নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নানা দেশ কত কথা

শোভন শামস

আমার দেখা নানা দেশের কথা সবার জন্য - পাঠকের ভাল লাগাতেই আনন্দ

শোভন শামস › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুয়ালালামপুর থেকে লংকাউই-২

১৭ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১০:৫১





সেলাংগুর প্রদেশের অনেক জায়গায় অনেক প্লানটেশন দেখলাম । বেশীর ভাগই পাম ওয়েলের বাগান । অনেক যত্নের সাথে নতুন বাগান গুলোর পরিচর্যা চলছে এবং পুরাতন বাগানগুলো থেকে পামওয়েলের বীজ সংগ্রহ হচ্ছে । এছাড়া অনেক রাবার বাগান ও দেখলাম । রাস্তার দুই পাশেই এগুলো আছে । ভেতরের দিকেও বিশাল এলাকা নিয়ে এইসব বাগান । মানুষ কম ও ভূমির পরিমান অনেক বেশী তাই মালেশিয়ান সরকার এইসব ভূমিকে অর্থকরী কাজের জন্য তৈরী করেছে । মোহাম্মদ জানালো এইসব বাগানে অনেক বাংলাদেশী কাজ করে।



পেরাক প্রদেশ পার হয়ে আমরা পেনাং প্রদেশে ঢুকলাম । এটা বন্দর নগরী এবং ব্রিটিশরা এখানেই তাদের ঘাঁটি গড়ে এই প্রদেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেছে তাদের রাজস্ব বাড়ানোর জন্য । মালয়ের সম্পদ তারা পেনাং পোর্ট দিয়ে বাইরের দেশে ও নিজ দেশে নিয়ে যেত ।



ব্রিটিশরা চাইনিজদের এখানে নিয়ে এসেছিল বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য তাই অনেক চাইনিজের বাস এখানে । ভারতীয়দেরও দেখা যায়, যারা বিভিন্ন অফিসে কাজ করে ও করত । তৎকালীন সময়ে মালয়ীদের ব্যবসা ও অফিসে কাজ করার ইচ্ছে কম থাকায় প্রতিযোগিতায় তারা পিছিয়ে ছিল । ফেরার পথে আমরা পেনাং প্রদেশের রাজধানী জর্জ টাউনে গিয়েছিলাম ।



পেনাং থেকে কেদাহ প্রদেশের পথে হাইওয়েতে টোল প্লাজা রয়েছে । আমরা তার একটু আগে সেভরাম পাই নামের একটা জনপদে ফুয়েল নেয়ার জন্য থামলাম । গ্যাস ষ্টেশনে কেনাকাটার জন্য ছোটখাট সুন্দর দোকান আছে । চিপস্, আইসক্রিম, বিস্কিট কিনলাম বাচ্চারা একটু আশেপাশে হেঁটে নিল । কয়েকটা ছবি তুললাম স্মৃতি হিসেবে ।





পেনাং পেরিয়ে আমরা কেদাহ প্রদেশে ঢুকলাম । এটা সমতল ভূমির অঞ্চল । এখানে প্রচুর ফসল উৎপন্ন হয় এবং কৃষি প্রধান প্রদেশ । দূরে গ্রামে কৃষকের দু একটা বাড়ী দেখা যায় । মাঠের পর মাঠ, ফসল কাটার পর এখন খালি । কোথাও ট্রাক্টর দিয়ে চাষ হচ্ছে । আমরা চলছি লংকাউই দ্বীপে যাওয়ার ফেরী টার্মিনালের দিকে । এই টার্মিনালটি কুয়ালা কেদাহ নামের ছোট্র শহরে ।





কুয়ালা কেদাতে পৌছাতে প্রায় পাঁচটা বেজে গেল । পরবর্তী ফেরী ছয়টায় তাই একঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে । ফেরী টার্মিনাল বড় হলেও তেমন পরিচ্ছন্ন রাখতে পারেনি । তবে আমাদের সদর ঘাট থেকে অনেক ভালও পরিচ্ছন্ন । বসার ব্যবস্থা আছে । চারটা টিকেট কিনলাম । আমাদের লাগেজগুলো ভালভাবে গুছিয়ে আনলে গাড়ীতেই অপ্রয়োজনীয় জিনিষগুলো রেখে দেয়া যেত, এটা আগে ভাবিনি । মোহাম্মদ আমাদের এখানে নামিয়ে দিয়ে তার বাড়ীতে চলে যাবে । এখান থেকে প্রায় ২৫০ কিঃ মিঃ দূরে ইপোহ শহরে তার বাড়ী । তিন দিন সেখানে থেকে আমাদেরকে আবার একই জায়গায় রিসিভ করবে ।



সন্ধা হতে এখনো প্রায় দুঘন্টার মত বাকী । ফেরীর অপেক্ষায় বসে আছি । আবহাওয়া মেঘলা । বৃষ্টি হতে পারে । ফেরী সময়মত আসলেও উঠতে উঠতে বেশ সময় লাগল । ফেরী যখন ছাড়ল তখন বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে ।



দোতলায় আমাদের সিট । সেন্ট্রালি এসি, আরামদায়ক চেয়ার, সবই আছে তবে ম্যাডামের মন খুশী না । বিমানে এ ধরনের ঝক্কি পোহাতে হতো না । তবে যে যাই বলুক নতুন এসব অভিজ্ঞতা কখনো বিমানে গেলে পাওয়া সম্ভব না । পর্যটকরা ব্যবসায়ী না তারা সময় নিয়ে ধীরে ধীরে তাদের ভ্রমন উপভোগ করবে এটাই নিয়ম । ফেরী টার্মিনালে বেশ কিছু টুরিষ্ট গাইড ও ট্রাভেল এজেন্সি আছে । লংকাউই দ্বীপে নামার পর আমাদের হোটেলে যাবার জন্য গাড়ী ঠিক করতে ১৫০ রিংগিত নিল আমাদেরকে ড্রাইভারের কন্টাক্ট নাম্বার দিয়ে দিল । ফেরার সময় এই পথ ৫০ রিংগিত ট্যাক্সি ভাড়া দিয়ে এসেছি । লংকাউই নেমেই ট্যাক্সি পাওয়া যায় হয়ত ১০০ রিংগিত লাগত ।



ফেরী চরা শুরু করল, মালাক্কা প্রনালীতে বৃষ্টি হচ্ছে, সাথে বাতাস, সমুদ্র কিছুটা উত্তাল। ফেরী বড় বড় ঢেউ কেটে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে, মাঝে মাঝে বেশ বাম্পিং হচ্ছে । আমি ছাড়া ভয়ে সবাই অস্থির । বাপ বাপান্ত করছে এই ফেরী ভ্রমনের। কেউ কোন দিকে তাকাচ্ছে না । দুলুনি বেড়ে চলছে, সন্ধ্যা হয় হয় করছে । প্রায় এক ঘন্টা আমার পরিবার এই নিরানন্দ ফেরী ভ্রমন করল । অথচ আশে পাশের লোকজন মনের সুখে চিপস খাচ্ছে, গান শুনছে কেউবা গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে ।



লংকাউইতে যখন ফেরী থামল তখনও বেশ বৃষ্টি । বৃষ্টির মধ্যে লাগেজ টানতে একটু কষ্ট হলো যদিও সবগুলোই ট্রলিব্যাগ ছিল। আমাদের ড্রাইভার মিঃ ডন মোবাইলে যোগাযোগ করল । তার দুই ছেলে, একজন সিংগাপুরে ডাক্তার অন্যজন কুয়ালালামপুরে চাকুরী করে । তার বাড়ী লংকাউইতে এবং তিনি ট্রাভেলে এজেন্সির সাথে চুক্তি ভিত্তিতে গাড়ী সরবরাহ করেন ।



আমাদের প্রয়োজন জেনে তিনি মুসা নামে এক ড্রাইভারের নাম্বার দিলেন এবং পরদিন সকালে সে আমাদের হোটেলে নয়টার সময় আসবে বলে জানালেন । ফেরী ভ্রমন প্রায় পৌনে দুঘন্টার মত সময় নিল । লংকাউই ফেরী টার্মিনাল থেকে প্রায় ৪০ মিনিট ড্রাইভ করে আমরা আমাদের বেলাভিস্তা হোটেলে পৌছিলাম । এটা এয়ার পোর্টের খুব কাছে তবে পর্যটন এলাকা থেকে একটু দূরে ।



হোটেলে চেক ইন করতে একটু সময় লাগল । খুব সুন্দর হোটেল, থাকার ব্যবস্থা ভাল । এখানে এসে সবাই আবার হাসিখুশী । তখনো বৃষ্টি হচ্ছিল । রুমে গিয়ে একটু ফ্রেস হলাম । এই ফাঁকে শাহেদ ভাই এর সাথে কথা হলো। তারা দুপুরে এসেছেন । রাতে কোথায় যাওয়া যায় সে ব্যাপারে রিসিপশানে জিজ্ঞাসা করলাম । তারা বলল কুয়া টাউনে নাইট মার্কেট আছে । সেখানে ঘুরে ডিনার করে ফিরে আসতে পার ।





আমাদের জন্য ৩০ রিংগিতের বিনিময়ে একটা মাইক্রো ডেকে দিল । বৃষ্টি ছিল, ছাতা কিনে নিলাম কুয়া টাউনের দোকান থেকে । দোকানগুলো খোলা, একটা মানি চেঞ্জার ও আছে এই এলাকায় । ঘন্টা খানেক ঘোরাফেরা করে খিদে পেয়ে গেল । একটা রেষ্টুরেন্টে ঢুকলাম । আমাদের কথা শুনে একজন এগিয়ে এসে পরিচয় দিয়ে বলল বাংলাদেশী । আমরা ডিনারের কথা বলাতে বলল এই রেষ্টুরেন্ট বেশ এক্সপেনসিভ এর চেয়ে অর্ধেক দামে ভাল খাবার পাওয়া যায় । আমরা একটা চাইনিজ রেষ্টুরেন্টে গেলাম । সেখানে সামনে অ্যাকুরিয়ামে জ্যান্ত মাছ সাঁতার কাটছে । পছন্দের মাছ দেখিয়ে দিলে তা ফ্রাই করে নিয়ে আসে । আমরাও ফিস এন্ড চিপস অর্ডার দিলাম সাথে রাইস ও ড্রিংকস। মজা করে খেলাম ও ছবি তুললাম।



রাত অনেক হয়েগেছে । টিপ টিপ বৃষ্টি, রাস্তায় দাড়িয়ে গাড়ী পাচ্ছিলাম না । একটু দূরে দেখলাম একটা মাইক্রা দাঁড়িয়ে আছে । সেখানে গিয়ে আমাদেরকে হোটেল পর্যন্ত লিফট দিতে বললাম । ড্রাইভার নেই তবে একজন এগিয়ে এসে বলল ঠিক আছে চল আমি পৌছে দিয়ে আসি । যদিও আজকের মত আমাদের ডিউটি শেষ হয়ে গেছে । ৩০ রিংগিত চাইল রাজী হয়ে গেলাম । রাত সাড়ে দশটায় হোটেলে ফিরে এলাম । লংকাউইতে প্রথম রাতের অভিজ্ঞতা খারাপ লাগেনি । পরদিন ভোরে উঠে দ্বীপের অন্যান্য জিনিষ দেখার জন্য মানষিক প্রস্তুতি নিয়ে দ্রুত ঘুমিয়ে গেলাম ।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:০৬

মো: ইলিয়াস বলেছেন: ভাল লাগল। আমিও ভ্রমন প্রিয় মানুষ, লংকাউই গিয়েছিলাম, খুব ভালো লেগেছে, আসা করি আপনার ও ভাল লাগবে।

১৭ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:১৪

শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে ।

২| ১৭ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:৪৬

ভিটামিন সি বলেছেন: সিংগাপুরে আসলে আমাকে কল দিয়েন। এককাপ ধোঁয়া উঠা গরম কফি পান করাবো।

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১০:৫৩

শোভন শামস বলেছেন: বাকি লিখা গুলো পরবেন আশাকরি

ধন্যবাদ

৩| ১৭ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ২:৩৮

নাহিদ তামিম বলেছেন: ভিটামিন সি@ নভেম্বরে গিয়েছিলম সিংগাপুরে, ভাই কফি তো পান করান নাই। আর আপনার ফোন নং তো না।

লেখক ভাই, লংকাউই মনে হয় বাস ফেরি থেকে প্লেন ই ভাল। ফেরি টার্মিনাল টা তাহলে এখনও সেইরকম নোংরাই আছে? আমি ২০০৮ গিয়েছিলাম ৫ দিনের জন্য।

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১০:৫১

শোভন শামস বলেছেন: বাকি লিখা গুলো পরবেন আশাকরি

ধন্যবাদ

৪| ১৭ ই মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩১

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: valo laglo

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১০:৫১

শোভন শামস বলেছেন: বাকি লিখা গুলো পরবেন আশাকরি

ধন্যবাদ

৫| ১৮ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১০:৪৬

ইচ্ছের ঘুড়ি বলেছেন: ভাইয়া, ভালো লাগছে,চালিয়ে যান সাথে একটু হোটেলে থাকার খরচ পাতি এবং আনুষঙ্গিক খরচের ব্যাপারে একটু ধারণা দিয়েন প্লিজ...............

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১০:৫৩

শোভন শামস বলেছেন: বাকি লিখা গুলো পরবেন আশাকরি

২০০ রিঙ্গিত ভাল হোটেল

খাবার তেমন দাম নয়

ট্যাক্সি মালয়ি ড্রাইভার নিবেন

ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.