নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নানা দেশ কত কথা

শোভন শামস

আমার দেখা নানা দেশের কথা সবার জন্য - পাঠকের ভাল লাগাতেই আনন্দ

শোভন শামস › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভাল মানুষের খোঁজে – দুই

১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:৩৩


সব ভাইরা বসে গল্প করছিল তাঁদের গ্রামের বাড়ীর পুকুরের ঘাটে। বড় ভাই তার গল্প বলা শুরু করল। গ্রামের বাড়ীতে ধান কেটে ম্যারাই করার পর তা গোলাঘরে রেখে দেয়। তাঁদের বাড়ীর ধান ও গোলা ঘরেই রাখা হত। কিছু ধান ভেঙ্গে খাওয়ার জন্য চাল ও গোলাতে মজুত থাকত।এক দুই দিন পর পর মা গোলা থেকে চাল নিয়ে রান্না করত। মার কাজ ছিল সারা বাড়ি সামলানো, মাঝে মাঝে মা বড় ভাইকে গোলা থেকে চাল নিয়ে আস্তে বলত।
একদিন সন্ধ্যার দিকে বাড়ীতে কয়েকজন মেহমান আসে হাজির হয়। রাতের খাবার ততক্ষণে রান্না শেষ হয়ে গেছে। মা তখন আমাকে ডাক দিয়ে বলে, বাবা আজিম কুপিটা নিয়ে যাও, গোলা থেকে চাল নিয়ে আস। আমি তখন বেশ ছোট, কুপি নিয়ে অন্ধকার গোলায় ধুকে চাল তুলে আনছি, এমন সময় কুপি থেকে বেশ কিছু পরিমান কেরোসিন তেল চালের ঝুড়িতে পড়ে গেল। মাকে চাল দিয়ে বললাম, মা চালের মধ্যে তেল ফেলে দিয়েছি। মা বলল, বাবা করেছিস কি তুই, এই চাল তো কেরিসিনের গন্ধের জন্য খাওয়া যাবে না। দেখা যাক আগামিকাল কি করা যায়।
ভাই মনে মনে একটু ভয় পেয়ে গেল, তখনকার মা’রা সংসারের সব ঝক্কি ঝামেলা সামলাত, বাবাদেরকে সব কিছু জানতে দিত না। কয়েকদিন পর মা আমাকে বললেন, আমি চালগুলো আলাদা করে ফেলেছি, তুই একদিন সময় করে বাজারে কম দামে বিক্রি করে দিস। বাবাকে এসব জানানোর দরকার নাই। বাবার কিন্তু সব ব্যাপারেই নজর ছিল, তবে কাউকে কিছু বুঝতে দিত না। একদিন স্কুল ছুটির পর চালগুলো নিয়ে বাজারে গেলাম। মনে মনে ভয় পাচ্ছিলাম বাবা যদি দেখে ফেলে। দাম কম দেখে এক পাহাড়ি সবটুকু চাল কিনে নিল, আমি অবশ্য চালে একটু গন্ধ আছে তা জানিয়েছিলাম।
বাজারে চাল বিক্রি করে বিকেলের দিকে খুশি মনে বাড়ি ফিরছিলাম। পথে হঠাত বাবার সাথে দেখা।আমার বুক ধক করে উঠল। বাবা জিজ্ঞাসা করলেন বাজারে কেন গিয়েছিলে, বাবাকে মিথ্যা কথা বলতে পারলাম না। তিনি বললেন তোমার চাল কে কিনেছে, তাকে এক পাহাড়ি মানুষের কথা বললাম। তিনি বললেন তুমি তাকে ঠকিয়েছ কেন? চল তার বাড়ি গিয়ে মাফ চেয়ে আসি। সেই গোধূলি লগ্নে আমরা আবার বাজারের পথে চললাম। বাজারে গিয়ে সেই লোকটার বাড়ীর ঠিকানা নিয়ে তার বাড়ীর দিকে রওয়ানা হলাম। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে পথে যেতে যেতে আরও কিছু সময় চলে গেল। যখন তার বাড়ি পৌছালাম তখন তার চুলাতে রান্না চাপানো দেখতে পেলাম।
বাবা বললেন, আমার ছেলে আপনাকে ঠকিয়ে চাল বিক্রি করেছে, সেগুলো আমাদেরকে ফেরত দিন আর আপনার টাকা নিয়ে নিন। সেই লোকটি বাবাকে জানালো সে জেনে শুনে কম দাম দেখে এই চাল কিনেছে এবং এই ছেলে তাঁকে থকায়নি।এর পর বাবা আশ্বস্ত হয়ে বাড়ীর পথ ধরলেন। বাড়ীতে আসতে দেরি দেখে মা সব বুঝতে পেরেছিলেন। বাবা মাকে জানালেন, আমরা যা খেতে পারি না তা মানুষের কাছে বিক্রি করা ঠিক না। মা চুপ ছিলেন, একটু লজ্জা পেয়েছিলেন।
আজকে সেই মানুষ আমাদের মাঝে নেই আর আমরাও সেই দিন আর কখনও ফিরে পাব না। গল্প করতে করতে আকাশে চাঁদ উঠে গেছে। চাদের আলোতে পৃথিবী আগের মতই আলোকিত হয়েছে, তবে সেই আলোর নিচে আজ আলোকিত মানুষের বড়ই অভাব।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:৫৪

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ভালো মানুষ বেশী দিন বাঁচে না । যেমন ডাঃ মঈন।

১৬ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:০১

শোভন শামস বলেছেন: অনেক ক্ষেত্রে তাই হয়, ধন্যবাদ, সাথে থাকবেন

২| ১৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ২:১২

রাজীব নুর বলেছেন: গ্রেট।

১৬ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:০০

শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ, সাথে থাকবেন।

৩| ১৬ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:০৫

সৈয়দ জায়েদ আহমদ বলেছেন: ভালো লাগলো

১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৫৪

শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ, সাথে থাকবেন।

৪| ০২ রা মে, ২০২০ সকাল ৮:৪৫

জাফরুল মবীন বলেছেন: প্রায় ৫বছর পর আবার আপনার ‘ভালো মানুষের খোঁজে’ পাঠ করার সুযোগ হলো।ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম।

০৩ রা মে, ২০২০ রাত ১০:৪২

শোভন শামস বলেছেন: মানবিক হই সবাই, সাথে থাকবেন ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.