নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খাপ খোলা কলমে শাণিত হোক মঞ্চ...

কূপমন্ডূক

জানা ভালো, না জানা খারাপ, ভুল জানা অপরাধ

কূপমন্ডূক › বিস্তারিত পোস্টঃ

অজ্ঞাতনামাঃ অজ্ঞাত এক গল্প

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:০৪


একনজরেঃ
চলচ্চিত্রঃ অজ্ঞাতনামা (The Unnamed)
পরিচালকঃ তৌকির আহমেদ
অভিনয়েঃ ফজলুর রহমান বাবু, শহীদুজ্জামান সেলিম, মোশাররফ করিম...
মুক্তিঃ অক্টোবর, ২০১৬
আইএমডিবি রেটিংঃ ৯.৪/১০

জন্মানোর সাথেসাথেই প্রত্যেক মানুষ কিছু অধিকারসম্বলিত খালি খাতা পায়, সে অধিকারের খাতা ভরাট হয়ে যায় মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে। যদিও মৃত্যুর পরেও তার কিছু অধিকার থাকে। সেরকমই এক অধিকার, মৃতদেহের সম্মানজনক সৎকার পাওয়ার অধিকার। তবে, এ অধিকার থেকে বঞ্চিত এক মৃতদেহের অপরিসর দৈর্ঘ্যের পূর্ণদৈর্ঘ্য গল্প "অজ্ঞাতনামা।"

পর্দার অন্তরাল এমন এক জায়গা যেখান থেকে সমস্ত কলকাঠিই নাড়া হয়, পর্দার সামনের মানুষগুলো সেই নাড়ানো কলকাঠির রূপান্তরিত রূপ হয়ে ধরা পড়ে দর্শকের চোখে। পর্দার পেছনের গল্পগুলো, কলকাঠি নাড়া মানুষগুলো বরাবরই থেকে যায় অগোচরে। প্রবাসে দিনান্ত পরিশ্রম করা আমাদের দেশের মানুষগুলোও পর্দার পেছনের কুশীলবের মত। মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, আরব আমিরাতের অজ্ঞাত পরিবেশে, দেশের চেনা গন্ধটা এয়ারপোর্টের লাউঞ্জে বিলিয়ে দিয়ে এরা আসে কিছু টাকা আয় করার জন্যে। সে টাকায় দেশে থাকা আত্মীয়দের জীবনটা আরেকটু সহজ করার জন্যে এরা নিজেদের জীবনকে নিয়ে যায় অদ্ভুত সমীকরণে। যে সমীকরণের ফলাফল প্রায়ই মেলে না। যোগফল শূন্য হয়ে লাশ হয়ে ঘরে ফিরতে হয় এদের মধ্যে কাউকে। এরকমই হিসেবে গড়মিল এক সন্তানের লাশ হয়ে ঘরে ফেলার গল্প "অজ্ঞাতনামা।"

এই সিনেমায় কী আছে? সোজা বাংলায়, কিছু নেই। একটা ভালো আবহসঙ্গীত নেই, নক্ষত্রখচিত কলাকুশলীসূচী নেই, গ্ল্যামারের ছড়াছড়ি নেই, আইটেম গান নেই, নায়ক-খলনায়কের লড়াই নেই...নচিকেতার ভাষায়, নেই নেই কিছু নেই/তবুও যা আছে তা বলতে তো বাধা নেই। এই সিনেমায় শুধু আছে এক জীবনের গল্প, এক বাস্তবতার গল্প, এক কাগজের প্লেনের গল্প, যে প্লেন কোনো এক তেজহীন বিকেলে উড়ে গিয়েছে ঝোপের ওপারে, আজো ফেরেনি।

কাহিনী খুবই সাদামাটা। মধ্যপ্রাচ্যে নিহত এক বাঙ্গালীর লাশ দেশে নিয়ে আসা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা, সেই ছোট জটিলতার বিশাল রূপ ধারণ, ভুক্তভোগী পরিবারের দুর্দশা, অপরিমেয় আক্ষেপের এক সহজসরল চিত্রায়ন এক ঘন্টা আটচল্লিশ মিনিটের "অজ্ঞাতনামা।"

চরিত্র বিশ্লেষণে আসি। সবচেয়ে ভালো লেগেছে ফজলুর রহমান বাবুর অভিনয়। অত্যন্ত প্রতিভাবান (ততটা স্বীকৃতি অবশ্য পাননি কখনোই। দুর্ভাগ্য! ওনার না, আমাদের। গুণীর কদর করতে পারিনি) এই লোকটি অসহায় বাবার অসহায় অবস্থা ফুটিয়ে তুলতে চেহারায় যেকয়টি ভাঁজ খুব দরকার, যেকয়ফোটা চোখের জল জরুরি.. পুরোটাই করে গেছেন সাবলীল ভঙ্গিতে। মুগ্ধ হয়ে দেখলাম তাঁর অভিনয়। এরপরেই আসবে শহীদুজ্জামান সেলিমের কথা। আরেক গুণী অভিনেতা, দারুণ অভিনয় করলেন তিনিও। তাঁর চরিত্র ঋণাত্মক বৈশিষ্ট্যের ছিলো, উতরেও গেলেন দক্ষতার সাথে। এছাড়া মোশাররফ করিম, শতাব্দী ওয়াদুদ... এদের অভিনয় ভালো লেগেছে। তবে নিপুণকে এই সিনেমায় কেন নেয়া হয়েছে, সেটা বোধগম্য না। যদিও তার স্ক্রিপ্ট ছোট ছিলোনা। তবে, তার অংশটুকু বাহুল্য মনে হয়েছে। বাদবাকি সব পার্শ্বচরিত্র তাদের সাধ্যমতই চেষ্টা করেছেন।

একই সিনেমায় এক ছেলেহারা বাবার অসহায়ত্ব, হতাশার দিকবিহীন ছোটাছুটি, দেশের দুর্নীতির, দেশের কারণবিহীন গাফিলতির অনাবৃত প্রদর্শনী, প্রবাসী মানুষের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আখ্যান... সব উঠে এসেছে পর্যায়ে পর্যায়ে, বাঁকে বাঁকে। কিছু মানুষের সংগ্রামের শোণিত উপাখ্যান বর্ণহীন হয়ে ধরা দিলে যে চিত্রটি পাই, তার নামই বোধহয় অজ্ঞাতনামা। যদিও সিনেমায় ক্যামেরার কাজ অতটা ভালো লাগেনি। আবহসঙ্গীতের অভাবও প্রকট ছিলো কয়েক জায়গায়। তবুও, সবমিলিয়ে এ এক মানবিক গল্প, যে গল্প চোখ আর্দ্র করে, যে গল্প বোধের প্রাচীরে চিড় ধরায়, অনুভূতির মিছিলে ভীড় বাড়ায়। যে গল্প ভাবায়, তীব্রভাবে ভাবায়। যে গল্প অনেক ত্রুটিকেও অদৃশ্য করে দেয় নিমেষেই।

অনেকেই "অজ্ঞাতনামা"র সাথে "আয়নাবাজি"র তুলনা করেছেন, করছেন। দুই সিনেমার মুক্তি প্রায় একইসময়ে হয়েছিলো। অথচ অজ্ঞাতনামা'র কথা কয়জন জানে? এবং আয়নাবাজির কথা কয়জন জানেনা? এ যুগ বিজ্ঞাপনের যুগ, প্রচারণার যুগ, নিজের বিলবোর্ড নিজের গলায় ঝুলিয়ে ঘোরার যুগ। সেকারণেই হয়তো অজ্ঞাতনামা সবার অলক্ষ্যে, অজ্ঞাতকুলশীল হয়েই রইলো। সিনেমার নামকরণের এরকম সার্থকতা কে দেখেছেই বা কবে!
"আয়নাবাজি" এবং "অজ্ঞাতনামা"র তুলনা করা ঠিক না। দুটি ভিন্ন গল্পকে এক নিক্তিতে পরিমাপ করা আসলে সম্ভবও না। দুই সিনেমাই স্ব স্ব ক্ষেত্রে স্বকীয়তা বজায় রেখেছে। আফসোস একটাই, অজ্ঞাতনামা অতটা প্রচার পেলোনা। বাংলাদেশের মানুষ জানতেও পারলোনা, কতটা নির্মম, নিস্ফল আক্ষেপের এক গল্প পড়ে রইলো নিতান্ত অগোচরে।

পরিচালক তৌকির আহমেদের কথাও একটু বলে রাখা ভালো। এই প্রতিভাবান পরিচালক তার জাত চিনিয়ে যাচ্ছেন ক্রমাগতই। তার জন্যে শুভকামনা রইলো।

"অজ্ঞাতনামা" আসলে কোনো সিনেমা না। এটা আসলে একটা বায়বীয় দীর্ঘশ্বাসের অবায়বীয় প্রকাশ, যে দীর্ঘশ্বাসে শুকনো পাতার মত উড়ে যায় জাতি, ধর্ম, বর্ণ সব মানদণ্ড। শুধু পড়ে থাকে একটাই শব্দ "মানুষ।" অজ্ঞাতনামা হয়তো সে মানুষেরই না বলা গল্প, সে মানুষের অব্যক্ত অজ্ঞাত এক গল্পই "অজ্ঞাতনামা।"

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৫২

দ্য ইলিউশনিস্ট বলেছেন: সুন্দর রিভিউ। +

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০০

কূপমন্ডূক বলেছেন: ধন্যযোগ। সিনেমাটি দেখার অনুরোধ রইলো

২| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ২:০৯

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: প্রচন্ড সুন্দর লিখেছেন

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০০

কূপমন্ডূক বলেছেন: ধন্যবাদ। সিনেমাটি দেখার অনুরোধ রইলো :)

৩| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৪১

সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: খুবই ভালো একটি রিভিউ। অনেক যত্ন নিয়ে ডিটেইলে লিখেছেন।
আন্তরিক শুভকামনা!

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০১

কূপমন্ডূক বলেছেন: ধন্যবাদ। শুভকামনা আপনাকেও। সিনেমাটি দেখার অনুরোধ রইলো।

৪| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:১৬

কলিন রড্রিক বলেছেন: ভালো লাগল।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০৫

কূপমন্ডূক বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.