নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নানা দেশ কত কথা

শোভন শামস

আমার দেখা নানা দেশের কথা সবার জন্য - পাঠকের ভাল লাগাতেই আনন্দ

শোভন শামস › বিস্তারিত পোস্টঃ

পার্ল অব আফ্রিকা – উগান্ডা

১৫ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:৫৬





যাত্রা শুরু হলো ঢাকা থেকে, প্রথমে দুবাই আমিরাতসের বিমানে করে। নতুন সুপরিসর বোয়িং ৭০৭ -৩০০ বিমান ।এই ফ্লাইট গুলো এক সময় বাংলাদেশের কর্মীতে ভর্তি থাকতো। আজকে বিমানের অধিকাংশ সিট ফাঁকা। প্লেন নতুন সার্ভিস উন্নত এবং যথারীতি রোবটের মত হলেও প্রয়োজন অনুযায়ী সবকিছু পাওয়া যায়।



দুবাই এয়ারপোর্ট আর উন্নত হয়েছে। তিন নাম্বার টারমিনাল আমিরাতসের এবং এটা সবচেয়ে সুন্দর করে সাজানো।এই টারমিনালে পুরটাই ওয়াই ফাই জোনে। আমাদের কেনিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমানে যেতে হবে তাই এখানে থাকতে পারলাম না। পরবর্তী গন্তব্য নাইরোবি । টারমিনাল একে যেতে হবে, প্রায় ১৫ মিনিটের রাস্তা বিমান বন্দরের ভিতর দিয়ে। হাঁটতে হাঁটতে অবশেষে টারমিনালে পৌঁছা লাম।আসার পথে চলন্ত রাস্তা আছে। ডেকোরেশন আরও সুন্দর হয়েছে দুবাই এয়ারপরতের।এবার কিছু কিনতে ইচ্ছা করল না। কেনিয়ান এয়ারের গেইট দিয়ে চেক ইন করে ভিতরে বসে রইলাম।

এই বিমান ও বেশ বড় এবং ভেতরে যাত্রী ভরতি।দুবাই থেকে নাইরোবি ফ্লাইট টাইম ৪ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। ঢাকা থেকে দুবাই আসতে লেগেছিল ৫ ঘণ্টা। স্থানীয় সময় সকাল ৬ টায় নাইরোবির জম্মু কেনিয়াত্তা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে প্লেন ল্যান্ড করল।প্লেনেই রাতের খাবার দিয়ে সেহেরি খেয়ে ফেলেছি।দুবাই এয়ারপোর্টে হাঁটা বেশ কাজে লাগলো। খেতে ভালই লাগলো, পানি একটু বেশী খেলাম। রোজার নিয়ত করে ফেললাম। বাইরে তখনো সকাল হয়নি । চাঁদ তখনও তার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছিলো।



এন্টেবি বিমান বন্দরে যখন আমাদের বিমান ল্যান্ড করল তখন এন্তেবিতে সকাল হয়ে গেছে। আকাশ থেকে লেক ভিক্ট রিয়াকে অপূর্ব লাগছিল, বিমান বন্দর লেকের পাশেই। এলাকাটা উঁচু নিচু পাহাড়ি ও সমতল নিয়ে।বড় ছোট অনেক গাছ, কতগুলো ছায়ার জন্য কতোগুলো আবার ফলবান।উচু নিচু পাহাড়ি রাস্তা। লাল মাটিতে রেখার মত কাঁচা রাস্তা গুলো দূর দুরান্তে চলে গেছে।পাকা রাস্তাও অনেক।সকাল বেলা এবং ছুটির দিন থাকায় রাস্তা একদম ফাকা।রাস্তার দুপাশের দৃশ্য অপূর্ব। আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ, বেশি গরম ও নেই, ঠাণ্ডা ও নেই। এয়ারপোর্ট থেকে ট্যাক্সি নিলাম ১০ ডলার ভাড়া, একটু জানা থাকলে ৬ ডলারেও এন্তেবি শহরে আসা যায়।



প্লেনে আসার সময় জানালার পাশে বসে নীচের দিকে তাকিয়ে আফ্রিকার ভূপ্রকৃতি দেখছিলাম। প্লেন তখন ৩৪০০০ হাজার ফিট উপর দিয়ে উড়ছিল। নীচের সাদা মেঘের ভেলা গুলোকে আইস বারগের মত মনে হচ্ছিলো, আর আকাসের নিচে যেন একটা কাঁচের পর্দা , সেই স্বচ্ছ পর্দার মধ্যে দিয়ে মাতির ঘর বাড়ী বন বাদাড় সব দেখা যাচ্ছিলো । মেঘ গুলো কে মনে হচ্ছিল আকাশের পাহাড় । কিছুক্ষণ প্লেন নীচে নেমে আসাতে একটা বিশাল মেঘের পাহাড় দেখলাম । আজ আকাশে সব মেঘই ছিল সাদা, বরফের শুভ্রতা নিয়ে। দেখতে দেখতে প্লেন নেমে এলো আমার জন্য নতুন এক দেশ উগান্ডার এন্টেবিতে।



উগান্ডার এরাইভাল কার্ডে লিখা আছে – পার্ল অব আফ্রিকা, উগান্ডায় স্বাগতম।মুক্তো কি অর্থে ব্যাবহার হোল জানার চেষ্টা করছি। পূর্ব আফ্রিকান কমিউনিটির দেশ এই উগান্দা।এটা ইদি আমিনের দেশ।রেইড অন এন্টেবি ছবিটি পৃথিবীর কাছে উগান্ডাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।ঢাকা থেকে যাত্রার শেষে উগান্ডার মাটিতে প্রথম বারের মত এলাম।



প্লেন যখন ল্যান্ডিঙের জন্য নামছিল তখনই পাহাড় সমতলে মিলানো সবুজে ছাওয়া, সবুজ সতেজ দেশটাকে দেখতে চমৎকার লাগছিলো । এন্টেবি এয়ারপোর্টের কাছেই লেক ভিকটোরিয়া, বিমান থেকে এর প্রায় পুরোটাই দেখা হল।



নাইরোবিতে জম্মু কেনিয়াত্তা এয়ারপোর্টে হাতে মাত্র এক ঘণ্টার মত সময় ছিল। দুবাই এয়ারপোর্টের তুলনায় এতা কিছুই না । কিছুক্ষণ ডিউটি ফ্রী শপে ঘোরাঘুরি করে ভেতরে বোর্ডিং এরিয়াতে চলে এলাম। বাইরে ঝিরঝিরে বৃষ্টি, বোর্ডিং ব্রিজ নেই, হাল্কা বৃষ্টিতে ভিজে লাইনে দাঁড়ালাম । ডিজিটাল স্কানার দিয়ে বোর্ডিং কার্ড চেক করে বিমানের দিকে যেতে বলল। ছোট বোয়িং ৭৩৭ বিমান, যাত্রীরা সব এন্টেবি যাবে।স্থানীয় অধিবাসীদের পাশাপাশি অনেক টুরিস্টও আছে বিমানে।আফ্রিকাতে কেনিয়ান এয়ারওয়েজ বেশ জনপ্রিয় ও ভাল একটা এয়ারলাইন্স। ফ্লাইট টাইম ৫০ মিনিট । আকাশে সূর্যের অকৃপণ আলো। নীচে সাদা মেঘ ও আফ্রিকার ভূখণ্ড দেখতে দেখতে চলে এলাম আমার নতুন দেশ উগান্ডায় ।



এন্টেবি ছোট আন্তর্জাতিক এয়ার পোর্ট, অনেক বিমান এখানে উঠা নামা করে।বেশ শান্ত পরিবেশ। বিমান বন্দরের আশেপাশের এলাকা দেখেই মনটা ভালো হয়ে গেল। খোলামেলা পরিবেস, মিষ্টি ঠাণ্ডা আবহাওয়া , সূর্যের অকৃপণ আলো সবুজ ঘাস, লাল মাটি , একটু দূরে ছোট ছোট পাহাড়ি এলাকা। একতালা দোতালা বাড়ি ঘর, সব যেন সাজানো । এন্ট্রি ভিসার জন্য লাইনে দাঁড়ালাম। দ্রুত এন্ট্রি ভিসা পেয়ে গেলাম।লাগেজ নিতে সমস্যা নেই, সুন্দর ব্যবস্থা,আমার আসল লাগেজটাই আসেনি, চেক করে জানালো পরের ফ্লাইটে নাইরোবি থেকে আসবে। ১০ ডলারে ট্যাক্সি ভাড়া করে এন্তেবি শহরে এলাম। এয়ারপোর্ট থেকে ট্যাক্সির ভাড়া ফিক্সড। এখান কার মুদ্রার নাম শিলিং। এক ডলারে ২৫৫০ শিলিং।বাসে করে কাম্পালা যেতে এক ডলার লাগে। মোটর সাইকেল বাহন হিসেবে এখানে বেশ জনপ্রিয়।সস্তায় এতে করে কাছা কাছি জায়গা গুলোতে যাওয়া যায়।



দুপুরে ১০ ডলারে ট্যাক্সি ভাড়া করলাম এন্টেবি থেকে এয়ারপোর্ট এবং ফেরত।আবার আশপাশের এলাকা দেখতে দেখতে বিমান বন্দরে এলাম। যাক লাগেজ পাওয়া গেছে। বকশিস চাইল ১০ ডলার দিলাম। মিসিং না হওয়াতে বেশ ভাল লাগলো। বিকেলে টায়ার্ড লাগছিলো , তাই ঘুমিয়ে গেলাম।রাতের আব হাওয়া হাল্কা ঠাণ্ডা। উগান্ডায় প্রথম আসার অভিজ্ঞতা ভালই লাগলো ।এখানে এন্তেবিতে কাছেই লেক ভিক্টোরিয়া, আশপাশের এলাকা ঘোরা হবে ইনশাআল্লাহ।আমাদের ট্যাক্সি ড্রাইভারের নাম মুতেবি আলি, এন্টেবি কি টো রো ট্যাক্সি অপারেশন কোম্পানি, শহর থেকে গেলে টাকা কম লাগে।



দেশটা সত্যি সুন্দর আবহাওয়া চমৎকার ।হাল্কা শীত শীত ভাব, হাল্কা বাতাস, সবই সুন্দর। দুপুরের রোদের তাপ বেশ। বিকেল এবং সকালে তাই হাঁটা বেশ মজার। আবাসিক এলাকার রাস্তা লাল মাটির পীচঢালা না, তাই গাড়ি গেলেই ধূলা উড়ে। নাকে রুমাল দিতে হয়।



এন্টেবির নীল আকাশে সূর্য উঁকি দিচ্ছে, আব হাও য়া হিমেল এর মাঝে অকৃপণ রোদের আলো ।আকাশ মেঘ মুক্ত , উচু থেকে গাড়িতে করে নিচে আসার সময় লেক ভিক টো রিয়া তে সূর্যের আলোর প্রতিফলন অপূর্ব দৃশ্য সৃষ্টি করে।দূর থেকে এই দৃশ্য দেখে কি তৃপ্তি লাগে, তাই বিকেলে লেকের পাড়ে বেড়াতে বের হলাম।



লাল মাটি আর কাঁকরের রাস্তা, গাড়িগুলো ধুলো উড়িয়ে গেলে নাকে রুমাল দিতে হয়। পথ চারীর জন্য পরিবেশটা বন্ধু সুলভ না। একটু একটু করে লেকের কাছে এগিয়ে যাচ্ছি, গোটা লেকের পাড়ই যেন বাক্তিগত দখলে, মাঝে মাঝে খানিকটা ফাঁকা, সেখানে বিকেলে মানুষ জন বেড়াতে যায়।পাড়টাকেই বিচ বলে। এই লেক অনেকটা সাগরেরই মত। লেকের দুরের পাড় দিগন্তে মিলে গেছে।



লেকের মধ্যে ছোট ছোট পাথুরে দ্বীপ আছে। ওগুলো জনহীন তবে সবুজ সতেজ। আমরা এক টা উচু পাথুরে পাড়ে এলাম। নিচে এক চিলতে বিচ, লেক ভিক্টোরিয়ার ঢেউ হালকা গর্জন করে পাড়ে আছড়ে পরছে । একা একজন একমনে মাছ ধরছে কয়েকটা বঁড়শি ফেলে। লেকের পাড়ে ছোট ছোট বিচ,পাড়ের হোটেল গুলোর দখলেই বলা চলে। সমস্যা তেমন হয়না কারণ মানুষ কম। একটু দূর থেকে ভেসে আসছে আফ্রিকান সংগীত ও বাজনার জোর আওয়াজ, বিকেল বেলা আফ্রিকান গান বাজনা আর ড্রামের শব্দ বিচ এলাকা জমিয়ে রাখে।





সূর্য হেলে যাচ্ছে পশ্চিমে, লেকে তার আভা ক্রমে লাল হয়ে যাচ্ছে, আমরা কিছু ছবি তুললাম । এক টা বাচ্চা ছেলে এসে বলল মিঃ ফটো – তাকে সাথে নিয়ে ছবি তুলে দেখালাম । বেশ হাসি খুশি, কিছু সাহায্য চাইল, ছেলেটা লেক থেকে পানি নিয়ে যাচ্ছি লো, এরা পানি লেক থেকে সংগ্রহ করে। লেকের স্বচ্ছ পানি স্থানীয় অধিবাসীরা ব্যবহার করে। জনবসতি কম থাকায় পরিবেশ দূষণ তেমন একটা নেই।



সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে, আমরা আস্তে আস্তে ফিরে চলছি আপন নিবাসে, রাতে বের হবার তেমন ইচ্ছা নেই। এন্টেবির পুর দিনটা সুন্দর ভাবে কেটে গেল আনন্দে।















মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১:২০

টুনা বলেছেন: Shear korar jonno dhonnobad.

১১ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৮:৩৬

শোভন শামস বলেছেন: অনেক দিন পর ব্লগে এলাম। ধন্যবাদ, সাথে থাকবেন

২| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১:৩৪

ইয়ার শরীফ বলেছেন: কিছু দিন আগে কেনিয়ার এয়ারপোর্ট এ অগ্নিকান্ড এর খবর পেলাম।

এই পর্বে কোন ছবি দিলেন না যে?

আপনার পোস্ট পরে আফ্রিকার প্রতি টান আরও বাড়ছে।

১১ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৮:৩৭

শোভন শামস বলেছেন: ছবি তোলা হয়নি তাই দিলাম না। পরের পোস্ট গুলোতে আছে। ধন্যবাদ, সাথে থাকবেন

৩| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৫:০৮

প্রিন্স হেক্টর বলেছেন: ভাল লাগলো। তবে ছবি থাকলে আর্ও ভাল হত :)

১১ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৮:৩৮

শোভন শামস বলেছেন: পরের পোস্ট গুলোতে আছে। ধন্যবাদ, সাথে থাকবেন

৪| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:০৮

জাহিদ গাছবাড়ী বলেছেন: পড়ে ভালো লাগল

১১ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৮:৩৮

শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ, সাথে থাকবেন

৫| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:৪৩

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: :) :)


ভালো লাগলো!!!!

১১ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৮:৩৮

শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ, সাথে থাকবেন

৬| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:০১

বিষঠোকরা; নিঃসঙ্গ পাখি বলেছেন: ভালো লেগেছে।

১১ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৮:৩৯

শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ, সাথে থাকবেন

৭| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:৪৬

মাসুক আহমেদ বলেছেন: ভাই আপনি উগান্ডা ঘুরতে এসেছেন জেনে ভাল লাগল। প্রায় চারমাস হতে চলল আমি এই দেশটিতে আছি। আপনি কি এখনো আছেন?

উগান্ডার ছবি এবং ভ্রমণ নিয়ে আমারো কিছু লেখা আছে পরার আমন্ত্রণ রইলো। বাংলা লিখতে বেশ কষ্ট হয় বলে ইংরেজীতে লেখা

লিংক : https://xitu.wordpress.com

১১ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৮:৪০

শোভন শামস বলেছেন: বেশ কয়েক বার গিয়েছে উগান্ডায়। সেখান থেকে রুয়ান্ডা তে ও গিয়েছিলাম বাসে করে। ধন্যবাদ, সাথে থাকবেন

৮| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১:০৭

নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন:
আজকে জিওগ্রাফী ভাজা ভাজা কইরা খাইয়া গল্প লিখছি! মাথা পুরাই নস্ট। আপনার পোস্ট কাল দেখব। :)

১১ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৮:৪০

শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ, সাথে থাকবেন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.