নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্যামল সোম

আমিও এক জন সামান্য লেখক, কবিতা,গল্প,রম্যরচনা, প্রবন্ধ লিখে থাকি।

শ্যামল সোম › বিস্তারিত পোস্টঃ

পারাপার --উপন্যাসের প্রথম অধ্যা

১৭ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:০৯

পারাপার
" ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা দ্বিজেন্দ্রলাল রায় "
"ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা
আমাদেরই বসুন্ধরা
তাহার মাঝে আছে দেশ এক
সকল দেশের সেরা
ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে যে
স্মৃতি দিয়ে ঘেরা
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে
পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের রানি সে যে
আমার জন্মভূমি
সে যে আমার জন্মভূমি
সে যে আমার জন্মভূমি"
দ্বিতীয় মহাবিশ্ব যুদ্ধে যখন সারা পৃথিবী বিদ্ধস্ত, অখন্ড বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষের কবলে লক্ষ লক্ষ শিশু নারী পুরুষ অনাহারে মৃত্যুর মুখে, ঐ ১৯৪১ সালে ডিসেম্বরের এক শীতার্থ রাতে হত দরিদ্র ব্রাহ্মণ সোমনাথ ভট্টাচার্য -এর কুঁড়ে ঘরে এই অমল -এর জন্ম। আশ্চর্য, এত অভাবেও বেঁচে রইলো সে। পুজো বিবাহ শ্রাদ্ধ যজমানের কৃপায়, গাঁয়ে রাধা গোবিন্দের মন্দিরে ও 'দু চার যজমানের বাড়িতে দুবেলা পুজো আরতি করে আর মজুর দিয়ে চার বিঘে জমিতে চাষ আবাদ করে কোন ক্রমে সংসারের জোয়াল সোমনাথ বাবু টেনে হিঁচড়ে অসহ্য দারিদ্র্য, অভাবের মধ্যে বহে নিয়ে চলছিলেন।
1939 সালে জার্মান প্রথম মহা বিশ্ব যুদ্ধের চরম অপমানের প্রতিশোধ নিতে ও ক্ষমতার দম্ভে হিটলার প্রতিবেশী দেশ আক্রমণ করলো।
প্রতিবাদে মিত্র শক্তি, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, আমেরিকা অন্য দিকে ইতালি, জার্মানি, জাপান -মধ্যে শুরু হয়ে গেলো ভয়াবহ, বিধ্বংসী, রক্তক্ষয়, ঐতিহাসিক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
বিশ্ব যুদ্ধের পরোক্ষ ফলা ফল সুদূর এই অখণ্ড ভারতবর্ষে
আকাশে ঘনিয়ে এলো কালো মেঘ, দুর্ভিক্ষের করাল ছায়া।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এর তূর্য নাদ, দামামা বাজতেই অশনী সংকেত দেখা দিলো, ইংরেজ সরকার, যুদ্ধের রসদ, সৈন্য বাহিনীর খোরাক সঞ্জয় করতে ইংল্যান্ড তার উপনিবেশ, শাসিত রাষ্ট্র থেকে অর্থ, খাদ্য, সম্পদ আহরণ করতে শোষণেশোষণের মাত্রা বাড়িয়ে দিলো।
এই সুযোগে দেশের ব্যবসায়ী মহল, প্রচুর পরিমাণে মুনাফা অর্জন করতে, কাঁচা মাল, ধান চাল, শস্য মজুত করতে লাগলো। ইংরেজ সরকারের খাদ্য সংগ্রহ, অন্য দিকে মজুতদারের সর্বনাশা ষড়যন্ত্রে ত্রাস, দুর্ভিক্ষের দুর্বিষহ আঘাতে আঘাতে দেশের গরীবের প্রাণ ওষ্ঠাগত।
এর প্রভাব পূর্ব বাংলার অজ পাড়া গাঁয়ে জীবন যাপন পাল্টে গেলো, শুরু হলো কঠিন ঠিকে থাকার লড়াই।
জনগন প্রাণ ধারণেই ব্যতিব্যস্ত, পুজো পাঠ ও তাঁর সাধের পাঠশালা প্রায় উঠে গেলো।
দিন আসে, রাত নামে, মানুষ মৃত্যু ও প্রলোভনের শিকার - ক্ষুধার জ্বালায় যৌবনা নারী আজ পতিতা - দরিদ্রতা কী ভয়ংকর - বন্যার জলে বানভাসী ভেসে যায় - সততা, সম্ভ্রম, সম্মান, শালীনতা, মানবতা সব সব খুইয়ে - মরার 'পরে খাঁড়ার ঘায়ে দেশ ভাগের ভয়াবহ পরিনামে একটা জাত, এই বাঙালী জাত, কাঙালের পর্যায় পর্যবসিত হলো; আর আমাদের ঘরের মা ও বোনেরা বেশ্যায় পরিনত হয়ে গেলো।
সোমনাথ বাবু জন্মভূমির অমোঘ শিকড়ের টানে, ময়মনসিংহ এর মুকতা গাছা গ্রামের মায়া ছেড়ে সর্বস্ব হারিয়ে ভিখিরীর মতো কোলকাতার রাস্তায় ভিক্ষে করে দিন যাপনে রাজী ছিলেন না।
গাঁয়ের অনেক হিন্দু পরিবার অনেক কিছু হারিয়ে শেষে পালিয়েছেন। চাষা মরে আশায়। স্ত্রী জয়া আধ পেটা খেয়েও দাঁতে দাঁত চেপে, সংসার বুক দিয়ে আগলে, অনেক কঠিন কালের আঘাতেও ভেঙ্গে না পড়েও ধুক ধুক করে টিঁকে আছেন। দুটো কিশোরী মেয়ে, বড় উমা ষোল বছর, ছোট বীনা চোদ্দ, আর আমল তখন ছয় বছর।
গাঁয়ের মোড়ল প্রধান ও অন্যান্য পড়শী, তাঁরা অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে, শেষ পর্যন্ত সোমনাথ বাবুকে রাজি করালেন দেশত্যাগ, জন্মভূমির মাটি থেকে শেকড় উপড়ে চিরকালের মতো চলে যেতে, বুকের যেন পাঁজর ভেঙে গেলো।
১৯৪৭ শে ১৪ই আগষ্ট রাত থাকতেই কাক ভোরে ধুতি খুলে, বাল্য বন্ধু বসীর মিঞার দেওয়া ভালেবাসার দান - লুঙ্গি ফতুয়া ফেজ টুপি 'পরে, দীর্ঘ দিন না কামানো দাড়ি গোঁপের জঙ্গলে হারিয়ে গেলেন সোমনাথ ভট্টাচার্য হলেন সোলেমান মিঞা।
বসীর মিঞার বিবি আয়েশা জয়াকে রঙিন একটা নুতন শাড়ি পড়িয়ে- কানের পাশ দিয়ে ঘোমটা টেনে সাজিয়ে দিলো, শেষে একটা কালো বোরখা পড়িয়ে দেয়।
আফজল মিঞার দাদার তদবীরে ডিস্ট্রিক্ট র্বোডের প্রেসিডেন্টের রেকমেন্টেড পরিচয় পত্রে লেখা আছে ফুলেশ্বরী গ্রামের সোলেমান শেখ, তার বিবি আমিনা ও বাচ্ছাদের নিয়ে কোলকাতায় যাচ্ছে হাসপাতালে দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসার জন্য।
শেষ বারের মত গৃহ মন্দিরে ও গাঁয়ের মাটিতে মাথা নুইয়ে প্রণাম করে গৃহ দেবতা রঘুবীর আর শালগ্রাম শিলা জপের মালার ঝুলিতে বুকের আড়ালে ঝুলিয়ে, হাউ মাউ করে ডুকরে কেঁদে উঠে আছড়ে পড়লেন।
গোফুর, বসীর, আফজল, মোক্তার, হোসেন মিঞা হাত ধরে তুলে বুকে জড়িয়ে চোখের পানী মুছিয়ে সান্তনা দিয়ে মেহেরবানের কাছে দোয়া জানালেন। বৃদ্ধ হোসেন মিঞা বিড় বিড় করে সূরা আওড়াচ্ছেন। লন্ঠন হাতে গাঁয়ের সবাই দল বেঁধে ভীষণ ভালো মানুষ, ইমানদার, সবার খুব প্রিয়, যেন আত্মার আত্মীয় -সোমনাথ বাবুর হাত ধরে পার ঘাটায় আনলেন - চোখের অশ্রু আজ অঝরে ঝরছে।
বসীর মিঞা নৌকোর মাঝি আবদুলকে সতর্ক করে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিলেন।সবাই সোমনাথবাবুকে --

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:২১

শ্যামল সোম বলেছেন: অসাধারণ সব মেধা সম্পূর্ণ অত্যন্ত উচ্চ মানের লেখা সংকলিত লেখক ও লেখিকার লেখা পড়ে সাহস হয় না আমার মতো কেরানি মানুষ অশিক্ষিত, কোন মন্তব্য করি এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। তাঁদের প্রত্যেকের জন্য শ্রদ্ধা, শুভেচ্ছা স্বাগতম জানাচ্ছি।
আমি এই বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজ ব্লগে আমার নিজস্ব চিন্তন, বোধ, আমার কথা প্রকাশ করতে পেরে ধন্য, আপনাদের সকল কুশীলব তাঁদের গভীর শ্রদ্ধা কৃতজ্ঞতা ও অনন্ত শুভেচ্ছা জানাই।

২| ২৭ শে জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৪

শ্যামল সোম বলেছেন: আমি সশ্রদ্ধা চিত্তে আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি কৃতার্থ ও কৃতজ্ঞ আপনাদের কাছে। আমার অতি সাধারণ সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে আপনাদের মতো উচ্চ মানের সাহিত্যিক
পাশে আমার লেখা প্রকাশ করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে, অনন্ত শুভকামনা রইলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.