নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খাপ খোলা কলমে শাণিত হোক মঞ্চ...

কূপমন্ডূক

জানা ভালো, না জানা খারাপ, ভুল জানা অপরাধ

কূপমন্ডূক › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ সারপ্রাইজ

২২ শে জুন, ২০১৬ সকাল ৯:২৩


রফিকের চায়ের দোকানে বসে আছে মতি মিয়া। প্রতিদিন বেলা ৩টার দিকে নিয়ম করে তিনি একবার রফিকের দোকানে আসেন। মোবাইল সম্পর্কে তার বেশ জ্ঞান(!) থাকায় তার প্রতিদিন নিয়ম করে আসা। সারাদিনে তিনি একবার কল করেন, বিদেশে থাকা তার ছেলেকে। নিজে কল দিতে পারেন না, তাই রফিককে প্রতিদিন এ কাজটা করতে হয়। ছেলের সাথে বেশিক্ষণ কথা বলা হয়না তার, মতি মিয়া অনেকক্ষণই কথা বলতে চান কিন্তু কথা তো আর একপাক্ষিক হয়না। ওপাশ থেকে ছেলের উশখুশ করার কারনে তাকে ৫ মিনিট পরই ফোন কেটে দিতে হয়। প্রতিদিন কথা শেষ হওয়ার পরে মতি মিয়া অনেকক্ষণ ধরে কান্নাকাটি করেন। ঘোলাটে হয়ে যাওয়া চোখে ছেলেকে দেখেন না অনেকদিন। ছেলের কথা মনে পড়ে চোখ ঝাপসা হয়ে আসে তার। রফিক প্রতিদিনই এই ঘটনা নীরবে দেখে যায়। প্রায় প্রতিদিনই একই ঘটনার পুণরাবৃত্তি। তিনটার দিকে মতি চাচা আসবে, চেনা নাম্বারে কল দিয়ে দিতে হবে, কিছুক্ষণ কথা বলার পরে বুড়ো লোকটা কিছুক্ষণ চোখের পানি ফেলবে, তারপর এক কাপ চা খেয়ে বাড়ির দিকে ধীরে ধীরে চলে যাবে।

আজকে, কথাবার্তা শেষ হওয়ার পরে মতি চাচা কাঁদলোনা। বেশ হাসিখুশি মুখে রফিককে বললো, চা বানাতে। চায়ের সাথে কেকও দিতে বললো।
-চাচা, আজকে আপ্নেরে খুশি খুশি মনে হইতাছে, কাহিনী কী?
- পোলায় কইছে, আগামী মাসে বাড়ি আইবো। এইবার নাকি অনেকদিন থাকবো।
-তাইলে তো চাচা, আপনার খুশির দিন। মিষ্টি খাওয়াইবেন না?
- খাওয়ামু বাজান, খাওয়ামু। পোলাডা আগে আসুক।

আজকে মতি চাচা যেন আগের চেয়েও বেশি শক্তসবল, আগের চেয়েও বেশি জোয়ান। হন্তদন্ত হয়ে সে ছুটে গেলো বাড়ির দিকে। রিয়াজের মা কে ছেলে আসার খবরটা দিতে হবে।


রিয়াজের মা ওরফে করিমন বিবি ছেলে আসার খবর শুনে একপ্রস্থ কান্নাকাটি করলেন। কান্নাকাটি শেষে জোগাড়যন্ত্র শুরু করলেন। আগামী মাসের ২৫ তারিখ ছেলে আসবে। আজ মাসের ২৭ তারিখ, একমাসও হাতে নেই। বাড়ির অবস্থা ভালো না, ঘরদোর ঠিকঠাক করতে হবে। ছেলের জন্যে আলাদা একটা ঘর সাজিয়ে গুছিয়ে তৈরি রাখতে হবে। ছেলে বিদেশ থেকে আসবে, এদেশের গরমে কষ্ট যাতে না পায়, সেজন্যে দক্ষিণ দিকে জানালাওয়ালা ঘরটা ঠিকঠাক করতে হবে। ভালো একটা খাট নেই, খাট কিনতে হবে। দরজা, জানালার পর্দা কিনতে হবে। ছেলে ডালের বড়ি খেতে পছন্দ করে। ডালের বড়ি বানিয়ে রোদে শুকোতে হবে। নারকেলের নাড়ু, নতুন চালের মুড়ি বানিয়ে রাখতে হবে। ছেলে চালভাজা পছন্দ করে, খানিকটা চালও ভাজতে হবে।
কোমরে শাড়ি পেঁচিয়ে করিমন বিবি কাজে নেমে পড়লেন। বিশাল এক ফর্দ দিয়ে মতি মিয়াকে বাজারে পাঠালেন। ছেলের দেশে ফেরা উপলক্ষ্যে বুড়ো-বুড়ির একপেশে জীবনে বৈচিত্রের ছোয়া লাগলো যেন।


ইংল্যান্ডে নিজের সুসজ্জিত কামরায় ম্যাকবুক কোলে নিয়ে নীরবে কাজ করছে রিয়াজ। অনেকগুলো ফাইল কমপ্লিট করতে হবে, বাড়ি যাওয়ার আগে অফিসের জমে যাওয়া অনেকগুলো কাজ শেষ করতে হবে। বাড়িতে সে চিন্তামুক্ত সময় কাটাতে চায়, অফিসের চিন্তাগুলোকে এখানেই মাটিচাপা দেয়ার জন্যে সে খেটে যাচ্ছে ক্রমাগত।
অনেকক্ষণ কাজের পরে, ম্যাকবুক স্লিপ মোডে নিয়ে ফোল্ড করে, কানে হেডফোন গুঁজে আইপডের প্লেলিস্ট ওপেন করলো।
চোখ বুজে গান শুনছে আর দেশের কথা ভাবছে, এবার গ্রামে গিয়ে বাবা-মা কে নিয়ে আসবে সে। এতদিন কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিলো, তাই সে বাবা-মা কে আনতে পারেনি। এখন সে সমস্যা নেই। বাবা-মা তার জন্যে অনেক কষ্ট করেছে, এবার তাদের জন্যে কিছু করতে চায় রিয়াজ। বাবা-মা’র কথা ভাবতে ভাবতে চোখ ভিজে আসে তার। চোখ থেকে চশমাটা খুলে জামার হাতা দিয়ে আস্তে আস্তে চশমার গ্লাস পরিষ্কার করতে থাকে সে।

এদিকে মতি মিয়া, করিমন বিবির জোগাড়যন্ত্র প্রায় শেষ। ঘরদোরের যেখানে যেখানে সমস্যা ছিলো, সেগুলো ঠিক করা হয়েছে। ছেলের জন্যে দক্ষিনদিকে জানালাওয়ালা রুমটাকে সাজিয়ে গুছিয়ে ঠিকঠাক করা হয়েছে। বিছানায় নতুন চাদর,নতুন তোষক, নতুন বালিশের কাভার,বালিশ দেয়া হয়েছে। সেগুন কাঠ দিয়ে একটা নকশাওয়ালা খাট বানানো হয়েছে। খাটের পাশে ছোট একটা টেবিল। সে টেবিলে জগ, গ্লাস থাকবে। ঘরের দেয়ালে ক্যালেন্ডার লাগানো হয়েছে, নতুন দেয়ালঘড়ি লাগানো হয়েছে দেয়ালে, ক্যালেন্ডারের পাশ দিয়ে। সবকিছু ঝকঝক, তকতক করছে।

ছেলে এলে বড়পুকুরে জাল ফেলা হবে, লোকজন খবর দেয়া হয়েছে। করিমন বিবির ডালের বড়ি শুকিয়ে এসেছে প্রায়, নাড়ু, মুড়ি বানিয়ে টিনের কৌটায় ভরে রাখা হয়েছে। চালের গুড়ি করে রাখা হয়েছে, নারকেল কোরানো হয়েছে, দুধওয়ালাকে বলা আছে, সে দুধ নিয়ে আসবে। ছেলে এলে দুধপুলি বানানো হবে, রিয়াজের প্রিয় খাবার দুধপুলি পিঠা।
সব আয়োজন শেষের পথে, এখন শুধু ছেলে আসার অপেক্ষা।


বিকেলবেলা মতি মিয়া চেয়ারে বসে আছেন। লাল সূর্যের ডুবে যাওয়া দেখছেন, এমন সময়ে তার প্রাচীন মোবাইলে একটা কল এলো। তার মোবাইলে খুব একটা কলটল আসে না, সে এসব ভালো বোঝেও না। সে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গেলো রফিকের দোকানে। রফিক দোকানেই ছিলো, মতি চাচার কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে সে দেখলো, বিদেশের নাম্বার। বিদেশ থেকে মতি চাচাকে শুধুমাত্র একজনই কল করতে পারে, তার ছেলে রিয়াজ। কলব্যাক করলো, খবর পেলো, রিয়াজ এবার আসতে পারবেনা। অফিসে কাজের চাপ খুব বেড়ে গেছে। আজকে তার ফ্ল্যাইট ছিলো, ফ্ল্যাইট ক্যান্সেল করে দিয়েছে।
মতি মিয়া খবর শুনে চোখ মুছতে মুছতে বাড়ি ফিরলেন।


পরেরদিন, খবর পাওয়া গেলো, রিয়াজের যে প্লেনে আসার কথা ছিলো, সে প্লেন ক্রাশ করেছে। খবরটা প্রথম পায় রফিক, ছুটতে ছুটতে সে আসে মতি চাচার বাড়িতে। মতি চাচা খবর শুনে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে রইলেন। তারপর, জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়তে বসলেন। খোদার কাছে শুকরিয়া জানালেন, নিজেদের সবেধন নীলমণিকে বাঁচিয়ে দেয়ার জন্যে।

পুনশ্চঃ রিয়াজ ঐ প্লেনেই বাড়ি ফিরছিলো, বাবা-মা’কে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্যে সে মিথ্যা কথা বলেছিলো যে, অফিসের কাজের চাপে এবার তার বাড়ি ফেরা হবেনা।

মতি মিয়া এরপর অনেকবার বেলা ৩টার সময়ে রফিকের দোকানে গিয়েছেন, ছেলের সাথে কথা বলার জন্যে, আর কোনোদিন ছেলের গলা শুনতে পাননি।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জুন, ২০১৬ সকাল ১০:০১

সোহেল মারজুক বলেছেন: কান্দাই দিলেন ভাই.... :(( :((

২২ শে জুন, ২০১৬ রাত ৯:১৮

কূপমন্ডূক বলেছেন: :(

২| ২২ শে জুন, ২০১৬ সকাল ১১:০৬

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: চমৎকার গল্প। হৃদয়ের গভীরে গিয়ে ছোঁয়া দেয়।

ধন্যবাদ কূপমণ্ডূক।

২২ শে জুন, ২০১৬ রাত ৯:১৯

কূপমন্ডূক বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্যে। সাথে থাকুন :)

৩| ২২ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:১৫

সমুদ্রচারী বলেছেন: ধুর মিয়া , আপনি মানুষ ভালা না । এই রমজান মাসে খুন-খারাবি শুরু করলেন :(

২২ শে জুন, ২০১৬ রাত ৯:২০

কূপমন্ডূক বলেছেন: হা হা হা :)

৪| ২২ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ১:২৪

রানা আমান বলেছেন: অসাধারণ লিখেছেন ভাই । লিখতে থাকুন আরও ।

২২ শে জুন, ২০১৬ রাত ৯:২১

কূপমন্ডূক বলেছেন: প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। সাথে থাকবেন, এ প্রত্যাশা রইলো :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.