![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাধা সিধে একজন মানুষ । যার নেই কোনো ব্যাখ্যা, নেই কোনো সংজ্ঞা।
মেয়েটাকে এই নিয়ে আজ তিনবার দেখলাম... সেই সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে... কখনও ইলশেগুঁড়ি আবার কখনও মুশলধারে... ছাতাহীন আমি একটা যাত্রী ছাউনির নীচে দাড়িয়ে... ছাউনীর নীচে আমার সাথে আরও দুজন বসে আছে... তারাও হয়ত আমার মত টো টো কোম্পানির ম্যানেজার.... কিংবা ভবঘুরে কিংবা উদাস পথিক...
সি এন জি টা ঠিক ছাউনীর সামনে এসে দাড়ালো... আর তা থেকে নামল মেয়েটি... সে অসম্ভব রকমের রূপবতী না... কিংবা কোনো রাজকন্যা না... অতি সাধারন একজন... তাকে দেখলেই প্রেমে পড়তে ইচ্ছে হয় না... কিন্তু তার চেহারাটা চুম্বকের মত... শুধু আকর্ষন করে.... সে সি এন জি থেকে নেমে আমার সামনে এসে দাড়ালো... তারপর বললঃ
-ভাইয়া ৫০০ টাকা ভাংতি হবে ??
- দাড়ান দেখি... চিপা চাপা খুঁজে ৪৬০ টাকা বের হল... এক জন ছাত্রের পকেটে এই পরিমান অর্থ একটু বেশী ই....
- আমার কাছে সব মিলিয়ে ৪৬০ টাকা হবে...
- দিন। আর এই পাঁচশো টাকার নোটটি রাখুন... ভাংতি করিয়ে নিলাম আপনার কাছ থেকে..
- কিন্তু ৪০ টাকা বেশী দিয়ে গেলেন যে... আমার কাছে তো আর টাকা নেই....
- আপনি আর আমি এক ভার্সিটিতেই পড়ি... আর পৃথিবীটাও গোল... আবার নিশ্চয় ই দেখা হবে... তখন দিয়ে দেবেন...
- আচ্ছা..
মেয়েটা সি এন জি ওয়ালাকে ভাড়া দিয়ে আবার আমার সামনে এসে দাড়ালো... তারপর ছোট্টো করে একটা ধন্যবাদ দিল.... আর প্রতুত্যরে পেল একটা শুকনো হাসি এবং সেদিনের মত বিদায় হয়ে গেল....
পাঁচ বছর একুশ দিন হল সেই পাঁচশো টাকার নোটটি মানিব্যাগের এক কোনে এখনও পড়ে আছে... তার প্রথম চিহ্ন ছিল... তাই একটু খামখেয়ালির মত করেই রেখে দিয়েছি... যদিও টাকা পার্মানেন্টলি রেখে দেওয়ার জন্য না... আর আমার মত অভাবীর জন্য তো রীতিমত হারাম....
এরপর মেয়েটার সাথে দেখা হয়েছিল... সেই চল্লিশ টাকা ফেরৎ দিয়েছিলাম তাও সে টাকা দিয়ে দুজন দু প্লেট ফুচকা খেলাম... সচরাচর ফুচকা ভাল না লাগলেও সেদিন খারাপ লাগছিল না.... এখন মনে হয় সেটা ছিল প্রেমে পড়ার প্রথম লক্ষন... সে ফুচকাই ছিল তাবিজ... যে তাবিজের কারনেই তার প্রেমে পড়েছিলাম...
মিথ্যে বলবনা... সে আমার প্রথম প্রেম ছিল না... এর আগেও প্রেমে পড়েছিলাম... হাজারবার প্রেমে পড়েছিলাম... সুন্দরী ললনাদের উপর সাময়িক প্রেমে পড়েছিলাম... কিন্তু এবার মনে হচ্ছিল আসলেই কারো প্রেমে পড়েছিলাম.... সে সময়ে পৈত্রিকসূত্রে একটা নোকিয়া ৩৩১০ পেয়েছিলাম কিন্তু ৪ টাকা মিনিট ছিল বিধায় একটু মন খুলে কথাও বলা যেত না... চিন্তা করতাম ম্যাঙ্গো বলব নাকি আম বলব... কোনটা বলতে সময় কম লাগবে...
তার সাথে ভার্সিটিতে প্রায় ই কথা হত... আমার এক ব্যাচ জুনিয়র ছিল সে... তার সাথে খুব বেশী কথা হত না... আমি ক্লাসের বাইরে বেশী থাকতাম আর সে ভিতরে... চায়ের দোকানে বসে বন্ধুদের সাথে সেই মাপের আড্ডা দিতাম... তার সাথে কথা হত ক্লাসের শেষে কিংবা অফ পিরিয়ডে... বন্ধুত্বটা গাঢ় হচ্ছিল... এটাই বুঝি প্রকৃতির নিয়ম... কি আর করা....
সেদিন ভাবছিলাম ভালোবাসি কথাটা তাকে বলেই দেব... কিন্তু "ভা" তেই আটকা পড়ে আছি... সেদিন সে আমাকে তার বাসায় নিয়ে গেল... একটা ফটো ফ্রেমে আবদ্ধ দুটি ছবিকে দেখছিলাম... ছবিটা তার আর তার সাথে অপরিচিত এক পুরুষ.... তার ভাই... কিন্তু না... আরেকটু পরিষ্কার হল বিষয়টা যখন জানলাম ফার্সট ইয়ারে থাকতেই তার বিয়ে হয়ে যায়.... তার মা আমাকে বলেছিলেন সব ঘটনা... নিজের ভাগ্যের কথা চিন্তা করে গাল চুলকাচ্ছিলাম আমি.... আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে সে হয়ত পাঁচ আঙ্গুলে কপালের কৃতজ্ঞতায় কেঁদে দিত... জন্মের সময় কেউ মুখে মঁধু দেয় নি... তাই মনে ও মুখে একটা পাথর কাঠিন্য এবং গাম্ভীরযতা নিয়ে জন্মেছিলাম.... আন্টিকে ওর স্বামীর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছিলাম... ওর স্বামী নাকি মারা গিয়েছে বছর খানেক আগে....
বের হয়ে আসলাম ওর বাসা থেকে.... হাটছি... তপ্ত রোদ ঝলসে দিচ্ছে আমার ডান পাশ.... মস্তিষ্ক বলছে ভালবাসাকে কবর দিয়ে যেতে কিন্তু মন বলছে ভালবেসে ওর পাশে দাড়াতে.... রক্ষণশীল পরিবারে জন্ম বিধায় মস্তিষ্কের কথাটাই যুক্তি যুক্ত.. কিছু ভাবতে ইচ্ছে করছে না আর..... নাহ মনের সাথেই যাব.... রবীন্দ্রনাথ শিশিরকে হারিয়ে অনুশুচনা করেছিলেন... অনুশুচনা খুব বাজে জিনিস... সব জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়.... আমি পেয়ে দুঃখ করব তাও না পেয়ে কপাল চাপরাবো না....
কোনো এক বর্ষাদিনে ২৫ টা কদমফুল দিয়ে তাকে বলেছিলাম ভালবাসি... পকেটে সেদিন গোলাপ কেনার টাকাটাও ছিল না... একটা পিচ্চিকে দশ টাকা দিব বলতেই কদম গাছে উঠে গেল... পিচ্চিটা গুনতে জানে না... আমি বলে দিচ্ছিলাম নিচ থেকে.... কদম ফুলগুলো নিয়ে কম্পিতগলায় তাকে বলেছিলাম ভালবাসি.... সে কিছু না বলেই চলে গেল.... সেদিন তার চোখে আমি আমার ভালবাসার মরন দেখেছিলাম.... সেদিন নিজ হাতে সে আমার ভালবাসার কবরে মাটি দিয়েছিল.... তারপর তাকে আরেকদিন বুঝানোর চেষ্টা করেছিলাম... কিন্তু বোঝে নি... বুঝতে চায় নি....
পাঁচ বছর একুশ দিন হল আজ.... আমি দূর থেকে তাকে দেখি... অনেক বুঝিয়ে মা বাবাকে দিয়ে তার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম.... কিন্তু সে ফিরিয়ে দিল.... শুনেছি তার একটা ছেলে হয়েছে... হয়ত এই ছেলে আর স্মৃতিগুলোকে নিয়ে ও নিজের মত করে বাঁচতে চেয়েছিল... তাই ওর পৃথিবীতে আমার জায়গা হয়নি....
শুনেছি ওর নাকি লাভ ম্যারেজ ছিল... ওর ভালবাসার পরিমানটা বুঝতে পারছি.... আমার থেকেও বেশী.. এবং পবিত্র.... স্বচ্ছল পরিবারের স্বাবলম্বী মেয়ে বিধায় কারো করুনারও প্রয়োজন নেই ওর......সময় থেমে থাকে না... চলছে... সময় আর সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে আমিও চলছি... একটা চাকুরী জুটে গেছে.... শুনলাম আমার বিয়ের জন্য নাকি পাত্রী দেখা হচ্ছে.....
২| ২৪ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:০১
নূর আদনান বলেছেন: কি বলবো বুঝতে পাচ্ছিনা।
আপনার গোছালো সুন্দর লেখার প্রশংসা করবো নাকি এই গল্পটার ?
৩| ২৪ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:৩৩
ঋনাত্মক তড়িৎদ্বার বলেছেন: সুন্দর গল্প... আপনার ফেইসবুক আইডি দেয়া যাবে???
এই গল্প নিয়ে একটা শর্ট ফিল্ম বানানো যায়...
২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:১২
৪| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৪১
মনিরা সুলতানা বলেছেন: সে ফুচকাই ছিল তাবিজ... যে তাবিজের কারনেই তার প্রেমে পড়েছিলাম...
এটা গল্প না সত্যি ?? নস্টালজিক করে দিলেন ,কত সৃতি , আড্ডা ,ভাল লাগা প্রেমে পড়ার বয়স ই ছিল সেটা ।
শুভকামনা
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:৫৯
নূর আদনান বলেছেন: কি বলবো বুঝতে পাচ্ছিনা।
আপনার গোছালো সুন্দর লেখার প্রশংসা করবো নাকি এই গল্পটার ?