নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পরিপূর্ণ মনুষ্যত্ব অর্জনের প্রত্যয়ে

শুজা উদ্দিন

ব্যতিক্রম

শুজা উদ্দিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধর্ম ও রাষ্ট্র একত্র হতে পারে না

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৫০

আধুনিক বিশ্বে ধর্ম সম্পর্কে যাবতীয় ধারণা ইউরোপকেন্দ্রীক ও খ্রিষ্টান ধর্মের ইতিহাস নির্ভর
পোপতন্ত্রের পূর্বে, মুসলিম শাসন ব্যতীত, পৃথিবীতে ধর্ম রাষ্ট্রের উপর শক্তিশালী ছিল না। আনুমানিক (৬০০-৫০০ খ্রিষ্টপূর্ব) দাউদ ও সুলাইমান(আ) এর সময়ের পর হতে ধর্মের আধিপত্যের রেকর্ড পাওয়া যায় না। ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ সর্বদা রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের অধীন ছিল। রাষ্ট্র সাধারণত কোন একটা ধর্মকে পৃষ্ঠপোষণ করে আসছে প্রাগৈতিহাসিক কাল হতে। ইতিহাসের পরিক্রমা পাল্টাতে শুরু করে মদিনায় ইসলামি শাসন ও ইউরোপে(রোমে) খ্রিষ্টীয় শাসনের গোড়াপত্তনের মাধ্যমে। এই দুই অঞ্চলে ধর্মের হাত রাষ্ট্রের উপর শক্তিশালী হয়ে বিস্তৃত হয়। পোপের ক্ষমতা সমগ্র ইউরোপজুড়ে ছিল, নাম ছিল খ্রিষ্টানরাজ্য বা খ্রিসেনডোম। ইউরোপবাসীরা দুই প্রভুর কাছেই জিম্মী ছিল। ১ম সহস্রাব্দের শেষ দিকে ও ২য় সহস্রাব্দের গোড়ার কয়েক শতক ছিল পোপতন্ত্রের স্বর্ণযুগ। সমসাময়িক উদীয়মান শক্তি ছিল ইসলামী খিলাফত। এর প্রধান ছিলেন খলিফা। এভাবে ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র বিশ্বজুড়ে ক্ষমতাধর হয়ে ওঠে।

এটা জাগতিক রীতি যে, পুরাতন আদর্শ শিগগির কলুষিত হয়ে যায়, নতুন আদর্শের তুলনায়। তেমনি খ্রিষ্টান ধর্ম ও পোপতন্ত্র অতিদ্রুত দূষিত ও দুর্নীতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে- ব্যাপক ক্ষমতার অধিকারী হবার পর। তখনও নব আদর্শে উজ্জীবিত মুসলিমরা তাদের আদর্শ ইসলামকে প্রাণপণ আকড়ে রেখে মানুষের দাসত্ব থেকে মানবতাকে বাচানোর জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিল। ফলস্বরূপ তাদের মধ্যে দুর্নীতি ও অন্যায় ততটুকু স্থান পায়নি, যতটুকু পেয়েছিল খ্রিষ্টীয় শাসকবর্গের মাঝে। ধর্মের নামে ও ধর্মরাষ্ট্রের নামে শোষণ খলিফাগণ করেননি, বরঞ্চ তারা ধর্মরাষ্ট্রকে সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্র হিসেবে আদর্শরূপে পেশ করেছেন। পরবর্তীকালে বিস্তৃত সাম্রাজ্যে কতিপয় খলিফা ক্ষমতার অপব্যবহার করলেও তা ধর্মের নামে করেননি, বা করতে চাইলেও পারেননি।

পক্ষান্তরে, পোপতন্ত্রের অধীনে খ্রিসেনডোমে সকল রাজ্যের উপর ও প্রজাদের উপর ধর্ম ও ধর্মরাষ্ট্র রক্ষার নামে অর্থনৈতিক শোষণ ও রাজনৈতিক নিপীড়ন চরম আকার ধারণ করেছিল- বিশেষত দ্বিতীয় সহস্রাব্দের গোড়ার দিকে। এক্ষেত্রে অগ্রণী ছিল রোমের ক্যাথলিক শাসকগণ। ইউরোপের যত চার্চ বা গীর্জা ছিল সবগুলি হয়ে ওঠেছিল একএকটি সম্পদের ভান্ডার। জনসাধারণ হতে রাজার চাইতেও বেশি হারে কর ও অর্থ আদায় করত পোপতন্ত্রের দস্যু যাজকেরা। অর্থ-বিত্ত আর ক্ষমতার জালে জড়িয়ে ঐশ্বরিক দায়িত্ব হতে যোজন যোজন দূরে ছিটকে পড়ে খ্রিষ্টান মহারাজা পোপ। পোপগণ নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে ও পাকাপোক্ত করতে নিকৃষ্টতম পন্থায় জনগণের ধর্মকে ব্যবহার করে। কথায় আছে-রাজার কথাই আইন। তেমনি পোপের কথাই ছিল ধর্ম। তিনি ছিলেন অঘোষিত ঈশ্বর। মূহুর্তেই ধর্মের বিধি পাল্টানো হতো চার্চের স্বার্থ রক্ষায়। এসব অবশ্যই ছিল তাদের পতনের পূর্বাভাস। তাদের ধর্মের নামে দুর্নীতি আর শোষণ থেকে বাচতে ইউরোপের রাজা-প্রজারা উঠে পড়ে লাগে। তখন থেকেই ঘোষিত হয়ে আসছে ধর্ম ও রাষ্ট্র একত্র হতে পারে না।

সে সময় ইসলামী খলিফাগণ পুরোদমে ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র পরিচালনা করে গেছেন। আরো বহু যুগ ইসলামভিত্তিক মুসলিম সাম্রাজ্য জারি ছিল। খ্রিষ্টান ধর্মের ন্যায় ইসলামের অনুসারীদের মধ্যেও প্রচুর বিভক্তি ছিল। তথাপি কোন মুসলিম গোষ্ঠী ধর্ম ও রাষ্ট্র আলাদা সত্ত্বা হিসেবে সমাজে থাকবে এটা দাবী করেনি এবং এমন পৃথকীকরণের প্রয়োজনও বোধ করেনি। ক্যাথলিক গীর্জার অধিক ক্ষমতা ও তার অপব্যবহার তাদের পতন ডেকে এনেছে এবং তাদেরকে চিরতরে বশীভূত ও নিস্তব্ধ করে দিয়েছে। পক্ষান্তরে বহু জাতিসত্ত্বার সমন্বয়ে উসমানী খিলাফত বিংশশতাব্দী পর্যন্ত ধর্মভিত্তিক শাসন পরিচালনা করে গেছে। ধর্মের দোষে নয়, জাতীয়তাবাদী বিষবাষ্পের দোষে তুর্কি খিলাফতের পতন হয়েছে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:০৭

রাজীব নুর বলেছেন: ধর্ম এবং রাষ্ট্র দুটাই গুরুত্বপূর্ন। দুটা একসাথে মিলাতে গেলেই সমস্যা।

০৩ রা অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:২৩

শুজা উদ্দিন বলেছেন: আপনার কথাটা খ্রিষ্টীয় ও পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গির কথা। আমার পোস্টের উদ্দেশ্যই হল এটা বুঝানো। আমরা যেসব সমস্যার কথা বলি তা ইসলাম থেকে বা আরব থেকে আসেনি, এসেছে ইউরোপের ইতিহাস থেকে। ইসলামের অনুসারীদের জন্য ধর্ম আর রাষ্ট্র পৃথক হওয়াটাই অযৌক্তিক। একজন মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে ঈশ্বর মানবে আর দুজন মানুষ একত্র হলে সেখানে ঈশ্বরের কোন কথাই থাকবে না- এটা কি যৌক্তিক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.