নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুখীমানুষ

সুখী মানুষ

সত্যিকারের সুখীমানুষের সাথে আমার একটাই পার্থক্য, সুখীমানুষের গায়ের জামা ছিলো না, আমার আছে।

সুখী মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বোকা কাহিনী - দাতের পোঁকা।

২৯ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:৪০

বোকা কাহিনী - দাতের পোঁকা।
-০-
ছোট বিলায় বোকা ছিলাম। কথাটা ঠিক না। ঠিক কথাটা হইলো, ছোটবেলার বোকামীগুলা এই বয়সে এসে বুঝতে পারছি। তারমানে, এই বয়সের বোকামীগুলা মরার পর বুঝতে পারবো।

ছোটবেলায় আমার খুব দাঁত ব্যথা হইতো। সবাই বলতো দাঁতে পোকা হইছে। পোকা বের করতে যাইতাম ব্রাহ্মণপাড়া থানার পুরানো টেলিগ্রাফ অফিসের পাশে একটা বাড়ীতে। আমরা বলতাম সরু মন্সির মেয়ে'র বাড়ী। এবার পোকা বের করার কাহিনী বলি-

নিতান্তই গরীব এক মহিলা। একটা ছো্ট্ট মাটির ঘরে থাকতেন তিনি। ঘরে গিয়ে মাটিতে উপুড় হয়ে বসতাম। মুখ হা করে রাখতে হতো। কথা ছিলো, মুখ কিছুতেই বন্ধ করা যাবে না। আমি মুখ হা করে বসে থাকতাম। আর ঝাড়ফুক যে মহিলা করতেন তিনি ঘরের পিছনে গিয়ে একটা ছোট্ট গাছ নিয়ে আসতেন। দুই, তিন ইঞ্চি সাইজের দূর্বা ঘাস টাইপ একটা গাছ। গাছের শিকড় সহ উপড়ে নিয়ে আসতেন। এবার মাটি সহ গাছের শিকড় দিয়ে দিতেন মুখের ভিতর।

অনেক্ষণ মুখের ভিতর তিনি এই গাছ ঘুরাতেন। একটা পর্যায়ে দেখতাম তিন, চারটা পোকা মাটিতে পড়ে আছে। আমের ভিতর থাকা লম্বা লাম্বা সাদা নরাম পোকাগুলার মত পোকা। এইগুলা মাটিতে পড়ে বিছা পোকার মত ছোটাছোটি শুরু করতো। যেই কারনে ব্যথা, এই কারন চউক্ষের সামনে বিদায় হয়ে গেলো। মনের আনন্দে বাড়ী চলে আসতাম।

বড় হয়ে ভাবলাম। আচ্ছা, দাঁতের ফাঁকেতো এতগুলা পোকা থাকার মত জায়গা থাকার কথা না! তারপর আবার ভাবলাম, মহিলা বাড়ীর পিছনে গিয়ে যখন গাঁছটা আনতো তখন এত সময় কেন লাগাতো! পরে দুই এ দুই এ চার মিলে গেলো। তার বাড়ীর পিছনটা ছিলো নোংড়া পচায় ভরা। সেখান থেকে তিনি বুদ্ধি করে দুই তিনটা পোকা হাতের আঙ্গুলের ভাঁজে নিয়ে নিতেন। পরে মুখের শিকড় ঘুড়ানোর সময় হাতের আঙ্গুল ফাঁকা করে পোকাগুলা ফেলে দিতেন মাটিতে। সিম্পল।

গল্পটা ভাগ্নিকে বলার পর ভাগ্নিতো মহা আগুন! বলতেছে, মামা মহিলা কি ফ্রড ছিলো? আমি বল্লাম না, মহিলা ফ্রড ছিলো না। তিনি বুদ্ধিমতি ছিলেন। গ্রামে তখন ডাক্তার ছিলো না। এই ভদ্রমহিলা যে কাজটা করতেন তা হইলো, মনের জোর বাড়িয়ে দিতেন। যে পোকাটা ছিলো, দেখো বের হয়ে গেছে। মানুষের মনের জোরের চেয়ে বড় কোন ঔষধ নাই।

দুই টাকা করে তিনি নিতেন পোকা বের করে দেওয়ার জন্য। তবে সবার কাছ থেকে না। যারা ইচ্ছা করে দিতো তাদের কাছ থেকে। তখনকার গ্রামের মানুষদের নগদ টাকা ইনকামের তেমন কোন রাস্তা ছিলো না। কোন বাসা, বাড়ীতে কাজ করে দিলে বিনিময়ে খাদ্য বা চাল, ডাল টাইপ কিছু জিনিস মিলতো। যারা চাকরী করতেন, তারাই মাস শেষে নগদ টাকা হাতে নেয়ার সুযোগ পেতেন। অথচ নগদ টাকা ছাড়াতো অতি প্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়াও যেতো না। অতএব গ্রামের সেই মহিলা একাধারে উপকারী আবার বুদ্ধিমতীও ছিলেন। শুধু বোকা ছিলাম আমি, যা এখনো খুব নিষ্ঠার সাথেই আছি :)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:৫৯

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: হা হা, মজা লেগেছে। আমরা সবাই এমন বোকা ছিলাম।

২| ২৯ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১:২৩

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: আমরা এখনো বোকাই আছি । সেদিন দেখলাম রাস্তার ধারে এই বাইদানি একজনের দাঁতের পোকা ফেলছে :P

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.