![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বনাম প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈরথটা বেশ প্রাচীন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র যখন বলে, আমি প্রাইভেট ভার্সিটির ছাত্রের চেয়ে বেশি মেধাবী, প্রাইভেটের ছাত্র তখন বলে, তুমি মেধাবী হতে পারো, কিন্তু লেখাপড়া বেশি হয় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার লেখাপড়া হয় নাকি? ব্যস,তর্ক শুরু...
কোথায় বেশি পড়ালেখা হয়, কোথায় কম হয়, তা নিয়ে আমি কিছু বলবোনা। ধরে নিলাম, পাবলিকের চেয়ে প্রাইভেটে লেখাপড়া বেশি হয়, ফ্যাসিলিটিও অনেক বেশি পাওয়া যায়। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ক্লাসরুম, উন্নতমানের বেঞ্চ,টেবিল, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর যেখানে অনেক পাবলিক ভার্সিটির স্টুডেন্ট দূরতম কল্পনাতেও ভাবতে পারেনা সেখানে প্রাইভেট ভার্সিটিগুলোতে এসব মিনিমাম ফ্যাসিলিটি। পাবলিক ভার্সিটির ক্লাসরুমে বেঞ্চগুলো থাকে ঢলঢলে, ঘূঁণেধরা, নড়বড়ে, শতবর্ষীয় ফ্যানগুলো উপর থেকে বিকট শব্দ করে ধীরে ধীরে ঘুরতে থাকে, প্রাচীন দেয়াল থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে নিয়মিত বিরতিতে। তবুও কেন মানুষ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চায়? ভর্তিপরীক্ষায় কেন এত তীব্র যুদ্ধ হয়? কেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্যে সবাই এত চেষ্টা করে?
একটা কারন কমন,সবাই বলবেন, টাকা। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যেরকম ম্যাক্সিমাম ফ্যাসিলিটি দেয়া হয়, টাকাও দিতে হয় সেরকম বিশাল অঙ্কের। পড়াশোনা নিয়মিত হয়, ক্লাসে স্যারেরাও থাকেন সচেতন, তারা জানেন, মোটা অঙ্ক খরচ করে ছাত্ররা এখানে পড়তে আসে, তাই তাদের রেসপন্সিবিলিটিও থাকে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ন্যূনতম অঙ্কের টাকা দিয়ে ভর্তি হওয়া যায়। মাস শেষে, শিক্ষার্থীর বাবা-মা'কে টাকার বান্ডিল নিয়ে দৌড়াতে হয়না। টাকা এখানে গৌণ বিষয়।
টাকার বিষয়টা যদি বাদই দেই, তাহলে তো প্রাইভেটের চেয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছিয়ে থাকার কথা। পিছিয়ে থাকে কই?
অনেকে বলেন, পাবলিকে সব মেধাবী শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে, প্রাইভেটে মেধাবীর সংখ্যা কম। এ কথাতেও আমার তীব্র আপত্তি। পাবলিকে যারা ভর্তির সুযোগ পায়, তারা যেমন মেধাবী, যারা প্রাইভেটে পড়ে, তারা কি মেধাবী না? প্রতিবছর HSC পরীক্ষায় এ প্লাস পায় ৭০-৮০ হাজার স্টুডেন্ট, সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সীট মিলিয়েও মনেহয় ৭০-৮০ হাজার সীট নেই। যারা এ প্লাস পেয়েছে পরীক্ষায় তারা সবাই মেধাবী, তাহলে "ভর্তিপরীক্ষা" নামের জুয়াখেলায় পিছিয়ে পড়া কাউকে আপনি অমেধাবী বলবেন কীভাবে?
তাহলে, এটাও বোঝা গেলো, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়ে তারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মতই সমান মেধাবী, তাদের মধ্যে কোনো বৈষম্য নেই।
তাহলে, বৈষম্যটা কোথায়?
প্রিয় পাঠক, এবার আমরা আসল টপিকসে ঢুকছি।
আসল বৈষম্যটা পরিবেশে। যেখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনি পাচ্ছেন বিশাল বড় একটা জায়গা যেটাকে আমরা "ক্যাম্পাস" বলি সেখানে অনেক প্রাইভেট ভার্সিটিতে "ক্যাম্পাস" তো দূরের কথা ক্ষুদ্রপরিসরের একটা মাঠও নেই। বিশ্ববিদ্যালয় মানে যে সারাবছর আপনি পাঠ্যবইয়ের মাঝে মুখগুঁজে বসে থাকবেন, তাও তো না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনি আপনার প্রতিভা প্রকাশের অথবা বিকাশের খুব ভালো একটা মঞ্চ পাবেন। মুক্ত একটা পরিবেশ পাবেন, যেখানে হয়তো এ.সি'র কৃত্রিম বাতাস নেই, সীসামুক্ত ফুরফুরে বাতাস আছে। বসার জন্য হয়তো আধুনিক আসবাব নেই তবে পা ছড়িয়ে বসার জন্যে সবুজরং এর কচি ঘাস আছে। ক্লাসরুমে টিউবলাইট নেই, মিঠেকড়া রোদের আলো আছে। কিছুই নেই আবার অনেককিছু আছে।
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এই একটি কারনেই পিছিয়ে পড়ে যায় বারবার। অপরিসর একটা জায়গায় রাস্তার পাশে বিশাল একটা বিল্ডিং হয়ে যায় একাডেমিক বিল্ডিং, গ্রাউন্ড ফ্লোরের অপরিসর ওয়াকওয়ে হয়ে যায় কংক্রিটের ক্যাম্পাস। ক্লাসরুমগুলো হয়ে যায় কোচিং সেন্টারের মত। হাজারো সুবিধা থাকা সত্বেও তারা দ্বৈরথে পিছিয়ে পড়ে বারবার, পরিবেশ তাদের পিছিয়ে দেয় প্রতিবার।
এখানেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সবসময় এগিয়ে থাকে। ঐতিহ্য, ইতিহাস, সংস্কৃতি, পরিবেশের কাছে হার মেনে যায় কৃত্রিম আধুনিকতা, হেরে যায় আধুনিক প্রযুক্তিও...
২| ১৮ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ২:১৭
মহা সমন্বয় বলেছেন: কিছুই নেই আবার অনেককিছু আছে।
এখানেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সবসময় এগিয়ে থাকে। ঐতিহ্য, ইতিহাস, সংস্কৃতি, পরিবেশের কাছে হার মেনে যায় কৃত্রিম আধুনিকতা, হেরে যায় আধুনিক প্রযুক্তিও...
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৩
মো: ফিরোজ কবির বলেছেন: কিন্তু কতোদিন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এই গৌরব ধরে রাখতে পারবেন,সেইটা এখন দেখার বিষয়। যখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ অর্থলোভে নিজের ক্লাস বাদ দিয়ে প্রাইভেট ভার্সিটিতে টানা ক্লাস নেন,তখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত একাডেমিক লেখাপড়ায় স্বভাবতই ব্যাঘাত ঘটে। এমনও দেখা গেছে,ঐ শিক্ষকগণ ১ মাসের পড়া হুলস্থুল করে ১ টা ক্লাস নিয়েই শেষ করে দেন। তারপর বলেন যে,কাল সব পরীক্ষা ! এমনটা হলে সুবিশাল ক্যাম্পাস দিয়ে ছাত্রছাত্রীরা কি করবে,ক্লাসে সঠিক শিক্ষা না হলে কখনই উন্মুক্ত সুবিশাল ক্যাম্পাসে বসে মেধার বিকাশ ঘটাতে পারবেন না। আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অপরাজনীতির কথা নাই বললাম,যেটা নাকি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব মর্যাদাকে টেনে হিচড়ে নিচে নামিয়ে দিচ্ছে।