![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
------------------------------------------
সবার জীবনেই ভালো সময়, খারাপ সময় পর্যায়ক্রমে আসে। কেউ যদি আশা করে, সে সারাজীবন সুখে থাকবে, বিষয়টা সম্ভব না। আবার, কেউ যদি ভাবে, আমার সারাজীবন দুঃখেই কাটলো, সুখের দিন বোধহয় পেলাম না। তারও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। ভালো দিনগুলি আসবেই। হতাশা যত দীর্ঘ হয়, পরবর্তী ভালো সময়গুলো তত বেশিই উপভোগ্য হয় (পরীক্ষিত সত্য)।
কিন্তু, হতাশার সময়গুলোর সাথে টক্কর দেয়া অনেক কঠিন বিষয়। গোটা পৃথিবী তখন আপনার বিপক্ষে। গাছের একটা পাতাও আপনার পক্ষে থাকবেনা। লড়াইটা শুধু আপনাকেই লড়তে হবে। কেউ এগিয়ে আসবেনা, যদি বিজয়ী হন, অনেকেই আসবে সে বিজয় মুহূর্ত উদযাপনে। হেরে যাবেন, আপনার ছায়াও আপনাকে সঙ্গ দেবেনা। গোটা পৃথিবী আপনাকে একঘরে করে দেবে।
হতাশার দিনগুলোতে আপনার করণীয় কী? ঘরে শুয়ে বালিশে মুখ গুঁজে হাউমাউ করে কাঁদবেন? ফেসবুক আইডি ডিএক্টিভেট করবেন? ৫ ইঞ্চির স্মার্টফোনের ডিসপ্লেটা চুরমার করবেন? নিজের পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দেবেন? ইঁদুর মারার বিষ খাবেন? পটাশিয়াম সায়ানাইড গিলবেন?
এগুলো করতেই পারেন, অসুবিধের কিছু নেই। এমনিতেই দেশের জনসংখ্যা বেশি, আপনি মারা গেলে, অন্তত একজন তো কমলো। কিন্তু, একবারও ভেবে দেখেছেন, আপনি কেন মারা যাবেন?
হতাশার সময়গুলোতে আপনার পাশে কেউ নেই, আপনার ছায়াও কেউ মাড়ায়না, আড়ালে আবডালে কটাক্ষ করে, বিদ্রুপ করে। তাদেরকে এগুলো করতে দিন। আপনি কী মনে করেন, আপনি আত্মহত্যা করলে, বিষ খেলে, মাদকদ্রব্য ধরলে, আপনাকে কেউ কটাক্ষ করবেনা? আপনাকে নিয়ে কেউ উপহাস করবেনা? সবাই আপনার জন্যে দুঃখপ্রকাশ করবে? কেউ করবেনা। বরং, আপনি আত্মহননের পথ বেছে নিলে আপনাকে নিয়ে উপহাসকারীদের উপহাস, বিদ্রুপ ক্রমবর্ধমান গতিতে বাড়তেই থাকবে।
হতাশার সময়গুলোতে চেষ্টা করুন নিজেকে নিজে সময় দিতে, নিজেকে নিয়ে ভাবতে, নিজের জন্যে ভাবতে। বাইরের লোক আপনাকে নিয়ে কী ভাবলো বা না ভাবলো, তাতে আপনার কী যায় আসে? জীবনটা তো আপনার, অন্য কারো না। অন্যরা আপনাকে নিয়ে কী ভাবলো, এটা ভাবতে ভাবতেই যদি সারাজীবন কাটিয়ে দেন, নিজেকে নিয়ে ভাববেন কখন?
একটা ভালো গল্পের বই, একটা ভালো সিনেমা, ভালো গান... হতাশার দিনগুলোতে টনিকের মত কাজ করে। চারপাশের কোনোকিছুকেই আর সহ্য করতে পারছেন না? ঘরের দরজা, জানালা বন্ধ করে দিয়ে, কানে হেডফোন ঢুকিয়ে চোখ বন্ধ করে প্রিয় কোনো গান শুনতে থাকুন, মন শান্ত হবেই, নিশ্চয়তা দিচ্ছি। ভালো একটা উপন্যাস পড়ুন, দেখবেন, অদ্ভুত প্রশান্তিতে মনটা ভরে যাবে। দেখবেন, বাঁচতে ইচ্ছে করবে।
এগুলো করে সাময়িকভাবে মন শান্ত করলেন, ঘুরে দাঁড়াবেন কীভাবে? জীবনের তির্যক পথে ধাক্কা তো অনেকেই খায়, ঘুরে দাঁড়াতে পারে হাতেগোনা কয়েকজন। ঘুরে দাঁড়ানোটা অনেক বড় শিক্ষা। যে সমস্যার কারনে আপনার জীবনে এত হতাশা, সে সমস্যাটাকে আগে খুঁজে বের করুন। এবার, সমস্যার গোড়ায় গিয়ে শুরু থেকে আবার সমাধান শুরু করুন। আগে যদি সমস্যার পেছনে ১০০ ভাগ চেষ্টা করে থাকেন, এবার ২০০ ভাগ চেষ্টা করুন। কখনোই হাল ছাড়বেন না, কারন আপনি নিজেও হয়তো জানেন না, সাফল্য কতটা কাছে। ঘুটঘুটে টানেলের মধ্যে আলোর সন্ধান করুন, আপনার প্রচেষ্টা যদি নির্ভেজাল হয়, আপনি টানেলের শেষে আলোকবিন্দুর খোঁজ অবশ্যই পাবেন। চেষ্টা করুন, শতভাগ, সহস্রভাগ দিয়ে লড়াই করুন। আপনার তো হারানোর কিছুই নেই, শেষ চেষ্টাটাই নাহয় আরেকটু জোর দিয়ে করলেন। একটু শক্তভাবে চেষ্টা করুন, আপনি পারবেন, অবশ্যই পারবেন।
দেয়ালে পিঠ ঠেকলে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন, সারা পৃথিবীর বিরুদ্ধে একাই লড়াই করুন। সবাইকে বুঝিয়ে দিন, এভাবেও ফিরে আসা যায়। সবার মাঝে এই শিক্ষাটা ছড়িয়ে দিন, Never give up.
তা না করে, হাতে বিষের শিশি, হেরোইনের শাদা প্যাকেট, ছুরি নিয়ে আত্মহননের পথে এগিয়ে যেতে চাইলে, যেতেই পারেন। আপনাকে কেউ আটকাবে না। মনে রাখবেন, আপনাকে নিয়ে ভাবার মত অতিরিক্ত সময় কারো কাছেই নেই। ঐ যে বললাম, আপনার জীবন আপনার। সেটাকে নিয়ে কী করবেন আপনি, তার সিদ্ধান্তও আপনি নেবেন। কথাগুলো কর্কশ শোনাচ্ছে? শোনালেও কিছু করার নেই, কথাগুলো রূঢ় হলেও অত্যন্ত বাস্তব, অত্যন্ত স্বাভাবিক।
তবে, একটা কথা মনে রাখবেন, আত্মহত্যা কোনো সমাধান না। যদি আপনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন, এটা বুঝতে কারোরই সমস্যা হবেনা যে, আপনি লুজার, ব্যর্থ। ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো ক্ষমতা, সামর্থ্য, প্রচেষ্টাই আপনার ছিলোনা। আপনি পৃথিবীতে এসেছেন সবার অলক্ষ্যে মাথানত করে হেরে যাওয়ার জন্যে। ধাক্কা খেয়ে উঠে দাঁড়াবার মত কোনো সাহস, সৎপ্রচেষ্টাই আপনার নেই।
আপনার জন্যে পরামর্শ, আপনার আত্মহত্যা করাই উত্তম, আপনার মত হতাশাগ্রস্থের বেঁচে থাকার কোনো অধিকারই নেই।
বাকিদের বলছি, সিদ্ধান্ত আপনার। হাতে কী তুলে নেবেন? ভালো একটা বই না পটাশিয়াম সায়ানাইডের গুঁড়ো?
ভাবুন, ভাবার সময় দিলাম।
©somewhere in net ltd.