![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি কট্টর ব্রাজিল সমর্থক ছোটবেলা থেকেই। ঘরের বাকি সবাই আর্জেন্টিনা সমর্থক। কী কারণে আমি ব্রাজিলের সাপোর্টার হয়েছিলাম, জানি না। ওদের খেলা ভালো লাগতো, প্রিয় খেলোয়াড় ছিলো কাকা। কাকার খেলা ভীষণ পছন্দ ছিলো। কাকার পোস্টার কিনে ঘরে ঝুলিয়ে রাখতাম। বিশ্বকাপের সময়ে ব্রাজিলের পতাকা কিনে বাঁশের ডগায় ঝুলিয়ে উড়াতাম। ব্রাজিলকে নিয়ে উন্মাদনা এরকমই ছিলো, আছে, আশা করা যায়, সামনেও থাকবে।
লিওনেল আন্দ্রেস মেসি নামের প্লেয়ারকে চিনলাম আর্জেন্টিনার খেলা দেখার সময়ে। সে সময়ে মাথায় ঝাঁকড়া চুল ছিলো, চুলে ব্যান্ড ছিলো। ম্যারাডোনা, বাতিস্তুতার পরে সে তখন আর্জেন্টাইন ক্রেজ। রাইভাল টীমের খেলা দেখতে বসতাম, মেসি বরাবরের মতই দুর্দান্ত খেলতো, দুয়ো দিতাম। মেসি, মেসির মতই খেলতো, মাঝখান থেকে আমার দুয়ো অপাত্রে চলে যেতো।
ক্লাব ফুটবলে আমি রিয়াল মাদ্রিদের সাপোর্টার। রিয়াল মাদ্রিদের সাপোর্টার হওয়ার পেছনে কারণঃ দ্য ফেনোমেনন রোনালদো এবং কাকা। এখন অবশ্য ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর কারনে সমর্থনটা আরো বেড়েছে। ক্লাব ফুটবলেও রাইভাল টীমের নায়ক মেসি। বার্সেলোনার মেসি যেন আরো অপ্রতিরোধ্য, আরো অদম্য। এক মেসির কারনেই রিয়াল মাদ্রিদের ট্রফিকেসে অনেক ট্রফি আসেনি, এক মেসি অসংখ্যবার কাঁদিয়েছে সান্টিয়াগো বার্নাব্যুর গ্যালারিভর্তি দর্শককে, এক মেসি অনেকবার রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদের রাতজেগে খেলা দেখা বৃথা করেছে। মেসির অপরাধের শেষ আছে!!!
এক সময় মেসিকে নিয়ে খুব ট্রল করতাম, গালিগালাজও করতাম। এত ভালো খেলে কেন? ইঞ্জুরিতে পড়েনা ক্যান, মেসির অর্থ কেলেঙ্কারি মামলার খবর কী... মেসির ত্রুটি খুঁজে বের করার জন্যে তখন কী তীব্র চেষ্টাই না চালাতাম!
একটা সময় বুঝলাম, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ফ্যান হয়ে মেসিকে ট্রল করলে রোনালদো উঁচুতে ওঠেনা। এটা see saw গেমস না যে, একজনকে নিচে নামালে আরেকজন খুব উঁচুতে উঠে যাবে। রোনালদো, মেসি দুইজনেরই ফ্যান হয়ে গেলাম। দুজনের খেলাই মুগ্ধ হয়ে দেখি। মেসির ড্রিবলিং দেখে যেমন বিস্মিত হই, রোনালদোর স্পিডি শট দেখেও মুগ্ধ হই। কে সেরা, কে দ্বিতীয় সেরা... এ নিয়ে বিতর্ক চলছে, চলুক না? মীমাংসার কী দরকার! ডিম আগে না মুরগি আগে... বহু প্রাচীন এ বিতর্কেরই তো এখনো মীমাংসা হয়নি। সে তুলনায়, এটা তো নতুন ইস্যু। ন্যূনতম ফুটবলবিষয়ক জ্ঞান থাকলেও, এটা তো স্বীকার করতেই হবে, মেসি না থাকলে রোনালদো, রোনালদো হতোনা। আবার, রোনালদো না থাকলেও মেসি, মেসি হতোনা। এরা একে অন্যকে আঘাত করেছে, নিজেদেরকে আরো পরিণত করেছে, নিজেদের আরো নির্ভুল করেছে। রোনালদোকে নিয়ে একটা ডকুমেন্টারি ফিল্ম দেখেছিলাম কিছুদিন আগে। সেখানে রোনালদোর একটা কথা বেশ ভালো লেগেছিলো, "I made Messi, Messi made me." বিষয়টা আসলে এটাই।
আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে মেসির প্রতিটি ম্যাচ খেলা... যেন এক স্বার্থক ট্রাজেডির সফল মঞ্চায়ন, এক দুঃখী রাজপুত্রের করুণ পরিণতি। বরাবরই, এটা হয়ে এসেছে। এর ব্যত্যয় এখনো দেখিনি। রূপকথার গল্পেও একসময় হ্যাপিএন্ডিং আসে। আকাশী নীল-সাদা জার্সিতে মেসির গল্পে কোনোদিন হ্যাপিএন্ডিং আসেনি। জীবনের গল্পগুলো হয়তো এরকমই হয়, সমীকরণ মেলে না।
২০১৪ ফুটবল বিশ্বকাপে ব্রাজিল, জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে হেরে যায়। সে রাতে ঘুমাইনি, ঘুমাতে পারিনি। নিজেদের মাঠে জার্মানির কাছে হলুদ শিবিরের অসহায় আত্মসমর্পণ দেখেছি, জার্মানীর বুনো উল্লাস দেখেছি। সেদিন যতটা না খারাপ লেগেছিলো, তারচেয়ে কয়েকগুণ বেশি খারাপ লেগেছে, ফাইনালের রাতে। সোনারংয়ের বিশ্বকাপের দিকে মেসির চাহনিতে ঐদিন কী যেন ছিলো, এরকম শূন্য, হতাশ, ক্লান্ত দৃষ্টি আমি কখনো দেখিনি। কেন যেন, খুব হতাশ লেগেছিলো সেদিন।
কোপা আমেরিকা কখনোই দেখা হয়না অতটা। এবার দেখেছিলাম। যেদিন ব্রাজিল বাদ পড়লো, ঐদিনই দেখা শুরু করেছিলাম। হাইতির সাথে ব্রাজিলের ৭-১ ব্যবধানে জেতা দেখা হয়নি। নিয়তির পরিহাস, ব্রাজিল যেদিন বাদ পড়লো, ঐদিনই প্রথম সময় পেলাম খেলা দেখার। ব্রাজিল বাদ পড়ার পরে, আর্জেন্টিনার খেলা নিয়মিত দেখতাম। মূলত, মেসির খেলা দেখতাম। মুগ্ধ হতে বসতাম, একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে খেলা দেখে যেতাম।
আজ সকাল ৬টার সময়ে উঠে খেলা দেখা শুরু করি। সমর্থন দিয়েছিলাম চিলিকে, রাইভাল টীমকে সমর্থন কখনো দিইনি, আজো দেয়ার কথা ছিলোনা। টাইব্রেকারে, চিলি যখন জিতে যায়, আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠেছিলাম। কিছুক্ষণ পরে যখন, টিভি ক্যামেরা মেসিকে ফোকাস করলো, হাসি বিষাদে পরিণত হতে বেশিক্ষণ লাগেনি। মেসির চোখে জল, যে দৃশ্য কখনো দেখিনি, সেটা আজ দেখলাম। রাইভাল টীম, বিপক্ষদলের সেরা প্লেয়ার... সবকিছু কোথায় যেন একবিন্দুতে মিলে অদৃশ্য হয়ে গেলো। বিশ্বকাপের ফাইনালে হারের পরেও মেসির চোখে একফোঁটা জলও দেখিনি, আজ হয়তো সব অভিমানের বাঁধ ভেঙ্গে গেছে...
অভিমানই তো। একাই একটা দলকে টেনে নিয়ে চলেছেন বহুবছর ধরে। স্বীকৃতি? শূন্য। তিনবছরে তিনটা ফাইনাল, তিনটাতেই পরাজয়। দলের বাকি খেলোয়াড়দের ব্যর্থতার দায়ভার একাই বয়ে বেরিয়েছেন পুরোটা সময়। আক্ষেপ কার না হয়? শিরোপা থেকে হাতছোঁয়া দূরত্বে গেছেন, কখনো হিগুয়াইন, কখনো আগুয়েরো দূরত্ব বাড়িয়ে দৃষ্টিসীমানা পার করে দিয়েছে। শিরোপার কাছে এসেও কখনো কাছে আসা হয়নি তাঁর, চেষ্টার কী কোনো ত্রুটি ছিলো তাঁর? উত্তর জানা নেই, উত্তর কখনো খুঁজে পাইনি।
আকাশী নীল- সাদা জার্সির সেই রাজপুত্রের গল্পের ফলাফল কখনো মেলেনি। এ গল্পে শুধু দীর্ঘশ্বাসই তীব্র হয়েছে, চোখ হয়েছে ঝাপসা। ক্ষুদে জাদুকর... গ্রিক ট্রাজেডির যেন এক পরাজিত নায়ক। যার জন্য আফসোস করা যায়, দীর্ঘশ্বাস ফেলা যায়, কিন্তু উল্লাস করা যায়না, গর্বে বুক ফুলিয়ে সাফল্যের গল্প বলা যায়না।
যার জন্যে, শুধু চোখের জলই ফেলা যায়।
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৩:১৬
মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: মেসি-রোনালদোর মত খেলোয়াররা একটা হলেও ট্রফি ডিজার্ভ করে জাতীয় দলের হয়। আমি নিজেও রোনালদোর ফ্যান কিন্তু তাই বলে মেসির এই সময়ে খুশি হতে পারছি না। খুব খারাপ লাগছে এলএম১০ এর জন্য।