নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞানের মহাসমুদ্রে আমি নগন্য এক মাঝি।

সিকদারভাই

সিকদার থেকে সিকদার ভাই ।

সিকদারভাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

শহীদ নায়েক মিজানুর রহমান আমাদের ক্ষমা করো না ।

০২ রা জুন, ২০১৪ দুপুর ২:৫৫



১৯৭১ সালে গর্জে উঠা, এরপর পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করা সেই বাংগালী জাতি আজ কোথায় ? কোথায় তাদের সেই বাঘের গর্জন যার ভয়ে পাক সেনারা ভয়ে কেঁপে উঠত।



১৯৯১ সালের ডিসেম্বর মাস। সদ্য নির্বাচীত বিএনপি সরকার তখন ক্ষমতায়। হঠাৎ করেই মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী নাসাকা বাহিনী বিনা উষ্কানিতে কক্সবাজার-টেকনাফ সীমান্তে গুলি চালানো শুরু করে। পালটা জবাব দেয় বিডিআর। এরই মধ্যে রাতের আঁধারে উখিয়া বিডিয়ার ফাঁড়িতে নাসাকা অতর্কিত হামলা চালিয়ে দুই বিডিআর সদস্যকে হত্যা করে পালিয়ে যায় ।



ঘটনার পর পরই ঢাকা থেকে রেড এলার্ট জারি করা হয়। সীমান্ত এলাকায় যুদ্ধাবস্থা্র প্রস্তুতি নেয় বিডিআর। এর কয়েকদিন পরেই সীমান্ত এলাকায় বিপুল সেনা সমাবেশ ঘটায় মায়ানমার। সাথে আনা সকল প্রকার ভারী যুদ্ধাস্ত্র বাংলাদেশের দিকে তাক করে ধরে ।মায়ানমার সেনা ব্যাটেলিয়ান সীমান্ত এলাকা থেকে বাংলাদেশের দিকে মার্চ শুরু করে ।



তখন ঢাকা থেকে সর্বাত্বক পাল্টা হামলার নির্দেশ দেয়া হয়। সেই সাথে রাজধানী ঢাকার কুর্মিটোলা বিমান ঘাঁটি থেকে আকাশে উড়াল দেয় এফ সিরিজের বাংলাদেশের যুদ্ধবিমান। আর্মি তখনো তলব করা হয়নি। কারণ তৎকালীন বিডিআররের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, মায়ামনারকে ঠেকাতে আমরাই যথেষ্ট। কক্সবাজার-টেকনাফ-উখিয়াতে মানুষের আতঙ্কিত।রক্ত দিয়ে কেনা দেশকে রক্ষার জন্য বিডিআররের অকুতভয় সৈনিকরা নির্ভিক হৃদয়ে, দৃঢ় পদে , অটল পাহাড়ের মত অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে আছে । সাথে সাধারণ মানুষ হাতের দা থেকে শুরু করে পাথর-লাঠি নিয়ে প্রস্তুত। নাফ নদীর উপর পৌঁছে গেলো বাংলাদেশের যুদ্ধবিমান। সাথে সাথেই মায়ানমারের সেনাবাহিনীর মার্চ থেমে যায়। বিমান দেখে ভয়ে মায়ানমার সেনাবাহীনি বিশৃঙ্খল হয়ে যায় পালাতে শুরু করে। প্রত্যক্ষদর্শী অনেকের মতেই মায়ানমার সেনাবাহিনীর সেই আতঙ্ক ছিলো দেখার মত দৃশ্য!



এভাবেই স্বাধীন বাংলাদেশের উপর প্রথম প্রত্যক্ষ সামরিক আক্রমণ অসাধারণভাবে মোকাবেলা করে সদ্য ক্ষমতায় আসা তৎকালীন সরকার।



“১৮এপ্রিল,২০০১” বি এস এফ বাংলাদেশের কুড়িগ্রামের রৌমারি উপজেলার বড়াইবাড়িতে বিডিআর ক্যাম্পে আক্রমন করার জন্য রাতের আধারে ( আনুমানিক ৩.৩০ এ) বাংলাদেশে সশস্ত্র অবস্থায় ঢুকে বিডিআর ক্যাম্প খুঁজতে থাকে।



এ সময় রাত এ ধান ক্ষেতে পানি দিতে আসা যুবক মিনহাজ উদ্দিন কে জিজ্ঞাস করে বিডিআর ক্যাম্পটি কোনদিকে ?



বাংলাদেশী বীর মিনহাজ উদ্দিন ঘটনা কিছুটা আঁচ করতে পারে। সে ওদের উলটা দিকে পথ দেখিয়ে দেয় । এরপর বি এস এফ চোখের আড়াল হতেই ,মিনহাজ নিজের জীবন বাজী রেখে বিডিআর ক্যাম্পে যেয়ে ঘটনা খুলে বলে। বিডিআর ক্যাম্পে তখন মাত্র ২৫জন বিডিআর ছিলেন । অপর দিকে বি এস এফ ছিল ৩০০ এর বেশি । বিডিআর গ্রামবাসীদেরকে নিয়ে টহল দিতে থাকে।



বি এস এফ টহল রত বিডিআর সদস্য ও গ্রামবাসীদের দেখার সাথে সাথে গুলি চালায়। বিডিআর সদস্য ও গ্রামবাসী পিছু না হটে দেশের জন্য জীবন বাজী রেখে রুখে দাড়ায় ।



শুরু হয় যুদ্ধ । বিডিআর সদস্য ও গ্রামবাসীদের নির্ভীক ও সাহসী প্রতিরোধে হানাদার বি এস এফ বিশাল বাহিনী নিয়ে পিছু হটতে থাকে ।



ইতিমধ্যে খবর পেয়ে রংপুর থেকে লে. কর্নেল শায়রুজ্জামান- এর নেতৃত্বে একদল বিডিআর ঘটনাস্থলে পৌঁছে।



অপরদিকে বি এস এফ এ ইন্ডিয়ান আর্মির কমান্ডোরাও এসে যোগ দেয়।



প্রায় ৩ দিন(১৮-২০) বি এস এফ মরিয়া যুদ্ধ করলেও,শেষ পর্যন্ত হার মানে। নিজেদের দেশ ভারতের অভ্যন্তরে পালিয়ে যায়।এই যুদ্ধে ভারতীয় অনেক কমান্ডো সহ ৪০০ এর বেশি বি এস এফ মারা যায়। তারা বেশির ভাগ লাশ নিয়ে গেলেও বিভিন্ন জায়গায় তাদের ১৬ টি লাশ ওরা নিতে ব্যার্থ হয় । পাশাপাশি ২ জন বি এস এফ আত্নসমর্পণ করে



অপরদিকে বাংলাদেশি ৩ জন বীর ল্যান্স নায়েক ওয়াহিদ মিয়া,সিপাহি মাহফুজুর রহমান,সিপাহী আব্দুল কাদের শহিদ হন। ৬ জন গুরুতর আহত হয়।



রৌমারী সীমান্তে হানাদার ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বি এস এফকে উচিত শিক্ষা দেওয়া সেই বিডিআর কোথায় ? তাদের কন্ঠে একি শুনছি বিড়ালের মিউ মিউ আওয়াজ।



গত ২৮ মে ২০১৪ নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মাতৃভূমির ভূখন্ড রক্ষার জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বিজিবি ও বিজিপির সদস্যরা নিয়মিত টহলে বের হয়েছিলেন। টহলের এক পর্যায়ে বিজিবি সদস্যরা ৫২ নম্বর সীমান্ত পিলারের কাছে যায়। এই সময় মিয়ানমারের বিজিপি সদস্যরা বাংলাদের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি সদস্যদের ওপর বিনা উস্কানিতে গুলি ছুঁড়তে শুরু করে । নায়েক মিজানের হাতে ১২০ রাউন্ড গুলিভর্তি একটি ভারি মেশিনগান ছিল, দলে ভারি বিজিপির দল গুলি করতে এগিয়ে এলে, অকুতভয় মিজান ওদের গুলির পাল্টা জবাব দিতে দিতে মেসিনগানের একটানা গুলিবর্ষন করে নিজ দলের সহযোগী ৩ জনকে প্রান বাঁচানোর সুযোগ করে দেন।



এ ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন বিজিবি সদস্য নায়েক মিজান। মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীদের ছোঁড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। ৫২ নম্বর সীমান্ত পিলারের এলাকার মাটি শহীদ নায়েক মিজানের পবিত্র রক্তে ভিজে ছিল । ছড়িয়ে থাকা রক্তই বলে দেয় মিজান আর বেঁচে নেই। গুলি লাগার পর তার নিথর দেহটি বাংলাদেশের সীমান্তের ভিতরে মাটিতে পড়েছিল। মিয়ানমারের বিজিপি সদস্যরা পরে বাংলাদেশের সীমানায় ঢুকে বিজিপি সদস্য নায়েক মিজানুরের লাশটি নিয়ে মায়ানমারের অভ্যন্তরে চলে যায়। বিজিবির নায়েক মিজানুর রহমান নিখোঁজ হওয়ার পরে বিজিবি লাশ ফেরত চাইলেও মিয়ানমারের বিজিপি তখন কোনো সাড়া দেয়নি।



তিনদিন পর শনিবার বিকেলে বিজিপি নায়েক মিজানুর রহমানের লাশ বিজিবি’র হাতে হস্তান্তর করে। মায়ানমারের সীমান্ত এলাকা থেকে লাশটি এনে শনিবার রাতে নাইক্ষ্যংছড়িতে পাইনছড়ি ক্যাম্পে রাখা হয়।





রোববার সকাল পৌনে ১০টার দিকে নৌকায় করে সেখানে আনা হয় মায়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের হাতে নিহত বিজিবি সদস্যের লাশ। নিহত মিজানুরের পরনে তখনও বিজিবির পোশাক, পায়ে জুতা। লাশ ফুলে বিকৃত হয়ে গেছে। দুর্গন্ধ এড়াতে লাশের শরীরে বারবার ঢালা হচ্ছে কেরোসিন।"



পঁচে, ফুলে ভারী হয়ে যাওয়া লাশটি পাড়ে তুলতে পারছিলেন না বিজিবি সদস্যরা। বাধ্য হয়ে তারা উপস্থিত সাধারণ লোকের সহযোগিতা চান। কিন্তু দুর্গন্ধের কারণে কেউই লাশটি তুলতে চাচ্ছিলেন না।



তখন এক বিজিবি অফিসার লোকজনের উদ্দেশ্যে কাতর কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা দেশ পাহারা দিই, আমাদের লাশ কাঁধে নিতে আপনাদের এত সমস্যা!’ অপর এক বিজিবি সদস্য লাশ তোলার জন্য সবার কাছে গিয়ে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, একদিন সবাইকে মরতে হবে। এই জওয়ান দেশের জন্য দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন। আমাদের সহযোগিতা করুন।







পিতার কাঁধে সন্তানের লাশের মত নায়েক মিজানুর রহমানের লাশও , তার সহকর্মীদের কাঁধে ভিষন ভারি অনুভূত হয়। এসময় দুছড়ি খালপাড়ের পরিবেশ বেদনায় ভারী হয়ে উঠে।



নায়েক সুবেদার মিজানুর রহমানের বাবাও একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ।







ল্যান্স কর্পোরাল আবদুল হাফিজ মোল্লা। সেনাবাহিনীতে যোগদানের পর দেশ রক্ষায় ১৯৭১ সালের রণাঙ্গণে রাজশাহীতে শহীদ হয়েছিলেন । শহীদ হাফিজ মোল্লার লাশ দেখেনি তার পরিবার। সে সময়ে মিজানুর রহমানের মা রাবিয়া খাতুন তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন । জন্মের পর বাবা হাফিজ উদ্দিন ছিলেন মিজানুর রহমানের কাছে তার মায়ের কাছে শোনা বীর মুক্তিযোদ্ধার বীরত্ব গাঁথা এক মহান ইতিহাসের নায়ক।



বিজিবির নায়েক সুবেদার ( অবঃ ) আবুল কাশেম মোল্লা পিতৃস্নেহে বড় করার পর বিশেষ বিবেচনার কোটায় ১৯৮৮ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে মিজানুর রহমান তত্কালীন বাংলাদেশ রাইফেলসে (বিডিআর) যোগদান করেন। পরে নায়েক সুবেদার পদোন্নতি লাভ করেন।



চলতি বছরের ১ জানুয়ারি লালমনিরহাট থেকে বদলি হয়ে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে যোগদান করেন।



৪ দিন ধরে একজন জওয়ান গায়েব।



ডিজি মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ এসি রুমে বসে সাহিত্য করে বলেন " রক্তের দাগ চলে গেছে মায়ানমার সীমান্তে..."







হে বীর! আমাদের ক্ষমা করো না ।কারন আমাদের রাষ্ট্র তোমার মৃতদেহে আতর-লোবান দিতে পারেনি দিয়েছে কেরোসিন! একটি হেলিকপ্টার জোগাড় করতে পারেনি- এনেছে বিকল্প বাঁশের খাটিয়ায়...







মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:৩০

বোকামানুষ বলেছেন: খুব খারাপ লাগছে লেখাটা পড়ে যারা নিজের জীবন বাজি রাখছে আমাদের জন্য আর আমরা তাদের জন্য কি করছি :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.