![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চলচিত্রের নামঃ Spring, Summer, Fall, Winter and Spring(বসন্ত, গ্রীস্ম, শরৎ, শীত ও বসন্ত)
পরিচালকঃ কিম কি দুক
দেশঃ দক্ষিন কোরিয়া
ভাষাঃ কোরিয়ান
জেনরঃ ড্রামা
মানুষ জন্ম নেয় শুধু মৃত্যুবরন করার জন্য,না এটা সত্য নয় মানুষ জন্ম নয় শৈশব থেকে কৈশরের পদার্পনের জন্য,কৈশর থেকে যৌবন থেকে বার্ধক্যে পদার্পন।বার্ধক্যে পদার্পনের পরে মানব জীবনের শেষ ঠিকানা হয় মৃত্যু।হ্যা পৃথিবীতে প্রচুর মানুষের জন্মই হয় মৃত্যুর জন্য, নিষ্ঠুর ইশ্বর তাদেরকে আর কৈশর,যৌবন বা বার্ধক্যে পদার্পনের সূযোগ দেয় না,এটা ইশ্বরের একটি অন্যায় বিচার।সে সব কথা থাক এখন আমি আসল কথায় ফিরে আসি।
আমি যে চলচিত্রের রিভিউ দিতে যাচ্ছি সেই চলচিত্রটি তাদেরকে নিয়েই পরিচালক নির্মান করেছেন যারা জীবনের প্রতিটা ধাপে পদার্পনের সূযোগ পায়।
মানব জীবনকে আমরা খুব সহজেই ঋতুর সাথে তুলনা করতে পারি কারন ঋতুর ন্যায় মানব জীবনের প্রতিটি ধাপই চলমান।আমরা সাহিত্য প্রেমি বাঙ্গালীরা ঋতুকে ৬ টা ভাগে সহজেই ভাগ করতে পারলেও ঋতু সাধারনত ৪ টা যথা গ্রীস্ম শরৎ, শীত ও বসন্ত।তেমনি একজন মানুষকেও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ৪ টা ধাপে পদার্পন করতে হয় যথা শৈশব,কৈশর,যৌবন ও বার্ধক্য।আর এই ৪ টা ধাপকে আমরা বেশ সহজেই ৪ টা ঋতুর সাথে তুলনা করতে পারি যথাক্রমে বসন্ত, গ্রীস্ম,শরৎ এবং শীতকালে।
এবার আমরা ফিরে যাই চলচিত্রের গল্পে।
পরিচালক কিম কি দুক মানব জীবনকে ৪ টা ভাগে ভাগ করেছেন এবং চলচিত্রটাকে মোট ৫ টা সেগমেন্টে ভাগ করেছেন।
Spring(বসন্ত)
গল্পের শুরু হয়েছে সভ্য জগৎ থেকে বহু দুরের এক পাহারি বনের ভিতরের লেকে অবস্থিত একটি বৌদ্ধ আশ্রমে।যেখানে বসবাস করেন মাত্র ২ জন ব্যাক্তি একজন বৃদ্ধ মং এবং একজন শিশু যে ঐ মং এর শিষ্য।
ঠিক ধরেছেন এই শিশুই আমাদের গল্পের নায়ক।
বসন্তে যেমন পাতাঝরা বৃক্ষে নতুন পাতা গজায়,বনে বনে নতুন ফুল ফোটে তেমনি একজন মানুষের শৈশবে তার নতুন পাখা গজায় যে ডানায় ভর করে সে উপভোগ নির্ঝঞ্ঝাট জীবন।সে সবকিছুই শিখছে,সে বুজতে শিখে কোনটা ঠিক কোনটা ভুল।বসন্তে প্রকৃতির ন্যায় তার জীবনের বসন্তেও সে থাকে চঞ্চল,এই চাঞ্চল্য ও সরলতায় ভরা মনে এই নিষ্পাপ শিশু মনের অজান্তেই পরে যায় ঋপুর নজরে।খেলাচ্ছলে সে একটা মাছ,একটা ব্যাং এবং একটা সাপের গলায় নুরিপাথারের টুকরা বেধে দেয়।ফলাফল সাপ ও মাছের করুন মৃত্যু।কিন্তু বিধিবাম বৃদ্ধের চোখে এই ঘটনা এড়িয়ে যায় নাই।শিক্ষক হিসেবে তার শিষ্যকে অবশ্যই শিক্ষাদেয়া তার নৈতিক দ্বায়িত্ব অতএব তিনি তার নিষ্পাপ শিষ্যের শান্তির ঘুমের ভিতরেই তার পিঠে একটি পাথর বেধে দেন।ছোট্ট মং সকালে আবিস্কার করে তার পিঠে একটি প্রকান্ড পাথর বাধা যার ভার তার পক্ষে সহ্য করা কঠিন।সমাধান গুরু।গুরুর সমাধান শিষ্যকে অবশ্যই সেই মাছ, ব্যাং,সাপ কে বন্ধন মুক্ত করতে হবে যদি এই অবুজ প্রানীর একটি প্রানীও মারা যায় এর দ্বায় তোমাকে আজীবন বয়ে বেড়াতে হবে।
শিশুটি আবিস্কার করে সাপ এবং মাছের মর্মান্তিক মৃত্যু।এখন তার কান্না ছাড়া কিইবা করার আছে?
প্রতিটি মানুষ তার শৈশবে মনের অজান্তেই বিভিন্ন পাপ বা অপরাধ করে।যার অধিকাংশ অপরাধ সংগঠিত হয় খেলাচ্ছলে বিভিন্ন ক্ষুদ্র প্রানীকে হত্যা করে।
Summer(গ্রীস্ম)
মানব জীবনের ২য় ধাপ তার কৈশর এই সময় থাকে তার জীবনের ভরা যৌবন।এই সময়টা হচ্ছে জীবনের সবথেকে রঙ্গিন ধাপ।সবেমাত্র ছোট্ট পাখিটি উড়তে শিখলে যা ঘটে মানুষের জীবনের গ্রীস্মকালেও তাই ঘটে,শিশুটি এখন তাগড়া তরুন।শান্তশিষ্ট হলেও তার ভিতর আছে কামনা,বাসানা সব কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা, আবার আছে বুদ্ধের প্রতি তার অঘাত বিশ্বাস ও ভালবাসা।এই সময়ে আগমন হয় আধুনিক পোষাক পরিহিত ২জন নারীর তাদের সম্পর্ক মা ও মেয়ে।যা থেকে আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি চলচিত্রটা আধুনিক যুগ কেন্দ্রিক।মা ও মেয়ের উদ্দেশ্য না ভুল বললাম উদ্দেশ্যটা মায়ের,তার উদ্দেশ্য কন্যার শারিরীক ও মানুষিক সুস্থতা।ভদ্রমহিলা চলে গেলেন কিন্তু রেখে গেলেন তার সন্দরী ও সদ্য যৌবনে পদার্পনকারি কন্যাকে।
সদ্য কৈশরে পা দেয়া একজন কিশোরের সবসময় থাকবে নারী দেহের প্রতি সুপ্ত বাসনা আর সেটা যদি হয় সভ্য সমাজ হতে দূরে কোন কিশোরের সামনে প্রথম নারী তাহলেতো কথাই নেই।আর একজন কিশোরির জন্যও সেটাই স্বাভাবিক ঘটনা।কিশোরের মন এই সময়টাতে পেন্ডুলামের মত ঘুরতে থাকে একদিকে যৌবন যন্ত্রনা আর একদিকে বুদ্ধের প্রতি সন্মান।কিন্তু কথায় আছে ষড়ঋপুর এক ঋপু কাম এবং এটাই সবথেকে শক্তিশালি ঋপু যা মানুষকে অপার্থিব জীবনের লক্ষ হতে বিচ্যুত করে।
ধীরে ধীরে কিশোর আর কিশোরির সখ্যতা বাড়ে আর ওদিকে চলতে থাকে কিশোরির চিকৎসা এবারে বৃদ্ধ মং এর অগোচরেই চলতে থাকে তাদের প্রেমলীলা।একদিন তারা বৃদ্ধের অলক্ষেই চালিয়ে যায় সেই আদিম লীলা।এভাবেই চলতে থাকলেই একদিন তারা ধরা ঠিকই পরে।এবার আর রক্ষা নেই।কিশোরি সুস্থ বিধায় কিশোরি ফিরে যায় তার চিরচেনা যান্ত্রিক নগরীতে।ওদিকে কিশোর মেনে নিতে পারে না এসব কিছুতেই।সেই রাতেই কিশোর ফিরে যায় তার ভালবাসার নিকট সকল অপার্থিব জীবনের বাসনা ছেড়ে।সাথে নিয়ে যায় বুদ্ধ মুর্তি ও এবং আশ্রমের পালিত মোরগটাকে।
Fall(শরৎ)
শরৎ হচ্ছে মানব জীবনের মধ্যবর্তি ধাপ যে সময়ে একজন মানুষ তার জীবনের সবথেকে বেশী অপরাধ করে,এবং সেটা সজ্ঞানে।এই সময়ে তার জীবনে শুরু হয় সকল প্রকার সংকট।আর তা মোকাবেলা করতেই তাকে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতে হয়।কখনও কখনও করতে হয় হত্যা।আবার কখনও জগৎ ছেড়ে চলে যেতে বেছে নিতে হয় আত্বহত্যার মত অপরাধ।
বহুবছর বৃদ্ধ মং আশ্রমে ফিরলেন খাবার ও বিভিন্ন দ্রব্য সংগ্রহ করে।সাথে নিয়ে আসেন একটি বিড়াল।বিড়াল হচ্ছে শিল্প ও টিকে থাকার প্রতিক।
খাদ্যগ্রহন কালেই তার চোখ পরে যায় স্ত্রী হত্যা করে যুবকের পলায়ন।মং বুজতে পারেন যুবককে দিন শেষে তার নিকটেই আসতে হবে।কারন মানুষের যখন ফেরার কোন স্থান থাকে না তখন তাকে পরিবারেই ফিরতে হয় এটাই তার শেষ আশ্রয় স্থল।আর এই আশ্রমটাতো তার নিকট পরিবারের মত আর আশ্রমের বৃদ্ধতো তার পিতার মতন।বৃদ্ধ জামা সেলাই শুরু করলেন এবং যেই ভাবা সেই কাজ যুবক ফিরে আসল আশ্রম এ যেন সেই তার চিরচেনা শিষ্য নয় এ আরেকজন,উগ্র ও বদমেজাজী।প্রিয়তমার ধোকা যে খায় সেই বোঝে বিরহের কি যন্ত্রনা।বালক আত্বহত্যা করার চেষ্টা করলে বৃদ্ধ তাকে শাস্তি প্রদান করেন কঠিন সেই শাস্তি।অবশেষে যুবকের খোজে চলে আসল ২ জন গোয়েন্দা।কিন্তু তারা তাকে এখনই নিতে পারল না আজ রাতটা তাদের থাকতে হবে কারন যুবকের প্রায়শ্চিত্ত এবং মন এখন পরিস্কার হয় নাই।সারারাত ধরে চলল হার্ট ওয়াস অথবা হৃদয় ধৌতকরন,একসময় যুবক ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেল।অতঃপর সকালে যুবক চলে গেল শ্রীঘরে।রাস্ট্রীয় আইনের প্রায়শ্চিত্যের উদ্দেশ্যে।
এখন পালা বৃদ্ধের।তাকে চলে যেতে হবে এই জগৎ ছেড়ে।জীবনের সকল সিদ্ধিলাভে তিনি সফল আর কিছুই পাবার নাই তার।নৌকাতে বসেই দেহ ত্যাগ করলেন নিজ দেহে অগ্নি সঞ্চালন করে।
Winter(শীত)
দিন যায়,মাস যায় বসন্ত পেরিয়ে আসে শীত।বহুবছর পরের কোন এক শীতে যুবক প্রায়শ্চিত্ত করে ফিরে আসে আপন গৃহে।যুবক এখন আর যুবক নেই বার্ধক্য করা নাড়ছে সেই দড়জায়।বহুবছর যাবৎ লেকের ভিতরের এই আশ্রমে এখন সাপ ব্যাংদের বাসস্থান।জীবন সায়াহ্নে এসে পরেছে যুবক।সময় এখন পুর্বের সকল পাপের প্রায়শ্চিত্ত করা।যুবক এখন বৃদ্ধের রেখে যাওয়া সকল নির্দেশনাবলি অক্ষরে অক্ষরে পালন করে তার প্রায়শ্চিত্ত করছে।আর বুদ্ধের সাধনায় মনোনিবেশ করেছে।দিন গড়াচ্ছে আর যুবক আরাধনা করছে হঠাৎ একদিন উদয় হল এক নারীর এই আশ্রমে সাথে তার শিশু সন্তান।সেই নারী কি রুপসী না কুৎশিত আমি বলতে পারব না হয়ত যুবকের সেই প্রেমিকার নতুন স্বামীর সন্তান অথবা অন্য কোন নারীর সন্তান যাকে তিনি বুদ্ধের কাছে উৎসর্গ করছেন।এই ললনা পুরোটা সময় জুড়েই তার মুখ ঢেকে রাখলেন,হয়ত পাপবোধ,রাতে বার্ধক্য আসন্ন মংকে ফাকি দিয়ে পালিয়ে যেতে গিয়ে মৃত্যু মুখে পতিত হন সেই রমনী।
বার্ধক্য আসন্ন যুবক তার সৎকার করলেন এবং ছোটবেলার প্রানীহত্যার প্রায়শ্চিত্ত করলেন।
Spring(বসন্ত)
যুবক তো এখন বৃদ্ধ,তাহলে আমি এখন আবার বসন্তের বর্ননা দিচ্ছি?সহজ উত্তর পরিচালক রেখেছেন তাই!
হ্যা কিন্তু পরিচালক কেন আবার বসন্তে ফিরে আসলেন?মানব জাতি সবসময় পুরো জীবন ভর একটা বৃত্তাকার গোলকের ভিতরেই ঘোরাফেরা করে।আজ আমার জীবনের শীত আসলেও অন্য কারো জীবনের বসন্তের সুচনা হবে এটাইতো প্রকৃতির নিয়ম।১৪২১ বঙ্গাব্দের বসন্ত শেষ হলে কিন্তু ১৪২২ বঙ্গাব্দের গ্রীষ্মের শুরু হয়।অর্থাৎ ১৪২১ এর মৃত্যুর মাধ্যমেই ১৪২২ আত্বপ্রকাশ করেছে।তেমনি সেই ছোট শিশুর জীবনের শীতকাল চললেও নতুন এক শিশুর আগমন ঘটেছে সেটা কি আপনাদের খেয়াল আছে?হ্যা ঠিকই ধরেছেন সেই শিশুরই এখন বসন্ত চলছে।এখানে আমরা দেখতে পাব সেই একই চিত্র।অস্থির চঞ্চল এক শিশু যে শুধু তার গুরু আর গুরুর পোষা কচ্ছপের সাথে সময় কাটায় সুযোগ পেলে নৌকা নিয়ে লেকে ঘুরে ফেরে।খেলাচ্ছলে সেই শিশুও মাছ।সাপ ব্যাংদের নিয়ে একই উপায়ে খেলা করছে।
আসলে মানব জীবন চক্রের মত।ঋতু যেমন ঘুরে ফিরে আবার আসে।ঠিক তেমনি মানুষের জীবনের ঋতুও বদলায়।বছর চলে যায় কিন্তু আর ফিরে আসে না কিন্তু ঋতু ঠিকই ফিরে আসে ভিন্ন বছরে একই নাম নিয়ে।মানুষও হারিয়ে যায় আবার নতুন কেউ আসে কিন্তু তাদের জীবনের ঋতু বদলাবেই।আর এটাই প্রকৃতির নিয়ম।আমরা প্রকৃতির নিয়মের নিকট বাধা।তাকে অতিক্রম করার সাধ্য আমাদের নাই।কারন প্রকৃতি যে স্রষ্টা তার সাথে আমরা যুদ্ধ করি কিন্তু হেরে যাই আর যাব এভাবেই চলবে।আমরা আসলে প্রকৃতির নিকট খেলনা স্বরুপ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই জুন, ২০১৬ রাত ১:১৭
ট্রিগারবল বলেছেন: সিনেমাটা দেখেসি। অনেক স্লো হলেও সুন্দর।