![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজও নিজেকে জানার চেষ্টা করছি..............
যাদের সম্মানে এই লেখা তা হয়তোবা কখনোই তাদের চোখে পড়বে না। তবুও লিখছি মনের মধ্যে জমে থাকা কিছু কথা...
আজ মহান মে দিবস।
১৮৮৬ সালের ১লা মে আজকের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে ৮ ঘণ্টা শ্রমদিনের দাবীতে আন্দোলনরত শ্রমিকের ওপর গুলি চালানো হলে ১১ জন শহীদ হয়। শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলনের উক্ত গৌরবময় অধ্যায়কে স্মরণ করে ১৯৮০ সাল থেকে প্রতি বছরের ১লা মে বিশ্বব্যাপী পালন হয়ে আসছে “মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস”।
দিবস হিসেবে হয়তো আমরা এই দিনটি পালন করে থাকি কিন্তু আমরা কি কখনো খেয়াল করে দেখেছি যাদের জন্য আজকের এই দিবস, যাদের জন্য আমরা সভ্যতাকে দিনকে দিন নতুন রুপে দেখতে পাচ্ছি, যাদের হাতে গড়া আজকের এই সুন্দর পৃথিবী তাদেরকে আমরা কতটুকু সম্মান দিচ্ছি (?)। ঐসব শ্রমজীবী মানুষ যাদেরকে আমরা ব্যবহার করছি আমাদের প্রয়োজনে তাদেরকে কি আমরা ন্যায্য পাওনাটা দিচ্ছি?
রিক্সায় উঠে বসলাম, জিজ্ঞেস করার প্রয়োজনও মনে করলাম না ভাড়াটা কত। বাসার সামনে নেমে ২০ টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে পেছন ফেরা। রিকশাওয়ালা পিছন থেকে ডাক দিলেও আপনার মান-ইজ্জত নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে যায়। আবারও পেছনে ফেরা, তবে সেটা কয়েকটা টাকা দেওয়ার জন্য নয়, আপনার কাছে তার পাওনা গালে কষে একটা থাপ্পড় মারার জন্য।
আচ্ছা মশাই, আপনি কি বলতে পারেন যে উনার দোষটা কি ছিল? উনার দোষ একটাই উনি এই পৃথিবী নামক গ্রহটাতে জন্মগ্রহণ করেছেন অভাগা হয়ে আপনাদের মতো তথাকথিত সুশীল-শান্তশিষ্ট-লেজবিশিষ্ট অসাম টাইপের দু-পেয়ে প্রাণীদের হাতের মার খেতে। আচ্ছা, আপনার কি উচিত ছিল না ঐ মানুষটিকে জিজ্ঞেস করা যে, ভাড়া কত বা এই ভাড়ায় আপনি যাবেন কিনা? তা করতে যাবেন কেন আপনি তো তথাকথিত ভদ্র নামধারী মুখোশ পরিহিত মনুষ্যত্ববিহীন প্রাণী। আমি রিকশাওয়ালাদেরকেও আল্লাহর ফেরেশতা মনে করছি না, তাদেরও ভুল আছে তাই বলে কি আপনার শক্ত পাজেরু গাড়িটা রিক্সার সাথে মেরে দিবেন? একটু মন খুলে কথা বলে দেখুন তাদের সাথে তাদের মনটা আপনার চেয়ে অনেক সুন্দর, তাদের চিন্তাচেতনা আপনার চিন্তাকেও নাড়া দিতে পারে।
আর সবচেয়ে বেশি অবহেলিত আমাদের নারীসমাজ। একই স্থানে একই কাজ করে তারা পাচ্ছে পুরুষদের চেয়ে অর্ধেক মজুরী। বাসা-বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে মানুষরূপী কিছু পশুর হাতে লাঞ্ছিত হচ্ছেন শারীরিক ও মানসিকভাবে। এতেও ক্ষান্ত হননি ঐ সকল পশুরা, অবশেষে চরিতার্থ করেছেন অশুভ কামনা। আর বাধা দিলেই হয়তো স্বাদের প্রাণটা হারিয়ে উঠতে হচ্ছে বস্তায় লাশ হিসেবে।
যে সকল মা বোনেরা দেশের বাইরে যাচ্ছেন ভাগ্যকে পরিবর্তন করতে, রেমিটেন্স পাঠিয়ে এই দেশটাকে আরো সুন্দর করে গড়ার নিমিত্তে তারা কি পাচ্ছে? ঐ সকল দেশের নরপিশাচরা টাকার বিনিময়ে কিনে নিচ্ছে আমাদের মা-বোনদের, ব্যবহার করছে উচ্চারনহীন শব্দের এক কাজে, মিটাচ্ছে তাদের নোংরা চাহিদা। অবশেষে ফিরে আসছে দেশে নিজের সবকিছু বিসর্জন দিয়ে, আর অনেকের ভাগ্যে হয়তো দেশে ফেরাটাও আর হয়ে উঠছে না, হারিয়ে যাচ্ছেন সভ্যতার আড়ালে। আর সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এ নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই, থাকবেই বা কেন তারা তো শ্রমজীবী, তারা উনাদের চোখে ছোটলোক।
আর এম্বাসি সেতো এক বিভীষিকার নাম। তারা সবসময় ধরাছোঁয়ার বাইরে না প্রয়োজনে, না অপ্রয়োজনে। তারা ব্যস্ত নিজেদের আখের গোছাতে।
তবুও এরই মধ্যে পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশ। আমিও স্বপ্ন দেখি অনেক সুন্দর একটা দেশের যেখানে মালিক শ্রমিকে কোন ভেদাভেদ থাকবে না, থাকবে না কোন দাঙ্গা-হাঙ্গামা, শ্রমজীবীরা পাবে তাদের ন্যায্য পাওনা। যেদিকে তাকাবো দেখবো সুখের নহর, কানে শুনব শান্তির সুর।
...সবশেষে আজকের এই মহান মে দিবসে সকল শ্রমিক ভাই ও বোনদেরকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
©somewhere in net ltd.