![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিষাক্ত সিস্টেম
---------------------------------------
১.
গতকাল S.S.C পরীক্ষার ফলাফল দিয়েছে। দেখলাম, সে উপলক্ষ্যে ফেসবুকে মানুষজন নানাধরণের পোস্ট দিচ্ছে, অনেকেই উপদেশের ডালি সাজিয়ে বসেছেন, কেউ ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ করছেন, A+ দিয়ে কাউকে বিচার করা ঠিক না, A+ না পেয়েও জীবনে উন্নতি করা যায়... নানা রকমের উৎসাহমূলক পোস্ট। আমি নিজেও এগুলো মনেপ্রাণে সমর্থনও করি।
কিন্তু, বাস্তবতা ঠিক তার উল্টো।
S.S.C পাশ করার পরে অধিকাংশ ছাত্রেরই স্বপ্ন থাকে, ভালো একটা কলেজে ভর্তি হবে, সে তালিকার শীর্ষের নামটা বোধহয় নটরডেম কলেজের। তারাই একমাত্র কলেজ, যারা সরকারের বিপক্ষে গিয়ে, ভর্তিপরীক্ষা নিয়ে, তারপরে ছাত্রবাছাই করে। নিঃসন্দেহে, এটা একটা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু, একটা কিন্তু আছে।
নটরডেম কলেজে সবমিলিয়ে সীট ৩০০০ এর মত। তারা ভর্তিপরীক্ষার জন্যে ১২০০০ শিক্ষার্থীকে সিলেক্ট করে, সেখান থেকে পরীক্ষার মাধ্যমে ৩০০০ জনকে নেয়া হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, এই যে ১২০০০ জনকে তারা সিলেক্ট করলো, কীসের ভিত্তিতে করলো?
গলদ এখানেই। তারা সিলেক্ট করে G.P.A এর ভিত্তিতে, গোল্ডেন ৫ যারা পাবে, তারাই মোটামুটি ভর্তিপরীক্ষার জন্যে নির্বাচিত হবে। তাহলে, A+ লাগবেনা, A+ কিছুনা, এ ডায়লগ দিই কীভাবে?
২.
S.S.C গেলো, এবার H.S.C ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় পাশ করার পরে বিজ্ঞান বিভাগের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর, যাদের প্রকৌশলী হওয়ার ইচ্ছে, পছন্দের তালিকার শীর্ষে থাকে বুয়েট। সেখানে ভর্তিপরীক্ষা হয়, ভর্তিপরীক্ষার জন্যে আপনার A+ থাকতে হবে, বাংলা ও জীববিজ্ঞান ছাড়া অন্য সব বিষয়ে A+ থাকতে হবে, বিষয়টা ইন্টারেস্টিং না?
A+ লাগবেনা, A+ কিছুনা... ডায়লগগুলো ফাঁকা বুলির মত শোনাচ্ছে না?
৩.
আমার নিজেরও স্বপ্ন ছিলো নটরডেম কলেজে পড়ার। বড়ভাই নটরডেমের ছাত্র ছিলো, কলেজব্যাগের ওপরে কালো মার্কারে লেখা থাকতো, "Joy sarkar, N.D.C"
আমারও ইচ্ছে ছিলো, একদিন আমার ব্যাগেও এরকম মার্কারে লিখবো, Shuvo Sarkar, N.D.C", পারিনি। আমার সাধারণ এ প্লাস ছিলো, গোল্ডেন এ প্লাস পাইনি, ভর্তিপরীক্ষা দেয়ার সুযোগটাও পাইনি। বলছি না, ভর্তিপরীক্ষা দিতে পারলে ফাটিয়ে ফেলতাম, অন্তত একটা সান্ত্বনা পেতাম যে, চেষ্টা করেছিলাম। আমাকে চেষ্টা করার সুযোগটাও দেয়া হয়নি। বুয়েটে পরীক্ষা দিতে পারিনি, অঙ্কে A+ ছিলোনা। এখানেও গোল্ডেন A+ নেই, সাধারণ A+
আমি হয়তো ভর্তিপরীক্ষা দিলেও নটরডেমে বা বুয়েটে চান্স পেতাম না, কিন্তু অজস্র শুভ আছে, যারা অনেক গোল্ডেনধারী ছাত্রদের চেয়েও বহুগুনে শ্রেষ্ঠ, হয়তো কোনো কারনে পাবলিক পরীক্ষাটা ভালো হয়নি। প্রশ্নফাঁসের এ যুগে, হয়তো তারা সৎ থেকে পরীক্ষা দিতে চেয়েছিলো, সততার অসাধারণ পুরষ্কার তারা শীঘ্রই পাবে!
হতাশাটা কম না। জীবনের বিভিন্ন মোড়ে ধাক্কা খেয়েছি, ধাক্কা খেতে কেমন লাগে জানি। কাউকে জ্ঞান দিতেও বসিনি, সমালোচনা করতেও আসিনি। শুধুমাত্র, বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে চেয়েছি সবাইকে।
৪.
দেশের শীর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যখন মেধার মানদণ্ড হিসেবে ঠিক করে তথাকথিত গোল্ডেন A+ কে, সে দেশে প্রতিভা জন্মাবেনা। সে দেশে প্রতিবছর প্রশ্নফাঁস হবে, A+ এর বন্যা বসবে, স্যারেরা নকল সাপ্লাই দেবে, পরীক্ষার খাতা জুনিয়র স্টুডেন্টরা দেখবে, কেউ ২ পেলে তাকে ৫ নাম্বার দিয়ে এ প্লাস পাইয়ে দেয়া হবে, সে দেশ আস্তে আস্তে ডুবে যাবে অন্ধকার প্রকোষ্ঠে, ফিরে আসার কোনো পথই থাকবেনা। যাদের জীবনটা শুরুই হচ্ছে অন্যায় দিয়ে, আবার এই অন্যায় করার জন্যে পরোক্ষভাবে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে দেশের শীর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো, তখন আপনি, আমি কী আশা করতে পারি? কী করার আছে আমাদের? জরাজীর্ণ সিস্টেম বিষাক্ত অক্টোপাসের মত আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে, এখান থেকে রেহাই পাওয়ার উপায়ও বা কী?
দেশের কথা ভাবতে গেলে, একরাশ নৈরাশ্য ছাড়া চোখে কিছুই ভাসেনা। আমরা বলি, আলো আসবেই। কিন্তু, আলো আসেনা। অন্ধকারই শুধু বাড়তে থাকে।
©somewhere in net ltd.