নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অমরত্বের লোভ কখনো আমাকে পায়না। মানব জীবনের নশ্বরতা নিয়েই আমার সুখ। লিখি নিজের জানার আনন্দে, তাতে কেউ যদি পড়ে সেটা অনেক বড় পাওয়া। কৃতজ্ঞতা জানানো ছাড়া আর কিছুই নেই।

শের শায়রী

হৃদয়ের কাছে বুদ্ধির বাস ভাল কথা। কিন্তু মাঝে মঝে হৃদয়ের ওপর থেকে বুদ্ধির শাসন তুলে দিতে হয়, হৃদয়কে স্বাধীন করে দিতে হয়, মুক্ত করে দিতে হয়। স্বাধীন মুক্ত হৃদয়ের ধর্মকে সব সময় বুদ্ধি দিয়ে বিচার করতে নেই।।

শের শায়রী › বিস্তারিত পোস্টঃ

খোলাফায়ে রাশেদিন হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)

০১ লা মার্চ, ২০২০ রাত ১:৩৪


ক্যালিগ্রাফিতে উমর (রা) এর নাম

আগের পর্বঃ খোলাফায়ে রাশেদিন হযরত আবু বকর (রাঃ)

আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাহ......... প্রতিদিন নামায পড়ার জন্য মসজিদ থেকে আহ্বান জানানো হয় আযানের মাধ্যমে, নবীজিকে তার পরামর্শদাতা কিন্তু ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা উমর বিন খাত্তাব (রাঃ)। মদীনায় হিজরত করার পর মুসলমানরা প্রকাশ্যে নামায পড়ার সুযোগ পায়। কিন্তু কিভাবে নামাযের জন্য ডাক দেয়া হবে? মহানবী সাহাবীদের কাছে সে ব্যাপারে পরামর্শ চাইলেন। সে কালে ইহুদী এবং খ্রিষ্টানদের প্রার্থনালয়ে শঙ্কধ্বনি এবং ঘন্টার ব্যবস্থা ছিল, কোন কোন সাহাবী মত প্রকাশ করলেন সেভাবেই ডাক দেয়া হোক, কোন কোন সাহাবী এতে আপত্তি তুললেন অন্য ধর্মের অনুকরনে নামাযের আহ্বান না করার জন্য। উমর (রাঃ) বললেন নামায আহ্বানের জন্য একজনকে নিযুক্ত করলে কেমন হয়? তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) উমর (রাঃ) পরামর্শমত বেলাল (রাঃ) নিযুক্ত করলেন নামাযের ডাক বা আযান দেবার জন্য। (খোলাফায়ে রাশেদিন জীবন ও কর্ম পৃঃ ২০৮)

৬৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে আগষ্ট ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকর (রাঃ) মারা যাবার পর তার নির্বাচিত হিসাবে হযরত উমর বিন খাত্তাব (রাঃ) ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হিসাবে অভিষিক্ত হন। যদি চার খলিফা নির্বাচনের দিকে আপনি দৃষ্টি দেন সেক্ষেত্রে আপনি দেখবেন সব থেকে স্মুথ ভাবে নির্বাচিত খলিফা হলেন হযরত উমর (রাঃ)। কোন রক্তপাত তো দূরে থাক কোন রূপ বাধার মুখেও পড়তে হয়নি তার খেলাফত লাভের সময়। এদিক দিয়ে দেখতে গেলে হযরত উমর সব থেকে ভাগ্যবান।

যেহেতু আমি খোলাফায়ে রাশেদিনদের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করব তাই তাদের জীবনের অন্যান্য সময় নিয়ে এখানে আলোচনা আনব না একান্ত প্রাসাঙ্গিক না হলে কারন এদের খেলাফতের ব্যাপ্তিকাল এবং কর্মযজ্ঞ এত ব্যাপক যে তা আলোচনা করতে গেলেই এই সামান্য পরিসরে হিমশিম খেতে হয়, সে জায়গায় অন্যান্য বিষয় আলোচনা টানলে কোন কিছুই হবে না। খেলাফতের ও সব বিষয় আলোচনা করা যাবে না শুধু উল্লেখ্য যোগ্য ঘটনাবলী টাচ করে যাব। হযরত উমর (রাঃ) খিলাফত লাভ করেই হযরত আবু বকর (রাঃ) এর অসমাপ্ত জায়গা থেকেই শুরু করলেন।



হযরত আবু বকরের সময় হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ পারস্যের হীরা ছেড়ে সিরিয়ায় যায় বাইজান্টাইন সম্রাট হেরাক্লিসের মুখোমুখি হতে ওদিকে সেনাপতি মুসান্না তখনো তার বাহিনী নিয়ে পারস্য অভিযান অব্যাহত রাখে, এখানে নানাবিধ কারন ছিল পারস্য অভিযানের বিস্তারিত লেখা যাবে না, সংক্ষেপে কারন গুলো জানাই, মুসলিম জাগরনে এক সময়ের পরাশক্তি পারসিকদের ঈর্ষা, মুসলিম দুত কে পারস্য রাজ দ্বিতীয় খসরু অপমান করে তাড়িয়ে দেয়া, আরবে মুসলিম বিরোধী শক্তিকে মদদ দেয়া, ব্যাবসায়ে বাধা, রাজনৈতিক নিরাপত্তা সহ নানাবিধ কারন ছিল।


“সোহরাব রুস্তম” গল্প

মুসান্না ব্যাবিলন দখল করে বসে ওদিকে হীরা হারিয়ে পারস্য রাজ উন্মাদ হয়ে ওঠে এবং পুনরুদ্ধারের জন্য পারস্যের মহাবীর রোস্তমের নেতৃত্ব এক বিশাল বাহিনী পাঠান। এই রোস্তম ই হল শাহানামার সেই বিখ্যাত চরিত্র অনেকেই হয়ত ছোটকালে “সোহরাব রুস্তম” গল্প পড়ছেন, যাকে অবলম্বন করে শাহনামার সেই সব বিখ্যাত গল্পের চরিত্র তৈরী হয়েছিল ইনিই সেই মহাবীর। এদিকে মুসান্না একা অল্প কিছু সৈন্য নিয়ে পারস্যর দখল বজায় রাখতে, এই পর্যায়ে খলিফা উমর মুসান্নার সাহায্যার্থে আবু উবাইদার নেতৃত্বে এক বাহিনী পাঠান মুসান্না কে সহায়তা দিতে। ৬৩৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নামারিক নামক স্থানে মহাবীর রুস্তমের মুখোমুখি হয় মুসলিম বাহিনী এবং পারসিক বাহিনী পরাজয় বরন করে। এই যুদ্ধ ইতিহাসে “ব্যাটল অভ নামারিক” নামে পরিচিত।


ব্যাটল অভ ব্রিজ

নামারিকের পরাজয় মহাবীর রুস্তমকে পাগল বানিয়ে দেয়, ৬৩৪ সালের অক্টোবর মাসে এইবার পারসিকরা রনহস্তী বা যোদ্ধা হাতী নিয়ে মুসলমানদের মুখোমুখি হয় জসর নামক স্থানে, এই যুদ্ধ ইতিহাসে “ব্যাটল অভ ব্রিজ” নামে পরিচিত। মরুর বেদুঈনরা হাতীর সাথে পুরাপুরি অপরিচিত থাকায় সেকালের ট্যাঙ্ক নামে খ্যাত এই যোদ্ধা হস্তীর মুখোমুখি হয়ে খেই হারিয়ে ফেলে এবং এই ব্যাটল অভ ব্রিজে শোচনীয় পরাজয় বরন করে। এই যুদ্ধে মুসলিম সেনাপতি আবু উবাইদা (রাঃ) শহীদ হন এবং ৯০০০ মুসলিম সৈন্যের মধ্যে ৬০০০ নিহত হয়। এই যুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধে খলিফা নতুন সেনা প্রেরন করে এইবার বুওয়ায়েব নামক স্থানে উভয় বাহিনী মুখোমুখি হয় এবং মুসলিম বাহিনী জয়ী হলে নিম্ন ইরাক মুসলমানদের হস্তগত হয়। এর অল্প কিছুদিন পর এপ্রিল, ৬৩৫ সালে মুসলিম সেনাপতি মুসান্না (রাঃ) ইন্তেকাল করেন। ইসলাম সম্প্রসারনে এই বীর সাহাবীর অবদান অনস্বীকার্য্য।


ব্যাটেল অভ কাদেশিয়া

বুওয়ায়েবের পরাজয়ের পর পারসিক রাজ আরব বাহিনীকে মোকাবেলা করার জন্য এক লাখ বিশ হাজার সেনার এক বিরাট বাহিনী মহাবীর রুস্তমের নেতৃত্বে প্রস্তুত করেন। ওদিকে খলিফা উমর (রাঃ) হযরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাসের নেতৃত্বে ৩০০০০ সৈন্যের এক বাহিনী পারস্য অভিমুখে পাঠান। দুই বাহিনী ৬৩৭ সালে কাদেসিয়া নামক স্থানে মুখোমুখি হয়। ইতিহাসে এই যুদ্ধ “ব্যাটেল অভ কাদেশিয়া” নামে পরিচিত তিন দিনের এই যুদ্ধে মহাবীর রুস্তম নিহত হন এবং পারস্য বাহিনীর পরাজয় ঘটে। এর অল্পদিনের মাঝে জালুলা যুদ্ধে মুসলিম বিজয় পারস্যের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেয়া হয়, পারস্য সম্রাট বাধ্য হয় মুসলমান খলিফার সাথে সন্ধি করতে। এই চুক্তি অনুযায়ী ইরাক খলিফার এলাকা এবং পারস্য পর্বতমালার অপর অংশ পারস্য সম্রাটের এলাকা হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। এরপর ৬৪১ সালে আলবুর্জ পাহাড়ের পাদ দেশে নিহাওয়ান্দে দেড় লাখ পারস্য সৈন্যর মুখোমুখি হয় ৩০০০০ মুসলিম সৈন্য এবং বিজয় লাভ করে এবং মুসলিম সাম্রাজ্য আজারবাইজান এবং খোরশান পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। এর পর ৬৪৩ সালে মাকরান বিজয় দিয়ে মুসলিম সাম্রাজ্য ভারতের সীমানা স্পর্শ করে কিন্তু ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে না। পারস্য বিজয় সমাপ্তি ঘটে। ( দেখুন এবং চাইলে ডাউনলোড করুন The Muslim Conquest of Persia)



এইবার দৃষ্টি দেয়া যাক বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের দিকে। সেদিকে তখন সেনাপতি আমর ইবনুল আস এবং পারস্যের হীরা থেকে আগত খালিদ বিন ওয়ালিদ অভিযান শুরু করে। আমর ইবনুল আস খলিফার নির্দেশে ফিলিস্তিনের বিজিত অংশে অবস্থান নেন আর খালিদ বিন ওয়ালিদ সিরিয়া বিজয়ের জন্য অগ্রসর হয়। খালিদ দামেস্ক নগরী ৬ মাস অবরোধ করে রাখেন এবং সেপ্টম্বর ৬৩৫ সালে এই নগরী বিজয় করেন। ওদিকে দামেস্কের পতন ঠেকাতে বাইজান্টাইন সম্রাট যে বাহিনী প্রেরন করেন তাদের সাথে মুসলিম বাহিনীর যুদ্ধ হয় জর্ডানের মাটিতে। এই যুদ্ধ “ফিহলের যুদ্ধ” নামে পরিচিত। এরপর মুসলমান বাহিনী হিমসের দিকে অগ্রসর হয়ে হিমস দখল করে এবং খলিফার নির্দেশে আর অগ্রসর না হয়ে খালিদ দামেস্কে, আমর ইবনুল আস জর্ডানে এবং হিমসে অবস্থান নেন সেনপতি আবু উবাইদা। এবং যে যার অঞ্চলে শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত করতে খলিফা দ্ধারা নির্দেশিত হন।


“ব্যাটেল অভ ইয়ারমুক”

দামেস্ক, জর্ডান, হিমসের পতনের পর বাইজান্টাইন সম্রাট হিরাক্লিয়াস তার ভাই থিওডোরাসের নেতৃত্বে দুই লাখ চল্লিশ হাজার (এই সংখ্যা নিয়ে অনেক জায়গায় দ্বিমত আছে তবে নিম্নে দেড় লাখ উপরে চার লাখ পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় বর্ননা আছে) সৈন্যের এক বিশাল বাহিনী প্রেরন করেন এই বাহিনীকে প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে আমর ইবনুল আস এবং আবু উবাইদার নেতৃত্বে ইয়ারমুক নামক স্থানে অবস্থান নেয়। ওদিকে খালিদ বিন ওয়ালিদ ও এসে এখানে অবস্থান নেয় তাদের সম্মিলিত সৈন্য সংখ্যা ছিল ৩৫০০০ থেকে ৪০০০০। প্রায় মাসাধিক কাল এই ইয়ারমুকে যুদ্ধ সংগঠিত হয় এবং বাইজান্টাইন বাহিনী পরাজিত হয় সময় ৬৩৬ খ্রিষ্টাব্দ। ইতিহাসে এই যুদ্ধ “ব্যাটেল অভ ইয়ারমুক” নামে পরিচিত। বাইজান্টাইনদের পক্ষে প্রায় এক লাখ সৈন্য ( অল্প কিছু এদিক ওদিক আছে বিভিন্ন ঐতিহাসিকের মতে) আর মুসলমানদের পক্ষে তিন হাজারের মত সৈন্য নিহত হন। সেনাপতি থিওডোরাসও নিহত হন। পারস্য বিজয়ে যেমন কাদেশিয়ার যুদ্ধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন তেমনি ইয়ারমুক যুদ্ধও বাইজান্টাইন দখলে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ন বলে বিবেচিত হয়। এই যুদ্ধে বাইজান্টাইনদের মনোবল ভেঙ্গে যায়। মুসলমানদের সিরিয়া বিজয়ের সব বাধা প্রায় দূরীভুত হয়।

এখানে মুসলিম ইতিহাসের এক অন্যতম বড় ঘটনা ঘটে, ইয়ারমুকের যুদ্ধের অব্যাবহিত পরেই খলিফা উমর “সাইফুল্লাহ” (আল্লাহর তরবারি) উপাধিপ্রাপ্ত হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদকে পদচ্যুত করেন। খালিদ অপরাজেয় হওয়ায় অনেক মুসলিম তার কারণে যুদ্ধে বিজয় অর্জিত হচ্ছে বলে বিশ্বাস করতে শুরু করে। এই ব্যাপারে উমর বলেছিলেন :"আমি খালিদ বিন ওয়ালিদকে আমার ক্রোধ বা তার দায়িত্বহীনতার কারণে অব্যাহতি দিই নি, এর কারণ ছিল আমি লোকদের জানাতে চাইছিলাম যে বিজয় আল্লাহর তরফ থেকে আসে।" (দেখুন Conquerors of Palestine Through Forty Centuries by Allenby, Viscount, পৃঃ ৭০) এখানে আরো একটু বর্ননা না দিলেই নয় খালিদ মারাশ অধিকার করার কিছুকাল পর জানতে পারেন যে খ্যাতনামা কবি আশ’আস খালিদের প্রশংসা করে কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন। খালিদ তাকে ১০,০০০ দিরহাম উপহার হিসেবে দেন। উমর এই ঘটনাকে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় হিসেবে বিবেচনা করেন। উমর আবু উবাইদাকে চিঠি লিখে আশ’আসকে দেয়া খালিদের অর্থের উৎস বের করার নির্দেশ দেন। বলা হয়েছিল যে যদি খালিদ রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে দেন তবে তা ক্ষমতার অপব্যবহার। আর যদি তিনি নিজের অর্থ প্রদান করেন তবে তা অপচয়। উভয় ক্ষেত্রেই তিনি দোষী সাব্যস্ত হবেন। ( দেখুন A history of Palestine, 634–1099 by Gil, Moshe পৃঃ ৪৭)। যাই হোক এনিয়ে চাইলে অনেক কিছু লেখা যায় তবে কথা না বাড়াই, ইতিহাসের বীর অন্যতম সেনাপতি হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ খলিফার কথা মেনে নিয়ে পদত্যাগ করেন বিনা প্রশ্নে। এই ঘটনা ৬৩৮ সালে। হযরত খালিদের জায়গায় দায়িত্ব নেন হযরত আমর। (দেখুন আল্লাহর তরবারী খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা) )


Map of the Muslim invasion of Syria and the Levant
(September 636 to December 637)


খলিফা ওমরের শাসনকালের অন্যতম উল্লেখ্য যোগ্য ঘটনা জেরুজালেম বিজয় সময় কাল ৬৩৭ সাল। তখন জেরুজালেমের দায়িত্বে ছিলেন বাইজেন্টাইন সরকারের প্রতিনিধি ও স্থানীয় খ্রিস্টান গীর্জার প্রধানঃ যাজক সোফ্রোনিয়াস। খালিদ ইবন আল-ওয়ালিদ (রাঃ) এবং আম্‌র ইবন আল-আস্ (রাঃ) এর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী শহর অবরোধ করা শুরু করলেও উমর (রাঃ) নিজে এসে আত্মসমর্পণ গ্রহণ না করলে আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানান যাজক সোফ্রোনিয়াস।

এমন পরিস্থিতির খবর পেয়ে উমর ইবন আল-খাত্তাব (রাঃ) একাই একটি গাধা এবং এক চাকরকে নিয়ে মদীনা ছেড়ে জেরুজালেমের উদ্দেশে যাত্রা করেন। জেরুজালেমে সোফ্রোনিয়াস তাঁকে স্বাগত জানান। মুসলিমদের খলিফা, তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি উমর (রাঃ) ছিলেন খুব সাধারণ বুননের পোষাকে। তাঁকে ও ভৃত্যের মধ্যে কে উমর তা আলাদা করা যাচ্ছিলনা। এ অবস্থা দেখে সোফ্রোনিয়াস খুবই বিস্মিত হন।



এরপর উমর (রাঃ) কে পবিত্র সমাধির গীর্জাসহ পুরো শহর ঘুরিয়ে দেখানো হয়। নামাজের সময় হলে সোফ্রোনিয়াস তাঁকে গীর্জার ভেতর নামাজ আদায় করার আমন্ত্রণ জানান, কিন্তু উমর (রাঃ) তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, যদি তিনি সেখানে নামাজ আদায় করেন তাহলে পরবর্তীতে মুসলিমরা এই অজুহাত দেখিয়ে গীর্জাকে মসজিদে রূপান্তরিত করবে – যা খ্রিস্টান সমাজকে তাদের একটি পবিত্র স্থান থেকে বঞ্চিত করবে। বরং উমর (রাঃ) গীর্জার বাইরে নামাজ আদায় করেন যেখানে পরবর্তীতে একটি মসজিদ নির্মিত হয় (যা “মসজিদে উমর” নামে পরিচিত)।

৬৪০ সালে সমগ্র সিরিয়া, ফিলিস্তিন, পারস্য বিজয় সম্পন্ন হলে এক আকস্মিক সমস্যা তৈরী হয়, তা হল দুর্ভিক্ষ এবং মহামারী। এতে প্রায় ২৫০০০ মানুষ মারা যায়, এমন কি মুসলিম সেনাপতি আবু উবাইদা, ইয়াজিদ এবং সোরাহবিলও মারা যান। খলিফা নিজে সিরিয়ায় উপস্থিত হয়ে এই দুর্যোগ মোকাবিলা করেন। এখানে আর একটা ব্যাপার উল্লেখ্য করতে হয় উমার (রা) এর বিখ্যাত একটি উক্তি রয়েছে, তিনি বলেছিলেন সেই দুর্ভিক্ষের সময়, “আজ যদি ফোরাতের তীরে একটা কুকুর না খেতে পেয়ে মারা যায়, তবে তার জন্য আমি উমার আল্লাহ্‌র কাছে দায়ী থাকব।”

খলিফা যখন জেরুজালেম আসেন তখন সেনাপতি আমর ইবনুল আস তার কাছ থেকে মিশর দখলের অনুমতি নিয়ে নেন। মিশর দখলের উদ্দেশ্যে ৬৩৯ সালে ১২ ই ডিসেম্বর আমর ইবনুল আস তার সেনাবাহিনী সহ রওনা হন পথে ৬৪০ সালে হেলিওপোলিসের যুদ্ধে মুসলমানরা বাইজাইন্টাইনদের পরাজিত করে এর পর অগ্রসর হয়ে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া অবরোধ করেন এবং ৬৪১ খ্রিষ্টাব্দের ৮ ই নভেম্বর এই শহরের পতন ঘটে।

খলিফা উমরের শাসনকাল মুলতঃ মুসলিম সাম্রাজ্যের সম্প্রসারন কাল। অসংখ্য বীর সেনাপতি এবং সৈন্যদের অসাধারন ত্যাগের মাধ্যমে মুসলমানরা বিভিন্ন রাজ্য দখল করে এক শক্ত ভীতের ওপর দাড়ায়। তার সময় ইসলাম যেমন শক্তভীতের ওপর দাঁড়ায় তেমনি ইসলামের বিপর্যয়ের ক্ষীন আভাষ ও দেখা দেয় কথিত আছে পারস্যের লুন্ঠিত মালামাল যখন মদীনায় পাঠানো হয়েছিল তখন খলিফা ওমর কেঁদে দিয়ে বলেছিলেন, “এই সমস্ত লুন্ঠিত দ্রব্যের মাঝে আমি আমার লোক জনের ভবিষ্যত ধ্বংস দেখতে পাচ্ছি।” বাইজান্টাইন এবং পারস্য দখল করার পর মুসলমানদের মাঝে বিলাসিতা আর ভোগের প্রতি আসক্তির জন্ম নেয়া শুরু হল। তবে উমর (রাঃ) তা রোধ করার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেন।

খলিফা উমর তার বিশাল খেলাফতে কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি প্রদেশিক শাসন ব্যাবস্থা চালু করছিলেন। খলিফার একছত্র ক্ষমতার অধিকারী হয়েও তিনি একটা আইনসভা বা পরামর্শ সভা গঠন করেন। তিনি ঘোষনা দেন “পরামর্শ ছাড়া কোন খেলাফত চলতে পারে না”। এই পরামর্শ সভা দুই ভাগে বিভক্ত ছিল, মজলিশ- আল আম এবং মজলিশ- আল খাস। এর পাশাপাশি তিনি নিয়মিত বেতনভুক সামরিক বাহিনী, গুপ্তচর বাহিনী তৈরী করছিলেন। একজন ন্যায় পরায়ন শাসক হিসাবে উমর (রাঃ) ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন সেক্ষেত্রে তার বিচার ব্যাবস্থা ইসলামের ইতিহাসে যে উদাহরন হয়ে থাকবে সে তো খুব স্বাভাবিক।

সে আমলের তুলনায় নিজে শিক্ষিত ছিলেন বিধায় শিক্ষা ব্যাবস্থা প্রসারে হযরত উমরের বিশাল অবদান আছে যা বিস্তারিত লেখা এখানে সম্ভব না, একই সাথে তার জনহিতকর কাজের বিবরন দেয়াও এই স্বল্প পরিসরে প্রায় অসম্ভব বিধায় সেদিকে আর যাব না। কা’বা শরীফের সম্প্রসারন, মসজিদে নববীর সংস্কার ও সম্প্রসারন ও তার হাত দিয়ে ঘটে। মসজিদে আলো এবং সুগন্ধির ব্যাবস্থা ও তিনি করেন, ইমাম মুয়াজ্জিনদের বেতন ভাতাও তার একটি উল্লেখ্য যোগ্য কাজ। ইসলামী মুদ্রার প্রচলন তার উল্লেখ্যযোগ্য কাজের একটি। তার সময় বিভিন্ন চুক্তির মাধ্যমে অমুসলিমদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত ছিল। এই পর্যায়ে এসে হযরত উমর (রাঃ) কাজের বিবরন বাড়ালে এই লেখা শেষ করা সম্ভব হবে না। তাই আপাতত ক্ষান্ত দিয়ে তার মৃত্য এবং উত্তারাধিকারী নির্বাচন দিয়ে লেখা শেষ করব।

৬৩৬ সালে যখন পারস্যের রুস্তম পরাজিত হন, তখন তাঁর বাহিনীর এক সেনা ক্রীতদাস হিসেবে মুসলিমদের অধিকারে আসে। তার নাম ছিল ফিরোজ ওরফে আবু লুলু। তাঁকে মুগিরা (রা) এর অধিকারে দেয়া হয়। ফিরোজ অবশ্য মুসলিম ছিল না।একদিন ফিরোজ হযরত উমার (রা) এর কাছে এলো এবং বলল যে মুগিরা (রা) তার উপর বেশি কর আরোপ করেছেন। উমার (রা) মুগিরার উত্তর তলব করলেন। মুগিরা (রা) এর উত্তর সন্তোষজনক ছিল। উমার (রা) তখন ফিরোজকে বললেন, “তুমি নাকি ভালো বায়ুকল বানাও, আমাকেও বানিয়ে দাও একটা।” ফিরোজ উত্তর দেয়, “আমি এমন কল আপনাকে বানিয়ে দেব যে সারা বিশ্ব মনে রাখবে।”

উমার (রা) জানতেন না ফিরোজকেই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে উমার (রা)-কে হত্যার, পারস্য জয়ের প্রতিশোধ হিসেবে। সেদিন রাত্রে হযরত আবু বকর (রা) এর পুত্র আব্দুল রাহমান দেখলেন হরমুজান, ফিরোজ আর জাফিনা (খ্রিস্টান) এক জায়গায় জটলা হয়ে কথা বলছে। এমনিতে এটা অস্বাভাবিক কিছু ছিল না। কিন্তু তাঁর উপস্থিতি টের পেতেই ফিরোজের হাত থেকে একটা দুই-মুখা ছোড়া পড়ে গেল। এই ছোরাটা যে হরমুজানের ছোরা সেটা তিনি জানতেন। কিন্তু এখানে কোনো অপরাধ সংঘটিত হচ্ছিল না যে সেটা দেখে ব্যবস্থা নিতে হবে।

পরদিন ভোরবেলা, ৬৪৪ সালের ৩১ অক্টোবর। ফিরোজ মসজিদে নববীতে গিয়ে ফজরের নামাজে ইমামতি করতে থাকা উমার (রা)-কে উপর্যুপরি ছয় বার আঘাত করল পেটে এবং শেষে নাভিতে। নাভির ক্ষতটা ছিল মরণক্ষত। উমার (রা) পড়ে গেলেন। ফিরোজ পালাতে গেল। কিন্তু চারপাশে এতো মানুষ ছিলো যে সে পালাতে পারল না। কিন্তু পালাতে গিয়ে আরো ১২ জনকে আঘাত করল যার ৬ বা ৯ জন পরে মারা যান। তারপর নিজের ছোরা দিয়ে আত্মহত্যা করে ফিরোজ।

পরে আব্দুল রাহমান সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, এ ছোরাই তিনি ফিরোজের হাতে দেখেছিলেন সেই রাতে, যেখানে হরমুজান আর জাফিনা ছিলেন। এ ঘটনা জানবার পর উমার (রা) এর পুত্র উবাইদুল্লাহ ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে হরমুজান ও জাফিনাকে হত্যা করেন। এমনকি ফিরোজের কন্যাকেও হত্যা করে ফেলেন প্রতিশোধের আগুনে, যদিও কথিত আছে সেই কন্যা মুসলিম ছিলেন। প্রমাণ ব্যতীত এই প্রতিশোধ-হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করায় মৃত্যুশয্যায় শায়িত উমার (রা) নিজ পুত্রকে কারাবন্দী করবার নির্দেশ দেন, এবং বলে যান পরবর্তী খলিফা যা ভালো মনে করেন সেটাই সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁর ব্যাপারে। একজন অমুসলমানের হাতে মৃত্যুঘাতী আঘাত প্রাপ্ত হবার পরো তিনি বলে গেছেনঃ “তোমরা অমুসলিম প্রজাদের সাথে উত্তম ব্যাবহার করবে” (দেখুন আল বুখারী, কিতাবুল জিযযা, অধ্যায় ৩)।

উমার (রা) তিন দিন পর এই ক্ষত থেকে মারা যান। দিনটি ছিলো ৬৪৪ সালের ৩ নভেম্বর বুধবার। মারা যাবার আগে উমার (রা) ছয়জনকে নিয়োগ দিলেন একটি কমিটি গঠন করতে। এদের মাঝেই নিজেরা আলোচনার মাধ্যমে খলিফা নির্বাচিত করবেন। এ ছয়জনই ছিলেন সেই ১০ সাহাবীর অন্তর্গত যাদের সম্পর্কে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) বলে গিয়েছিলেন যারা নিশ্চিত বেহেশতে যাবেন। তালিকায় আরও একজন ছিলেন, কিন্তু তাঁকে উমার (রা) বাদ দেন আত্মীয় বিধায়। কারণ তিনি চাননি নিজের আত্মীয় কাউকে খলিফা নিয়োগ দিয়ে যেতে। এই ছয়জনের ছিলেনঃ হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (রাঃ), হযরত উসমান ইবনে আফান (রাঃ), হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ), হযরত সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রাঃ), হযরত যুবাইর ইবনে আউয়াম (রাঃ), হযরত তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ (রাঃ)

উমার (রা) চাইলেন তাঁর কবর যেন আবু বকর (রা) আর হযরত মুহাম্মাদ (সা) এর কবরের পাশেই হয়। যেহেতু এ কবর দুটো ছিল আইশা (রা) এর প্রাক্তন ঘরে, তাই তিনি তাঁর কাছেই অনুমতি চাইতে পাঠালেন কাউকে। ক্রন্দনরত আইশা (রা) জানালেন, তিনি নিজের কবরের জন্য সেই ঘরের বাকি জায়গাটা রাখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু উমার (রা) অধিকতর শ্রেয়, অবশ্যই তাঁর কবর ওখানে হবে।


ডান দিক থেকে প্রথম জানালা দিয়ে উঁকি দিলে আপনি হযরত উমার (রা) এর কবর দেখতে পারবেন

১০ বছর ২ মাস খেলাফত কালে ৬০ বছর বয়সে ইসলামের এই দ্বিতীয় খলিফা ৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা নভেম্বর তারিখে উমার (রা) মারা যাবার পর তাঁকে মসজিদে নববীতে রাসুল (সা) এর পাশে সমাহিত করা হয়।


আততায়ী ফিরোজ বা আবু লুলুর কথিত সমাধি ইরানের কাশান থেকে ফিন্স যাবার পথে পড়ে।

এই লেখা লিখতে গিয়ে অনেক শিয়া মতবাদ দেখতে হয়েছে যা সুন্নী মতবাদের সাথে ভীষন বিতর্কিত তাই সেগুলো বাদ দিয়ে লিখছি যেমন হযরত উমর (রাঃ) হত্যাকারী আবু লুলু শিয়াদের কাছে অনেক সন্মানিত। আততায়ী ফিরোজ বা আবু লুলুর কথিত সমাধি ইরানের কাশান থেকে ফিন্স যাবার পথে পড়ে। অনেকটা মাজারের মতো। ইরানের শিয়া মতবাদে হযরত উমার (রা)-কে অন্যায় খলিফা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। উমার (রা)-কে হত্যা করায় ফিরোজের উপাধি হয় বাবা সুজাউদ্দিন (‘ধর্মের বীর রক্ষক’)। উমার (রা) এর মৃত্যুদিবস ৯ রবিউল আওয়াল কিছু কিছু ইরানি গ্রামে উদযাপিত হয়। আগে অনেক জায়গায় হতো, কিন্তু কিছু আরব বিদ্রোহের পর সেটা নিষিদ্ধ করা হয়। এই উদযাপনের নাম জাশ্নে ওমার কোশি (‘উমার নিধন উদযাপন’)। ২০১০ সালে ফিরোজের মাজার ধ্বংস করবার জন্য International Union for Muslim Scholars অনুরোধ জানায়। কিন্তু ইরান এটাকে ইরান-বিরোধী দাবি হিসেবে প্রত্যাখ্যান করে। প্রখ্যাত আল-আযহার ইউনিভার্সিটিও এই মাজার ধ্বংস করতে বলে। এর ফলে ইরান এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে। তবে শেষ পর্যন্ত ২০১০ সালে মাজারটি বন্ধ করে ইরান। এখন সেটা স্থানীয় পুলিশের হেড অফিস।

শিয়া মতবাদে উমার (রা)-কে কিছু কারণে অত্যন্ত ঘৃণা করা হয়। কারণ হিসেবে বলা হয়, গাদির খুম এর একটি বিখ্যাত ঘটনা পরিপ্রেক্ষিতে ফাতিমা (রা), আলী (রা) ও তাঁর পক্ষের লোকজন মনে করেছিলেন আলী (রা) হবেন প্রথম খলিফা। যদিও আলী (রা) পরবর্তীতে আবু বকর (রা) এর কাছে বাইয়াত দিয়েছিলেন, কিন্তু শিয়া মতবাদে এখনও সেটাই বিশ্বাস করা হয়। এজন্য প্রথম তিন খলিফাকে তারা অস্বীকার করে, এবং ব্যক্তি বিশেষে অভিসম্পাত বর্ষণ করে থাকে। অবশ্য হযরত মুহাম্মাদ (সা) এর হাদিস অনুযায়ী তাঁরা সকলেই নিশ্চিত বেহেশতবাসী ১০ জনের মধ্যে অন্তর্গত। শিয়া মতবাদ অনুযায়ী, যখন আবু বকর আলী (রা) এর আনুগত্য আনতে ফাতিমা (রা) এর বাসায় যান তখন সেখানে আলী (রা)-ও অবস্থান করছিলেন। বলা হয়, উমার (রা) হুমকি দেন বাসা পুড়িয়ে দেবার যদি আলী (রা) বেরিয়ে না আসেন। বেরিয়ে না আসাতে উমার (রা) নাকি দরজা লাথি দিয়ে ঢুকে পড়েন যার ফলে ফাতিমার গায়ে আঘাত লাগে, ফলশ্রুতিতে এক পর্যায়ে তাঁর গর্ভপাত হয়, তাঁর সন্তান মুহসিন গর্ভে ছিল। কোনো কোনো শিয়া মতে বলা হয়, আলী (রা) তরবারি তুলে দৌড়ে আসেন, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে বলা হয় জুবাইর (রা) উমার (রা)-কে মুকাবিলা করতে যান তরবারি হাতে। তবে সুন্নি মতবাদ অনুসারে এরকম কোনো ঘটনা আদৌ ঘটেনি। আলী (রা) এবং উমার (রা) এর ভালো সম্পর্ক ছিল, এমনকি আলী (রা) এর মেয়েকে তিনি বিবাহ করেছিলেন পর্যন্ত। যেখানে আলী (রাঃ) তার কন্যা উম্মে কুলসুম (রাঃ) কে হযরত উমর (রাঃ) এর সাথে বিয়ে দেন সেখানে ওই সব শিয়া ধারনা আমার কাছে একান্তই ভ্রান্ত মনে হয়েছে ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোন থেকে।

পরের পর্বঃ খোলাফায়ে রাশেদিন হযরত উসমান ইবনে আফফান (রাঃ)

নোটঃ এই লেখা গুলো লিখতে গিয়ে আমি ধর্মীয় দৃষ্টিকোন ব্যাবহারের থেকে ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোনের প্রতি বেশী খেয়ালা রেখেছি, তারপরো কোথাও যদি কোন ভুল কারো কাছে পরিলক্ষিত হয় দয়া করে রেফারেন্স সহ জানালে কৃতজ্ঞতার সাথে ঠিক করে দেব। পরিসরের কারনে অনেক কিছুই বাদ দিয়ে যেতে হয়েছে যা আমার ইচ্ছা কৃত না একান্ত অনিচ্ছাকৃত।

মন্তব্য ৪২ টি রেটিং +১৪/-০

মন্তব্য (৪২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা মার্চ, ২০২০ রাত ২:৪৩

স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: আবারো আরেকটি চমৎকার পোস্ট | রুস্তুমের সাথে মুসলিম বাহিনীর যুদ্ধের বিষয়টি অজানা ছিল | এটা খুবই দুঃখজনক, মুসলিম বিশ্ব তার অতীত গৌরব হারিয়ে ধীরে ধীরে ক্ষমতার অপব্যবহার, লোকদেখানো আচার-অনুষ্ঠান, ভোগ-বিলাস, দুর্নীতি সহ নানান পাপাচারের দিকে অধিক ঝুকে পড়েছে |

০১ লা মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:৪৩

শের শায়রী বলেছেন: প্রথমেই অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা স্বামীজি। এটা খুব স্বাভাবিক যেখানেই অর্থ বিত্ত প্রতিপত্তি আসবে সেখানেই ক্ষমতার অপব্যবহার, লোকদেখানো আচার-অনুষ্ঠান, ভোগ-বিলাস, দুর্নীতি সহ নানান পাপাচারের আবির্ভাব ঘটবে যা পোষ্টে হযরত উমর (রাঃ) একটা মন্তব্যে পরিস্কার বুঝা যায়ঃ

পারস্যের লুন্ঠিত মালামাল যখন মদীনায় পাঠানো হয়েছিল তখন খলিফা ওমর কেঁদে দিয়ে বলেছিলেন, “এই সমস্ত লুন্ঠিত দ্রব্যের মাঝে আমি আমার লোক জনের ভবিষ্যত ধ্বংস দেখতে পাচ্ছি।”

পরের পর্বগুলোতে সাথে থাকার সর্নিবদ্ধ অনুরোধ থাকল।

২| ০১ লা মার্চ, ২০২০ রাত ৩:১১

চাঁদগাজী বলেছেন:


এগুলো কি ইতিহাস থেকে নিচ্ছেন, নাকি আপনি আবিস্কার করছেন? আপনার নিজের অবদান কি এখানে?

০১ লা মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:৫৪

শের শায়রী বলেছেন: আপনারে নিয়া আমি কি করুম কন দেহি মুরুব্বী? একটা প্রশ্নও ঠিক ভাবে করতে পারেন না। এই জন্যই বলি আমেরিকার নিউজ পেপার পড়েই সব জ্ঞান আহরন করা যায় না, অন্যান্য কিছুও পড়তে হয়। আপনি লিখছেন এগুলো কি ইতিহাস থেকে নিচ্ছেন, নাকি আপনি আবিস্কার করছেন? এখানে আমার আবিস্কার কোন টুকু সেটুকু একটু দেখান, বাকী টুকু সব ইতিহাস, বুজতে পারছেন নাকি পারেন নাই? আপনার তো আবার আমেরিকার নিউজ পেপারে কিছু না আসলে বুজে আসে না।

আবার লিখছেন আপনার নিজের অবদান কি এখানে? ইতিহাসে আমার অবদান রাখতে হলে সেই আমলে আমাকে সেখানে উপস্থিত থাকতে হবে এটুকু সাধারন জ্ঞান ও কি আপনার নাই? অবশ্য না থাকারই কথা, থাকেন তো আমেরিকা, সেখানে কার অধিকাংশ মানুষের সাধারন জ্ঞান এই দেশের সব থেকে অশিক্ষিত যে মানুষটা তার পায়ের নখের সমান ও না। আর যদি বর্তমান অবদানের কথা বলেন, তবে বলি জাষ্ট বিভিন্ন বই পত্র নেট ঘেটে তথ্যগুলো এক করার চেষ্টা করা মাত্র, যদিও সমস্ত বিবরনের হাজার ভাগের এক ভাগও না কারন এটা ব্লগ উপযোগী করে উপস্থাপনের চেষ্টা মাত্র।

অশেষ ধন্যবাদ আপনার জ্ঞান গর্ভ আলোচনার জন্য। আমি গর্ভবতী হয়ে গেছি আপনার সাথে আলোচনার করতে পেরে।

৩| ০১ লা মার্চ, ২০২০ রাত ৩:১৩

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনার এই ধরণের লেখাগুলোতে বারবার এসেছে, "১০ জন সাহাবী নিশ্চিত বেহেশতে যাবেন"; বেহেশতে কি অগ্রিম রিজার্বেশন নেয়া হয়?

০১ লা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:০৩

শের শায়রী বলেছেন: শিক্ষা এবং জ্ঞানের স্বল্পতার কারনে অনেকেই এগুলো জানে না, অবশ্য তা দোষেরও কিছু না। হ্যা বেহেশতের অগ্রিম সুসংবাদ দশ জন সাহাবী নবী করিম (সাঃ) কাছ থেকে পেয়েছিলেনে। এনিয়ে অনেক হাদীস আছে, অবশ্য কেউ কেউ আছে যারা হাদীস তো দূরে থাক পবিত্র কোরান ও মানে না যদিও তাদের জন্ম মুসলিম পরিবারে। তো যারা মানে তারা জানে, আপনার অবগতির জন্য নিম্নোক্ত লেখাটাঃ

আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, ‘তোমরা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবিদের গালাগাল করো না। কেননা তাদের এক মুহূর্তের (ইবাদতের) মর্যাদা তোমাদের প্রত্যেকের জীবনের আমলের চেয়ে বেশি।’ (ইবন মাজা : ১৬২; )

সামগ্রিক বিচারে সাহাবাগণ সকলে অন্য সকল উম্মত অপেক্ষা উত্তম। তবে সাহাবারা নিজেরা কিন্তু সকলে একই স্তরের নন। বরং কেউ কেউ মর্যাদায় অন্যদের চেয়ে উত্তম। তাদের নিজেদের মধ্যে মর্যাদার দিক তেকে বিভিন্ন শ্রেণি-বিন্যাস ও স্তর রয়েছে।

তবে সাহাবাগণের মধ্যে এমন দশ সাহাবা রয়েছেন, যারা জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশ সাহাবি বলে পরিচিত। আরবি আশারা শব্দের অর্থ দশ। আর মুবাশশারা শব্দের অর্থ সুসংবাদপ্রাপ্ত। অর্থাৎ যারা দুনিয়ায় বেহেশেতের সুসংবাদ পেয়েছে তাদের আশারায়ে মুবাশশারা বা বেহেশেতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশ সাহাবি বলা হয়।

তাদের সম্পূর্ণ তালিকা হলো:

– হযরত আবূ বাকর সিদ্দীক (রা)
– হযরত উমার বিন খাত্তাব (রা)
– হযরত উসমান বিন আফফান (রা)
– হযরত আলী বিন আবি তালিব (রা)
– হযরত আবূ উবাইদাহ বিন জাররাহ (রা)

– হযরত সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা)
– হযরত আবদুর রহমান বিন আওফ (রা)
– হযরত যুবাইর বিন আওম (রা)
– হযরত তালহা বিন উবায়দুল্লাহ (রা)
– হযরত সাঈদ বিন যায়দ (রা)।

এই দশজন সাহাবি সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তাদের মর্যাদা সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আবু বকর জান্নাতি, উমর জান্নাতি, উসমান জান্নাতি, আলী জান্নাতি,তালহা জান্নাতি, যুবাইর জান্নাতি, আবদুর রহমান জান্নাতি, সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস জান্নাতি, সাঈদ ইবনে যায়েদ জান্নাতি এবং আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ (রা.)। -তিরমিজি

আগে জানুন মুরুব্বী তারপর না হয় তর্কে আসবেন। জানা মানেই বিশ্বাস অবিশ্বাস না। কিন্তু না জেনে গড় পড়তা আমেরিকানদের মত প্রশ্ন করলে কেমনে কি? আধুনিক যুগে এগুলো জানা খুবই সহজ। শুধু আমেরিকান পেপারের বাংলা অনুবাদ দিয়ে ব্লগ লেখায় নিজেকে ব্লগার দাবী করা...... :>

৪| ০১ লা মার্চ, ২০২০ ভোর ৫:৪৪

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
ইসলামের ইতিহাস - যা দেখা যায় -

যোদ্ধা দল গঠন,
যুদ্ধ,
রক্তগংগা,
নগর লুন্ঠন।
দহলকৃত নগরকে ধ্বংশস্তুপে পরিনত করা।
নগরের যুদ্ধবন্দি পুরুষ নাগরিকদের হত্যা
মহিলা শিশুদের দাস-দাসী বানানো।

যুদ্ধশেষে নর্মাল সময়টাতে
ষড়যন্ত্র
হত্যা
পালটা ষড়যন্ত্র আততায়ী দিয়ে হত্যা।
গৃহযুদ্ধ।
আর ষড়যন্ত্র হজরত মুহম্মদ (স) ওফাতের আগে থেকেই চলছিল।

ইসলামী ইতিহাসে ও পরবর্তিতে শান্তি খুজে পাওয়া যায় না।

০১ লা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:১১

শের শায়রী বলেছেন: হাসান ভাই, ভালো বলছেন। তবে আমার ধারনা ছিল আপনি বোধ হয় নিরপেক্ষ ভাবে এই সব বিষয়ে কিছু জ্ঞান আছে, কিন্তু আপনার এই মন্তব্যে মনে হল আপনি খুব সম্ভবতঃ দরজার এক পিঠটাই দেখতে পান। যার কারনে লিখছেন ইসলামী ইতিহাসে ও পরবর্তিতে শান্তি খুজে পাওয়া যায় না। যাই হোক এক পিঠ কেন এক পিঠের ভগ্নাংশ দেখেও আপনার মন্তব্য দেবার অধিকার আছে, এটাই ব্লগ। এর জবাব দিতে পারতাম কিন্তু নাই বা দিলাম, এই পোষ্টেই অনেক কিছু আছে যা আপনার মন্তব্যের অসারতা প্রমান করে, আমি কিন্তু ধর্মীয় দৃষ্টিকোন দিয়ে বলছি না ঐতিহাসিক দৃষ্টি দিয়েই বলছি। প্রচুর অমুসলিম ঐতিহাসিকের লেখাও আমাকে ইদানিং পড়তে হয়েছে যাদের কেউ কেউ রীতিমত ইসলাম বিদ্বেষীও কিন্তু তারাও আপনার মত এত নিখুত এক তরফা মন্তব্য দেয় নি :)

অনেক অনেক ধন্যবাদ। আশা রাখি সামনে এই সিরিজের দুটো পোষ্ট দেব সেগুলোতেও আপনার মূল্যবান মন্তব্য পাব।

৫| ০১ লা মার্চ, ২০২০ সকাল ৭:১৯

ইসিয়াক বলেছেন: আরেকটি চমৎকার পোষ্ট।
পোষ্টে ভালো লাগা।
নিরন্তর শুভকামনা।
শুভসকাল।

০১ লা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৩৬

শের শায়রী বলেছেন: প্রিয় কবি (অবশ্য ইদানিং দু একটা চমৎকার গল্পও লিখছেন)

পাঠে এবং মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা জানবেন।

৬| ০১ লা মার্চ, ২০২০ সকাল ৯:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: খোলাফায়ে রাশেদিনর সময় আমি থাকলে ভালো হতো।

০১ লা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৪৩

শের শায়রী বলেছেন: প্রিয় রাজীব ভাই এটা শুধু আপনার না আমার মনে হয় সমস্ত মুসলমানের প্রানের আকুতি।

পাঠে এবং মন্তব্যে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা।

৭| ০১ লা মার্চ, ২০২০ সকাল ১০:১৭

করুণাধারা বলেছেন: চার খলিফার মধ্যে ওমর (রা)এর সম্পর্কেই কিছুটা জানতাম, তার সহৃদয়তা এবং ন্যায়বিচারের নানা কাহিনী। কিন্তু আপনার এই পোস্টে ওমর (রা) সম্পর্কে যা লিখেছেন তার কিছুই জানা ছিল না, অনেক পরিশ্রম করে আমাদের অসাধারণ একটা পোস্ট উপহার দিয়েছেন।

আপনার দেয়া লিঙ্কগুলোতেও ঢু মারলাম, অনেক অজানা বিষয় জানা হল। উনার মৃত্যু নিয়ে বিশদ লিখেছেন, যদি এক লাইনে জন্মসাল জানাতেন ভালো হতো, অবশ্য আপনার দেয়া লিঙ্কে দেয়া আছে।

আমার সবসময় জানতে ইচ্ছা হত একটা বেদুইন জাতি কিভাবে অল্প সময়ের মধ্যে যোদ্ধা জাতিতে পরিণত হল, এই লেখা থেকে সেটাও জানলাম... ওমর (রা) ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন মুসলিমরা ভোগ বিলাসে মত্ত হবে, তাই হয়েছে।

আবু লুলুকে নিয়ে একটু পড়তে হবে। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফার হত্যাকারীকে কারা ইরান নিয়ে গেল!! তার কি তবে অনুসারী ছিল!! মুসলমানদের মধ্যে কি সেইসময় থেকেই বিভাজন শুরু হয়েছে!!

আপনার আগের দুটো পোস্ট বুকমার্ক করে রেখেছি, অনেক সময় নিয়ে পড়তে হবে। জানি না লিখতে আপনার কত সময় লেগেছে!!!

০১ লা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৪৯

শের শায়রী বলেছেন: প্রিয় বোন, লিখতে এবং পড়তে গিয়ে নিজের অজ্ঞতাকেই বার বার করুনা করছি, আমি আসলে কত জানি এই ধারনা থেকে। তবে এটা ঠিক লিখতে গিয়ে অপার আনন্দ বোধ করছি। জীবনে কম বই পড়িনি, কিন্তু নিজের ধর্ম নিয়ে প্রায় কিছুই পড়া হয়নি, এই উপলক্ষ্যে অন্ততঃ কিছু তা যত সামান্যই হোক জানা হচ্ছে।

আপানার মন্তব্য আমাকে লিখতে উজ্জীবিত করে। পাঠে এবং মন্তব্যে অশেষ কৃতজ্ঞতা।

৮| ০১ লা মার্চ, ২০২০ সকাল ১০:২৬

নীল আকাশ বলেছেন: আপনি ভাই আমার কাছে সমর্থন চেয়েছেন, আর আপনার লেখার জন্য -
১। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের আগের উম্মাতগণের মধ্যে অনেক মুহাদ্দাস (যার ক্বলবে সত্য কথা অবতীর্ণ হয়) ব্যক্তি ছিলেন। আমার উম্মাতের মধ্যে যদি কেউ মুহাদ্দাস হন তবে সে ব্যক্তি উমর। যাকারিয়া (রহ.)....আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে অধিক বর্ণিত আছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের আগের বনী ইসরাঈলের মধ্যে এমন কতক লোক ছিলেন, যাঁরা নাবী ছিলেন না বটে, তবে ফেরেশতামন্ডলী তাঁদের সঙ্গে কথা বলতেন। আমার উম্মাতে এমন কোন লোক হলে সে হবে ‘উমার (রাঃ)। (বুখারী - আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪১৪, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪২১)
২। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, ‘উমার (রাঃ)-এর লাশ খাটের উপর রাখা হল। খাটটি কাঁধে তুলে নেয়ার পূর্ব পর্যন্ত লোকজন তা ঘিরে দু’আ পাঠ করছিল। আমিও তাদের মধ্যে একজন ছিলাম। হঠাৎ একজন আমার স্কন্ধে হাত রাখায় আমি চমকে উঠলাম। চেয়ে দেখলাম, তিনি ‘আলী (রাঃ)। তিনি ‘উমার (রাঃ)-এর জন্য আল্লাহ্‌র অশেষ রহমতের দু’আ করছিলেন। তিনি বলছিলেন, হে ‘উমার! আমার জন্য আপনার চেয়ে বেশি প্রিয় এমন কোন ব্যক্তি আপনি রেখে যাননি, যাঁর কালের অনুসরণ করে আল্লাহ্‌র নৈকট্য লাভ করব। আল্লাহ্‌র কসম। আমার এ বিশ্বাস যে আল্লাহ্‌ আপনাকে আপনার সঙ্গীদ্বয়ের সঙ্গে রাখবেন। আমার মনে আছে, আমি অনেকবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, আমি, আবূ বাক্‌র ও ‘উমার গেলাম। আমি, আবূ বাক্‌র ও ‘উমার প্রবেশ করলাম এবং আমি, আবূ বাক্‌র ও ‘উমার বাহির হলাম ইত্যাদি।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪১০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪১৭)
৩। হামযাহ (রহঃ)-এর পিতা ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি ঘুমিয়েছিলাম। (স্বপ্নে) দুধ পান করতে দেখলাম যে তৃপ্তির নিদর্শন যেন আমার নখগুলির মধ্যে প্রবাহিত হচ্ছিল। অতঃপর দুধ ‘উমার (রাঃ)-কে দিলাম। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কী ব্যাখ্যা দিচ্ছেন? তিনি বললেন, ইলম। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪০৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪১৩)
৪। ‘আম্‌র ইব্‌নু মায়মূন (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি ‘উমার ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ) –কে আহত হবার কিছুদিন পূর্বে মদীনায় দেখেছি যে তিনি হুযায়ফা ইব্‌নু ইয়ামান (রাঃ) ও ‘উসমান ইব্‌নু হুনায়ফ (রহঃ) –এর নিকট দাঁড়িয়ে তাঁদেরকে লক্ষ্য করে বলছেন, তোমরা এটা কী করলে? তোমরা এটা কী করলে? তোমরা কি আশঙ্কা করছ যে, তোমরা ইরাক ভূমির উপর যে কর ধার্য করেছ তা বহনে ঐ ভূখন্ড অক্ষম? তারা বললেন, আমরা যে পরিমাণ কর ধার্য করেছি, ঐ ভূখন্ড তা বহনে সক্ষম। এতে বাড়তি কোন বোঝা চাপান হয়নি। তখন ‘উমার (রাঃ) বললেন, তোমরা আবার চিন্তা করে দেখ যে, তোমারা এ ভূখন্ডের উপর যে কর আরোপ করেছ তা বহন সক্ষম নয়? বর্ণনাকারী বলেন, তাঁরা বললেন, না। অতঃপর ‘উমার (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্‌ যদি আমাকে সুস্থ রাখেন তবে ইরাকের বিধবাগণকে এমন অবস্থায় রেখে যাব যে তারা আমার পরে কখনো অন্য কারো মুখাপেক্ষী না হয়। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর চতুর্থ দিন তিনি আহত হলেন। যেদিন ভোরে তিনি আহত হন, আমি তাঁর কাছে দাঁড়িয়েছিলাম এবং তাঁর ও আমার মাঝে ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) ছাড়া অন্য কেউ ছিল না। ‘উমার (রাঃ) দু’কাতারের মধ্য দিয়ে চলার সময় বলতেন, কাতার সোজা করে নাও। যখন দেখতেন কাতারে কোন ত্রুটি নেই তখন তাকবীর বলতেন। তিনি অধিকাংশ সময় সূরা ইউসুফ, সূরা নাহ্‌ল অথবা এ ধরণের সূরা প্রথম রাক’আতে তিলাওয়াত করতেন, যেন অধিক পরিমাণ লোক প্রথম রাক’আতে শরীক হতে পারেন। তাকবীর বলার পরেই আমি তাঁকে বলতে শুনলাম, একটি কুকুর আমাকে আঘাত করেছে অথবা বলেন, আমাকে আক্রমণ করেছে। ঘাতক ‘ইলজ’ দ্রুত পলায়নের সময় দু’ধারী খঞ্জর দিয়ে ডানে বামে আঘাত করে চলছে। এভাবে তের জনকে আহত করল। এদের মধ্যে সাত জন শহীদ হলেন। এ অবস্থা দেখে এক মুসলিম তার লম্বা চাদরটি ঘাতকের উপর ফেলে দিলেন। ঘাতক যখন বুঝতে পারল সে ধরা পড়ে যাবে তখন সে আত্মহত্যা করল। ‘উমার (রাঃ) আব্দুর রাহমান ইব্‌নু আউফ (রাঃ) –এর হাত ধরে সামনে এগিয়ে দিলেন। ‘উমার (রাঃ) –এর নিকটে যারা ছিল শুধুমাত্র তারাই ব্যাপারটি দেখতে পেল। আর মাসজিদের শেষে যারা ছিল তারা ব্যাপারটি এর অধিক বুঝতে পারল না যে, ‘উমার (রাঃ)-এর কন্ঠস্বর শুনা যাচ্ছে না। তাই তারা “সুবহানাল্লাহ সুবহানাল্লাহ” বলতে লাগলেন। আব্দুর রহমান ইব্‌নু আউফ (রাঃ) তাঁদেরকে নিয়ে সংক্ষেপে সলাত আদায় করলেন। যখন মুসল্লীগণ চলে গেলেন, তখন ‘উমার (রাঃ) বললেন, হে ইব্‌নু আব্বাস (রাঃ) দেখ তো কে আমাকে আঘাত করল। তিনি কিছুক্ষণ অনুসন্ধান করে এসে বললেন, মুগীরাহ ইব্‌নু শু’বাহ (রাঃ) –এর গোলাম (আবূ লুলু)। ‘উমার (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, ঐ কারিগর গোলামটি? তিনি বললেন, হাঁ। ‘উমার (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্‌ তার সর্বনাশ করুন। আমি তার সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমার মৃত্যু ইসলামের দাবীদার কোন ব্যক্তির হাতে ঘটাননি। হে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তুমি এবং তোমার পিতা মদীনায় কাফির গোলামের সংখ্যা বৃদ্ধি পছন্দ করতেন। ‘আব্বাস (রাঃ) –এর নিকট অনেক অমুসলিম গোলাম ছিল। ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, যদি আপনি চান তবে আমি কাজ করে ফেলি অর্থাৎ আমি তাদেরকে হত্যা করে ফেলি। ‘উমার (রাঃ) বলেন, তুমি ভুল বলছ। কেননা তারা তোমাদের ভাষায় কথা বলে, তোমাদের কিবলামুখী হয়ে সলাত আদায় করে, তোমাদের মত হাজ্জ করে। অতঃপর তাঁকে তাঁর ঘরে নেওয়া হল। আমরা তাঁর সঙ্গে চললাম। মানুষের অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছিল, ইতোপূর্বে তাদের উপর এত বড় মুসীবত আর আসেনি। কেউ কেউ বলছিলেন, ভয়ের কিছু নেই। আবার কেউ বলছিলেন, আমি তাঁর সম্পর্কে আশংকাবোধ করছি। অতঃপর খেজুরের শরবত আনা হল, তিনি তা পান করলেন। কিন্তু তা তার পেট হতে বেরিয়ে পড়ল। অতঃপর দুধ আনা হল, তিনি তা পান করলেন। তাও তার পেট হতে বেরিয়ে পড়ল। তখন সকলেই বুঝতে পারলেন, মৃত্যু তাঁর অবশ্যম্ভাবী। আমরা তাঁর নিকট উপস্থিত হলাম। অন্যান্য লোকজনও আসতে শুরু করল। সকলেই তার প্রশংসা করতে লাগল। তখন যুবক বয়সী একটি লোক এসে বলল, হে আমীরুল মু’মিনীন। আপনার জন্য আল্লাহ্‌র সু-সংবাদ রয়েছে; আপনি তা গ্রহণ করুন। আপনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সাহচর্য গ্রহণ করেছেন, ইসলামের প্রাথমিক যুগেই আপনি তা গ্রহণ করেছেন, যে সম্পর্কে আপনি নিজেই অবগত আছেন অতঃপর আপনি খলীফা হয়ে ন্যায় বিচার করেছেন। অতঃপর আপনি শাহাদাত লাভ করেছেন। ‘উমার (রাঃ) বললেন, আমি পছন্দ করি যে তা আমার জন্য ক্ষতিকর বা লাভজনক না হয়ে সমান সমান হয়ে থাকে। যখন যুবকটি চলে যেতে উদ্যত হল তখন তার লুঙ্গিটি মাটি ছুঁয়ে যাচ্ছিল। ‘উমার (রাঃ) বললেন, যুবকটিকে আমার নিকট ডেকে আন। তিনি বললেন– হে ভাতিজা! তোমার কাপড়টি উঠিয়ে নাও। এটা তোমার কাপড়ের পরিচ্ছন্নতার জন্য এবং তোমার রবের নিকটও পছন্দনীয়। হে ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘উমার, তুমি হিসাব করে দেখ আমার ঋণের পরিমাণ কত। তারা হিসাব করে দেখতে পেলেন ছিয়াশি হাজার (দিরহাম) বা এর কাছাকাছি। তিনি বললেন, যদি ‘উমারের পরিবার পরিজনের মাল দ্বারা পরিশোধ হয়ে যায় তবে তা দিয়ে পরিশোধ করে দাও। অন্যথায় আদি ইব্‌নু কা’ব এর বংশধরদের নিকট হতে সাহায্য গ্রহন কর। তাদের মাল দিয়েও যদি ঋণ পরিশোধ না হয় তবে কুরাইস কবিলা হতে সাহায্য গ্রহণ করবে, এর বাহিরে কারো সাহায্য গ্রহণ করবে না। আমার পক্ষ হতে তাড়াতাড়ি ঋণ আদায় করে দাও। উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশা (রাঃ) –এর খিদমতে এবং বল ‘উমার আপনাকে সালাম পাঠিয়েছে। ‘আমীরুল মু’মিনীন’ শব্দটি বলবে না। কেননা এখন আমি মু’মিনগণের আমীর নই। তাঁকে বল ‘উমার ইব্‌ন খাত্তাব তাঁর সাথীদের পাশে দাফন হবার অনুমতি চাচ্ছেন। ইব্‌ন ‘উমার (রাঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) এর খিদমতে গিয়ে সালাম জানিয়ে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। তিনি বললেন, প্রবেশ কর, তিনি দেখলেন, ‘আয়িশা (রাঃ) বসে বসে কাঁদছেন। তিনি গিয়ে বললেন, ‘উমার ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ) আপনাকে সালাম পাঠিয়েছেন এবং তাঁর সঙ্গীদ্বয়ের পার্শ্বে দাফন হবার জন্য আপনার অনুমতি চেয়েছেন। ‘আয়িশা বললেন, আমার আকাঙ্খা ছিল। কিন্তু আজ আমি এ ব্যাপার আমার উপরে তাঁকে অগ্রগণ্য করছি। ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) যখন ফিরে আসছেন তখন বলা হল– এই যে ‘আবদুল্লাহ ফিরে আসছে। তিনি বললেন, আমাকে উঠিয়ে বসাও। তখন এক ব্যক্তি তাকে ঠেস দিয়ে বসিয়ে ধরে রাখলেন। ‘উমার (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন কী সংবাদ? তিনি বললেন, আমীরুল মু’মিনীন, আপনি যা কামনা করেছেন, তাই হয়েছে, তিনি অনুমতি দিয়েছেন। ‘উমার (রাঃ) বললেন, আলহামদুলিল্লাহ। এর চেয়ে বড় কোন বিষয় আমার নিকট ছিল না। যখন আমার মৃত্যু হয়ে যাবে তখন আমাকে উঠিয়ে নিয়ে, তাঁকে আমার সালাম জানিয়ে বলবে, ‘উমার ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ) আপনার অনুমতি চাচ্ছেন। যদি তিনি অনুমতি দেন, তবে আমাকে প্রবেশ করাবে আর যদি অনুমতি না দেন তবে আমাকে সাধারণ মুসলিমদের গোরস্থানে নিয়ে যাবে। এ সময় উম্মুল মু’মিনীন হাফসা (রাঃ)-কে কতিপয় মহিলাসহ আসতে দেখে আমরা উঠে পড়লাম। হাফসা (রাঃ) তাঁর নিকট গিয়ে কিছুক্ষণ কাঁদলেন। অতঃপর পুরুষরা প্রবেশের অনুমতি চাইলে, তিনি ঘরের ভিতর গেলে ঘরের ভেতর হতে হতেও আমরা তাঁর কান্নার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। তাঁরা বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনি ওয়াসিয়াত করুন এবং খলীফা মনোনীত করুন। ‘উমার (রাঃ) বললেন, খিলাফতের জন্য এ কয়েকজন ছাড়া অন্য কাউকে আমি যোগ্যতম পাচ্ছি না, যাদের প্রতি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ইন্তিকালের সময় রাযী ও খুশী ছিলেন। অতঃপর তিনি তাঁদের নাম বললেন, ‘আলী, ‘উসমান, যুবায়র, ত্বলহা, সা’দ ও ‘আবদুর রাহমান ইব্‌নু আউফ (রাঃ) এবং বললেন, ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) তোমাদের সঙ্গে থাকবে। কিন্তু সে খিলাফত লাভ করতে পারবে না। তা ছিল শুধু সান্ত্বনা মাত্র। যদি খিলাফতের দায়িত্ব সা’দের (রাঃ) এর উপর ন্যস্ত করা হয় তবে তিনি এর জন্য যোগ্যতম ব্যক্তি। আর যদি তোমাদের মধ্যে অন্য কেউ খলীফা নির্বাচিত হন তবে তিনি যেন সর্ব বিষয়ে সা’দের সাহায্য ও পরামর্শ গ্রহণ করেন। আমি তাঁকে অযোগ্যতা বা খিয়ানতের কারণে অপসারণ করিনি। আমার পরের খলীফাকে আমি ওয়াসিয়াত করছি, তিনি যেন প্রথম যুগের মুহাজিরগণের হক সম্পর্কে সচেতন থাকেন, তাদের মান সম্মান রক্ষায় সচেষ্ট থাকেন। এবং আমি তাঁকে আনসার সাহাবীগণের যাঁরা মুহাজিরগণৈর আসার আগে এই নগরীতে (মদীনায়) বসবাস করে আসছিলেন এবং ঈমান এনেছেন, তাঁদের প্রতি সদ্ব্যবহার করার ওয়াসিয়াত করছি যে তাঁদের মধ্যে নেককারগণের ওযর আপত্তি যেন গ্রহণ করা হয় এবং তাঁদের মধ্যে কারোর ভুলত্রুটি হলে তা যেন ক্ষমা করে দেয়া হয়। আমি তাঁকে এ ওয়াসিওয়াত ও করছি যে, তিনি যেন রাজ্যের বিভিন্ন শহরের আধিবাসীদের সদ্ব্যবহার করন। কেননা তাঁরাও ইসলামের হিফাযতকারী। এবং তারাই ধনসম্পদের যোগানদাতা। তারাই শত্রুদের চোখের কাঁটা। তাদের হতে তাদের সন্তুষ্টির ভিত্তিতে কেবলমাত্র তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ যেন যাকাত আদায় করা হয়। আমি তাঁকে পল্লীবাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করারও ওয়াসিয়াত করছি। কেননা তারাই আরবের ভিত্তি এবং ইসলামের মূল শক্তি। তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ এনে তাদের দরিদ্রদের মধ্যে যেন বিলিয়ে দেয়া হয়। আমি তাঁকে আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর জিম্মীদের (অর্থাৎ সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়) বিষয়ে ওয়াসিয়াত করছি যে, তাদের সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার যেন পুরা করা হয়। তাদের পক্ষাবলম্বনে যেন যুদ্ধ করা হয়, তাদের শক্তি সামর্থ্যের অধিক জিযিয়া যেন চাপানো না হয়। ‘উমার (রাঃ) এর ইন্তিকাল হয়ে গেলে আমরা তাঁর লাশ নিয়ে পায়ে হেঁটে চললাম। ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) –কে সালাম করলেন এবং বললেন, ‘উমার ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ) অনুমতি চাচ্ছেন। ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, তাকে প্রবেশ করাও। অতঃপর তাঁকে প্রবেশ করান হল এবং তাঁর সঙ্গীদ্বয়ের পার্শ্বে দাফন করা হল। যখন তাঁর দাফনকাজ শেষ হল, তখন ঐ ব্যক্তিবর্গ একত্রিত হলেন। তখন ‘আবদুর রাহমান (রাঃ) বললেন, তোমারা তোমাদের বিষয়টি তোমাদের মধ্য হতে তিনজনের উপর ছেড়ে দাও। তখন যুবায়র (রাঃ) বললেন, আমি আমার বিষয়টি ‘আলী (রাঃ) –এর উপর অর্পণ করলাম। ত্বলহা (রাঃ) বললেন, আমার বিষয়টি ‘উসমান (রাঃ) –এর উপর ন্যস্ত করলাম। সা’দ (রাঃ) বললেন, আমার বিষয়টি ‘আবদুর রহমান ইব্‌নু আউফ (রাঃ) উপর ন্যস্ত করলাম। অতঃপর ‘আবদুর রহমান (রাঃ) ‘উসমান ও ‘আলী (রাঃ)-কে বললেন, আপনাদের দু’জনের মধ্য হতে কে এই দায়িত্ব হতে অব্যাহতি পেতে ইচ্ছা করেন? এ দায়িত্ব অপর জনের উপর অর্পন করব। আল্লাহ্‌ ও ইসলামের হক আদায় করা তাঁর অন্যতম দায়িত্ব হবে। কে অধিকতর যোগ্য সে সম্পর্কে দুজনেরই চিন্তা করা উচিত। ব্যক্তিদ্বয় চুপ থাকলেন। তখন ‘আবদুর রাহমান (রাঃ) নিজেই বললেন আপনারা এ দায়িত্ব আমার উপর ন্যস্ত করতে পারেন কি? আল্লাহ্‌কে সাক্ষী রেখে বলছি, আমি আপনাদের মধ্যকার ষোগ্যতম ব্যক্তিকে নির্বাচিত করতে একটুও ত্রুটি করব না। তাঁরা উভয়ে বললেন, হাঁ। তাদের একজনের হাত ধরে বললেন, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সঙ্গে আপনার যে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তা এবং ইসলাম গ্রহণে অগ্রগামিতা আছে তা আপনিও ভালভাবে জানেন। আল্লাহর ওয়াস্তে এটা আপনার জন্য জরুরী হবে যে, যদি আপনাকে খলীফা মনোনীত করি তাহলে আপনি ইন্‌সাফ প্রতিষ্ঠা করবেন। আর যদি ‘উসমান (রাঃ) –কে মনোনীত করি তবে আপনি তাঁর কথা শুনবেন এবং তাঁর প্রতি অনুগত থাকবেন। অতঃপর তিনি অপর জনের সঙ্গে একান্তে অনুরূপ কথা বললেন। এভাবে অঙ্গীকার গ্রহণ করে তিনি বললেন, হে ‘উসমান (রাঃ) আপনার হাত বাড়িয়ে দিন। তিনি [আবদুর রাহমান (রাঃ)], তাঁর হাতে বায়’আত করলেন। অতঃপর ‘আলী (রাঃ) তাঁর ‘উসমান (রাঃ)-এর বায়’আত করলেন। অতঃপর মদীনাবাসীগণ এগিয়ে এস সকলেই বায়’আত করলেন।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪২৫, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৩২)
৫। ইসলামী খেলাফত যে উনার হাতেই বিস্তৃত হবে সেটাও বলা ছিল-
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, একবার আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। স্বপ্নে আমি আমাকে এমন একটি কূপের কিনারায় দেখতে পেলাম যেখানে বালতিও রয়েছে আমি কূপ হতে পানি উঠালাম যে পরিমাণ আল্লাহ ইচ্ছা করলেন। অতঃপর বালতিটি ইব্‌নু আবূ কুহাফা নিলেন এবং এক বা দু’বালতি পানি উঠালেন। তার উঠানোতে কিছুটা দুর্বলতা ছিল। আল্লাহ্ তার দুর্বলতাকে ক্ষমা করে দিবেন। অতঃপর ‘উমার ইব্‌নু খাত্তাব বালতিটি তার হাতে নিলেন। তার হাতে বালতিটির আয়তন বেড়ে গেল। পানি উঠানোতে আমি ‘উমারের মত শক্তিশালী বাহাদুর ব্যক্তি কাউকে দেখিনি। শেষে মানুষ নিজ নিজ আবাসে অবস্থান নিল। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৯২, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৩৯৯)

আমি এই মুহূর্তে হাদিসের নাম্বার মনে করতে পারছি না- তবে হাদিসে আছে আমার পরে কেউ যদি নবী হতো সেটা উমরই হতো"।
ধন্যবাদ।




০১ লা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৫৭

শের শায়রী বলেছেন: প্রিয় নীল আকাশ ভাই, প্রথমেই এক রাশ কৃতজ্ঞতা জানাই উমর (রাঃ) কে নিয়ে বেশ কিছু জরুরী হাদীস এবং উক্তি ইসলামী দৃষ্টিকোন থেকে পোষ্টে সন্নিবেশিত করায়। যাতে এই পোষ্ট পূর্নতা পেয়েছে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সব শেষে আপনি যে হাদীসটির রেফারেন্স মনে করতে পারেন নি সেই হাদীস রেফারেন্স হলঃ

উকবা ইবনে আমির (রা) হতে বর্ণিত এক হাদিসে আছে, রাসুল (সা) বলেছিলেন, “আমার পরে যদি কেউ নবী হত, তবে সে হতো উমার।” [আহমাদ (১৭৪০৫), তিরমিজি (৩৬৮৬), আল হাকিম (৪৪৯৫)]

আশা রাখি সামনেও সাথে পাব। আবারো কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রাখলাম।

এব্যাপারে কবি নজরুলের বিখ্যাত একটি কবিতার কয়েক লাইন দেয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না

“ইসলাম – সে তো পরশ-মানিক তাকে কে পেয়েছে খুঁজি?
পরশে তাহার সোনা হল যারা তাদেরেই মোরা বুঝি।
আজ বুঝি – কেন বলিয়াছিলেন শেষ পয়গম্বর-
‘মোর পরে যদি নবী হত কেউ, হত সে এক উমর’।”

৯| ০১ লা মার্চ, ২০২০ সকাল ১০:৩৬

আলমগীর সরকার লিটন বলেছেন: অনেক কিছু জানলাম---------

০১ লা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৫৮

শের শায়রী বলেছেন: পাঠে এবং মন্তব্যে অশেষ কৃতজ্ঞতা লিটন ভাই।

১০| ০১ লা মার্চ, ২০২০ সকাল ১০:৪১

নীল আকাশ বলেছেন: আমি অনেক আগে হযরত উমর ইবন খাত্তাব (রাদিআল্লাহু আনহু) এর ইসলাম গ্রহণ নিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম-
অধ্যায় ২৮ - হযরত উমর (রা:-) কিভাবে ইসলাম গ্রহন করলেন?

আরেকটা বিষয়, হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাদিআল্লাহু আনহু) হযরত উমর ইবন খাত্তাব (রাদিআল্লাহু আনহু) এর সম্ভবত চাচাতো ভাই ছিলেন, দেখতে প্রায় একই গঠন, সহপাঠী, কাছাকাছি বয়স এবং চেহারায় সাদৃশ্য ছিলো। হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাদিআল্লাহু আনহু) নিঃসন্তান ছিলেন। মৃত্যুর পূর্বে উনি উনার সব সম্পদ উমর ইবন খাত্তাব (রাদিআল্লাহু আনহু)'কে ওয়ারিশ করেন। হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাদিআল্লাহু আনহু) এর পবিত্র কবরস্থান সিরিয়াতে অবস্থিত।
ধন্যবাদ।

০১ লা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:০২

শের শায়রী বলেছেন: হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) কে নিয়ে আমি খুব বেশি কিছু লিখিনি কারন এই পোষ্টের ফোকাস ছিল হযরত উমর (রাঃ) এর খেলাফত কাল। আপনার যোগকৃত মন্তব্যের জন্য আবারো অশেষ কৃতজ্ঞতা। আমি সময় নিয়ে আপনার পোষ্টে যাব ইনশাল্লাহ।

১১| ০১ লা মার্চ, ২০২০ সকাল ১১:২৩

রাশিয়া বলেছেন: আপনি যা লিখেছেন, তাতে উমর (রা) সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার প্রসারই বেশি ঘটবে। আমরা উমর (রা) সম্পর্কে যা কিছু জেনেছি, তার কোন কিছুই এখানে আসেনি।
১। আল্লাহ্‌র রাসুল (স) আবু জাহল এবং উমরের (রা) মধ্যে একজনকে ইসলামের জন্য কবুল করতে আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করেছিলেন। মূলত উমর (রা) ইসলাম গ্রহনের পর মুসলিমদের সাহস অনেক বেড়ে যায়।
২। খলিফা উমর খুব সাদাসিধা জীবন যাপন করতেন। রোমান দূত তাঁকে নববীর বারান্দায় খালি গায়ে শুয়ে থাকতে দেখে বিশ্বাসই করতে চায়নি যে সে খলিফা।
৩। তিনি একবার নতুন জুব্বা গায়ে দিয়ে চলার সময়ে জনগণ তাকে জবাবদিহি করেছিল।
৪। তার পুত্র মদপানের মত অপরাধ করায় তাঁকে চরম শাস্তি দিয়েছিলেন।
৫। তার খাবারের টেবিলে নিয়মিত মেনুর পাশাপাশি মিষ্টান্ন দেখতে পেয়ে বায়তুল মাল থেকে নিজের মাসোহারা কমিয়ে নেন।

০১ লা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৩৫

শের শায়রী বলেছেন: রাশিয়া ভাই, আমি জানি না কেন আপনার মনে হল, এই পোষ্ট পড়ে হযরত উমর (রাঃ) সন্মন্ধ্যে নেতিবাচক ধারনার প্রসার ঘটবে। আপনি যদি আর একবার একটু পরিস্কার করে দিতেন কোথায় উনাকে নিয়ে নেতিবাচক ধারনা আমি প্রসার করছি আমার বুজতে সুবিধা হত, সেক্ষেত্রে আমার ভুল থাকলে আমি অবশ্যই ঠিক করে দিতাম। আমি যা লেখছি প্রতিটা ব্যাপার ঐতিহাসিক ভাবে সত্য। মুলতঃ ইসলামের প্রসার কাল সন্মন্ধ্যে আমাদের ধারনা অতি স্বল্প যার কারনে যারা ইসলামের ব্যাপারে নেতিবাচক ধারনা প্রচার করে তারা সুযোগ পেলেই এই সব যুদ্ধের কাহিনী টেনে এনে রক্তপাতের দ্ধারা ইসলামকে হেয় করার চেষ্টা করে। অথচ আপনি যদি এই যুদ্ধ গুলোর ব্যাপারে ভালো ধারনা রাখেন তবে দেখবেন প্রতিটা যুদ্ধের পর ইসলাম বিধর্মীদের সাথে কত মহত আচরন করছে, বিধর্মীদের সুরক্ষার জন্য স্বয়ং খলিফা জিম্মাদারী হয়েছেন চুক্তি হয়েছে। আর রক্তপাত? সে কি শুধু বিধর্মীদেরই হয়েছে? মুসলমানদের হয় নি? মুসলমানদের অন্যায় ছিল একটাই সে আমলে প্রায় যুদ্ধেই জয় লাভ করছে। আপনি দেখেন পোষ্ট আমি লিখছি কি কারনে হযরত উমর (রাঃ) খ্রিষ্টানদের গির্জায় নামায পড়ে নি, কিভাবে সে জেরুজালেম গিয়েছে। প্রতিটা যুদ্ধের পর কিভাবে সে বন্দীদের সাথে ব্যাবহার করছে তা আমি স্থানাভাবে যথাযথভাবে দিতে পারিনি, কিন্তু বিভিন্ন লিঙ্ক এবং কিছু বইর নাম দিয়েছি সেগুলো পড়লে আপনি বুজবেন কেন এই যুদ্ধ গুলো হয়েছিল। এই সব বইর কিন্তু অনেক গুলোই অমুসলিমদের দ্ধারা লিখিত।

আপনি উমর (রাঃ) সন্মন্ধ্যে আপনার জানার মাঝে যা লিখছেন, তার কিছু কিছু লোক মুখে প্রচারিত যার কোন ভিত্তি নেই, যেমন নীচে নীল আকাশ ভাই একটার উদাহরন দিয়েছে, এই জন্য আমাদের সঠিক ইতিহাস জানতে হবে। কারন জানতে হবে তবেই বুজবেন সে যুগের পরিপ্রেক্ষিতে ইসলাম কতটা সাম্যের ছিল।

আবার দেখুন গাদির খুমের সেই বিখ্যাত ঘটনা যা দিয়ে শিয়া সুন্নী উদ্ভব বলে অনেকে ধারনা করেন সেখানে শিয়া হযরত উমর (রাঃ) কে দায়ী করে যা তা প্রচার করে হযরত আলী (রাঃ) স্বপক্ষে। অথচ আমরা কয়জন জানি যে হযরত আলীর কন্যা উম্মে কুলসুম (রাঃ) কে হযরত আলী হযরত উমর (রাঃ) র কাছে বিবাহ দিয়েছিল? এই এক ঘটনা দিয়ে শিয়াদের বা অন্যান্য অমুসলিমদের প্রাচারিত মিথ্যা ধারনাকে বরবাদ করে দেয়া যায়। যা আমি পোষ্টে উল্লেখ্য করছি।

যাই হোক আমার লেখায় ভুল থাকতেই পারে কিন্তু সজ্ঞানে কোন নেতিবাচক প্রচারনা নেই, ইতিহাসের নির্মোহ জায়গা থেকে লেখার চেষ্টা করছি। সামনে উসমান (রাঃ) এবং আলী (রাঃ) সময় অনেক ঘটনা ঘটছে যা ইসলামিক ইতিহাস দ্ধারা প্রমানিত সেগুলো মেনে নিতে আপাত দৃষ্টিতে কিছুটা কষ্ট হলেও সত্যকে অস্বীকার করার উপায় নেই। তারপরো আমার ভুল হলে যদি টু দ্যা পয়েন্টে দেখিয়ে দেন অবশ্যই ঠিক করে দেব।

পাঠে এবং মন্তব্যে অশেষ কৃতজ্ঞতা জানবেন ভাই।

১২| ০১ লা মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:০৩

নীল আকাশ বলেছেন: @ রাশিয়া বলেছেন: ৪। তার পুত্র মদপানের মত অপরাধ করায় তাঁকে চরম শাস্তি দিয়েছিলেন। এটা গুজব। উনার নামে মিথ্যা রটনা করা হয়েছে। এটার সূত্র ভালো করে খুঁজে দেখুন। উনার কোন ছেলে নাম বলুন?
আমি উনার নামে কিছু হাদিস দিয়েছে সেজন্যই যেন সবাই উনি কে সেটা জানতে পারেন।

০১ লা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৫৪

শের শায়রী বলেছেন: প্রিয় ভাই আপনার মন্তব্যগুলো আমার পোষ্ট কে পূর্নতা দিতে সহায়তা করছে, সামনেও এভাবে সহায়তা কাম্য। অশেষ কৃতজ্ঞতা জানেবন।

১৩| ০১ লা মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:১৫

ঢাবিয়ান বলেছেন: অসম্ভব শক্তিশালী আপনার লেখনী। অনেক কিছুই জানা ছিল না। পোস্টে পাঁচ তারা

০১ লা মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০১

শের শায়রী বলেছেন: ঢাবিয়ান ভাই, আপনার এই প্রসংশার যোগ্য আমি কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে তারপরো দুহাতে তুলে নিলাম। পাঠে এবং মন্তব্যে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা। আশা রাখি সামনেও আপনাকে সাথে পাব।

১৪| ০১ লা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:২৩

রাজীব নুর বলেছেন: সবার মন্তব্য গুলো জানতে আবার আপানর পোষ্টে আসতে হলো।

০১ লা মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪০

শের শায়রী বলেছেন: আপনার এই ব্যাপারটা আমার বেশ ভালো লাগে। আমি সত্যিই বলছি। আমি নিজেও এটা করি বিভিন্ন পোষ্টে যদিও পরে মন্তব্য দেয়া হয় না।

১৫| ০১ লা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:১৪

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
কত্ত কিছু জানলাম।
আপনার পোস্ট বিশাল এক প্রাপ্তি।
মহানবীর পরবর্তী সময়টা আমার কাছে খুব ধোঁয়াটে লাগে। অনেক বিষয় মিলাতে পারিনা। আপনি এবং প্রিয় নীল আকাশ ভাই হয়তো এই বিষয়ে সাহায্য করতে পারবেন।

ভালো থাকবেন। প্রিয় ভাই / ব্লগার / শিক্ষক।

০১ লা মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪২

শের শায়রী বলেছেন: প্রিয় ভাই, শরম দিয়েন না প্লীজ। আপনার ভাই, সহ ব্লগার পর্যন্ত থাকতে পেরেই অনেক বড় পাওয়া আমার মত সামান্য জনের, শিক্ষক হবার জন্য যে যোগ্যতা লাগে তা আমার নেই।

আপনি আমার প্রিয় একজন ব্লগার হয়ত সেটা আপনি জানেন না। ভালো থাকবেন সব সময়।

১৬| ০১ লা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৫০

নতুন বলেছেন: ভালো মানুষ ক্ষমতায় এলে সবাই ভালো থাকে।

খোলাফায়ে রাশেদিনের শা্সকরা ভালো ছিলেন, তারা ধম`ভীরু ছিলেন তাই তাদের আমলে সাধারন জনগন ভালো থেকেছে।

আর রাজনিতির দিক দিয়ে দেখলে সবাই চেস্টা করবে ক্ষমতায় থাকতে, তাই হত্যা, ষড়যন্ত্র, সবই থাকবে সেটাই সাভাবিক। তাই ইসলামী ইতিহাসেও হত্যা, রক্ত,বন্ধী সবই আছে....

আমাদের দেশেও কখনো ভালো শাসক গোস্ঠী দেশের উন্নয়নের চেস্টা করবে সেই আশা করি।

০১ লা মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৩

শের শায়রী বলেছেন: প্রিয় নতুন ভাই, আপনার প্রতিটা লাইনের সাথে এক মত দ্বিমত করার সুযোগ রাখেন নি। এক জন ভালো শাসক একটা দেশের জন্য নেয়ামত স্বরূপ। আবারো বলি আপনার কমেন্টের সাথে আমি এক মত।

পাঠে এবং মন্তব্যে অশেষ কৃতজ্ঞতা জানবেন।

১৭| ০১ লা মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২০

চাঁদগাজী বলেছেন:



আল্লাহ যদি আসলে বেহেশত বানায়ে রাখতেন মহাশুন্যে, উনি উনার দরিদ্র গৃহহীন শিশুদের জন্য কমপক্ষে কুঁড়েঘর হলেও তৈরি করে রাখতেন পৃথিবীতে; বিশ্বের মডেল বলছে যে, ঘরবাড়ী, বালাখানা যা আছে, তা মানুষের তৈরি মাত্র; আল্লাহ শব্দটাও মানুষের লেখা।

০১ লা মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০২

শের শায়রী বলেছেন: আবারো অযৌক্তিক একটা মন্তব্য দিলেন মুরুব্বী। অবশ্য লজিক শব্দটার সাথে আপনার পরিচয় যে নাই সে নিয়ে আমার প্রায় কোন সন্দেহ নাই। যেটুকু পরিচয় আছে তা কেবল আমেরিকার স্বার্থে। যাকজ্ঞা, আপনি লিখছেন "আল্লাহ যদি আসলে বেহেশত বানায়ে রাখতেন মহাশুন্যে, উনি উনার দরিদ্র গৃহহীন শিশুদের জন্য কমপক্ষে কুঁড়েঘর হলেও তৈরি করে রাখতেন পৃথিবীতে; বিশ্বের মডেল বলছে যে, ঘরবাড়ী, বালাখানা যা আছে, তা মানুষের তৈরি মাত্র; আল্লাহ শব্দটাও মানুষের লেখা।"

ধর্ম বাদ দিয়ে লজিক ব্যাবহার করে উত্তর দেই, পৃথিবীতে উনি যা করছেন তা মানুষের মাধ্যমেই করছেন, আর মহাশুন্যে বেহেশত বানিয়েছে কিনা জানিনা, তবে মহাশুন্যে বিলিয়ন ট্রিলিয়ন গ্রহ, নক্ষত্র, গ্যালাক্সি যে বানিয়ে রেখেছেন তাতে কি কোন সন্দেহ আছে? সেখানে যদি বেহেশত দোযখ বানিয়ে থাকেনও কিভাবে জানব? যেখানে পাশের বাড়ী মঙ্গল (মার্স) কেই এখনো চিনলাম না।

মুরুব্বী লজিক্যাল ডিবেটে এসে আমাকে হারান, হারলেও স্বীকার করে নেব, আর অবান্তর ডিবেটে এসে তাতে যদি আপনি জিতেনও এক রাশ সমবেদনা :) বাই দ্যা ওয়ে সুপার ট্যুয়েসডের খবর কি? খুব টেনশানে আছি |-) আপনি ছাড়া আমাদের তো আবার দেবালয়ের নিউজ পাবার কোন উপায় নেই।

১৮| ০১ লা মার্চ, ২০২০ রাত ৮:০১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ম্যা' ভাই
আজানের কাহিনী অন্যরকম জেনেছি।
"অন্য বর্ণনায় হুবহু আযানের শব্দও বর্ণনা করা হয়েছে। মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন জায়েদ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন : “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হর্ণের ব্যাপারে চিন্তা করছিলেন এবং ঘন্টার নির্দেশ দিয়েছেন। আমি তার কাছ থেকে চলে গেলাম। অতঃপর আব্দুল্লাহকে সপ্নে দেখানো হলো। তিনি বলেন : আমি এক ব্যক্তিকে দেখলাম দুটি হলুদ জামা গায়ে একটি ঘণ্টা নিয়ে দাঁড়ানো। আমি তাকে বললাম : হে আল্লাহর বান্দা, তুমি কি ঘণ্টা বিক্রি করবে? সে বলল: তুমি এর দ্বারা কি করবে ? আমি বললাম : সালাতের জন্য আহবান করবো। সে বলল : আমি কি তোমাকে এর চেয়ে উত্তম জিনিসের কথা বলবো না ? আমি বললাম : তা আবার কি ? সে বলল : তুমি বলবে : {আযানের শব্দাবলি}

তিনি বলেন : আব্দুল্লাহ বের হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসলেন, অতঃপর স্বপ্ন সম্পর্কে অবহিত করলেন। বললেন : হে আল্লাহর রাসূল, আমি দেখলাম হলুদ জামা গায়ে এক ব্যক্তি একটি ঘণ্টা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অতঃপর তাকে সপ্নের বিবরণ শোনালেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : “ তোমাদের ভাই একটি স্বপ্ন দেখেছে, তুমি বেলালের সাথে মসজিদে যাও, তার কাছে গিয়ে বল, এবং বেলাল যেন এ শব্দ দ্বারা আহবান করে, কারণ তার আওয়াজ তোমার চেয়ে উচ্চ।” তিনি বলেন : আমি বেলালের সাথে মসজিদে গেলাম, অতঃপর আমি তার কাছে বলতে লাগলাম, সে তার মাধ্যমে সালাতের আহবান জানাতে লাগল।
সে বলল : ওমর ইবনে খাত্তাব আওয়াজ শোনে বের হয়ে আসলেন, বললেন : হে আল্লাহর রাসূল, আল্লাহর শপথ, সে যেরূপ দেখেছে আমিও অনুরূপ দেখেছি।

এ স্বপ্নের কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রভূত আনন্দিত হন এবং আল্লাহর প্রশংসা করেন, যেরূপ অন্যান্য বর্ণনায় এসেছে। ওমর রাদিআলাহু আনহু যখন বেলালের মুখে আযানের ধ্বনি শুনলেন, চাদর হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে উপস্থিত হলেন। আর বললেন : হে রাসূল, যে আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন তার শপথ, সে যেরূপ বলেছে আমিও অনুরূপ দেখেছি। তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : “সকল প্রশংসা আল্লাহর।” আবু দাউদ : (৪৯৯), শায়খ আলবানী হাদীসটি সহিহ বলেছেন : সহিহ আবু দাউদ : (৪৬৯)

বিস্তািরত দেবার স্থান নেই জানি। তারপরো নামের অধিকারটা বোধকরি হয়রত আব্দুল্লাহ বিন জায়েদ রা: এরই।

দারুন কষ্টকর সিরিজে মোবারকবাদ।
হারানো সূত্রের মিলন হোক। ইসলামের অনেক ইতিহাসকে হাইড এনড সিক করে রাখা হয়েছে দীর্ঘ সময়!!!
মানুষ মন্দ ভাববে দেখে সত্যকে আড়াল করে নয়, বরং সত্যের চকচকে ঝিলিকেই হোক সত্যোব্ধোধন।

++++

০১ লা মার্চ, ২০২০ রাত ৯:০৬

শের শায়রী বলেছেন: ম্যা' ভাই আপনার এই বর্ননাটিও আমি দেখছি। এটা আবু দাউদ শরীফের হাদীস। আর আমি বর্ননা দিয়েছি বুখারি শরীফ আর মুসলিম শরীফ থেকে।

“মুসলমানগণ যখন মদীনায় আগমন করে জড়ো হতেন, সালাতের সময়ের প্রতীক্ষা করতেন। তখন সালাতের জন্য ডাকাডাকি হতো না। একদিন তারা এ নিয়ে আলোচনা করলেন। কেউ বলল : তোমরা নাসারাদের ন্যায় ঘণ্টার অনুসরণ কর। কেউ বলল না, বরং হর্ন গ্রহণ কর, ইহুদিদের শিঙ্গার ন্যায়। ওমর রাদিআলাহু আনহু বললেন : একজন লোক পাঠান, সে সালাত সালাত বলে ঘোষণা দেবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : “ হে বেলাল, তুমি দাঁড়াও, অতঃপর সালাতের ঘোষণা দাও।” {বোখারি : (৫৭৯), মুসলিম : (৩৭৭) }

ইবনে খুজাইমা রাহিমাহুল্লাহ স্বীয় গ্রন্থে এ শিরোনামে এক অধ্যায়ের সূচনা করেছেন : “এ অধ্যায়ের দলিলের বর্ণনা যে, আযানের প্রচলন হয়েছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মদীনায় হিজরতের পর। তিনি মক্কায় সালাত আদায় করতেন আযান ও ইকামাত ছাড়াই।” সহিহ ইবনে খুজাইমা : (১/১৮৯)

ম্যাভাই আযানের ইতিহাস এই খানেও পাবেন সেখানে সব হাদীসের উল্লেখ্য আছে আযান সংক্রান্ত আযান শুরুর ইতিহাস

ম্যা'ভাই দোয়া রাখেন যে ব্যাপারে হাত দিয়েছি আল্লাহ যেন আমাকে নির্মোহ ভাবে যথাযথ ভাবে সত্য উপস্থাপনের তৌফিক দেয়।

১৯| ০২ রা মার্চ, ২০২০ রাত ১২:১৮

নিভৃতা বলেছেন: পড়তে পড়তে চোখে জল চলে এলো কেন কে জানে। সব ভালো আর মহান মানুষদের মৃত্যু এভাবে যে কেন হয়।

কাজী নজরুল ইসলামের লেখা প্রিয় কবিতাটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো।

"অর্ধ পৃথিবী করেছ শাসন ধুলার তখতে বসি 

খেজুরপাতার প্রাসাদ তোমার বারে বারে গেছে খসি 

সাইমুম-ঝড়ে। পড়েছে কুটির, তুমি পড়নি ক' নুয়ে, 

ঊর্ধ্বের যারা - পড়ছে তাহারা, তুমি ছিলে খাড়া ভূঁয়ে।"



"ভৃত্য চড়িল উটের পৃষ্ঠে উমর ধরিল রশি, 

মানুষে স্বর্গে তুলিয়া ধরিয়া ধুলায় নামিল শশী। 

জানি না, সেদিন আকাশে পুষ্প বৃষ্টি হইল কিনা, 

কি গান গাহিল মানুষে সেদিন বন্দী' বিশ্ববীণা।"



"নগর-ভ্রমণে বাহিরিয়া তুমি দেখিতে পাইলে দূরে 

মায়েরে ঘিরিয়া ক্ষুদাতুর দুটি শিশু সকরুণ সুরে"




"বলিলে, 'বন্ধু, আমার এ ভার আমিই বহিব সোজা! 

রোজ-কিয়ামতে কে বহিবে বল আমার পাপের ভার? 

মম অপরাধে ক্ষুধায় শিশুরা কাঁদিয়াছে, আজি তার 

প্রায়শ্চিত্ত করিব আপনি' - চলিলে নিশীথ রাতে 

পৃষ্ঠে বহিয়া খাদ্যের বোঝা দুখিনীর আঙিনাতে!"

হজরত উমর (রা: ) এর প্রখর ব্যক্তিত্ব, সাহসীকতা ও মহানুভবতা উনার চরিত্রকে এক বিরল স্বতন্ত্র রূপ দান করেছে।

লেখার আর কি প্রশংসা করবো। বরাবরের মতই অসাধারণ। কত অজানা যে জানা হলো এই অসাধারণ পোস্টের কারণে।

অনেক অনেক শুভ কামনা আপনার জন্য। পরবর্তী পর্বের প্রতিক্ষায় রইলাম।

০২ রা মার্চ, ২০২০ রাত ১১:১২

শের শায়রী বলেছেন: অসাধারন মন্তব্যে এবং পোষ্ট রিলেটেড কবিতার জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা জানুন প্রিয় বোন।

২০| ০২ রা মার্চ, ২০২০ রাত ৩:০২

এমজেডএফ বলেছেন: শে. শা. ভাই, ব্লগে দৌড়ের ওপর আসি, হাতে সময় থাকে কম। আপনার পোস্টের সাইজ দেখে না পড়েই ফিরে যেতে হয় :(। পরে সময় বাজেট করে ফিরে এসে পড়ি। খোলাফায়ে রাশেদিন সম্পর্কে লেখা, তাই মনে করেছিলাম হয়তো খলিফাদের জীবনী। কিন্তু এখন পড়ে দেখলাম সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে এবং ভিন্ন দৃষ্টিতে লেখা খোলাফায়ে রাশেদিনের ইতিহাস।

সবচেয়ে ভালো লেগেছে - আপনি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণের পরিবর্তে সম্পুর্ণ সাধারণ ইতিহাসের দৃষ্টিকোণে লিখেছেন। ধর্ম-জাতি-বিশ্বাস নির্বিশেষে সকল পাঠকের জন্য সুখপাঠ্য। খলিফাদের জীবন ও ইতিহাস নিয়ে লেখা গ্রন্থ আগেও পড়েছি। তবে বেশিভাগ লেখা পড়ে মনে হয়েছিল লেখাগুলো শুধুমাত্র তাদের জন্য লেখা যারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী এবং খলিফাদের ধর্মীয় নেতা হিসাবে শ্রদ্ধা করেন।

আপনার অক্লান্ত পরিশ্রমে আমরা অনেক কিছু জানতে পারলাম, কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানবেন।

০২ রা মার্চ, ২০২০ রাত ১১:১৪

শের শায়রী বলেছেন: এ আমার পরম পাওয়া প্রিয় ভাই এত ব্যাস্ততার মাঝেও সময় করে এত বড় পোষ্ট পড়া এবং দারুন এক মন্তব্য দেয়ায়। পরের পর্ব দিয়েছি দেখছেন ভাই?

২১| ০২ রা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:৪৩

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
অসাধারণ তথ্য সমৃদ্ধ পরিশ্রমী পোষ্ট ।
পোষ্টের লেখার ভিতরে থাকা প্রায় বার/তেরটি লিংক এ গিয়ে সেগুলি পাঠে প্রায় ঘন্টা চারেক লেগেছে ।
আপনার মুল্যবান লেখাটির কল্যানে অনেক বিষয় জানার ও কিছু দুর্লভ দৃশ্যের ছবি দেখার সৌভাগ্য হয়েছে।
এ জন্য রইল অশেষ কৃতজ্ঞতা । পোষ্টটি প্রিয়তে গেল ।

শুভেচ্ছা রইল

০২ রা মার্চ, ২০২০ রাত ১১:১৬

শের শায়রী বলেছেন: শ্রদ্ধেয় ভাই এ আমার অনেক পাওয়া আপনি যে এত সময় ব্যায় করে এই পোষ্ট দেখছেন এবং পোষ্ট প্রিয়তে নিয়েছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.