নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কারো ভাই ব্রাদার না, আমারে স্যার ডাকবা

আমারে স্যার ডাকবা

আমারে স্যার ডাকবা › বিস্তারিত পোস্টঃ

রম্যঃ একটা দেশের সরকার কেন ব্যর্থ হয়?

২৪ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১২:৫০

এশিয়া মহাদেশে একটা দেশ আছে, গঙ্গাঋদ্ধি নামে। সে দেশের প্রধানমন্ত্রী জনাবা শেনাখসিহা প্রচন্ড চিন্তিত। করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সাধ্যের সবটুকু করেছেন তিনি। বাজেটে আলাদা বরাদ্দ দিয়েছেন, কোটি কোটি টাকা প্রণোদনা দিয়েছেন, বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা কিনেছেন। বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে বিভিন্ন বিধি-নিষেধ আরোপ করেছেন। তবুও করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসছে না। দিন কে দিন অবস্থার শুধু অবনতিই হচ্ছে।

তার চিন্তার আরেকটা প্রধান কারন তিনি নিউজিল্যান্ড সফরে এসেছেন। এবং তার মতো এই দেশের প্রধানমন্ত্রীও একজন নারী। করোনায় নিউজিল্যান্ড সরকার এতোটাই ভালো কাজ করেছে যে, পুরো বিশ্বে একটা উদাহরন তৈরী হয়ে গেছে। তাদের দেশে ৩ হাজার মানুষও আক্রান্ত হয়নি, ৩০ জনেরও কম মানুষ মারা গেছে। এদিকে নিজেকে বিশ্বের সেরা নারী রাস্ট্রপ্রধান ভেবে এতদিন খুশি হওয়া তার দেশেই এগারো লাখ মানুষ আক্রান্ত, মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ১৯ হাজারে গিয়ে ঠেকেছে। এই অবস্থায় নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর সামনে কিভাবে মুখ দেখাবেন সেটাই ভেবে পাচ্ছেন না।



নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর সাথে অফিসিয়াল বৈঠকের পরে ডিনারের আগে গঙ্গাঋদ্ধি প্রধানমন্ত্রী শেনাখসিহা এবং নিউজিল্যান্ড প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডেন বসে গল্প করছেন। কৌতুহল সামলাতে না পেরে প্রধানমন্ত্রী শেনাখসিহা নিউজিল্যান্ড পিএমকে জিজ্ঞেস করেই ফেললেনঃ
- আচ্ছা জেসিন্ডা, আপনার দেশ যে করোনা এতো সুন্দরভাবে মোকাবিলা করলো, এটা কিভাবে সম্ভব হলো?
- দেখুন শেনাখসিহা আপা, একটা রাস্ট্র সঠিকভাবে চালাতে তার সরকারকে সৎ ও কর্মঠ হতে হয়। আর এমন সরকার পেয়েই আমি পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পেরেছি।
- আমার সরকারও তো সৎ এবং কর্মঠ। কিন্তু তারপরও আমি কেন সফল হচ্ছি না?
- দেখুন আপা, সরকার প্রধানকে হতে হয় বিচক্ষন এবং কঠোর। নিজের আশে পাশে সবসময় যোগ্য ও বুদ্ধিমান মানুষকে রাখতে হয়। অযোগ্য, মূর্খ্য এবং তেলবাজ মানুষ থেকে দূরে থাকতে হয়। আমি এই কাজটাই করেছি। আমার আশে পাশে সব যোগ্য ও বুদ্ধিমান মানুষ। তারা তেলবাজী না করে নিজের দায়িত্বেই বেশি মনোযোগ দেয়।
- সত্যি? আসলেই কেউ আপনার কথার উপরে কথা বলার সাহস পায়?
- আচ্ছা আপা, দেখেন একটা প্রমান দেখাই।

জেসিন্ডা আর্ডেন ইন্টারকমে তার বিচার, মিডিয়া ও সম্প্রচার মন্ত্রী ক্রিস ফাফোই এবং শিক্ষা ও কোভিড-১৯ বিষয়ক মন্ত্রী ক্রিস হিপকিন্স কে ডেকে পাঠালেন।
জেসিন্ডা আর্ডেন মিডিয়া ও সম্প্রচার মন্ত্রীকে বললেন, "জনাব ক্রিস ফাফোই, আপনার কি মনে হয় আমরা করোনা মোকাবিলায় সফল?"
ক্রিস ফাফোই বললেন, "সফলতা নিয়ে এখন ভাবার সময় নেই। পুরো পৃথিবীতে করোনা ভাইরাস মারাত্মক আকার ধারন করেছে। আমাদের আরো বেশি সতর্ক থাকা উচিৎ"
জেসিন্ডা আবার জিজ্ঞেস করলেন, "আমার সরকার যে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সফল, এবং অন্য রাজনৈতিক দলগুলো যে হাত গুটিয়ে বসে থাকা ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না, তারা ক্ষমতায় আসলে দেশ ধ্বংস হয়ে যেতো এই বিষয়ে জনগনকে জানানো উচিৎ না?"
ক্রিস ফাফোই বললেন, "ম্যাডাম প্রাইম মিনিস্টার, আপনার উচিৎ নিজের দায়িত্বটা সঠিক ভাবে পালন করা। জনগন এই কারনেই আপনাকে ভোট দিয়েছে। অন্যের ছিদ্রান্বেষন করার জন্য নয়"

জেসিন্ডা আর্ডেন মুচকি হেসে গঙ্গাঋদ্ধির প্রধানমন্ত্রীকে বললেন, "দেখেন আপা, আমার চারপাশে তেলবাজদের জায়গা দেইনি। এরা আমায় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে এবং আমার ভুল সিদ্ধান্তও এরা শুধরে দেয়"

এবার জেসিন্ডা আর্ডেন কোভিড-১৯ বিষয়ক মন্ত্রীকে বললেন, "জনাব ক্রিস হিপকিন্স, মনে করুন আপনার বাবা এবং মায়ের একটি সন্তান যে আপনার ভাইও নয় বা আপনার বোনও নয়। এই সন্তানটি আসলে কে? "
ক্রিস হিপকিন্স সাথে সাথে হেসে বললেন, "ম্যাডাম প্রাইম মিনিস্টার, সন্তানটা হচ্ছি আমি।"

জেসিন্ডা আর্ডেন আবারও মুচকি হেসে গঙ্গাঋদ্ধির প্রধানমন্ত্রীকে বললেন, "দেখেন আপা, আমার চারপাশে এমন বুদ্ধিমান মানুষ দিয়েই ভর্তি।"

-----------------------------

নিউজিল্যান্ড সফর থেকে ফিরে গঙ্গাঋদ্ধির প্রধানমন্ত্রী শেনাখসিহা ভাবলেন, তার মন্ত্রীদেরও একটু পরখ করে নেয়া উচিৎ। তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রীকে ডেকে পাঠালেন।

প্রধানমন্ত্রী শেনাখসিহা তার তথ্যমন্ত্রী ড, হোসেন মাসুদকে জিজ্ঞেস করলেন, "আপনার কি মনে হয় আমরা করোনা মোকাবিলায় সফল?"
তথ্যমন্ত্রী একগাল হেসে বললেন, "সফল মানে? কি যে বলেন! জননেত্রী দেশনেত্রী গনতন্ত্রের মানষকন্যা গঙ্গাবন্ধুর কন্যা শেনাখসিহা করোনা মোকাবিলায় ১০০ ভাগ সফল। আপনি বিশ্বের রোল মডেল। আপনি দেশের গর্ব। টুকটাক যা রোগী পাওয়া যাচ্ছে বা যারা মারা যাচ্ছে তারা আপনার নির্দেশ মানে নাই। খুশিতে ঘোরাঘোরি করে করোনা বাধিয়েছে। সব দোষ জনগনের"
প্রধানমন্ত্রী শেনাখসিহা আবার জিজ্ঞেস করলেন, "আমার সরকার যে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সফল, এবং অন্য রাজনৈতিক দলগুলো যে হাত গুটিয়ে বসে থাকা ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না, তারা ক্ষমতায় আসলে দেশ ধ্বংস হয়ে যেতো এই বিষয়ে জনগনকে জানানো উচিৎ না?"
তথ্যমন্ত্রী সাথে সাথে বললেন, "হে জননেত্রী দেশনেত্রী গনতন্ত্রের মানষকন্যা গঙ্গাবন্ধুর কন্যা, আপনি কি আমার বিবৃতিগুলো দেখেন নি? আমি গত এক সপ্তাহে ১৩ তি বিবৃতি দিয়েছি যে আমরা সফল এবং GNP দেশ চালানোর অযোগ্য। তারা গনতন্ত্রের ক্যান্সার। তারা জনগনের শত্রু।"

এবার শেনাখসিহা তার স্বাস্থ্য মন্ত্রীকে বললেন, "জনাব জামাল মালেক, মনে করুন আপনার বাবা এবং মায়ের একটি সন্তান যে আপনার ভাইও নয় বা আপনার বোনও নয়। এই সন্তানটি আসলে কে? "
স্বাস্থ্যমন্ত্রী থতমত খেয়ে গেলেন, "জননেত্রী শেনাখসিহা, এটা আমি তো আমার বাবা-মার কাছে জিজ্ঞেস করি নাই, তারা এখন বেচেও নাই। আমি এখনই খোজ লাগাচ্ছি"

স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার মন্ত্রনালয়ে এসে পিএস, এপিএস, সেক্রেটারি, ডেপুটি সেক্রেটারিদের এই প্রশ্নের উত্তর খুজে বের করতে বললেন। তারা ৭ সদস্যের এক তদন্ত কমিটি গঠন করে ৪ দিনের ভেতর রিপোর্ট দিবে বলে জানালো।
এই চারদিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী অনেক চিন্তা করলেন, মামা-চাচা যারা বেচে আছেন, তাদের কেও জিজ্ঞেস করলেন। তারাও এ বিষয়ে কিছুই জানে না। ওদিকে চারদিন পর তদন্ত কমিটি আরো ১৫ দিন সময় চেয়ে এবং তদন্ত কাজের জন্য সিংগাপুর ভ্রমনের প্রয়োজনে দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করলো। সেটা অনুমোদন দিয়ে রাতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার পুরনো বন্ধু এবং ত্রানমন্ত্রী ডা. ইমানুর রহমানের বাসায় বেড়াতে গেলেন।

আজ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জামাল মালেক এর মন ভীষন খারাপ, একে তো তার বাবা-মায়ের এক সন্তান আছে এটা তিনি এতোদিন পর জানতে পারলেন, তার উপর প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নের জবাব দিতেও তার দেরী হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সব জেনেশুনেই তো তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করেছেন। তার NSA গোয়েন্দারাই এই খবর বের করেছে নিশ্চয়ই। না জানি মন্ত্রীত্বই হাত থেকে চলে যায়!

ত্রানমন্ত্রী লাল শরবত ঢেলে গ্লাস এগিয়ে প্রশ্ন করলেন, "মালেক ভাই, এতো উদাস কেনো আপনি?"
স্বাস্থ্যমন্ত্রী তাকে সব খুলে বললেন। সেটা শুনে ত্রান মন্ত্রী হেসে বললেন, "আরে এতো সহজ প্রশ্ন। এই প্রশ্নের উত্তর আপনি জানেন না?"
- আমি জানি না, খোজ লাগিয়েই কিছুই পাচ্ছি না।
- মালেক ভাই, এটার উত্তর আপনাকে বলে দিচ্ছি। উত্তর হচ্ছেঃ "সন্তানটি হচ্ছি আমি"।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাথে সাথে মোবাইল বের করে প্রধানমন্ত্রীকে ফোন দিলেন, "জননেত্রী, আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়েছি। আমার বাবা-মায়ের সন্তান, যে আমার ভাইও না আবার বোনও না, সে হইতেছে ত্রানমন্ত্রী ডা. ইমানুর রহমান।"

প্রধানমন্ত্রী রেগে গিয়ে বললেন, "আপনি আসলেই নির্বোধ। সন্তানটা হইতেছে নিউজিল্যান্ডের কোভিড-১৯ বিষয়ক মন্ত্রী ক্রিস হিপকিন্স"

স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবার ভীষন কনফিউশনে পরে গেলেন। ত্রানমন্ত্রী দাবি করতেছেন যে তার বাবা-মায়ের সন্তান সে, আবার প্রধানমন্ত্রী জানালেন সন্তানটা নিউজিল্যান্ডের মন্ত্রী। এদিকে তার তদন্ত কমিটিও আবার সিংগাপুর যাবে তদন্ত করতে, আল্লাহ জানে তারা আবার কি রিপোর্ট দেয়!

----------------

নোটঃ এইটা নিছক গল্প। সকল চরিত্র কাল্পনিক, কারো সাথে মিলে গেলে লেখকের অনিচ্ছাকৃত ভুল ধরে নিতে হবে।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ প্রিয় সহ-ব্লগার, পাঠক, ভক্ত, আশেকানবৃন্দ আমারে স্যার ডাকবা

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জুলাই, ২০২১ সকাল ১১:৩০

আল-ইকরাম বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই। বেশ লিখেছেন। মনোযোগ সহকারে পড়লাম। আপনার উপস্থাপনাটি একশত ভাগ বাস্তব। নিরাপদে থাকুন।

২৪ শে জুলাই, ২০২১ সকাল ১১:৩৫

আমারে স্যার ডাকবা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। আপনিও নিরাপদে থাকুন। সুস্থ থাকুন :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.