নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অতি সাধারণ

সু মন

ভাই অতি সাধারণ মানুষ আমি

সু মন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বঙ্গবন্ধুকে লেখা একটি ঠিকানা বিহীন চিঠি

১৫ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:৩১


বাংলাদেশ তখন সবে স্বাধীন হয়েছে। ১০ জানুয়ারি ১৯৭২, তৎকালীন বিহার রাজ্য আজকের ঝাড়খণ্ডের জামদেশপুরের প্রবাসী বাঙালি একটি মেয়ে কমলা ঘোষ লিখে ফেললেন বঙ্গবন্ধুকে উদ্দেশ করে একটি চিঠি। ঠিকানা জানতেন না, তাই লিখলেন- বঙ্গবন্ধু, ঢাকা , বাংলাদেশে।


আর আশ্চর্যভাবে সেই চিঠির জবাব এলো স্বয়ং বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে ঠিক ৩ মাস ২ দিন পর।

চিঠিতে কমলা দেবী লিখেছিলেন, ‘পরম শ্রদ্ধেয় শেখ মুজিবুর রহমান। আমি ভারতবাসী, জামশেদপুরের মেয়ে, আপনাকে প্রণাম জানাচ্ছি। আমাদের পরম সৌভাগ্য, আপনি ফিরে এসেছেন অন্ধকারের কারাগৃহ থেকে স্বাধীন বাংলার নতুন আলোকে-এ এক দুর্লভ শুভলগ্ন...’।

চল্লিশ বছরে সেই স্মৃতি নিয়ে আজও সেই দিনটি স্মরণ করেন কমলা দেবী। তিনি বলেন, শুনেছিলাম বঙ্গবন্ধুর সেই মার্চের ভাষণ। খুব মনে ধরে গেল কথাগুলো। মনে মনে ছটফট করছিলাম। বাংলা ভাষা আর বাঙালির জন্য এতো দরদ! তখন কোথায় টিভি, কোথায় বা ইন্টারনেট? আকাশবাণীতে শুনেছিলাম। টেবিল ল্যাম্পের আলোয় লিখে ফেললাম চিঠি। পাঠিয়ে দিলাম। ঠিকানা জানা ছিল না। শুধু বঙ্গবন্ধুর নাম, ঢাকা আর বাংলাদেশ ব্যাস এই কটা শব্দ লিখে খামের ওপর লিখে দিলাম।

কিন্তু তার চিঠি সরাসরি বঙ্গবন্ধুর হাতে পৌঁছায়নি। কোনওভাবে তা হাতে পরে ঢাকার ছাত্রলীগ নেতা রবিউল ইসলামের। তিনি তখন ঢাকা থেকে প্রকাশিত রক্তপ্রবাহ নামে একটি লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা করেন। তিনি চিঠিটি তার পত্রিকার সে বছর ভাষা দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত একুশের স্মরণিকাতে প্রকাশ করেন। আর তা হাতে পেয়ে পরম স্নেহে ভাষা দিবসের দিনটিতে বঙ্গবন্ধু খুঁজে পান সীমান্তের ওপারে তার অচেনা এক বোনকে। পরে চিঠিটি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদেও পাঠ করা হয়।

১৩ মার্চ ১৯৭২ বঙ্গবন্ধু তাকে বোন সম্বোধন করে লিখলেন, ‘স্নেহের বোন কমলা, রক্তপ্রবাহে লিখিত তোমার চিঠি আমি পড়েছি। দেশ স্বাধীন হয়েছে সত্য কিন্তু শোষকগোষ্ঠী আমাদেরকে সর্বস্বান্ত করে দিয়ে গেছে। একটা সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তুপের ওপর বসে দেশকে গড়ে তোলার কাজে হাত দিয়েছি। তাই খুব ব্যস্ত থাকতে হয়। তোমরা বাংলার মেয়ে, বাংলার মাটিতে জন্ম নিয়েছো, তাই বাংলাকে ভালবাসো। ইতি তোমার মুজিব ভাই।’

আবেগ বিহ্বল কমলা দেবী বলেন, সেদিন আমি চিঠিতে মুজিব ভাইকে লিখেছিলাম,আমার বাংলা ভাষা কোনও রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা ভাবতেও বুকে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়। এবার ২১ ফেব্রুয়ারি সোনার বাংলায় বিশেষ অর্থ নিয়ে উদযাপিত হবে। সেই অমর শহীদদের স্মরণে আমরাও এখানে বসে অশ্রুজলে অন্তরের শ্রদ্ধা অর্পন করি।

কমলা জানান, বঙ্গবন্ধু লিখেছিলেন,স্বাধীনতার সংগ্রামে আমার ছেলেরা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে হানাদার বাহিনীর মোকাবিলা করেছে। আমার ৩০ লক্ষ লোককে হত্যা করেছে। হাজার হাজার মেয়ের ওপর পাশবিক অত্যাচার করেছে। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। প্রাণের ভয়ে ১ কোটি লোক ভিটেমাটি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে ভারতে।

তিনি আরও লিখেছিলেন, এই চরম যুগসন্ধিক্ষণে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ভারতের মহান নেত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী, ভারতের সামরিক বাহিনী আর আপামর জনসাধারণ।

আবেগ তাড়িত হয়ে তিনি লিখেছিলেন, তোমরা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছো, রক্ত দিয়েছো। এ ঋণ আমি কোনওদিন পরিশোধ করতে পারর না। আজ আমি রিক্ত, তোমাদেরকে দেবার মতো কিছুই নেই। আমার আছে শুধু ভালোবাসা, তাই দিলাম.......পৃথিবীর মানচিত্রে আমার রূপসী বাংলা আজ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে, এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওনা, সবচেয়ে বড় পাওয়া।
একটি ঠিকানা বিহীন চিঠি

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৪

সাদী ফেরদৌস বলেছেন: অসাধারণ , আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য ।

১৫ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:২২

সু মন বলেছেন: ভাই আপনাদের জন্যই এই লিখি ও সংগ্রহ করে শেয়ার করি। আপনাদের ভাল লাগলেই আমার সার্থকতা। আপনার কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.