নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্যামল সোম

আমিও এক জন সামান্য লেখক, কবিতা,গল্প,রম্যরচনা, প্রবন্ধ লিখে থাকি।

শ্যামল সোম › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার রবীন্দ্রনাথ

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:০৩


আমার যৌবনের প্রথম প্রেমিক

শ্যামল সোম

আমার ভালোবাসার কবির সাথে বহু যোগ 1965 সালে আগে হঠাৎ দেখা হলো, পঁচিশে বৈশাখের গভীর রাতে, সে কথাকথায় পরে আসা যাবে।
সূর্যোদয় নবীন প্রভাতে, বেদ, উপনিষদ থেকে সমবেত কন্ঠে আমাদের রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ব বিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের ছাত্র ছাত্রী গাহিলেন।
সারাদিন জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ি প্রাঙ্গণে গানে, কবিতা আবৃত্তি শুনে অসম্ভব আনন্দে রবীন্দ্র স্রোতে ভেসে ভেসে অবগাহন করছিলাম।

কবি নজরুলের কনিষ্ঠ পুত্র সব্যসাচী আমাদের প্রিয় সানিদা উদাত্ত কন্ঠে আবৃত্তি করছিলেন " উদ্ভ্রান্ত সেই আদিম যুগে, স্রষ্টা যখন নিজের প্রতি অসন্তোষে
নতুন সৃষ্টিসৃষ্টিতে বারবার করছিলেন বিধ্বস্ত, তাঁর সেই অধৈর্য ঘন ঘন মাথা নাড়ার দিনে
রুদ্র সমুদ্রের বাহু -- প্রাচী ধরিত্রী বুকের থেকে/ ছিনিয়ে নিয়ে গেল তোমাকে, আফিকা--।" পরে " আমি ছেড়েই দিতে রাজি আছি সুসভ্যতার আলোক,
আমি চাই না হতে নব বঙ্গে নবযুগের চালক।"
শ্রোতাদের বিপুল হর্ষ ধ্বনি মধ্যে অনুরোধে শুরু করলেন " ---

সুচিত্রা মিত্র এর নাম ঘোষণা করা মাত্র আমরা আনন্দিত হয়ে হাততালি অভিনন্দন জানালাম। সাদা শাড়ি, চোখে চশমা করজোড়ে দ্রুত মঞ্চে উঠেই " যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে !" ঋজুতা কন্ঠে তীক্ষ্ণ কন্ঠে গাহিলেন " ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে বন্ধু আমার। না পেয়ে তোমার দেখা একা একা দিন যে আমার কাটে নারে।"
সাদাধূতি, ধূসর তসরের পাঞ্জাবি শম্ভু মিত্রের সাথে, তীরের শাড়ী দক্ষিণ ভারতের,অপূর্ব সৃজনশীল সাজ, রক্ত করবী গুচ্ছ কুন্তলে, আমাদের নন্দিনী, তৃপ্তি মিত্র উল্লাসে হর্ষ ধ্বনি হরতালি মধ্যে মঞ্চে উঠে বসলেন হাঁটু পেছনে মুড়ে।
শরীরে শিহরণ বয়ে গেল আবৃত্তির শিক্ষক আমাদের রবীন্দ্র ভারতীর নাট্য বিভাগের--"যদিও সন্ধ্যা আসিছে মন্দ মন্থরে, সবাই সংগীত ইঙ্গিতে থামিয়া,
যদিও সঙ্গি নাহি অনন্ত অম্বর, যদিও ক্লান্তি আসিছে অঙ্গে ননামিয়া,
মহা- আশঙ্কা জপিতে মৌন মন্তরে, দিক- দিগন্ত অবগুণ্ঠনে ঢাকা--
তবু বিহঙ্গ ওরে বিহঙ্গ মোর, এখনি অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।।"
শব্দে ! শব্দের উচ্চারণে গলার মাধুর্যে, কন্ঠের মায়াবী প্রক্ষেপণ, শ্রোতাদের হৃদয়ের তন্ত্রীতে
বাজলো যে সুর, সেই সুরের রেশ ধরে মঞ্চের অন্যদিকে গেরুয়া পাঞ্জাবি হারমোনিয়াম টেনে নিয়ে এসরাজে সাথে গাহিতেন আমার প্রিয় শিল্পী জর্জ বিশ্বাস, দিনের বেলায় রাত্রি এলো নেমে --" আকাশ ভরা সূর্য তারা, বিশ্বভরা প্রাণ, তাহারি মাঝখানে আমিও পেয়েছি মোর স্থান, বিস্ময়ে তাই জাগে আমার প্রাণ।সকল শ্রোতার সাথে ধ্যানমগ্ন হয়ে শুনছেন শম্ভু মিত্র ও তৃপ্তি মিত্র। এখনকার গায়ে মতো বিশাল অর্থ উপার্জন ছিলো না কিন্তু সহৃদয় ব্যক্তিত্ব, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই শুনতেন তাই তাঁরা শাশ্বত ইতিহাসের স্বদেশ ও বিদেশে আজো এ প্রজন্মের কাছেও স্বঘোষিত স্বর্ণাক্ষরে উজ্জ্বল নাম।
বিরামহীন গেহে চলেছেন, " যখন আমি তাঁর দুয়ারে ভিক্ষা নিতে যাই, "
" বড় আশা করে এসেছি গো কাছে ডেকে নাও,"
কেতকী মৃদু স্বরে বললে চল সৌমেন, রমেনের ডাক্তারী কলেজের সহপাঠিনী পরে সহধর্মিণী হয়েছিল। রমেনের আমি দুজনে কেতকীর বাড়ি থেকে বহে আনা
চিকন স্যানডুইচ আর মালপো, পাটি সাপটি, জননী মতো মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে কেতকী ভীষণ বড়লোক একমাত্র কন্যা, সুন্দরী ললনা, কিন্তু আশ্চর্য এতটুকু অহংকারের লেশ মাত্র নেই।
মঞ্চে দেবব্রত বা জর্জ বিশ্বাস গাহিছেন, " কেন চেয়ে আছো গো মা মুখ পানে"
পরক্ষণেই " আমার সকল দুখের, প্রদীপ জ্বেলে দিবস গেলে করবো নিবেদন, আমার ব্যথার পূজা হয় নি সমাপন।" শ্রোতাদের প্রার্থনায়--" কেন তোমরা আমায় ডাকো--" কেতকী নয়নে অশ্রু টল টল করছে, ভীষণ আবেগ প্রবণ ডাক্তারীর ছাত্রী রমেশ ঠাট্টা করলো, কিন্তু আমার চোখেও জল।
দৈত আবৃত্তি কর্ণ কুন্তি সংবাদ --" কর্ণ-- পুণ্য জাহ্নবীর তীরে সন্ধ্যা সবিতা
বন্দনায় আছি রত। কর্ণ নাম যার,অধিরথসূত পুত্র, রাধা গর্ভ জাত-- সেই আমি-- করে মোরে তুমি কে গো মাতা!
কুন্তি--বৎস, তোর জীবনের প্রথম প্রভাতে--পরিচয় করায়েছি তোরে বিশ্ব - সাথে, -- সেই আমি আসিয়াছি ছাড়ি সবাই লাজ-- তোরে দিতে আপনার পরিচয় আজ।
সংলাপে, নাটকীয় মুহূর্তে যেন মহাভারতের পাতা থেকে উঠে দুটি চরিত্র, কন্ঠ স্বর সুরের ঐকতানে পরস্পরের বাচিক শ্রুতি নাটকের নূতন আবির্ভাব হলো এ একটি ঐতিহ্যবাহী ঐতিহাসিক সত্য। আমরা স্পন্দন হীন নিষ্পলক নেত্রে রুদ্ধ শ্বাসে শুনতে শুনতে শিহরিত হচ্ছিলাম, কখন যে নিজের রুমাল নিয়ে দাঁতে চেপে ধরে আছি জানি না, কেতকীর মৃদু হেসে স্পর্শে ইশারা করে তখন সেন্স এলো সম্বরণ করলাম নিজেকে।
শেষে দুজনে যত আবৃত্তি করলেন, -এক গাঁয়ে -" আমারা দুজনে একটি গাঁয়ে থাকি, সেই আমাদের একটি মাত্র সুখ।তাদের গাছে গায় যে দোয়েল পাখী--তাহার গানে আমার নাচে বুক---
আমাদের এই গ্রামের নামটি খঞ্জনা, -- আমাদের এই নদী নামটি অঞ্জনা, --
আমার নাম তো জানে গাঁয়ের পাঁচ জনে

আমার প্রথম প্রেমিক রবীন্দ্রনাথ ( চতুর্থ ভাগ )

শ্যামল সোম

" আজ আমার প্রণতি গ্রহগ্রহণ করো, পৃথিবী
শেষ নমস্কারে, অবনত দিনবসানের বেদিতলে।
মহাবিরযবতী তুমি বীরভোগ্যা,
বিপরীত তুমি ললিতে কঠোরে,
মিশ্রিত তোমার প্রকৃতি পুরুষে নারীতে;
মানুষের জীবনে দোলায়িত কর তুমি দুঃসহ দ্বন্দ্বে।"

আমার অত্যন্ত অসম্ভব প্রিয় কবিতা যৌবনে বহু বছর আবৃত্তি করেছি, জীবনের
বেলা শেষে পৌঁছে সোনার তরী নয়, আমার শেষ খেয়ার জন্য বসে পারঘাটায়
" যখন ভাঙল মিলন-মেলা / ভেবেছিলেম ভুলব না আর চোখের জল ফেলা।"
বা " হায় হায় হায় দিন চলে যায়।চা- স্পৃহ চঞ্চল চাতকদল চলো চলো চলো হে।"
বা- " যখন ভাঙল মিলন-মেলা / ভেবেছিলেম ভুল না আর চক্ষের জল ফেলা।
দিনে পথে ধুলা মালা হতে ফুল ঝরে যায়--"
" পথিক সবাই পেরিয়ে গেল ঘাটের কিনারা, আমি সে কোন আকুল আলোয় দিশা হারা রাতে।সেই পথ হারানোর অধীর টানে অকালে পথ আপনি টানে,
দিক ভোলাবার পাগল আমার হাসে অন্ধকারে।"
কত গান হলো গাওয়া ফিরে ফিরে ফেরে, ভাসে কানে, ফেলে যাওয়া গানে গানে--
" ফিরে চল মাটির টানে--যে মাটি আঁচল পেতে চেয়ে আছে মুখের পানে।"
" মাটি আঁকড়িয়া ধরিবারে চাই- তাই হয়ে যাই মাটি, "
গান এলো মোর প্রাণে " মাটির বুকের মাঝে বন্দি যে জল মিলিয়ে থাকে-- মাটি পায় না ( মাটি পায় না ) তাকে।---" তখন চোখের জলে নামে সে যে চোখের জলে ডাকে, মাটি পায়নি রে তাকে।"

একান্ত আমার রবীন্দ্রনাথ --" ভুবন হবে নিত্য মধুর জীবন হবে ভালো--মনের মধ্যে জ্বালাই যদি--ভালোবাসার আলো।

মায়ার খেলা--অমর--- " ভালোবেসে যদি সুখ নাই তবে কেন, তবে কেন মিছে ভালোবাসা।"
প্রেমিক রবীন্দ্রনাথ 1331 বাংলা সালে গাহিতেছেন-- " ভালোবাসি, ভালোবাসি--
এই সুরের কাছে দূরে জলে স্থলে বাজায় বাঁশি।আকাশ কার বুকের মাঝে ব্যথা বাজে,
দিগন্তে কার কালো আঁখি আঁখির জলে যায় গো ভাসি।

পৃথিবী ---" ডান হাতে পূর্ণ কর সুধা, বাম হাতে চূর্ণ কর পাত্র, -- তোমার লীলা ক্ষেত্র মুখরিত করে অট্টবিদ্রুপে;--দুঃসাধ্য কর বীরের জীবনকে মহৎ জীবনে যার অধিকার। "

রবীন্দ্র সঙ্গীত-- " জীবনে যত পুজা হল না সারা--জানি হে জানি তাও হয় নি হারা।- যে ফুল না ফুটিতে ঝরেছে ধরণীতে যে নদী মরুপথে হারাল হারাল ধারা-- জানি হে জানি তাও হয় নি হারা।" ---বা -- " তোমার পুজোর ছলে তোমায় ভুলেই থাকি। বুঝতে নারি কখন তুমি দাও যে ফাঁকি।-- সরল প্রাণে নীরব হয়ে তোমায় ডাকি। "

ঈশ্বর ! প্রকৃতি ! পৃথিবী ! প্রেম ! একাকার করেছেন তিনিই মানবতার, মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসার সকল তাঁর কথায় গানে কবিতায়, গল্পে, উপন্যাসে, প্রবন্ধে মানবতার জয় গান গেয়ে গেছেন।
গানে--" এই যে তোমার প্রেম, ও গো হৃদয় হয়, এই যে পাতায় আলোচনা নাচে সোনার বরণ।--- এই তোমারি প্রেমের বাণী প্রাণে এসেছে।-- আমার হৃদয় আজ ছুঁয়েছে তোমারি চরণ।"

পৃথিবী-- " শ্রেয় কর দুর মূল্য, কৃপা করে না কৃপা পাতরকে।তোমার গাছে গাছে প্রচ্ছন্ন রেখেছ
প্রতি মুহূর্তের সংগ্রাম, ফলে শস্যে তার জয়মাল্য হয় সার্থক। জলে স্থলে তোমার ক্ষমা হীন রণরঙ্গ ভূমি---- সেখানে মৃত্যুর মুখে ঘোষিত হয় বিজয়ী প্রাণের জয় বার্তা।"

প্রবন্ধে---" ধর্ম কে আশ্রয় করিলে মৃত্যু ভয় থাকে না। এখানে মৃত্যু অর্থে ধবংস ও নহে, মৃত্যু অর্থে অবস্থা পরিবর্তন ও নহে, মৃত্যু অর্থে জড়িতা। অচেতনতাই অধর্ম।
ধর্মকে যতই আশ্রয় করিতে থাকিব, ততই চেতনা লাভ করিতে থাকিব, ততই অনুভব
করিতে থাকিব, যে মহা চৈতন্যের সমস্ত চরাচর অনুপ্রাণিত হইয়াছে, আমার মধ্য দিয়া এবং
আমাকে প্লাবিত করিয়া সেই চৈতন্যেচৈতন্য স্রোত প্রবাহিত হইতেছে। যথার্থ জগৎকে জ্ঞানের দ্বারা জানিবার কোন সম্ভাবনা নাই, চৈতন্য দ্বারা জানিতে হইবে।

শ্রী রামকৃষ্ণ বিশ্ব বাসীকে আশীর্বাদ করেছিলেন-- "--তোমাদের চৈতন্য হোক "---!

শ্যামল সোম---- সবাই সবসময় নিজের মৃত্যু চিন্তা করলে আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, ব্যক্তিগত
মতামত-- যে অহরহ মৃত্যু কে স্মরণে রাখে সে কোন অন্যায়, পাপ কার্য থেকে বিরত থাকে।

রবীন্দ্রনাথ-- " মৃত্যুর ধর্মই এক, প্রাণ ধর্ম নানা, দেবতা মরিলে হবে ধর্ম একখানা। The spirit of death is one, the spirit of life is many. When God is dead religion becomes one." " MY FAITH IS TRUTH, MY VISION OF THE PERFECT, HELP THE, MASTER, IN THY CREATION.
MY SONGS ARE TO SING THAT I HAVE LOVED THY SINGING,
আমার প্রেম রবি-রবিবার হেন জ্যোতির্ময় মুক্তি দিয়ে তোমারে ঘেরে যেন।
Let my love, like sunlight, surround you and give you a freedom illuminated.

চান ভগবান পরে দিয়ে তাঁর গড়া হবে দেবালয়, মানুষ আকাশে উঁচু করে তোলে ইঁট পাথরের জয়।
While God waits for his temple to be built of LOVE man bring stones.

মোর গানে গানে, প্রভু আমি পরশ তোমার, নিরঝ ধারায় শৈল যেমন পরে পারাপার।
I touch God in my song as far away hill touches the sea

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.