![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সবকিছু কেমন যেন দ্রুতগতিতে পাল্টে যাচ্ছে। আগের কোনোকিছুর সাথে যেন বর্তমানের কোনোকিছুরই মিল পাওয়া যাচ্ছেনা। মানুষগুলো পালটে যাচ্ছে চোখের পলকে, মুহূর্তের ভগ্নাংশে। খুব তাড়াতাড়ি পাল্টে যাচ্ছি আমরা সবাই।
সামাজিকতা চলে এসেছে সেলফি, ফেসবুক আর ভাইবারে। সবাই সারাদিন ব্যস্ত অনলাইন সামাজিকতায়। বাস্তবের সমাজে কারো কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সবাই সরব ভার্চুয়াল এরিয়ায়, অফলাইনে তাদের মধ্যেই কবরের নৈশব্দ নেমে এসেছে।
খেলাধুলা চলে এসেছে প্লেস্টেশনে, কম্পিউটারের পর্দায়। জয়স্টিক দিয়ে এক বন্ধুর সাথে আরেক বন্ধু ফুটবল খেলছে কম্পিউটারের স্ক্রিণে। হাস্যকর এক ক্রীড়াপ্রতিযোগিতায় মেতে উঠছে প্রজন্ম। হাডুডু, ফুটবল, ক্রিকেট, কানামাছির জায়গাটুকু দখল করে নিয়েছে Call Of Duty, Fifa, Assassins Creed, Need For Speed.
পিকনিক, চড়ুইভাতি, বনভোজনের জায়গায় এসেছে ট্রীট, হ্যাংআউট, বার-বি-কিউ পার্টি। আধপোড়া মাংস আর সসেজে আমরা খুঁজে নিচ্ছি জীবনের সবটুকু সুখ।
রাস্তার পাশের ঝালমুড়ি, চানাচুর, হাওয়াই মিঠাই কে সরিয়ে প্রেক্ষাপটে চলে এসেছে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ঘরের পিজ্জা, বার্গার, হটডগ। দশ টাকার ঝালমুড়িকে হটিয়ে এক্সট্রা টপিংস দেয়া পিজ্জাহাটের পিজ্জা নিয়ে আমরা "Chill" করছি নিয়মিত।
ফেসবুকে কার স্ট্যাটাসে কার কয়টা লাইক, কয়টা শেয়ার পড়ে, তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। আত্মসম্মানের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ফেসবুকের লাইক, কমেন্ট নামক নির্জীব বিষয়গুলো। লাইক, কমেন্ট, শেয়ারের পেছনে শুরু হয়ে গেছে অলিখিত প্রতিযোগিতা।
চাচা চৌধুরী, তিন গোয়েন্দা, ফেলুদার বইগুলো পরিণত হয়েছে উইপোকার খাদ্যে। ধূলিধূসরিত বইগুলো পড়ে থাকছে ঘরের কোণায়। সে জায়গা দখল করছে, গেম অফ থ্রোনসের নিউ এপিসোড, স্টার ওয়ারস এর এপিসোডগুলো। মেঝেতে বইগুলোর উপরে ধুলার স্তর ক্রমশ বেড়েই যাচ্ছে।
এখন কেউ লাটিম চেনেনা, কাগজের এরোপ্লেন চেনেনা, কাগজের নৌকা চেনেনা। স্কুলপড়ুয়া বাচ্চার হাতেও আইপ্যাড, আইপড, ওয়াকম্যান, স্মার্টফোন থাকে। এরা পাতার বাঁশি কীভাবে বানাতে হয় জানেনা, Gmail account কীভাবে খুলতে হয়, ঠিকই জানে।
বাবা-মা'রা আজকাল সন্তানকে বাংলা মিডিয়াম স্কুলে পাঠায়না, তাহলে সোশ্যাল স্ট্যাটাস থাকেনা। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে না পাঠালে পাশের বাসার ভাবীকে মুখ দেখানো যায়না। বাংলা ভাষা বলতে গেলে আজকালের বাচ্চাদের কষ্ট হয়। অনর্গল ইংরেজীতে এরা বিদেশিদেরও হয়তো হারিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। এরা মদনমোহন তর্কালঙ্কারের কবিতাটা পড়েনি, কিন্তু Humpty Dumpty পুরোটাই মূখস্ত বলতে পারে।
Cool, dude, buddy না বললে আজকাল স্মার্টনেস প্রকাশ পায়না। চুলে জেল দিয়ে স্পাইক না করলে, শার্টের ওপরের দুই-তিনটা বোতাম খোলা না রাখলে, হাতে কয়েকটা ব্রেসলেট না থাকলে, ইগোতে লাগে, ইমেজ থাকেনা।
আজকালের তরুণেরা হেভিমেটাল মিউজিক ছাড়া কিছু শোনেনা। রবীন্দ্রসংগীত শুনলে এদের ঘুম আসে। মেটালিকা, লিঙ্কিন পার্ক না শুনলে এদের অস্থিরতা কমেনা। মান্না দে, হেমন্তকে এরা চেনে? এদের গান কোনোদিন শুনেছে?
মুক্তিযুদ্ধ এদের কাছে ভীষণ ব্যাকডেটেড একটা বিষয়, ওল্ড ফ্যাশন, সেকেলে। তারচেয়ে Clash Of Clans এর অনলাইন লড়াই এদের কাছে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক, অনেক বেশি প্রত্যাশিত।
অদ্ভুত আমাদের প্রজন্ম, অদ্ভুত আমাদের সময়। খুব দ্রুতগতিতে সবকিছু হতাশার গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে, হাহাকারের শব্দ শোনা যাচ্ছে এখনই।
প্রজন্ম, শুনতে পাচ্ছো?
১৮ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৫
কূপমন্ডূক বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৫
আব্দুল্লাহ তুহিন বলেছেন: অদ্ভুত আমাদের প্রজন্ম, অদ্ভুত আমাদের সময়। খুব দ্রুতগতিতে সবকিছু হতাশার গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে, হাহাকারের শব্দ শোনা যাচ্ছে এখনই।
চমৎকার কিছু সত্য কথন। আসলেই বাস্তব।