধর্ম জগতের অধিকর্তা হিসেবে মেনে নিতে গোড়া থেকেই অনেকে বিরোধীতা করেন।

বিশেষ করে কনস্টানটিনোপলের চার্চকে অতিক্রম করে রোমান চার্চকে নেতৃত্বে আসতে যথেষ্ঠ বেগ পেতে হয়েছিল। এর কারণ রোম নগরীকে নিয়ে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্য যখন ভেঙ্গে পড়েছে তখন পূর্বের কনস্টানটিনোপলকে এই ভাঙ্গন স্পর্শ করে নি। এ কারণে কনস্টানটিনোপলের চার্চও ছিলো যথেষ্ট শক্তিশালী। কিন্তু রোমান চার্চের নেতৃত্বে পশ্চিম ইউরোপে খ্রিস্টধর্মের প্রসার ঘটায় এবং রোমের সাথে খ্রিস্টধর্মের উজ্জ্বল ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার জড়িত থাকায় একসময় রোমান চার্চই শীর্ষস্থানীয় ভূমিকায় চলে আসে। খ্রিস্টধর্ম প্রচারকদের শক্তিশালী কেন্দ্র ছিলো রোম। রোমান সাম্রাজ্যে আক্রমণকারী জার্মানদের মধ্যে খ্রিস্টধর্ম প্রচার করেছিলেন রোমান চার্চের যাজকরাই। দুর্ধর্ষ বর্বরদের খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করতে রোমান চার্চের যাজকরাই সবচেয়ে বেশি কৃতিত্বের পরিচয় দেন। এছাড়াও পরবর্তীতে রোমান পোপের মধ্যস্থতায় রোম নগরী একাধিকবার বর্বর আক্রমণের হাত থেকে রক্ষাও পেয়েছিল। আক্রমণকারী ও দখলদার জার্মানদের হাত করতে পারাই ছিলো রোমান চার্চের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সাফল্য।

আপাতত এটুকুই এবিষয়ে আপাতত আর লেখা বাড়াব না এভাবেই খ্রিষ্টান ধর্ম একটি সংগঠিত ধর্ম হিসাবে পৃথিবীতে আত্মপ্রকাশ করে অনেক আত্মত্যাগ আর রক্তপাতের মাধ্যমে। তবে এই খ্রিষ্টানরাই আবার অনেক রক্ত জড়িয়েছে তাদের ধর্ম প্রচার করতে গিয়ে।

সুত্রঃ আইজ্যাক আসিমভের দ্যা রোমান এম্পায়ার এবং আসিফ আযাহারের লেখা • ইতিহাসের পাঠশালায়-১০ সহ বেশ কিছু অন্তর্জাল।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: তবে মন্দির, মসজিদ আর চার্চে শান্তি আছে। আমি এই তিন জাগাতে গেলে শান্তি পাই। আমার মন শান্ত হয়।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:১২

শের শায়রী বলেছেন: ধর্মশালা সব সময়ই শান্তির জায়গা, মানুষই একে কলুষিত করে ভাই।

২| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:২৫

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: মার্গুসের যুদ্ধে কার্নিয়াস কবে পরাজিত হয়ে ছিলেন সেই সালটি উল্লেখের দাবি রাখি।
ডিওক্লেয়াসিনের রাজসভায় তাহলে পাইবস ও সিজদা চালু ছিল? পারস্যের সম্রাটরা সম্ভবত রাজকীয় আদর্শের শিষ্টাচারটি এদের কাছ থেকে শিখে থাকবে। ধন্যবাদ শায়েরীভাই আপনাকে এমন একটি বিষয় সামনে আনার জন্য।
ভালো লাগলো রাজা ও পোপের সম্ভবত প্রথম লড়াই 303 খ্রিস্টাব্দের ঘটনাটি জানতে পেরে।
এছাড়া আরো অনেক অদ্ভুত বিষয় জানতে পারলাম সুন্দর পোস্টের মাধ্যমে। আবারো ধন্যবাদ আপনাকে।

পোস্টে লাইক।

শ্রদ্ধা ও শুভকামনা প্রিয় ভাইকে।


০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৫

শের শায়রী বলেছেন: প্রিয় ভাই মার্গুসের যুদ্ধ ২৮৫ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে ঘটছিলো। দেখুন Battle of the Margus

তবে আমার মনে হয় পারস্যের রাজাদের দরবারে এই সিজদা ডিওক্লেশিয়ানের কাছ থেকে শিখে নাই, উপরন্ত আমার কাছে মনে এটা পারশিয়ান কালচার দিয়ে ওখানে গেছে, কারন ডিওক্লেশিয়ানের সময়টা যদি মাথায় রাখি সেটা তৃতীয় শতক আমার ধারনা খুজলে তার আগে থেকেই এই কালচার পারস্যর দরবারে পাওয়া যাবে বলে আমার বিশ্বাস কারন এই ধরনের অতি ভক্তি এশিয়ান কালচারে দেখা যায় ইউরোপিয়ান কালচারে না।

আর তৃতীয়তঃ পোপ কালচার কিন্তু তখনো গড়ে ওঠেনি, তখনো বিশপরা অনেকটা স্বাধীনভাবে নিজ নিজ এলাকায় ধর্মীয় কাজ দেখা শুনা করতেন। তবে যদি আপনি রোমান বিশপকে পোপ ধরে নেন সেক্ষেত্রে ভিন্ন ব্যাপার, কিন্তু ওই সময় রোমের বিশপ অত শক্তিশালী ছিল না, যা আমি আমার পোষ্টে উল্লেখ্য করছি।

এই ধরনের আলোচনা পোষ্টের সৌন্দর্য্যকে অনেক বাড়িয়ে দেয়। নিজেরও ভালো লাগে। কৃতজ্ঞতা জানবেন প্রিয় ভাই।

৩| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:৩৭

টারজান০০০০৭ বলেছেন: খ্রিস্টানদের ধর্মসভাগুলো পড়িলে অনেককিছু জানা যায় ! ধর্মসভাতেই বার্নাবাসের বাইবেলকে বাতিল করা হয় যিনি একেশ্বরবাদী ছিলেন এবং ত্রিত্ববাদের বিরোধী ছিলেন। যতদূর মনে পরে যীশুর মৃত্যু হইয়াছে ইহাও তিনি বিশ্বাস করিতেন না !

ধর্মসভাগুলো ঈসা আ. এর অন্তর্ধানের অনেক পরে সম্ভবত ২/৩ শতাব্দী পর হইতে অনুষ্ঠিত হইয়াছে। এই ধর্মসভাতেই খ্রিস্টান ধর্মের বিশ্বাস্য নির্ধারিত হইয়াছে।

পোস্ট ফাটাফাটি হইয়াছে ! তবে একই সাথে ঈসা আ. সম্পর্কে মুসলমানদের বিশ্বাস্য কি তাহা টিকা আকারে দিলে ভালো হইতো !

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:২৭

শের শায়রী বলেছেন: টারজান ভাই, আসলে আমি ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে এই পোষ্ট লিখছি, ঠিক ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে না। আপনার তথ্য ঐতিহাসিকভাবে ঠিক আছে, কিন্তু এত ডিটেইলস টানলে পোষ্ট আরো অনেক বড় হয়ে যেত তাই অনেক কিছু বাদ দিয়ে গেছি। তবে মন্তব্যে এই সব তথ্য পোষ্টকে অনেক তথ্যপূর্ন করেছে।

আর ইসলামের ঈশা (অঃ) এবং যীশুর মাঝে অনেক ব্যাপারে পার্থক্য আছে এবং ইসলামে যীশুর ব্যাপার টানলে টীকা হিসাবে দিলেও পোষ্টের কলেবর অনেক বেড়ে যেত এবং ধর্মীয় পোষ্টের মত হয়ে যেত আমি মুলতঃ সজ্ঞানে এইগুলো এড়িয়ে যেতে চাই।

অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা।

৪| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪২

চাঁদগাজী বলেছেন:


"রাজধানী নিকোমোডিয়া":
"তিনি উত্তর পশ্চিম এশিয়ার নিকোমোডিয়াকে রাজত্ব ঘোষণা করে সেখান থেকে রাজ্য শাসন করেন"

-উত্তর পশ্চিম এশিয়াটা কোথায়?

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:২৮

শের শায়রী বলেছেন: পোষ্টে ম্যাপ দিয়ে দিয়েছি। সেখানে দেখুন। ধন্যবাদ।

৫| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৫২

অজ্ঞ বালক বলেছেন: ইন্টারেস্টিং পোস্ট। এই ব্যাপারে প্রচুর পড়ছি। ইতিহাস-পাতিহাস। ভাল্লাগলো।

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:৩১

শের শায়রী বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.