নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\'\'আবার কবে হবে বোধের বাজারদর কাঙ্খিত সীমানায়\'\' সেই হিসেব কষতে থাকা একজন বোহেমিয়ান।

শুভ্রনীল শুভ্রা

আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে আমি আপনায়, আমি শুনি যেন তার চরণের ধ্বনি আমারি তিয়াসী বাসনায়।

শুভ্রনীল শুভ্রা › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুখোশের অন্তরালে এ কোন অচেনা মুখ !!

০৪ ঠা মে, ২০২০ রাত ১১:৫১



নিঃসঙ্গ সময়গুলোতে কবিতারা আমার সঙ্গী হয়, যদিও নিজে লিখতে পারিনা। আমি ওদের পড়ি, ওদের সাথে গল্প করি। ইন্টারনেটের অগ্রগতির বদৌলতে এখন কবিতার বিশাল ভান্ডার হাতের নাগালে। পছন্দের কবিতা খুঁজতে যেয়ে মহাদেব সাহার '' মুখের বদলে কোনো মুখোশ রাখবো না'' শিরোনামে একটি কবিতা পেলাম, যেটা আগে কখনো পড়া হয়নি। কিছু কিছু কথা মনে প্রচন্ড আকারে দাগ কেটে গেলো।

'' সব ছিন্ন হয়ে যাক, এই মিথ্যা মুখ,
এই মুখের মুখোশ
সম্পূর্ণ পড়ুক খুলে;
এই মিথ্যা মানুষের নকল সম্পর্ক, এই
ভোজভাজি
যা যাওয়ার তার সবই খসে যাক,
ঝরে পড়ে যাক,
ছিন্ন হয়ে যাক এই কৃত্রিম ভূগোল,
এই মিথ্যা জলবায়ু;
স্পষ্ট হোক, প্রকাশিত হোক তার নিজস্ব প্রকৃতি
ছিন্ন হোক এই কৃত্রিম বন্ধন,
অদৃশ্য অলীক রজ্জু ''

পড়ার পর কেন জানি গুচ্ছ গুচ্ছ শব্দগুলো অতিমাত্রায় কানে বাজছে। অসহ্য যন্ত্রণা দিয়ে যাচ্ছে। নিজেকে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছে - ‘আমি যা, আমি কি আসলেও তা? এই আয়নায় যে আমিটা'কে দেখতে পাচ্ছি, সে কি ভেতরের আমিত্বটা'কে ধারণ করে? বাইরের আমি কি সেটাই যা আমার ভেতরের আমি হতে চায়? আসলেই কি ভেতরের সত্বাটাকে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করা যায়?’ এসব উদ্ভট ভাবনা মাথার মধ্যে অবিরাম ঘুরপাক খেয়েই চলছে। ভাবনাগুলোর যন্ত্রনায় শেষমেশ কী -বোর্ড চাপাচাপি শুরু করলাম।

মুহূর্তের মধ্যেই হাজারো ভাবনাদের তোলপাড় শুরু হয়ে গেল। আমার আমি'টা এবার চারপাশে চোখ বুলাতে লাগলো। চারপাশটা কি সত্যি নাকি মিথ্যের সাগরে বাস আমার! চারদিকে এত মুখোশের ভীড়ে আসল -নকলের তফাৎ করতে পারাটা বড্ড কঠিন হয়ে গেছে। আশপাশের সবাই যেন কৃত্তিম একটা মুখোশ পড়ে আছে। মাঝে মাঝে স্বপ্নে দেখি, মেকি অভিনেতাদের মুখোশ খুলে দিচ্ছি। তাদের কে আঙ্গুল দিয়ে ধরিয়ে দিয়ে বলছি -' বাইরে যা দেখাচ্ছে, ভেতরে আসলে তারা তা না। তারা মুখোশ পরে প্রতারণা করছে।' হয়তো ভেতরের আমি'টা তাদের রুখতে চায় যেটা বাস্তবে সম্ভব হয়না। তাই আমার ক্ষোভগুলো স্বপ্নে ঝরে পড়ে। সেদিন ঘুম থেকে জেগে এক ধরণের স্বস্তি অনুভূত হয়। নিজেকে অনেকখানি হালকা মনে হয়। আচ্ছা, আমরা কেন সবকিছু বলতে পারিনা ? কেন এত দ্বিধা, কীসের এত ভয়? এমন কী পিছুটানে যা আমাদের ভেতরের অনুভূতিগুলো নির্ঝঞ্ঝাটভাবে প্রকাশিত হতে দেয়না! আমরা নকল মানুষ সেজে অন্যের সাথে লুকোচুরি খেলতে যেয়ে নিজের সাথেই হয়তো একধরণের প্রতারণা করে বসি।

সবাই যেন একধরণের অভ্যস্ত অভিনয়ে ব্যস্ত। কেউ আপন মানুষদের খুশি করবার নিমিত্তে নিজেকে লুকিয়ে অভিনয়ে ব্যস্ত, কেউবা আশপাশের মানুষদের ঠকানোর অভিনয়ে উন্মত্ত। তাইতো মাঝে মাঝে খুব চেনা মানুষদের অচেনারূপ দৃষ্টিগোচর হয়। নিজেকে অচিনপুরের বাসিন্দা মনে হয়। ভেতরটায় দীর্ঘশ্বাসের আখ্যান জমা হয়। সুন্দর সম্পর্কের জন্য স্বচ্ছতা খুব জরুরি। না হলে কখনো না কখনো আসল রূপ উন্মোচিত হলে সেই সম্পর্কটা ঠুনকো হয়ে যায়। এজন্যই হয়তো মানুষ মানুষকে সন্দেহ করে, অবিশ্বাস করে। তাতে করে সম্পর্কগুলো নির্মলতা, সরলতা ও প্রাণবন্ততা হারায়।

অদ্ভুত হলেও সত্য যে মানুষের ভিতর আর বাহির এক নয়। বাইরে আনুগত্যের ভান আর ভেতরে বিশ্বাসঘাতকতার বিশাল পাহাড় জমিয়ে রাখা মানুষের সংখ্যাই বেশি। তাই সরল মনোভাবের, অভিনয় না জানা মানুষগুলো জীবনের দৌড়ে পেছনে পড়ে যায়। বিত্ত -বৈভব মর্যাদার মাপকাঠি হবার কারণেই হয়তো মানুষের মূল্যবোধ কমেছে। মানবিকতার মুখোশের আড়ালে প্রতিনিয়ত অমানবিক কাজ করে যাচ্ছে। স্বার্থ হাসিলের জন্য ক্রমাগত অভিনয় করে যাচ্ছে।

বোধ করি, কখনো কখনো আমাদের নিজের প্রতি অন্তর্দৃষ্টি দেয়া উচিত। বিবেকতাড়িত মূল্যবোধ দিয়ে অন্তরের অজানা সত্তাকে অনুধাবন করা উচিত। মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সঠিক ভাবনার জগতকে সুবিস্তৃত করার চেষ্টা করা খুব জরুরি। কোথাও পড়েছিলাম, জাপানে অপরাধ শনাক্ত করার জন্য অপরাধীদের আয়নার সামনে বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতো। সত্য মিথ্যার পার্থক্য নিরূপণে খুব ভালো একটা কৌশল। ইট পাথরের দেয়ালের মধ্যে অন্তরীণ হয়ে নিজেকে অকৃত্তিম করাটা কঠিন হয়তো। তবুও সব স্বার্থের ঊর্ধে উঠে নিজের কৃত্তিমতা বিসর্জন দিতে হবে। নয়তো বিশ্বাস- অবিশ্বাসের দোলাচলে, সন্দেহের বেড়াজালে আটকে সম্পর্কগুলো তার প্রকৃত সৌন্দর্য্য হারাবে। আত্মিক বন্ধনগুলোর গিট্ খুলে যাবে, ভঙ্গুর হয়ে যাবে সামাজিক সম্পর্ক।

ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত ফটো

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই মে, ২০২০ রাত ১২:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: একটি সাধারণ জিজ্ঞাসা, ১০ মিনিট পর পর হাত ধুইলে,গরম পানি দিয়ে গার্গল করলে আর পান করলে করোনার তো মারা সাড়া হয়ে যাবার কথা!

০৫ ই মে, ২০২০ রাত ১২:১১

শুভ্রনীল শুভ্রা বলেছেন: হুম, তখন আর মুখোশ পরার ঝামেলা থাকবেনা। B-)

২| ০৫ ই মে, ২০২০ রাত ১২:৩০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

মুখ নেই আর মুখোশের নিচে; মুখ মিশেছে মেঘে,
মেঘ ঝরে পড়ে তেপান্তরে, মুখোশ থাকে জেগে..


পিষে যাওয়া জীবনে, সময়ের সাথে;
তোমার মুখোশও পারবে একদিন খসে ,
সে দিন দেখো তুমি-তোমার আসল চেহারা বসে।

০৫ ই মে, ২০২০ রাত ২:০৬

শুভ্রনীল শুভ্রা বলেছেন: খাঁটি কথা !

৩| ০৫ ই মে, ২০২০ ভোর ৪:৩৮

শের শায়রী বলেছেন: দারুন এক আত্ম উপলদ্ধিতে মুগ্ধ পাঠ।

ইদানিং যেন কি হয়েছে নিজেকে নিজে অসংখ্য প্রশ্ন করি কিন্তু উত্তর পাই না। দিনের বেলায় নানা কোলাহলে নিজেকে ব্যাস্ত রাখলেও রাতের নিকষ অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে রাতের নিস্তব্ধতাকে শব্দহীন চিৎকার দিয়ে মুখরিত করে তুলি। নিস্তদ্ধতা সেখানে আমার শব্দহীন বাচালতায়। মাঝে মাঝে ভাবি কেন এই সব অর্থহীন শব্দগুচ্ছ এক করে ইথারের মৌনতাকে আরো কিছু ওজনদার করে নুব্জতাকে আরো লজ্জায় ফেলি?

তবে কি আমিও এক নার্সিশাস এর মত? নিজের রূপে নিজে মুগ্ধ? আহ এর থেক লজ্জার আর কি হতে পারে? আমি কি করব! এটা তো আমার দোষনা আমার জন্মের সময় আমার জীনের মাঝে আমার পুর্ব পুরুষদের সঞ্চিত আত্ম অহংকার। আমরা প্রত্যেকেই ইম্পর্ট্যান্ট হতে চাই অন্যে চোখে, অন্যের দ্রষ্টব্য, মনোযোগের পাত্র হতে চাই, তবে এই এইসব আত্ম অহংকারী মানুষ গুলার মাঝেও আবার নানা ভাগ আছে।

আমরা কেউ চাই অগন্য, অচেনা, অজানা মানুশ জন আমাদের দেখুন মানে সাধারন জনগনের চোখ কান মনোযোগের সম্পৃত্ততায় সিক্ত হতে চান। আর এক দল আছে নিজের পরিচিত গন্ডির মাঝে নিজেকে প্রয়োজনীয় হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে, প্রয়োজন না থাকলেও শুধু মাত্র এই ইম্পরট্যান্সি প্রাপ্তির আশায় পয়সা খরচ করে ককটেল পার্টি ডিনারে অথবা কোন আত্মীয় স্বজনের বিবাহ বার্ষিকী মৃত্যু বার্ষিকীতে পরিচিত অপরিচিত বা অর্ধ পরিচিত অপরিচিতকেও নিমন্ত্রন দিয়ে যায় যাতে নিজেকে একটু পরিচিতি করা যায়। তৃতীয় এক দল আছে যারা অনুক্ষন নিজের ভালোবাসার মানুষের চোখে মনি হয়ে থাকতে চায় সেখানে সে বড় নির্মম কাউকে সেখানে প্রবেশাধিকার দেয় না প্রয়োজনের খাতিরে হলেও

এদের বাদেও চতুর্থ একদল মানুষ আছে যারা সাপের মাথার মনির মত বিরল, তারা কোন ইম্পর্ট্যান্সির তোয়াক্কা রাখেন না নিজের কল্পনায় অগনিত মানুষেকে কল্পনায় এনে তাদের মানসিক মধ্যমনি হয়ে থাকেন অথবা অগনিত মানুষ না দেখেও তাদের কল্পনায় সূক্ষ্ম দেহে ওই মানুষটার কল্পনায় বিরাজ করেন। কোনটা ঠিক? কে ঠিক? আমি কেন এত ভাবছি? আধুনিক মানুষ এক স্পর্ধাভোগী প্রানী মুই কি হনু রে ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারে না।

কোন এক দিন এলোমেলো ভাবনা থেকে লিখছিলাম এই ব্লগেই।

০৭ ই মে, ২০২০ রাত ১০:০৭

শুভ্রনীল শুভ্রা বলেছেন: কী যে আবোল তাবোল লিখেছি !
'' আমরা প্রত্যেকেই ইম্পরট্যান্ট হতে চাই'' সত্য কথা। কী গভীর সব ভাবনা !! ধন্যবাদ ভাইয়া, এখানে শেয়ার করে লিখাটা পড়বার সুযোগ দেবার জন্য।

৪| ০৫ ই মে, ২০২০ ভোর ৫:৩১

ভুয়া মফিজ বলেছেন: @শের শায়রীঃ ওয়াও! অত্যন্ত উচ্চমানের চিন্তা-ভাবনা। দুইবার পড়েও কিছু বুঝি নাই যদিও; মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে। আমার উচ্চতা আর ইন্চি কয়েক বেশী হলে মনে হয় সুবিধা হতো!!! :-B

০৭ ই মে, ২০২০ রাত ১০:০৮

শুভ্রনীল শুভ্রা বলেছেন: বুঝতে হবে। বস ইজ অলয়েজ বস !!

৫| ০৫ ই মে, ২০২০ ভোর ৫:৪০

নেওয়াজ আলি বলেছেন: যেসব নারী আগে মুখোশ পরতো তারাও করোনার ভয়ে পরতে হয়েছে

০৭ ই মে, ২০২০ রাত ১০:০৮

শুভ্রনীল শুভ্রা বলেছেন:
শুধু নারী কেন পুরুষরাও পরতে শুরু করেছে। :)

৬| ০৩ রা জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:৪৮

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
লেখাটা পড়ে ভাললাগলো।

০৫ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৮:১০

শুভ্রনীল শুভ্রা বলেছেন: ভালো লেগেছে জেনে বেশ আনন্দিত হলাম। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.