![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রারম্ভঃ
বেডরিজে পরিবার নিয়ে থাকেন প্রোফেসর পার্কার উইলসন। একদিন কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে তিনি দেখতে পান, একটা মালিকবিহীন কুকুরছানা(হাচিকো) উদ্দেশ্যহীন ভাবে রেলস্টেশনে হেঁটে বেড়াচ্ছে। কুকুরছানার ফুটফুটে চেহারা দেখে স্বভাবতই তার মায়া হয়, প্যাকিং বক্সে করে বাড়িতে নিয়ে আসেন তিনি। উদ্দেশ্য, দিনের আলো ফুটলে উপযুক্ত মালিকের সন্ধান করে তার হাতে তুলে দেয়া হবে।
দিন গড়ায়, কেউ আর কুকুরের মালিকানা দাবী করেনা। দাবী করার কথাও না, আসল মালিক ততদিনে দেশ ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছে। ততদিনে, পার্কার পরিবারের সবার সাথে হাচিকোর সম্পর্ক আরো গাঢ় হয়েছে, সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, মালিকের খোঁজ আর করা হবেনা। পার্কার পরিবারের গ্যারেজে নতুন সদস্য হিসেবে আশ্রয় পায় সে।
প্রফেসর পার্কার একদিন তার এক জাপানী বন্ধুর কাছে নিয়ে যায় হাচিকোকে। সেই জাপানী বন্ধুই কুকুরটির নামকরণ করেন "হাচিকো", জাপানী ভাষায় যার অর্থ হলো "আট"। আটকে জাপানে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়।
পরিবারের সবার মধ্যে প্রোফেসর পার্কার উইলসনের সাথে সম্পর্ক সবচেয়ে ভালো হাচিকোর। প্রতিদিন সকালে সে প্রোফেসরকে রেলস্টেশনে এগিয়ে দিয়ে আসে। আবার, বিকেলবেলা প্রফেসরের ট্রেন আসার একটু আগে আগে গিয়ে রেলস্টেশনের চত্বরে বসে থাকে। প্রফেসর ট্রেন থেকে নামলে তার সাথে একত্রে বাড়ি ফেরে। এভাবে, রেলস্টেশনের পরিচিত মুখ হয়ে যায় হাচিকো। সবাই তাকে এক নামে চেনে। রেলস্টেশনের কফিশপের মালিক থেকে স্টেশনের সিকিউরিটি গার্ড, সবার কাছে ভীষণ পরিচিত সে।
এভাবেই কেটে যায় অনেকটা সময়। একদিন, ক্লাস চলাকালীন সময়ে, হার্ট এ্যাটাক করে মারা যান প্রফেসর পার্কার উইলসন। হাচিকো সেদিনও বরাবরের মত পড়ন্ত বিকেলে যায় প্রফেসরকে আনতে। ট্রেন থেকে সবাই নামে, প্রফেসর নামেনা। সারা রাত রেলস্টেশনে বসে থাকে সে। অসহায়ভাবে তাকিয়ে থাকে, স্টেশনের দিকে, পরিচিত মুখের আশায়। পরিচিত মুখ আর আসেনা।
এভাবে কেটে যায় দশটা বছর। ততদিনে, পার্কার পরিবারের অনেক অদলবদল হয়েছে। প্রফেসর পার্কারের মেয়ের বিয়ে হয়েছে। প্রফেসর পার্কারের স্ত্রী বেডরিজের বাড়ি বিক্রি করে অন্য কোথাও চলে গিয়েছেন। দশ বছর পরে তিনি ফিরেছেন, স্বামীর সমাধিস্থল দেখতে। ট্রেন থেকে নামতেই তিনি দেখলেন, হাচিকো রেলস্টেশনের নির্দিষ্ট জায়গায় বসে প্রিয় মানুষের মুখটা দেখার জন্যে উন্মুখ হয়ে তাকিয়ে আছে, চেহারায় স্পষ্ট বয়সের ছাপ। বৃদ্ধ হাচিকো বসে আছে প্রিয়জনের আশায়, পরিবারের লোকজন হয়তো প্রফেসরকে ভুলে গেছে, হাচিকো ভোলেনি, তার দৃঢ় বিশ্বাস, সে কখনো না কখনো ফিরে আসবেই। সেজন্যেই তার নিরলস অপেক্ষা। এভাবেই একদিন, অপেক্ষা করতে করতে রেলস্টেশনের তার নির্দিষ্ট জায়গায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে সে।
ব্যক্তিগত মতামতঃ
"হাচিকো: এ ডগ টেল" সিনেমাটি দেখেনি, এমন সিনেমাপ্রেমী হয়তো খুঁজে পাওয়া কষ্টকরই হবে। এটার শেষদৃশ্যে এসে কাঁদেনি বা মনখারাপ হয়নি, এমন কাউকে হয়তো খুঁজে পাওয়াই যাবেনা। এ এক অন্য মাদকতার গল্প। স্বার্থপরতা, বিশ্বাসঘাতকতা, শঠতায় ভরা এ পৃথিবীতে এ যেন অন্যরকম এক স্নিগ্ধ ভালোবাসার উপাখ্যান। যে উপাখ্যানে কোনো খাদ নেই, স্বার্থ নেই, কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা নেই, যেখানে শুধু নিখাদ ভালোবাসাই পাওয়া যাবে, যা মানুষকে নতুন করে ভাবতে শেখায়, নতুন করে ভালোবাসতে শেখায়, নতুন করে বুঝতে শেখায়, "এভাবেও কাউকে ভালোবাসা যায়, কারো জন্যে আমৃত্যু অপেক্ষা করা যায়।"
জাপানে ঘটে যাওয়া সত্যঘটনা অবলম্বনে এই সিনেমা নির্মাণ করা হয়েছে। জাপানের যে স্টেশনে এ ঘটনা ঘটেছিলো, সে স্টেশনের সেই নির্দিষ্ট স্থানে হাচিকোর একটা ব্রোঞ্জের মূর্তি তৈরী করা হয়েছে। মানুষ প্রায়ই সেখানে যায়, ভালোবাসার এক বিরল দৃষ্টান্তের সামনে দাঁড়িয়ে ক'ফোঁটা চোখের জলও ফেলে আসে। আমেরিকার যে স্টেশনে এ সিনেমা শ্যুট করা হয়েছে, সেখানেও হাচিকোর একটা ব্রোঞ্জের মূর্তি তৈরী করা হয়েছে পরবর্তীকালে।
আমি এ সিনেমা অসংখ্যবার দেখেছি, শেষদিকে এসে বরাবরই চোখ আর্দ্র হয়েছে, তবুও দেখেছি। মানুষের যদি "হৃদয়" বলে কিছু থেকে থাকে, সেটাকে আলোড়িত করার মত একটি সিনেমা এটা।
এই মুভি দেখার পরামর্শ কাউকে দেবো না। এটা না দেখা মানে বিশাল বড় এক ক্ষতি, এটুকুই বলবো।
হাচিকোর জন্যে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা...
এক নজরেঃ
Movie: Hachiko: A Dog's Story/ Hachi: A Dog's Tale
Director: Lasse Hallstrom
Genre: Drama, Family
Cast: Richard Gere, Joan Allen, Sarah Roemer...
Release: June 13, 2009
Imdb Rt: 8.1
My Rt: 8.5
০৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৭:৩১
কূপমন্ডূক বলেছেন: কুকুর সবচেয়ে বিশ্বস্ত প্রাণী... নিঃসন্দেহে
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:৩৩
অশ্রুকারিগর বলেছেন: খুব ইমোশনাল সিনেমা। বিশ্বস্ততার জন্যে কুকুরই ভালো মানুষের চেয়ে।